ভৈরবে ফুটবল খেলা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ২৫
Published: 10th, June 2025 GMT
কিশোরগঞ্জের ভৈরব ফুটবল খেলা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে উভয় পক্ষের ২৫ জন আহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার উপজেলা শিমুলকান্দি ইউনিয়নের তুলাকান্দি গ্রামের মুন্সি বাড়ি বংশের সঙ্গে বাদার বাড়ির বংশের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ভৈরব থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ খন্দকার ফুয়াদ রুহানি।
সংঘর্ষে বাদার বাড়ির বংশের আহতরা হলেন, আশরাফুল (১২), মিষ্টু মিয়া (২৬), সিয়াম মিয়া (১৫), কাউসার মিয়া(১৫), ফেরদৌস আহমেদ (১৬), সুমন মিয়া (২৮), আলাল উদ্দিন (৩৫), সহেদ মিয়া (৪০)।
অপরদিকে মুন্সি বাড়ির বংশের আহতরা হলেন- জামাল মিয়া (৯০), বাসির মিয়া (৩০), নজরুল ইসলাম (৪৫), আঙুর মিয়া (৪০), অমিত হাসান (১৮), স্বাধীন (২২), সিয়াম (২২), নিলয় (১৭), জুনাত (৩৩), সোহাগ মিয়া (৩০), রুনা বেগম (৩৭), নাদিয়া বেগম (৪০)। এছাড়াও উভয় পক্ষের আরো ৫ জন আহত হয়েছেন।
স্থানীয়রা ও পুলিশ জানায়, উপজেলার তুলাকান্দি গ্রামের মুন্সি বাড়ি বংশের সঙ্গে বাদার বাড়ির বংশের লোকেদের মধ্যে দীর্ঘ দিনের শত্রুতা চলছিল। সোমবার মুন্সি বাড়ির যুবকরা তাদের নিজ বাড়ির মাঠে ফুটবল খেলতে গেলে বাদার বাড়ির যুবকরা একই মাঠে খেলতে চেয়ে তাদের বাধা দেয়। এসময় দুই পক্ষে বাকবিতণ্ডা হলে স্থানীয়রা বিষয়টি মীমাংসা করে দেবেন বলে দুই পক্ষকে শান্ত করে। এর পরও বিষয়টি নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা রয়ে যায়। আজ বুধবার সকাল ১০টায় বাদার বাড়ির বংশের এক যুবককে মুন্সি বাড়ির যুবকেরা মারধর করে। এ ঘটনার পর উভয়পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বাধে। দুই পক্ষ দা, বল্লম, টেঁটা, লাঠি সোঁটা, ইট পাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় দুই পক্ষের ২৫ জন নারী পুরুষ আহত হয়। উভয় পক্ষের ১০টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক উম্মে হাবীবা জুঁই বলেন, তুলাকান্দি গ্রামের মারামারির ঘটনায় আহত ১২ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। এদের মধ্যে ১০ জনকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রাখা হয়েছে। আহতদের অনেকেই ভৈরবের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে মুন্সি বাড়ির বংশের নজরুল ইসলাম বলেন, সোমবার বিকেলে আমার ছেলে ইয়ামিনসহ আমাদের বংশের যুবকেরা আমাদের জমিতে ফুটবল খেলতে গেলে বাদার বাড়ির বংশের যুবকেরা বাধা দেয় ও মারধর করে। আমার আরেক ছেলে প্রতিবাদ করতে গেলে তাকেও মারধর করে। স্থানীয় নেতারা বিষয়টি মীমাংসা করে দেবেন বলে জানালেও মীমাংসা করেনি। আজ সকালে আমাদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা করে বাড়িঘর ভাঙচুর লুটপাট করেছে বাদার বাড়ির বংশর লোকজন। আমাদের বংশের ১৫ জন নারী-পুরুষ আহত হয়েছে।
বাদার বাড়ির বংশের আকবর ফকির বলেন, সামান্য ফুটবল খেলা নিয়ে ৯ জুন যুবকেরা মারামারি করেছে। স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বিষয়টি মীমাংসা সময় দিলেনও মুন্সি বাড়ির লোকজন আজ সকালে আমাদের বংশের একজনকে মারধর করে। পরক্ষণে তারা আমাদের বাড়ি ঘরে হামলা করে। আমরাও তাদের প্রতিহত করতে চেষ্টা করি। তাদের হামলায় আমাদের বংশের ১০ জন নারী পুরুষ আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে তিনজন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও দুই জনকে বাজিতপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ খন্দকার ফুয়াদ রুহানি জানান, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। উভয়পক্ষ হাসপাতালে এসেও সংঘর্ষে জড়াতে চেষ্টা করে। এখানেও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। বর্তমানে তুলাকান্দি এলাকায় পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। উভয় পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ ভ রব স ঘর ষ আহত স ব স থ য কমপ ল ক স আম দ র ব শ র ফ টবল খ ল য বক র স ঘর ষ র য বক উপজ ল ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রেনের ছাদে ভ্রমণকালে বৈদ্যুতিক লাইনের নেটের আঘাতে নিহত ১, আহত ৫
টাঙ্গাইলে ট্রেনের ছাদে অবৈধভাবে ভ্রমণের সময় বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের নেটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে একজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম রিপন আলী (৩৭)। তিনি রাজশাহীর পবা উপজেলার কালিয়ানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। আহতদের মধ্যে অজ্ঞাতপরিচয়ের এক ব্যক্তি টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
রেলওয়ে পুলিশের টাঙ্গাইল ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ জানান, ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী আন্তনগর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে টাঙ্গাইল স্টেশনে পৌঁছানোর পর ছাদে রক্তাক্ত অবস্থায় ছয়জনকে পাওয়া যায়। আহত যাত্রীরা পুলিশকে জানান, তাঁরা ঢাকা থেকে ট্রেনের ছাদে উঠেছিলেন। টাঙ্গাইল স্টেশনে পৌঁছানোর ১৫–২০ মিনিট আগে রেলপথের ওপর দিয়ে অতিক্রম করা একটি বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের নিচের নেটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে তাঁরা আহত হন।
আহত ছয়জনকে পুলিশ উদ্ধার করে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে রিপন আলীর মৃত্যু হয়। আহতদের মধ্যে আশরাফুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আহত আমিরুল ইসলাম (২৫), আলিম (২৫) ও ফয়সাল (২৭) চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। অজ্ঞাতপরিচয়ের এক কিশোর (১৫–১৬) এখনো টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, তার হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় শুয়ে আছে। কর্তব্যরত নার্স জানান, ছেলেটি কথা বলতে পারছে না।
এদিকে নিহত রিপন আলীর রাজশাহীর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে কালিয়ানপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির ভেতরে স্বজন ও প্রতিবেশীরা আহাজারি করছেন। বাইরে রিপনের দাফনের জন্য কবর খোঁড়া হচ্ছে, কেউ বাঁশ কাটছেন।
রিপনের বাবা ইসরাফিল হোসেন জানান, রিপন ঢাকার একটি ইলেকট্রনিকস কোম্পানিতে চাকরি করত। কয়েক মাস আগে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নতুন কাজ খুঁজছিল। গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল হাসপাতাল থেকে রিপনের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে তার ছোট ছেলের ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তখনই তাঁরা জানতে পারেন, রিপন ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।