Samakal:
2025-06-12@13:18:52 GMT

এবার কোরবানি কম ১৫ লাখ

Published: 11th, June 2025 GMT

এবার কোরবানি কম ১৫ লাখ

এবার সারাদেশে ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৪টি পশু কোরবানি হয়েছে। গত বছর কোরবানি হয়েছিল ১ কোটি ৬ লাখ ২১ হাজার ২২৮টি গবাদি পশু। সে হিসাবে গত বছরের চেয়ে এবার কোরবানি ১৪ লাখ ৮৪ হাজার ৫৪৪টি কম। 

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এবার পশু মজুত ছিল ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি। সে অনুযায়ী ৩৩ লাখ ১০ হাজার ৬০৩টি পশু অবিক্রীত রয়েছে। গত বছর মজুত ছিল ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি পশু। সে অনুযায়ী ২৩ লাখ ৫৯ হাজার ১৩৯টি পশু অবিক্রীত থেকে যায়।

২০২৩ সালে কোরবানিযোগ্য পশু ছিল ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি। এর মধ্যে ১ কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি পশু কোরবানি হয়, অর্থাৎ ২৪ লাখ ৯৪ হাজার ৫২১টি পশু অবিক্রীত ছিল। আর ২০২২ সালে সারাদেশে ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি পশু কোরবানি হয়েছিল।

গতকাল মঙ্গলবার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর যেসব পশু কোরবানি হয়েছে, এর মধ্যে গরু-মহিষ ৪৭ লাখ ৫ হাজার ১০৬টি, ছাগল-ভেড়া ৪৪ লাখ ৩০ হাজার ৬৬৮টি ও অন্যান্য ৯৬০টি।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর স্তরায়িত দৈব নমুনায়নের (স্ট্র্যাটিফায়েড র‍্যান্ডম স্যাম্পলিং) ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করে এবারের হিসাব করেছে। প্রতিটি উপজেলার তিনটি গ্রাম (ছোট, মাঝারি ও বড়) থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে অন্তত ১ শতাংশ নমুনা। এত বেশি পশু অবিক্রীত থাকার কারণ হিসেবে অধিদপ্তর বলছে, এবার কোরবানির পশুর উৎপাদন বেশি ছিল। তাই পশু অবিক্রীত থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।

এদিকে, এত পশু অবিক্রীত থাকায় বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন খামারি ও ব্যাপারীরা। যারা বড় গরু হাটে তুলেছিলেন, এর অধিকাংশই অবিক্রীত রয়েছে। চড়া দামের খাবার খাইয়ে, ব্যাংক ঋণ নিয়ে যারা খামার করেছেন, তারা পড়েছেন সবচেয়ে বিপদে।

মানিকগঞ্জ, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, যশোরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের খামারি ও মৌসুমি পশু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা ছিল বেশি। সে তুলনায় বড় গরুর ক্রেতা ছিল খুব কম। 

অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এবার সবচেয়ে কম পশু কোরবানি হয়েছে সিলেট বিভাগে, যা ৩ লাখ ১৯ হাজার ৮২৩টি। এর পর রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগ, ৩ লাখ ৮৩ গাজার ১৬২টি।

সবচেয়ে বেশি কোরবানি হয়েছে রাজশাহী বিভাগে, এই সংখ্যা ২৩ লাখ ২৪ হাজার ৯৭১টি। এর পর ঢাকা বিভাগে, ২১ লাখ ৮৫ হাজার ৪০টি। চট্টগ্রাম বিভাগে কোরবানি হয়েছে ১৭ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩২টি, খুলনা বিভাগে ৮ লাখ ৪ হাজার ২২৪টি, বরিশাল বিভাগে ৪ লাখ ৭৮৩টি এবং রংপুর বিভাগে ৯ লাখ ৬৪ হাজার ৯৯৯টি। 

খামারিরা বলছেন, যারা গরু বিক্রি করতে পারেননি, উল্টো ঢাকায় এসে তাদের বাড়তি কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন গরু পালন করতেই হিমশিম খেতে হবে। কারণ আগের ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করলে নতুন ঋণও পাওয়া যাবে না। অন্যদিকে গোখাদ্যের দাম চড়া।

দেশের বড় এগ্রো ফার্মের একটি ‘বগুড়া ভান্ডার’। বগুড়া থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে গরু পাঠিয়ে থাকে খামারটি। কোরবানি ঘিরে বড় গরু বিক্রির টার্গেট থাকলেও এবার তারা পরিস্থিতি বুঝে আগেই ব্যবসা কিছুটা সংকুচিত করে আনে। খামারটির স্বত্বাধিকারী তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব জানান, ‌গত বছরের ছাগলকাণ্ডের পর খামার থেকে বড় গরু কেনার প্রবণতা কমতে শুরু করে। এবারের কোরবানিতে বড় গরু কম বিক্রির বিষয়টি আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন তিনি। তাই এ বছর তুলনামূলক মাঝারি থেকে ছোট গরুই বিক্রি করেছেন। তার খামারের সর্বোচ্চ বড় গরু বিক্রি হয়েছে ৭৫০ কেজি ওজনের।

তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব বলেন, গত বছর আমার ফার্ম থেকে ১ হাজার ২৫০ কেজি ওজনের গরু বিক্রি হয়েছিল। এবার বড় গরু রাখিনি। মাঝারি ও ছোট গরু বিক্রি করেছি ৭০টি। যারা নতুন করে বড় গরু তুলেছে এবং কোরবানিতে বিক্রির টার্গেট নিয়েছে, তারা বড় লোকসানের মুখে পড়েছে।

শুধু বগুড়া ভান্ডারই নয়, দেশের অন্য খামারেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বড় গরু অবিক্রীত রয়ে গেছে। এবার কোরবানির বাজারে বেশি চাহিদা ছিল ছোট ও মাঝারি গরুর। রাজধানীর হাটগুলোতে দেখা গেছে, ঈদের এক দিন আগেই হাটের ছোট ও মাঝারি গরু বিক্রি শেষ হয়ে যায়। পরে আবার ছোট গরু বিভিন্ন স্থান থেকে এনে হাটে তোলা হয়।

খামারিরা দাবি করছেন, সাধারণত বিত্তবানরাই বড় গরুর ক্রেতা। গত বছরের ছাগলকাণ্ড ও ব্রাহমা জাতের গরুর বিষয়টি দেশজুড়ে আলোচনায় আসার পর বড় গরুর ক্রেতা কমে গেছে। যে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন খামারিরা। এ কারণে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছেন কেউ কেউ। 

নড়াইলের চিত্রা এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী মিল্টন হোসেন বলেন, ‘এবার ৪৫টি গরু বিক্রি করেছি। এর মধ্যে ১ হাজার ৪০০ কেজি ওজনের গরুও আছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি অন্যদিক থেকে। অন্য বছর ঈদের এক মাস কিংবা ১৫ দিন আগেই বেশির ভাগ গরু বিক্রি হয়ে যেত। এবার ঈদের আগের দিনও আমি গরু বিক্রি করেছি। লাভ একেবারেই সীমিত ছিল। ঈদের আগে পরিবহন খরচ ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। কোরবানির বাজার এখন যে জায়গায় দাঁড়িয়েছে, আমাদের ব্যবসার ধরনই পাল্টাতে হবে। তাছাড়া ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি হওয়ায় খামারিরা দিন দিন বড় গরুতে আগ্রহ হারাচ্ছেন।’

অনেক খামারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক বড় গরু এবার অবিক্রীত রয়ে গেছে। তাছাড়া গরুর দামও ছিল কম। অথচ এসব গরুর পেছনে খরচ হয় অনেক বেশি। সে কারণে খামারিদের বড় অংশই এখন ছোট ও মাঝারি গরু লালনপালনে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

বড় গরু অবিক্রীত থাকার বিষয়টি সামগ্রিক কোরবানির অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে না বলে মনে করেন কৃষি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম সাত্তার মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‌অন্যবারের মতো এবারও মানুষ কোরবানি করেছেন। হয়তো ছোট গরু কিংবা ভাগে তারা কোরবানি দিয়েছেন। বড় গরু কোরবানিদাতা সবসময় সীমিত সংখ্যক হয়ে থাকে। এবার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নানা কারণে সে সংখ্যাটা হয়তো কমেছে; কিন্তু এটা বড় বিষয় নয়। এটা সাময়িক। আগামী বছর এমন পরিস্থিতি নাও থাকতে পারে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক রব ন অব ক র ত থ ক ক রব ন র গত বছর ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

অভিনেতা সমু চৌধুরীকে পরিবারের জিম্মায় দিতে চায় পুলিশ

দুপুর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিনেতা সমু চৌধুরীর গামছা পরা অবস্থায় গাছের নিচে শুয়ে থাকার ছবি ভাইরাল হয়। ছবির সূত্র ধরে অসুস্থ অবস্থায় অভিনেতাকে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার মশাখালী ইউনিয়নের একটি মাজার থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
এখন সমু চৌধুরীকে নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, পরিবারের জিম্মায় তাঁকে তুলে দেওয়া হবে।

আরও পড়ুনঅভিনেতা সমু চৌধুরীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ, কী হয়েছিল তাঁর২ ঘণ্টা আগে

পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘উনি এখন কিছুটা সুস্থতা অনুভব করছেন। আমার টিম তাঁর সঙ্গে আছে। অভিনয়শিল্পী সংঘের নেতাদের সঙ্গেও আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ চলছে। ঢাকা থেকে কয়েকজন রওনা হয়েছেন।’
সর্বশেষ অবস্থা জানতে যোগাযোগ করা হয় ছোট পর্দার শিল্পীদের সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘের সঙ্গে। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অভিনেতা রাশেদ মামুন অপু প্রথম আলোকে বলেন, ‘উনি এখন কোথাও যেতে চাচ্ছেন না। তাঁর সঙ্গে পুলিশ ও স্থানীয় মানুষজন আছেন। ওনার পরিবারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের টিম গফরগাঁওয়ের উদ্দেশে রওনা হবে। ঘটনাস্থলে গিয়ে বাকি বিষয় জানা যাবে।’

নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন সমু চৌধুরী। ১৯৯৫ সালে আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘আদরের সন্তান’ ছবির মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক। এরপর ‘দোলন চাঁপা’, ‘শত জনমের প্রেম’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘দেশ দরদী’, ‘মরণ নিয়ে খেলা’, ‘প্রেমের নাম বেদনা’, ‘যাবি কই’, ‘সুন্দরী বধূ’সহ বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ