অম্বিকার দেখা মিলল যশোরের হর্টিকালচার সেন্টারে। আমের এই জাতকে বলা হয় আম্রপালির কন্যা। আম্রপালির মতো স্বাদ ও ঘ্রাণ—সবই আছে এতে। আর গায়ের রং? অম্বিকা নজরকাড়া লাল রংটা পেয়েছে জনার্দন পছন্দ থেকে। এই আমকে বলা হচ্ছে অম্বিকার বাবা।

আম্রপালি, অম্বিকা ও জনার্দন পছন্দ—তিনটিই ভারতের জনপ্রিয় আমের জাত। মূলত আম্রপালি ও জনার্দন পছন্দ—এই দুই জাতের সংকরে অম্বিকার জন্ম। এ কারণেই আম দুটিকে অম্বিকার মা-বাবা বলা হয়। উন্নত জাতের এই আম ২০০০ সালে উদ্ভাবন করে ভারতের কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা।

১৫ মে যশোরের হর্টিকালচার সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, অম্বিকা ও বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম হিসেবে পরিচিত জাপানের ‘সূর্যডিম’-এর গাছ একেবারে পাশাপাশি। দুই আমের রংও প্রায় কাছাকাছি। সূর্যডিমের রং উজ্জ্বল লালচে আর অম্বিকার রং সেই তুলনায় একটু হালকা। দুটিই নজরকাড়া।

হর্টিকালচার সেন্টারে অম্বিকার এক বছরের একটি চারাগাছে একটি আমই ঝুলে ছিল। ওজন ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ গ্রাম। আমটির নিরাপত্তার জন্য সব সময় চালু রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। এত নিরাপত্তার কারণও আছে। দেশের মাটিতে এই প্রথমবারের মতো যশোরের হর্টিকালচার সেন্টারে অম্বিকার ফলন ধরেছে।

উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা জানান, অম্বিকা আম্রপালির মতোই মিষ্টি, আঁশ কম ও সুস্বাদু। ঘ্রাণও দুটি আমের একই। যে গুণ অম্বিকাকে আম্রপালি থেকে আলাদা করেছে, তা হলো গায়ের রং। কাঁচা অবস্থায় আম্রপালির রং সবুজ। পাকলে হালকা হলুদ হতে পারে। তবে কাঁচা অম্বিকার রং হয় লালচে। পাকা অবস্থায় উজ্জ্বল হলুদ রঙের সঙ্গে লালের আভাটা থেকে যায়।

যশোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক দীপংকর দাশ বলেন, আম্রপালি বাংলাদেশে জনপ্রিয়তার শীর্ষের দিকে রয়েছে; কিন্তু এই আমের জাত বেশ পুরোনো। ফলে আম্রপালির জেনেটিক সেগ্রিগেশন (কৌলিক গুণ) হারিয়ে যাচ্ছে। আমের আকার ছোট হয়ে আসছে। ফলন কমে যাচ্ছে। জাত দুর্বল হয়ে যাওয়ায় পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়েছে। এ কারণে আম্রপালির স্বাদ ও গন্ধ ঠিক রেখে নতুন কিছু গুণসংবলিত অম্বিকা জাত উদ্ভাবন করে ভারত। বেসরকরিভাবে ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে এই আমের চারা ভারত থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। পরে সেগুলো থেকে চারা তৈরি করে কৃষকদের দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ বছর প্রথম একটি গাছে আম ধরেছে। আগস্টের মাঝামাঝি এটি পরিপক্ব হবে।

অম্বিকা জাতের আম প্রথম নজরে পড়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক উদ্ভিদবিজ্ঞানী কে জে এম আবদুল আওয়ালের। তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেটে দেখলাম, ভারত আম্রপালি ও জনার্দন পছন্দ জাতের দুটি আম সংকর করে অম্বিকা নামে নতুন একটি জাত উদ্ভাবন করেছে। অম্বিকার মা হলো আম্রপালি আর বাবা জনার্দন পছন্দ। চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে আমি অম্বিকা আম খেয়েছি। এই আমের স্বাদ একদমই আম্রপালির মতো।’

এরপর যশোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক দীপংকর দাশকে অম্বিকার চারা ভারত থেকে সংগ্রহের পরামর্শ দেন কে জে এম আবদুল আওয়াল। ২০২৩ সালের জুন মাসে স্থানীয় একজন চারা উৎপাদনকারীকে দিয়ে ভারত থেকে ছয়টি অম্বিকার চারা সংগ্রহ করেন দীপংকর দাশ। এর মধ্যে তিনটি চারা যশোরে আর দুটি চারা দিনাজপুর ও ঢাকার আসাদগেট হর্টিকালচার সেন্টারে পাঠানো হয়। গত দুই বছরে যশোরের তিনটি চারা থেকে অন্তত ১০০টি চারা তৈরি করা হয়েছে। বড় তিনটি চারাগাছের একটিতে এ বছর ছয়-সাতটি মুকুল আসে। এর মধ্যে টিকে যায় একটি আম।

উদ্ভিদবিজ্ঞানী কে জে এম আবদুল আওয়াল বলেন, ‘যশোর হর্টিকালচার সেন্টারে প্রথমবারের মতো অম্বিকা জাতের আম ধরেছে। দেশের ৮৩টি হর্টিকালচার সেন্টারে কোথাও আগে এই আমের চারা ছিল না। সব সেন্টারে দু–একটি করে এই চারা পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছি। এটি নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে হবে। সব মাটিতে সব পরিবেশে অম্বিকার ফলন কেমন হয় তা দেখতে হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ই আম র যশ র র

এছাড়াও পড়ুন:

সব মাধ্যমে কাজ করতে চান জৌপারী

২০১০ সালে ঢাকায় এসেছেন বান্দরবানের মেয়ে জৌপারী লুসাই। পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন, ঘুণাক্ষরেও অভিনয়ে আসার কথা ভাবেননি। ২০১২ সালে এনটিভির টেলিফিল্ম শেষ বলে কিছু নেই দিয়ে প্রথমবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান জৌপারী। তখন বিএএফ শাহীন কলেজে পড়তেন। এক বন্ধুর কাছে শুনলেন টেলিফিল্মে এক কিশোরী চরিত্রের জন্য শিল্পী খুঁজছেন নির্মাতা মেজবাউর রহমান। পরে অডিশন দিয়ে টিকে যান।

নিজেকে প্রথমবার ছোট পর্দায় দেখে রীতিমতো আপ্লুত হয়েছিলেন। সেই সময়ের অনুভূতিকে অনেকটা ‘প্রথম প্রেমে পড়ার’ মতো বললেন এই তরুণ অভিনেত্রী। টেলিফিল্মটি প্রচারের পর পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছিলেন, যেটি তাঁকে অভিনয়ে অনুপ্রাণিত করেছে।


‘রেহানা মরিয়ম নূর’ থেকে ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের আলোচিত সিনেমা রেহানা মরিয়ম নূর-এ মিমি চরিত্রে অভিনয় করে নজর কেড়েছেন জৌপারী। এটি ২০২১ সালে বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা হিসেবে কান চলচ্চিত্র উৎসবের ‘আঁ সার্তে রিগা’ বিভাগে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান খেলনাছবির বিজ্ঞাপন করেছিলাম, সেখানে নির্মাতা সাদ ভাইও ছিলেন।’ খেলনাছবির সূত্র ধরেই সিনেমাটিতে কাজের সুযোগ পান তিনি। ২০১৭ সালে সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হন, ২০১৮ সালে শুটিং করেন।
জৌপারী লুসাই বলেন, ‘সিনেমাটি করার আগে অভিনয় নিয়ে খুব একটা বুঝতাম না। সিনেমাটি করার পর অভিনয়কে সিরিয়াসলি নিই। তখন মনে হয়েছিল অভিনয় চালিয়ে যাব। সঙ্গে অভিনয় শিখবও।’

আরও পড়ুনশাকিবের ‘তাণ্ডব’, রাজের ‘ইনসাফ’–এ কাজ করা কে এই তরুণ সংগীত পরিচালক২৫ জুন ২০২৫

বঙ্গ অরিজিনাল সিরিজ বিএনজি-তে অভিনয় করে তরুণ দর্শকের কাছে পৌঁছেছেন জৌপারী। আরেক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র সারভাইভ-এও মূল চরিত্রে দেখা গেছে তাঁকে। তিনি বলেন, ‘বিএনজি ও সারভাইভ দুটি কাজের জন্যই খুব ভালো রেসপন্স পেয়েছি। দুটি কাজ দেখে অনেকে আমাকে চিনেছেন।’
প্রায় এক যুগের ক্যারিয়ারে কোন কাজটিকে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বলবেন? জৌপারী বলেন, ‘আসলে এটা আমার পক্ষে বলা কঠিন। প্রতিটা কাজই মন থেকেই করি। আমি কাজ করে যেতে চাই, কাজটাকে ভালোবাসি।’
এর মাঝে অভিনয়ে নিজেকে শাণিত করতে নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ জামিল আহমেদের কর্মশালায় অংশ নেন জৌপারী। জামিল আহমেদ নির্দেশিত আমি বীরাঙ্গনা বলছি-এ একজন নির্যাতিতা পাহাড়ি নারীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি।

‘পারফেক্ট ওয়াইফ’ ইরা
২২ অক্টোবর মুক্তি পাওয়া চরকির ফ্ল্যাশ ফিকশন পারফেক্ট ওয়াইফ-এ একজন জাপানি তরুণী ইরার চরিত্রে অভিনয় করেছেন জৌপারী। ফিকশনটি পরিচালনা করেছেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম। ফিকশনটি মুক্তির পর ভালো সাড়া পাচ্ছেন জানিয়ে জৌপারী বলেন, ‘আমার পরিচিতদের মধ্যে যাঁরা কাজটা দেখেছেন, তাঁরা সবাই চরিত্রটা পছন্দ করেছেন। অনেকে বলেছেন, তুমি রোবট না মানুষ।’
সেলিমের পরিচালনায় এবারই প্রথম কাজ করেছেন তিনি। কাজের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক ভালো। কারণ, উনি আসলে অ্যাক্টিংটাকে দারুণভাবে ডিল করেন। খুবই আরাম করে আমি কাজ করেছি। অভিনয়ের ক্ষেত্রে পরিচালক অনেক ম্যাটার করে। আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ যে রকম আমাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন, যেভাবে ইচ্ছা তুমি করো, ঠিক একইভাবে আমি বলব যে এই চরিত্রটা (ইরা) করতে গিয়ে আমি আমার মনে হয়েছে যে আমি আরও বেশি এনজয় করেছি।’

আরও পড়ুনসব ধরনের চরিত্র করতে চান এই তরুণ অভিনেত্রী ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সব মাধ্যমে কাজ করতে চান
ওটিটি, প্রেক্ষাগৃহের সিনেমা থেকে টিভি নাটক—সব মাধ্যমেই কাজ করেছেন জৌপারী। তিনি বলেন, ‘টিভি হোক, ওটিটি হোক কিংবা সিনেমা—সব মাধ্যমেই অভিনয় করতে চাই।’
ক্যারিয়ারের প্রথম সিনেমা রেহানা মরিয়ম নূর-এর পর আর কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি। মাঝে এনামুল করিম নির্ঝরের একটি সিনেমার কাজ শেষ করেছেন, তবে সিনেমাটি এখনো মুক্তি পায়নি।
অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিতে চান জানিয়ে জৌপারী বলেন, ‘আমি অভিনয়ের কোন স্টেজে আছি, জানি না। তবে অভিনয়টা আমার প্রফেশন। আমার প্যাশনের জায়গাও। আমি এটা সারা জীবন করে যেতে চাই।’
সামনে কী করছেন? তিনি বলেন, এখনো কোনো কাজ চূড়ান্ত হয়নি, তবে কিছু কাজের কথাবার্তা চলছে। যদি সবকিছু কনফার্ম হয়, তাহলে তো সামনের বছর দেখা যেতে পারে।
জৌপারী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিডিয়া স্টাডিজ ও জার্নালিজমে পড়াশোনা করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কে হবে নারী বিশ্বকাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন
  • ভারত নাকি দক্ষিণ আফ্রিকা, কে হবে নতুন নারী বিশ্বকাপ চ‌্যাম্পিয়ন
  • বিশ্বকাপ ফাইনালের প্রতি টিকিটের দাম দেড় লাখ টাকার বেশি
  • গোল্ডেন বুট হাতে এমবাপ্পে বললেন, রিয়ালে আরও বহু বছর থাকতে চাই
  • সব মাধ্যমে কাজ করতে চান জৌপারী