Samakal:
2025-07-29@19:51:13 GMT

এবার কোরবানি কম ১৫ লাখ

Published: 11th, June 2025 GMT

এবার কোরবানি কম ১৫ লাখ

এবার সারাদেশে ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৪টি পশু কোরবানি হয়েছে। গত বছর কোরবানি হয়েছিল ১ কোটি ৬ লাখ ২১ হাজার ২২৮টি গবাদি পশু। সে হিসাবে গত বছরের চেয়ে এবার কোরবানি ১৪ লাখ ৮৪ হাজার ৫৪৪টি কম। 

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এবার পশু মজুত ছিল ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি। সে অনুযায়ী ৩৩ লাখ ১০ হাজার ৬০৩টি পশু অবিক্রীত রয়েছে। গত বছর মজুত ছিল ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি পশু। সে অনুযায়ী ২৩ লাখ ৫৯ হাজার ১৩৯টি পশু অবিক্রীত থেকে যায়।

২০২৩ সালে কোরবানিযোগ্য পশু ছিল ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি। এর মধ্যে ১ কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি পশু কোরবানি হয়, অর্থাৎ ২৪ লাখ ৯৪ হাজার ৫২১টি পশু অবিক্রীত ছিল। আর ২০২২ সালে সারাদেশে ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি পশু কোরবানি হয়েছিল।

গতকাল মঙ্গলবার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর যেসব পশু কোরবানি হয়েছে, এর মধ্যে গরু-মহিষ ৪৭ লাখ ৫ হাজার ১০৬টি, ছাগল-ভেড়া ৪৪ লাখ ৩০ হাজার ৬৬৮টি ও অন্যান্য ৯৬০টি।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর স্তরায়িত দৈব নমুনায়নের (স্ট্র্যাটিফায়েড র‍্যান্ডম স্যাম্পলিং) ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করে এবারের হিসাব করেছে। প্রতিটি উপজেলার তিনটি গ্রাম (ছোট, মাঝারি ও বড়) থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে অন্তত ১ শতাংশ নমুনা। এত বেশি পশু অবিক্রীত থাকার কারণ হিসেবে অধিদপ্তর বলছে, এবার কোরবানির পশুর উৎপাদন বেশি ছিল। তাই পশু অবিক্রীত থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।

এদিকে, এত পশু অবিক্রীত থাকায় বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন খামারি ও ব্যাপারীরা। যারা বড় গরু হাটে তুলেছিলেন, এর অধিকাংশই অবিক্রীত রয়েছে। চড়া দামের খাবার খাইয়ে, ব্যাংক ঋণ নিয়ে যারা খামার করেছেন, তারা পড়েছেন সবচেয়ে বিপদে।

মানিকগঞ্জ, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, যশোরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের খামারি ও মৌসুমি পশু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা ছিল বেশি। সে তুলনায় বড় গরুর ক্রেতা ছিল খুব কম। 

অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এবার সবচেয়ে কম পশু কোরবানি হয়েছে সিলেট বিভাগে, যা ৩ লাখ ১৯ হাজার ৮২৩টি। এর পর রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগ, ৩ লাখ ৮৩ গাজার ১৬২টি।

সবচেয়ে বেশি কোরবানি হয়েছে রাজশাহী বিভাগে, এই সংখ্যা ২৩ লাখ ২৪ হাজার ৯৭১টি। এর পর ঢাকা বিভাগে, ২১ লাখ ৮৫ হাজার ৪০টি। চট্টগ্রাম বিভাগে কোরবানি হয়েছে ১৭ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩২টি, খুলনা বিভাগে ৮ লাখ ৪ হাজার ২২৪টি, বরিশাল বিভাগে ৪ লাখ ৭৮৩টি এবং রংপুর বিভাগে ৯ লাখ ৬৪ হাজার ৯৯৯টি। 

খামারিরা বলছেন, যারা গরু বিক্রি করতে পারেননি, উল্টো ঢাকায় এসে তাদের বাড়তি কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন গরু পালন করতেই হিমশিম খেতে হবে। কারণ আগের ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করলে নতুন ঋণও পাওয়া যাবে না। অন্যদিকে গোখাদ্যের দাম চড়া।

দেশের বড় এগ্রো ফার্মের একটি ‘বগুড়া ভান্ডার’। বগুড়া থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে গরু পাঠিয়ে থাকে খামারটি। কোরবানি ঘিরে বড় গরু বিক্রির টার্গেট থাকলেও এবার তারা পরিস্থিতি বুঝে আগেই ব্যবসা কিছুটা সংকুচিত করে আনে। খামারটির স্বত্বাধিকারী তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব জানান, ‌গত বছরের ছাগলকাণ্ডের পর খামার থেকে বড় গরু কেনার প্রবণতা কমতে শুরু করে। এবারের কোরবানিতে বড় গরু কম বিক্রির বিষয়টি আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন তিনি। তাই এ বছর তুলনামূলক মাঝারি থেকে ছোট গরুই বিক্রি করেছেন। তার খামারের সর্বোচ্চ বড় গরু বিক্রি হয়েছে ৭৫০ কেজি ওজনের।

তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব বলেন, গত বছর আমার ফার্ম থেকে ১ হাজার ২৫০ কেজি ওজনের গরু বিক্রি হয়েছিল। এবার বড় গরু রাখিনি। মাঝারি ও ছোট গরু বিক্রি করেছি ৭০টি। যারা নতুন করে বড় গরু তুলেছে এবং কোরবানিতে বিক্রির টার্গেট নিয়েছে, তারা বড় লোকসানের মুখে পড়েছে।

শুধু বগুড়া ভান্ডারই নয়, দেশের অন্য খামারেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বড় গরু অবিক্রীত রয়ে গেছে। এবার কোরবানির বাজারে বেশি চাহিদা ছিল ছোট ও মাঝারি গরুর। রাজধানীর হাটগুলোতে দেখা গেছে, ঈদের এক দিন আগেই হাটের ছোট ও মাঝারি গরু বিক্রি শেষ হয়ে যায়। পরে আবার ছোট গরু বিভিন্ন স্থান থেকে এনে হাটে তোলা হয়।

খামারিরা দাবি করছেন, সাধারণত বিত্তবানরাই বড় গরুর ক্রেতা। গত বছরের ছাগলকাণ্ড ও ব্রাহমা জাতের গরুর বিষয়টি দেশজুড়ে আলোচনায় আসার পর বড় গরুর ক্রেতা কমে গেছে। যে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন খামারিরা। এ কারণে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছেন কেউ কেউ। 

নড়াইলের চিত্রা এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী মিল্টন হোসেন বলেন, ‘এবার ৪৫টি গরু বিক্রি করেছি। এর মধ্যে ১ হাজার ৪০০ কেজি ওজনের গরুও আছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি অন্যদিক থেকে। অন্য বছর ঈদের এক মাস কিংবা ১৫ দিন আগেই বেশির ভাগ গরু বিক্রি হয়ে যেত। এবার ঈদের আগের দিনও আমি গরু বিক্রি করেছি। লাভ একেবারেই সীমিত ছিল। ঈদের আগে পরিবহন খরচ ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। কোরবানির বাজার এখন যে জায়গায় দাঁড়িয়েছে, আমাদের ব্যবসার ধরনই পাল্টাতে হবে। তাছাড়া ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি হওয়ায় খামারিরা দিন দিন বড় গরুতে আগ্রহ হারাচ্ছেন।’

অনেক খামারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক বড় গরু এবার অবিক্রীত রয়ে গেছে। তাছাড়া গরুর দামও ছিল কম। অথচ এসব গরুর পেছনে খরচ হয় অনেক বেশি। সে কারণে খামারিদের বড় অংশই এখন ছোট ও মাঝারি গরু লালনপালনে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

বড় গরু অবিক্রীত থাকার বিষয়টি সামগ্রিক কোরবানির অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে না বলে মনে করেন কৃষি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম সাত্তার মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‌অন্যবারের মতো এবারও মানুষ কোরবানি করেছেন। হয়তো ছোট গরু কিংবা ভাগে তারা কোরবানি দিয়েছেন। বড় গরু কোরবানিদাতা সবসময় সীমিত সংখ্যক হয়ে থাকে। এবার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নানা কারণে সে সংখ্যাটা হয়তো কমেছে; কিন্তু এটা বড় বিষয় নয়। এটা সাময়িক। আগামী বছর এমন পরিস্থিতি নাও থাকতে পারে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক রব ন অব ক র ত থ ক ক রব ন র গত বছর ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

বিসিএলে বিদেশি দল, এনসিএলে বিদেশি ক্রিকেটার

দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান নিয়ে প্রশ্ন আজকের নয়। জাতীয় ক্রিকেট লিগ, বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ যে মানের হয়, যেভাবে আয়োজন হয় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে হরহামেশা। অতীতে সমালোচনার পর কিছুটা মান বেড়েছে। কিন্তু তারপরও ‘আপ টু মার্ক’ হয়নি।

বিশেষ করে ঘরোয়া ক্রিকেটে দিব‌্যি পারফর্ম করা ক্রিকেটাররা যখন জাতীয় দলে এসে ধুকতে থাকেন তখন তারতম‌্য প্রকটভাবে ফুটে উঠে। এজন‌্য ঘরোয়া ক্রিকেটের মান বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। জাতীয় ক্রিকেট লিগে বিদেশি ক্রিকেটারকে নিয়ে আসতে চায় বিসিবি। এছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে যুক্ত করতে চায় বিদেশি দল।

বিসিবির পরিচালক ও টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম‌্যান আকরাম খান রাইজিংবিডিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আরো পড়ুন:

তিন সপ্তাহের জন্য আসছেন উড, মনোবিদ স্কট

সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার বেলায়েত হোসেন মারা গেছেন

বিসিএল শুরু থেকে ছিল ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক প্রতিযোগিতা। ওয়ালটন সেন্ট্রাল জোন, প্রাইম ব‌্যাংক সাউথ জোন, ইসলামী ব‌্যাংক ইষ্ট জোন ও বিসিবি নর্থ জোন নামে চারটি দল শুরুর কয়েক বছর বিসিএলে অংশ নিয়েছে। পেশাদারিত্বের ঘাটতি, পরিকল্পনার অভাব এবং বাণিজ‌্যিকভাবে লাভবান না হওয়ায় তিনটি ফ্রাঞ্চাইজি ধীরে ধীরে সরে যায়। পরবর্তীতে বিসিবি চারটি দলই নিজস্ব খরচে পরিচালনা করে বিসিএল চালু রাখে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বীতার অভাব বোঝা যায়।

এজন‌্য বিসিবি সামনের আসরে বিদেশ থেকে একটি দল নিয়ে আসতে চায়। শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে। বিসিএল যেই সময়ে আয়োজন করতে চাচ্ছে সেই সময়ে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে ব‌্যস্ত থাকবেন। আফগানিস্তানকে চূড়ান্ত করার পথে হাঁটছে। বিসিবির পুরো খরচেই অতিথি দল প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। বাকি তিনটি দল গঠন করবে বিসিবি।

আকরাম খান বলেছেন, ‘‘আমরা প্রথমবারের মতো বিসিএলে একটি বিদেশি দলকে পেতে যাচ্ছি। হয়তো তারা এ দল হিসেবে আসবে। নয়তো অন‌্য কোনো নামে। এক মাস এই টুর্নামেন্ট চলবে। ফেব্রুয়ারিতে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’’

এদিকে জাতীয় ক্রিকেট লিগে বিদেশি ক্রিকেটার অন্তর্ভূক্ত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে কোন প্রক্রিয়ায় তারা যুক্ত হবেন, কিভাবে আসবেন, পারিশ্রমিক কত হতে পারে সেসব নিয়ে এখনও কোনো উপায় খুঁজতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। তবে ভালোমানের বিদেশি খোঁজার প্রক্রিয়া চলছে।

তাদের পারিশ্রমিক চূড়ান্ত করা, পুরো আসরে অ‌্যাভেইলেভেল থাকবেন কিনা সেসব নিয়েও কাজ হচ্ছে। এজন‌্য আগেভাগে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চান না আকরাম।

আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দুই স্তরে জাতীয় ক্রিকেট লিগের খেলা অনুষ্ঠিত হবে। আট দলে একজন করে বিদেশি ক্রিকেটার রাখার ইচ্ছা বিসিবির। অতীতে বিদেশি ক্রিকেটার জাতীয় ক্রিকেট লিগে অংশ নিয়েছে। ইমরান ফরহাদ, আমির ওয়াসিমরা খেলেছেন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রথম শ্রেণির এই টুর্মামেন্টে।

মূলত প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি এবং মান বাড়াতে এই উদ‌্যোগ নিতে যাচ্ছে আয়োজকরা। যদিও একজন করে বিদেশি ক্রিকেটার খেলানোর নিয়ম প্লেয়িং কন্ডিশনে সব সময়ই ছিল, ছিল সর্বশেষ মৌসুমেও। বিভাগীয় দলগুলো আগ্রহ না থাকায় বিসিবিও জোর দেয়নি। তবে এবার বিসিবি বিদেশি ক্রিকেটারকে যুক্ত করবে। পাশাপাশি তাদের পারিশ্রমিক ও সুযোগ সুবিধার বিষয়টিও দেখভাল করবে।

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ