Samakal:
2025-06-12@13:04:58 GMT

নাকের বদলে নরুন

Published: 10th, June 2025 GMT

নাকের বদলে নরুন

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় প্রায় এক যুগব্যাপী যেই প্রকারে কৃষিকে হটাইয়া উন্নয়নের আখ্যান রচিত হইতেছে, উহাতে যদ্রূপ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটিয়াছে তদ্রূপ সহস্র মানুষের অশ্রু আর ভূমি হারাইবার বেদনা মিশ্রিত। পরিবেশ দিবসে সমকাল প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, উপকূলীয় এই এক উপজেলা হইতেই বিভিন্ন প্রকল্পের নামে প্রায় দশ সহস্র একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হইয়াছে। উহাতে শুধু মানুষই বাস্তুচ্যুত হয় নাই; হারাইয়া গিয়াছে কৃষিজমিও। স্থানীয় কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, কলাপাড়ায় অধিগ্রহণ করা ভূমির মধ্যে ৬০ শতাংশই কৃষিজমি। আমরা বিস্মিত, পরিবেশ বিধ্বংসী এহেন প্রকল্প কী রূপে গ্রহণ করা হইয়াছে! এই সকল প্রকল্পের ফল নাকের বদলে নরুন বৈ কিছু নহে।

বস্তুত এই সকল প্রকল্পের গোড়াতেই গলদ রহিয়াছে। যেই কোনো প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবেশগত প্রভাব নিরূপণ তথা ইআইএ জরুরি হইলেও কলাপাড়ার প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে উহা যথাযথ হয় নাই বলিয়াই প্রতীয়মান। আমরা জানি, ইআইএর মধ্যে জনমত যাচাই, স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত প্রভাব যাচাই করা হয় এবং জমি অধিগ্রহণের পূর্বেই এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তথায় অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণকে না জানাইয়া রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রকল্প অনুমোদন করানো হইয়াছে। প্রতিবেশগত প্রভাব নিরূপণ প্রতিবেদনেই যথায় গলদ রহিয়াছে, তথায় অপরিকল্পিত ও পরিবেশবিনাশী প্রকল্পগুলির পরিণতি বলিবার অপেক্ষা রাখে না। এমনকি ত্রুটিপূর্ণ ইআইএ প্রতিবেদনেও প্রাণ-প্রকৃতি ও স্থানীয় মানুষের সুরক্ষার জন্য যেই সকল পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব রাখা হইয়াছিল, সেইগুলিও যথাযথভাবে মান্য করা হয় নাই। পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা সমকালের নিকট ইহাও বলিয়াছেন, অনেক প্রকল্পে তাহারা আপত্তি জানাইলেও ‘উপরের চাপে’ ছাড় দিতে হইয়াছে।

ইহাতে মানুষের পাশাপাশি পরিবেশের অন্যত্রও প্রভাব পড়িয়াছে ব্যাপক।
কলাপাড়ায় জাতীয় মৎস্য ইলিশ যদ্রূপ বিপন্নের পথে তদ্রূপ রামনাবাদ ও আন্ধারমানিক নদী এবং সংলগ্ন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল দূষিত হইয়া অন্যান্য জীববৈচিত্র্যও সংকটে পড়িয়াছে। কলাপাড়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পর ফসলের ফলন হ্রাস পাইয়াছে। বৃক্ষরাজির প্রবৃদ্ধিও তথৈবচ। উপরন্তু সমুদ্রতীর হইতে বালু উত্তোলন করিয়া নিচু আবাদি জমি পূর্ণকরণের ফলে লবণাক্ত পানিতে নিমজ্জিত হয় পুকুর ও মৎস্যবেষ্টনী। অর্থাৎ সমগ্র কলাপাড়া কৃষকের জন্য মরণফাঁদে পরিণত, যথায় তাহাদের রুটি-রুজির পথ বন্ধ হইবার উপক্রম। এমনকি অনেকে বাস্তুচ্যুত হইয়াও শেষ সম্বল ক্ষতিপূরণ না পাইয়া আদালতের দ্বারস্থ হইয়াছেন।

আমরা জানি, জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ বিবিধ কারণে স্বভাবতই কৃষিজমি হ্রাস পাইতেছে। অপরিকল্পিত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উহার গতি ত্বরান্বিত করিয়াছে, যাহাতে কৃষি ও পরিবেশ পড়িয়াছে সংকটে। কলাপাড়া এই ক্ষেত্রে যেই মন্দ নজির দেখাইয়াছে, উহা হইতে শিক্ষা লওয়া জরুরি। আমরা মনে করি, কলাপাড়ার এহেন দুরবস্থায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও উন্নয়নে সরকারের পক্ষে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন জরুরি। সেইখানে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশের যেই ক্ষতি করিয়াছে, উহার পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয় বিবেচনা করা যাইতে পারে। উহা অপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ, কৃষকের জমি ফিরাইয়া দিবার বন্দোবস্ত। এই ক্ষেত্রে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নের যথাযথ প্রয়োগের বিষয়ও খতাইয়া দেখিতে হইবে। উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে শস্যভান্ডারখ্যাত কলাপাড়ায় কৃষিতে যেই আঘাত পড়িয়াছে, উহা ব্যাখ্যাতীত। তবে জরুরি প্রকল্পে যথাযথ ইআইএ করা, জমি হ্রাস পাইলেও  কৃষকদের উচ্চফলনশীল জাতের আবাদে উৎসাহী করা এবং পরিবেশের সহিত 
খাপ খাওয়ানো জাত উদ্ভাবনের বিষয়ও সম্মুখে সমুপস্থিত। পরিবেশবিনাশী উন্নয়নে যে শেষ বিচারে উপকার অপেক্ষা ক্ষতিই অধিক সাধিত হয়, কলাপাড়া হইতে পারে উহার ‘উৎকৃষ্ট’ উদাহরণ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন প রকল প প রকল প র কল প ড় য় পর ব শ র কল প গ রহণ হইয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

নাকের বদলে নরুন

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় প্রায় এক যুগব্যাপী যেই প্রকারে কৃষিকে হটাইয়া উন্নয়নের আখ্যান রচিত হইতেছে, উহাতে যদ্রূপ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটিয়াছে তদ্রূপ সহস্র মানুষের অশ্রু আর ভূমি হারাইবার বেদনা মিশ্রিত। পরিবেশ দিবসে সমকাল প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, উপকূলীয় এই এক উপজেলা হইতেই বিভিন্ন প্রকল্পের নামে প্রায় দশ সহস্র একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হইয়াছে। উহাতে শুধু মানুষই বাস্তুচ্যুত হয় নাই; হারাইয়া গিয়াছে কৃষিজমিও। স্থানীয় কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, কলাপাড়ায় অধিগ্রহণ করা ভূমির মধ্যে ৬০ শতাংশই কৃষিজমি। আমরা বিস্মিত, পরিবেশ বিধ্বংসী এহেন প্রকল্প কী রূপে গ্রহণ করা হইয়াছে! এই সকল প্রকল্পের ফল নাকের বদলে নরুন বৈ কিছু নহে।

বস্তুত এই সকল প্রকল্পের গোড়াতেই গলদ রহিয়াছে। যেই কোনো প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবেশগত প্রভাব নিরূপণ তথা ইআইএ জরুরি হইলেও কলাপাড়ার প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে উহা যথাযথ হয় নাই বলিয়াই প্রতীয়মান। আমরা জানি, ইআইএর মধ্যে জনমত যাচাই, স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত প্রভাব যাচাই করা হয় এবং জমি অধিগ্রহণের পূর্বেই এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তথায় অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণকে না জানাইয়া রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রকল্প অনুমোদন করানো হইয়াছে। প্রতিবেশগত প্রভাব নিরূপণ প্রতিবেদনেই যথায় গলদ রহিয়াছে, তথায় অপরিকল্পিত ও পরিবেশবিনাশী প্রকল্পগুলির পরিণতি বলিবার অপেক্ষা রাখে না। এমনকি ত্রুটিপূর্ণ ইআইএ প্রতিবেদনেও প্রাণ-প্রকৃতি ও স্থানীয় মানুষের সুরক্ষার জন্য যেই সকল পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব রাখা হইয়াছিল, সেইগুলিও যথাযথভাবে মান্য করা হয় নাই। পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা সমকালের নিকট ইহাও বলিয়াছেন, অনেক প্রকল্পে তাহারা আপত্তি জানাইলেও ‘উপরের চাপে’ ছাড় দিতে হইয়াছে।

ইহাতে মানুষের পাশাপাশি পরিবেশের অন্যত্রও প্রভাব পড়িয়াছে ব্যাপক।
কলাপাড়ায় জাতীয় মৎস্য ইলিশ যদ্রূপ বিপন্নের পথে তদ্রূপ রামনাবাদ ও আন্ধারমানিক নদী এবং সংলগ্ন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল দূষিত হইয়া অন্যান্য জীববৈচিত্র্যও সংকটে পড়িয়াছে। কলাপাড়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পর ফসলের ফলন হ্রাস পাইয়াছে। বৃক্ষরাজির প্রবৃদ্ধিও তথৈবচ। উপরন্তু সমুদ্রতীর হইতে বালু উত্তোলন করিয়া নিচু আবাদি জমি পূর্ণকরণের ফলে লবণাক্ত পানিতে নিমজ্জিত হয় পুকুর ও মৎস্যবেষ্টনী। অর্থাৎ সমগ্র কলাপাড়া কৃষকের জন্য মরণফাঁদে পরিণত, যথায় তাহাদের রুটি-রুজির পথ বন্ধ হইবার উপক্রম। এমনকি অনেকে বাস্তুচ্যুত হইয়াও শেষ সম্বল ক্ষতিপূরণ না পাইয়া আদালতের দ্বারস্থ হইয়াছেন।

আমরা জানি, জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ বিবিধ কারণে স্বভাবতই কৃষিজমি হ্রাস পাইতেছে। অপরিকল্পিত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উহার গতি ত্বরান্বিত করিয়াছে, যাহাতে কৃষি ও পরিবেশ পড়িয়াছে সংকটে। কলাপাড়া এই ক্ষেত্রে যেই মন্দ নজির দেখাইয়াছে, উহা হইতে শিক্ষা লওয়া জরুরি। আমরা মনে করি, কলাপাড়ার এহেন দুরবস্থায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও উন্নয়নে সরকারের পক্ষে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন জরুরি। সেইখানে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশের যেই ক্ষতি করিয়াছে, উহার পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয় বিবেচনা করা যাইতে পারে। উহা অপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ, কৃষকের জমি ফিরাইয়া দিবার বন্দোবস্ত। এই ক্ষেত্রে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নের যথাযথ প্রয়োগের বিষয়ও খতাইয়া দেখিতে হইবে। উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে শস্যভান্ডারখ্যাত কলাপাড়ায় কৃষিতে যেই আঘাত পড়িয়াছে, উহা ব্যাখ্যাতীত। তবে জরুরি প্রকল্পে যথাযথ ইআইএ করা, জমি হ্রাস পাইলেও  কৃষকদের উচ্চফলনশীল জাতের আবাদে উৎসাহী করা এবং পরিবেশের সহিত 
খাপ খাওয়ানো জাত উদ্ভাবনের বিষয়ও সম্মুখে সমুপস্থিত। পরিবেশবিনাশী উন্নয়নে যে শেষ বিচারে উপকার অপেক্ষা ক্ষতিই অধিক সাধিত হয়, কলাপাড়া হইতে পারে উহার ‘উৎকৃষ্ট’ উদাহরণ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ