কাঁচাবাজারে ক্রেতা কম, দাম স্থিতিশীল
Published: 12th, June 2025 GMT
ঈদের পর রাজধানীর কাঁচাবাজারে এখনও জমে ওঠেনি বেচাকেনা। বাজারে যেমন ক্রেতার উপস্থিতি কম, তেমনি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি পণ্য সরবরাহও। তবে সবজির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বেশ কমতির দিকে মুরগি ও ডিমের দাম। তবে কিছুটা ঊর্ধ্বগতি রয়েছে মাছের বাজারে। গতকাল বুধবার বিকেলে কারওয়ান বাজার, তেজকুনিপাড়া ও নাখালপাড়া সমিতির বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজার হলো ঢাকার অন্যতম বড় পাইকারি বাজার। গতকাল সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, সবজির আড়তগুলো বেশ ফাঁকা। খুচরা বাজারেও একই অবস্থা। সবজি বিক্রেতাদের বেশির ভাগ দোকান বন্ধ। মুদি পণ্যের কিচেন মার্কেটেরও বেশির ভাগ দোকান বন্ধ।
ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের লম্বা ছুটি থাকায় ক্রেতা হাতেগোনা। ব্যবসায়ীদের অনেকেই বাড়ি থেকে ফেরেননি। ফলে অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ। পণ্য সরবরাহ কম। বেচাকেনা জমে ওঠেনি। এ কারণে জিনিসপত্রের দামও স্বাভাবিক রয়েছে। তবে ঈদের দুই দিন আগে ও পরে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সালাদ তৈরির উপকরণ শসা, কাঁচা মরিচ, গাজর, টমেটো ও লেবুর দাম বেড়েছিল। এখন ধীরে ধীরে এসব পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে।
গতকাল খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ সবজির দাম ২৫ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে রয়েছে। যেমন, প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়স ২৫-৩০, পেঁপে ৩০-৪০, ধুন্দল ২৫-৪০, চিচিঙ্গা ৩০-৩৫, পটোল ৩৫-৪০, বেগুন ৫০-৬০, বরবটি ৪০-৫০, টমেটো ও শসা ৫০-৬০ টাকা দরে কেনা যাচ্ছে। এ ছাড়া কাঁচা মরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৭০ টাকা দরে।
একই পরিস্থিতি দেখা গেছে, মুরগি ও ডিমের বাজারে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৫৫ ও সোনালি মুরগির কেজি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুরগির দোকানগুলোকে মোটামুটি ক্রেতার আনাগোনা ছিল। এ ছাড়া প্রতি ডজন ফার্মের ডিম কেনা যাচ্ছে ১২০ টাকায়। তবে পাড়া-মহল্লায় ডিমের ডজন কিনতে ক্রেতাকে কিছুটা বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। মহল্লার দোকানিরা ডিমের ডজন রাখছেন ১২৫ টাকা। কমবেশি সবার বাসায় কোরবানির মাংস থাকায় মাংসের দোকানগুলো বন্ধ দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা দুলাল হোসেন সমকালকে বলেন, ‘অনেকদিন ছুটি থাকায় মানুষ এখনও গ্রামে। বাজারে কাস্টমার কম। এ কারণে সব সবজির দাম কম।’ তবে আগামী শনি-রবিবার থেকে বেচাকেনা বাড়বে বলে মনে করেন এই ছোট ব্যবসায়ী।
তবে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী দেখা গেছে মাছের বাজার। বিশেষ করে আকারভেদে রুই-কাতলা মাছের কেজি ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, পাঙ্গাসের কেজি ১৮০ থেকে ২০০, তেলাপিয়ার কেজি ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। নাখালপাড়া সমিতির বাজারের মাছ বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, প্রতি বছর কোরবানি ঈদের পর মাছের দাম বেড়ে যায়। এর পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, এ সময় উৎপাদন এলাকা থেকে ঢাকায় মাছ কম আসে। দ্বিতীয়ত, ঈদের পরে বেশির ভাগ বাসা-বাড়িতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে। ফলে চাহিদা বেড়ে যায়। যে কারণে দাম বাড়ে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সবজ র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।
অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।
দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন। ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’
যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’
যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।
পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।
আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪