কুমিল্লায় চাচা শ্বশুর গরম পানি দিয়ে স্বপ্না আক্তার নামে গৃহবধূর শরীর ঝলসে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার সকালে মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার বেনিখলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীকে ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।

স্বপ্না আক্তার প্রবাসী নাছির উদ্দিন মোল্লার স্ত্রী। ঘটনার পর গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন চাচা শ্বশুর আবদুল কুদ্দুস মোল্লা। 

স্বপ্নার স্বজনরা জানান, স্বপ্না আক্তারের স্বামী নাছির উদ্দিন মোল্লা সৌদি আরবে থাকেন। বুধবার সকালে নিজ বাড়ির উঠানে ভাত রান্না ও গরুর জন্য পানি গরম করছিলেন স্বপ্না। চুলার ধোঁয়া তাদের ঘরে যাচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে স্বপ্নার কাছে গিয়ে তাঁর শ্বশুর আবদুল খালেক মোল্লাকে গালাগালি করতে থাকেন চাচা শ্বশুর আবদুল কুদ্দুস মোল্লা। তখন প্রতিবাদ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে চুলায় বসানো গরম পানি স্বপ্নার শরীরে ঢেলে দেন। বাড়ির লোকজন সংকটাপন্ন অবস্থায় স্বপ্নাকে প্রথমে দেবিদ্বার উপজেলার একটি বেসরকারি হাসপাতালে এবং পরে ঢাকায় নেওয়া হয়।

স্বপ্নার সঙ্গে থাকা তাঁর ভগ্নিপতি জসিম উদ্দিন সবুজ মোবাইল ফোনে জানান, স্বপ্নার শরীরের বেশ কিছু অংশ ঝলসে গেছে, যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। নুসরাত আক্তার (৭) ও জিহান মোল্লা (৩) নামে দুটি সন্তান রয়েছে স্বপ্নার। 

স্বপ্নার শাশুড়ি ফিরোজা বেগম বলেন, ‘কুদ্দুস মোল্লা আমার ভাসুর। রান্নাঘরের চুলার ধোঁয়া তাদের ঘরে নাকি ঢুকে, এ নিয়ে আমাদের সঙ্গে বিরোধ। এ বিষয় নিয়ে আরও কয়েকবার কথা-কাটাকাটি হয়। এমন তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে গরম পানি ঢেলে আমার ছেলের বউয়ের শরীর জ্বালিয়ে দিবে তা ভাবতেও পারিনি।’

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে আবদুল কুদ্দুস মোল্লার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন কল রিসিভ করেননি।

বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মাহফুজুর রহমান জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর আবদুল কুদ্দুস মোল্লা পালিয়ে গেছেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গরম প ন আবদ ল ক দ দ স ম ল ল র আবদ ল গরম প ন

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে বন্য হাতির মৃত্যু ঠেকাতে বন বিভাগ আসলে কী করছে

সারা দেশে বন্য হাতির সংখ্যা হাতে গোনা। ২০১৬ সালের জরিপ অনুযায়ী, এই সংখ্যা মাত্র ২৬৮টি। এর মধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী, সাতকানিয়া ও লোহাগড়া—এ তিন উপজেলায় হাতি আছে ৩৫ থেকে ৪০টির মতো। তবে গত ১০ বছরে শুধু বাঁশখালী উপজেলায় ১৭টি হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। প্রায় প্রতিবছর হাতি মারা গেলেও হাতি রক্ষায় বন বিভাগ দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। বন্য প্রাণী–বিশেষজ্ঞদের মতে, বন বিভাগের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা না থাকায় বন্য হাতির মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না।

বন্য প্রাণী–বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাতি চলাচলের রাস্তা বা করিডর সংকুচিত হয়ে পড়া, হাতির আবাসস্থলে লোকালয় গড়ে তোলা, বনাঞ্চলে খাদ্যসংকট, বিদ্যুতের ফাঁদ বা বেড়ার এবং নানা রোগের সংক্রমণে হাতির মৃত্যু হচ্ছে। বন বিভাগ এসব ক্ষেত্রে থানায় ডায়েরি বা মামলা করেই দায় সারছে। এখন পর্যন্ত বন বিভাগ এ নিয়ে বড় কোনো প্রকল্প বা কর্মসূচি নেয়নি। বন্য প্রাণী রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা হয়েও হাতির মতো বিপন্ন প্রাণী রক্ষার কোনো উদ্যোগই নেয়নি। এমনকি অসুস্থ হাতির শুশ্রূষারও নেই কোনো ব্যবস্থা।

বাঁশখালীতেই ১৭ হাতির মৃত্যু, বন বিভাগের ভূমিকা

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার দুটি বন রেঞ্জে গত ১০ বছরে ১৭টি হাতির মৃত্যু ঘটেছে। এর মধ্যে জলদী রেঞ্জে মারা গেছে ৬টি আর কালিপুর রেঞ্জে ১১টি হাতি। এসব হাতির মৃত্যু হয়েছে কৃষকের পেতে রাখা বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে, বনদস্যুদের আক্রমণে, ঝিরির কাদায় আটকে, পাহাড় থেকে পড়ে ও খাদ্যে বিষক্রিয়ায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাতির মৃত্যু ঘটেছে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে।

দেখা গেছে, বিদ্যুতের ফাঁদ অপসারণ, এলাকার কৃষকদের সচেতন করা, হাতির আক্রমণ ঠেকাতে রেসপন্স টিম গঠনের মতো কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেসব স্থায়ী হয়নি।

বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, হাতি রক্ষায় বন বিভাগের কাছে প্রশিক্ষিত জনবল নেই। দুর্গম পাহাড়ে কোনো কারণে হাতি আক্রান্ত কিংবা অসুস্থ হলে সেটি নিয়ে এসে চিকিৎসা করানোর মতো ব্যবস্থা নেই। এর বাইরে বনাঞ্চলগুলোতে যথেষ্ট জলাধার না থাকায় হাতি লোকালয়ে আসে এবং আক্রান্ত হয়।

বাঁশখালীতে ১০ বছরে ১৭টি হাতির মৃত্যু উদ্বেগজনক এবং এতে স্পষ্ট হয় যে হাতি সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ ছিল নাআমিনুল ইসলাম, বন্য প্রাণী সংরক্ষক ও প্রধান নির্বাহী, বেঙ্গল ডিসকভার

বন বিভাগের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাতি রক্ষার জন্য জরুরি ভিত্তিতে হাতির অভয়ারণ্যে নাগরিক সুবিধা বন্ধ করা দরকার। পাশাপাশি বন্ধ করে দিতে হবে নতুন রাস্তা তৈরির কাজও। এর বাইরে সভ্যতার ছোঁয়া থেকে দূরে রাখতে আলো বা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা প্রয়োজন। শুধু তা–ই নয়, পাহাড়ের পাদদেশে বা পাহাড়ের আশপাশে জনসাধারণের খতিয়ানভুক্ত জমিগুলো অধিগ্রহণ করে জনসাধারণের যাতায়াত কমিয়ে আনা এবং বনাঞ্চল বৃদ্ধি করা দরকার।

হাতির ১২টি করিডরের কী অবস্থা

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে জরিপ করে হাতির ১২টি হাতির চলাচলের পথের (করিডর) সন্ধান পায়। বাংলাদেশে হাতি চলাচলের জন্য চিহ্নিত এসব করিডরের মধ্যে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের তিনটি, উত্তর বন বিভাগের পাঁচটি এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের চারটি রয়েছে।

আইইউসিএন বাংলাদেশে যে ১২ হাতির করিডর চিহ্নিত করেছিল সরকার সেগুলো নির্দিষ্ট করে গেজেট প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, হাতির আবাসস্থল ও পরিবেশ টেকসই রাখতে, তাদের খাদ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিতের পাশাপাশি চলাচলের করিডর উন্মুক্ত রাখার প্রতি সরকার গুরুত্ব দিয়েছে।

বন বিভাগ জানায়, ১২ করিডরের মধ্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন চুনতি-সাতগড় করিডর অনেকটা বন্ধ আছে। রেললাইন স্থাপনের কারণে এ করিডর দিয়ে হাতি চলাচল কমে এসেছে। ওই রেললাইনের কারণে চুনতি এলাকার হাতি চুনতিতে এবং বাঁশখালী এলাকার হাতি বাঁশখালীতে আটকা পড়েছে। এতে হাতির প্রজনন ও বংশবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বারবার একই এলাকায় হাতির প্রজনন হলে, হাতির আকার ছোট হয়ে আসে এবং ওই হাতিশাবক অপেক্ষাকৃত দুর্বল হয়। তাই সরকার স্বীকৃত ১২টি করিডরসহ অন্য করিডরগুলোতে নির্বিঘ্নে হাতি চলাচলের সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি। কিন্তু এসব করিডরের অনেকগুলোতেই মানববসতি গড়ে উঠেছে।

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পাহাড় থেকে পড়ে মৃত হাতি

সম্পর্কিত নিবন্ধ