কিশোরগঞ্জের ভৈরব ফুটবল খেলা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে উভয় পক্ষের ২৫ জন আহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার উপজেলা শিমুলকান্দি ইউনিয়নের তুলাকান্দি গ্রামের মুন্সি বাড়ি বংশের সঙ্গে বাদার বাড়ির বংশের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ভৈরব থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ খন্দকার ফুয়াদ রুহানি।

সংঘর্ষে বাদার বাড়ির বংশের আহতরা হলেন, আশরাফুল (১২), মিষ্টু মিয়া (২৬), সিয়াম মিয়া (১৫), কাউসার মিয়া(১৫), ফেরদৌস আহমেদ (১৬), সুমন মিয়া (২৮), আলাল উদ্দিন (৩৫), সহেদ মিয়া (৪০)।
অপরদিকে মুন্সি বাড়ির বংশের আহতরা হলেন- জামাল মিয়া (৯০), বাসির মিয়া (৩০), নজরুল ইসলাম (৪৫), আঙুর মিয়া (৪০), অমিত হাসান (১৮), স্বাধীন (২২), সিয়াম (২২), নিলয় (১৭), জুনাত (৩৩), সোহাগ মিয়া (৩০), রুনা বেগম (৩৭), নাদিয়া বেগম (৪০)। এছাড়াও উভয় পক্ষের আরো ৫ জন আহত হয়েছেন।

স্থানীয়রা ও পুলিশ জানায়, উপজেলার তুলাকান্দি গ্রামের মুন্সি বাড়ি বংশের সঙ্গে বাদার বাড়ির বংশের লোকেদের মধ্যে দীর্ঘ দিনের শত্রুতা চলছিল। সোমবার মুন্সি বাড়ির যুবকরা তাদের নিজ বাড়ির মাঠে ফুটবল খেলতে গেলে বাদার বাড়ির যুবকরা একই মাঠে খেলতে চেয়ে তাদের বাধা দেয়। এসময় দুই পক্ষে বাকবিতণ্ডা হলে স্থানীয়রা বিষয়টি মীমাংসা করে দেবেন বলে দুই পক্ষকে শান্ত করে। এর পরও বিষয়টি নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা রয়ে যায়। আজ বুধবার সকাল ১০টায় বাদার বাড়ির বংশের এক যুবককে মুন্সি বাড়ির যুবকেরা মারধর করে। এ ঘটনার পর উভয়পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বাধে। দুই পক্ষ দা, বল্লম, টেঁটা, লাঠি সোঁটা, ইট পাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় দুই পক্ষের ২৫ জন নারী পুরুষ আহত হয়। উভয় পক্ষের ১০টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক উম্মে হাবীবা জুঁই বলেন, তুলাকান্দি গ্রামের মারামারির ঘটনায় আহত ১২ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। এদের মধ্যে ১০ জনকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রাখা হয়েছে। আহতদের অনেকেই ভৈরবের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা নিয়েছেন।

এ বিষয়ে মুন্সি বাড়ির বংশের নজরুল ইসলাম বলেন, সোমবার বিকেলে আমার ছেলে ইয়ামিনসহ আমাদের বংশের যুবকেরা আমাদের জমিতে ফুটবল খেলতে গেলে বাদার বাড়ির বংশের যুবকেরা বাধা দেয় ও মারধর করে। আমার আরেক ছেলে প্রতিবাদ করতে গেলে তাকেও মারধর করে। স্থানীয় নেতারা বিষয়টি মীমাংসা করে দেবেন বলে জানালেও মীমাংসা করেনি। আজ সকালে আমাদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা করে বাড়িঘর ভাঙচুর লুটপাট করেছে বাদার বাড়ির বংশর লোকজন। আমাদের বংশের ১৫ জন নারী-পুরুষ আহত হয়েছে।

বাদার বাড়ির বংশের আকবর ফকির বলেন, সামান্য ফুটবল খেলা নিয়ে ৯ জুন যুবকেরা মারামারি করেছে। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বিষয়টি মীমাংসা সময় দিলেনও মুন্সি বাড়ির লোকজন আজ সকালে আমাদের বংশের একজনকে মারধর করে। পরক্ষণে তারা আমাদের বাড়ি ঘরে হামলা করে। আমরাও তাদের প্রতিহত করতে চেষ্টা করি। তাদের হামলায় আমাদের বংশের ১০ জন নারী পুরুষ আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে তিনজন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও দুই জনকে বাজিতপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এ বিষয়ে ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ খন্দকার ফুয়াদ রুহানি জানান, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। উভয়পক্ষ হাসপাতালে এসেও সংঘর্ষে জড়াতে চেষ্টা করে। এখানেও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। বর্তমানে তুলাকান্দি এলাকায় পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। উভয় পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ ভ রব স ঘর ষ আহত স ব স থ য কমপ ল ক স আম দ র ব শ র ফ টবল খ ল য বক র স ঘর ষ র য বক উপজ ল ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে

জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ৯ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রেখেছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের (আহত) ব্যানারে তাঁরা এ ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন।

রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলে গণপরিবহন, অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে। বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড়ের সঙ্গে যুক্ত সব সড়কের মুখ আটকে দিয়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন অবরোধকারীরা। এ সময় তাঁরা জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানান। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই যোদ্ধা সংসদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ওই কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। এ সময় অবরোধকারীরা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাইয়ের চেতনা দিতে হবে ঘোষণা’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।

বন্ধ হয়ে পড়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব ও গুলিস্তানগামী প্রধান সড়কগুলোও। ফলে সকাল থেকেই এসব এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো বিকল্প পথে চলাচল করে।

বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন মূল সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ও বাঁশ ব্যবহার করে সড়ক আটকে রেখেছেন অবরোধকারীরা। শাহবাগ থানার সামনের সড়কেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাঁরা।

বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নূরে আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে যাব। কোনো বাস পাচ্ছি না। রিকশায় যে কিছু দূর যাব, তারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছে।’ একপর্যায়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।

এক পথচারী ইমরান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দিন পরপর সড়ক অবরোধ হয়। এর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।’

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হতে দেখা যায় মোটরবাইক আরোহীদের। শাহবাগ থানার সামনে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে বাধা দিলে চালক বলেন, ‘এত দাবিদাওয়া এত দিন আছিলো কই।’ তবে গণপরিবহন আটকে দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স শুরু থেকেই চলাচল করতে দেখা গেছে।

অবরোধকারীদের দাবি

অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান; চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহতদের ওপর সংগঠিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বলেন, সকাল থেকেই শাহবাগে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শাহবাগ থানা-পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে অবরোধকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

তবে জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলছে। সনদ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ
  • হতাহতের ছবি-ভিডিও সরাতে ও ছড়িয়ে পড়া বন্ধে পদক্ষেপ চেয়ে রিট, আদেশ ৩ আগস্ট
  • ৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে
  • জুলাই সনদের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ