নতুন জাতের আম অম্বিকার দেখা যশোরে
Published: 12th, June 2025 GMT
অম্বিকার দেখা মিলল যশোরের হর্টিকালচার সেন্টারে। আমের এই জাতকে বলা হয় আম্রপালির কন্যা। আম্রপালির মতো স্বাদ ও ঘ্রাণ—সবই আছে এতে। আর গায়ের রং? অম্বিকা নজরকাড়া লাল রংটা পেয়েছে জনার্দন পছন্দ থেকে। এই আমকে বলা হচ্ছে অম্বিকার বাবা।
আম্রপালি, অম্বিকা ও জনার্দন পছন্দ—তিনটিই ভারতের জনপ্রিয় আমের জাত। মূলত আম্রপালি ও জনার্দন পছন্দ—এই দুই জাতের সংকরে অম্বিকার জন্ম। এ কারণেই আম দুটিকে অম্বিকার মা-বাবা বলা হয়। উন্নত জাতের এই আম ২০০০ সালে উদ্ভাবন করে ভারতের কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা।
১৫ মে যশোরের হর্টিকালচার সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, অম্বিকা ও বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম হিসেবে পরিচিত জাপানের ‘সূর্যডিম’-এর গাছ একেবারে পাশাপাশি। দুই আমের রংও প্রায় কাছাকাছি। সূর্যডিমের রং উজ্জ্বল লালচে আর অম্বিকার রং সেই তুলনায় একটু হালকা। দুটিই নজরকাড়া।
হর্টিকালচার সেন্টারে অম্বিকার এক বছরের একটি চারাগাছে একটি আমই ঝুলে ছিল। ওজন ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ গ্রাম। আমটির নিরাপত্তার জন্য সব সময় চালু রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। এত নিরাপত্তার কারণও আছে। দেশের মাটিতে এই প্রথমবারের মতো যশোরের হর্টিকালচার সেন্টারে অম্বিকার ফলন ধরেছে।
উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা জানান, অম্বিকা আম্রপালির মতোই মিষ্টি, আঁশ কম ও সুস্বাদু। ঘ্রাণও দুটি আমের একই। যে গুণ অম্বিকাকে আম্রপালি থেকে আলাদা করেছে, তা হলো গায়ের রং। কাঁচা অবস্থায় আম্রপালির রং সবুজ। পাকলে হালকা হলুদ হতে পারে। তবে কাঁচা অম্বিকার রং হয় লালচে। পাকা অবস্থায় উজ্জ্বল হলুদ রঙের সঙ্গে লালের আভাটা থেকে যায়।
যশোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক দীপংকর দাশ বলেন, আম্রপালি বাংলাদেশে জনপ্রিয়তার শীর্ষের দিকে রয়েছে; কিন্তু এই আমের জাত বেশ পুরোনো। ফলে আম্রপালির জেনেটিক সেগ্রিগেশন (কৌলিক গুণ) হারিয়ে যাচ্ছে। আমের আকার ছোট হয়ে আসছে। ফলন কমে যাচ্ছে। জাত দুর্বল হয়ে যাওয়ায় পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়েছে। এ কারণে আম্রপালির স্বাদ ও গন্ধ ঠিক রেখে নতুন কিছু গুণসংবলিত অম্বিকা জাত উদ্ভাবন করে ভারত। বেসরকরিভাবে ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে এই আমের চারা ভারত থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। পরে সেগুলো থেকে চারা তৈরি করে কৃষকদের দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ বছর প্রথম একটি গাছে আম ধরেছে। আগস্টের মাঝামাঝি এটি পরিপক্ব হবে।
অম্বিকা জাতের আম প্রথম নজরে পড়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক উদ্ভিদবিজ্ঞানী কে জে এম আবদুল আওয়ালের। তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেটে দেখলাম, ভারত আম্রপালি ও জনার্দন পছন্দ জাতের দুটি আম সংকর করে অম্বিকা নামে নতুন একটি জাত উদ্ভাবন করেছে। অম্বিকার মা হলো আম্রপালি আর বাবা জনার্দন পছন্দ। চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে আমি অম্বিকা আম খেয়েছি। এই আমের স্বাদ একদমই আম্রপালির মতো।’
এরপর যশোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক দীপংকর দাশকে অম্বিকার চারা ভারত থেকে সংগ্রহের পরামর্শ দেন কে জে এম আবদুল আওয়াল। ২০২৩ সালের জুন মাসে স্থানীয় একজন চারা উৎপাদনকারীকে দিয়ে ভারত থেকে ছয়টি অম্বিকার চারা সংগ্রহ করেন দীপংকর দাশ। এর মধ্যে তিনটি চারা যশোরে আর দুটি চারা দিনাজপুর ও ঢাকার আসাদগেট হর্টিকালচার সেন্টারে পাঠানো হয়। গত দুই বছরে যশোরের তিনটি চারা থেকে অন্তত ১০০টি চারা তৈরি করা হয়েছে। বড় তিনটি চারাগাছের একটিতে এ বছর ছয়-সাতটি মুকুল আসে। এর মধ্যে টিকে যায় একটি আম।
উদ্ভিদবিজ্ঞানী কে জে এম আবদুল আওয়াল বলেন, ‘যশোর হর্টিকালচার সেন্টারে প্রথমবারের মতো অম্বিকা জাতের আম ধরেছে। দেশের ৮৩টি হর্টিকালচার সেন্টারে কোথাও আগে এই আমের চারা ছিল না। সব সেন্টারে দু–একটি করে এই চারা পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছি। এটি নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে হবে। সব মাটিতে সব পরিবেশে অম্বিকার ফলন কেমন হয় তা দেখতে হবে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত–পাকিস্তান লড়াই: একসময় আগুন জ্বলত, এখন শুধু ধোঁয়া
ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক সব সময়ই দুই দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কৌশল অনুযায়ী এগিয়েছে।
অতীতেও দ্বিপক্ষীয় সিরিজে লম্বা বিরতি দেখা গেছে। ১৯৫৪ থেকে ১৯৭৮—টানা ২৪ বছর পাকিস্তান সফরে যায়নি ভারত। আবার ১৯৬০ সালের পর পাকিস্তানও প্রথমবারের মতো ভারতে খেলতে যায় ১৯৭৯ সালে।
এরপর ১৯৮২ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান নিয়মিত মুখোমুখি হয়েছে। এই সময়ে ভারত তিনবার পাকিস্তান সফরে গিয়ে খেলে ১২ টেস্ট, পাকিস্তানও ভারতে গিয়ে খেলে ৮ টেস্ট।
দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৯৯ সালে পাকিস্তান তিন টেস্ট খেলতে ভারতে যায়। এর মধ্যে একটি ছিল কলকাতার ইডেন গার্ডেনে প্রথম এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। ভারত ফিরতি টেস্ট সিরিজ খেলতে পাকিস্তানে যায় ২০০৪ সালে, যা ছিল ১৯৮৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকারের অভিষেকের পর প্রথমবার।
২০০৪ সালের পাকিস্তান সফরে কড়া নিরাপত্তায় ব্যাটিংয়ে নামেন শচীন টেন্ডুলকার