বিশ্বখ্যাত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ওপেনএআই তাদের সর্বশেষ রিজনিং মডেল ওথ্রি-প্রো উন্মুক্ত করেছে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, এটি এখন পর্যন্ত তাদের তৈরি সবচেয়ে দক্ষ ও উন্নত মডেল। গত মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক ঘোষণায় ওপেনএআই জানায়, পূর্ববর্তী সংস্করণ ওথ্রির তুলনায় নতুন এই মডেল লেখালেখি, প্রোগ্রামিং, তথ্য বিশ্লেষণ, গণিত ও শিক্ষা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি এনেছে। পর্যালোচকদের উদ্ধৃতি দিয়ে ওপেনএআই বলেছে, ওথ্রি-প্রো পরিপূর্ণতা, নির্দেশনা অনুসরণ এবং নির্ভুলতার দিক থেকে আগের যেকোনো মডেলের তুলনায় এগিয়ে। বর্তমানে ওথ্রি-প্রো ওপেনএআইয়ের প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস এবং চ্যাটজিপিটি প্রো ও টিম সংস্করণে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। আগামী সপ্তাহে এটি এন্টারপ্রাইজ ও এডু গ্রাহকদের জন্য চালু করা হবে।

রিজনিং মডেল এমন একধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি, যা কোনো সমস্যাকে ধাপে ধাপে বিশ্লেষণ করে সমাধানে পৌঁছাতে পারে। ওপেনএআই বলছে, এই পদ্ধতির ফলে ফলাফল হয় আরও নির্ভরযোগ্য ও যুক্তিযুক্ত। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, ওথ্রি-প্রো বিশেষত গণিত, বিজ্ঞান ও কোডিংয়ের মতো জটিল কাজগুলোতে দারুণ দক্ষতা দেখাতে সক্ষম। প্রকাশিত বেঞ্চমার্ক ফলাফলেও দেখা গেছে, এটি আগের দুটি সংস্করণ ওয়ান-প্রো এবং ওথ্রির চেয়ে এগিয়ে।

তবে রিজনিং মডেলকে ঘিরে কিছু সীমাবদ্ধতার বিষয়ও সামনে এসেছে। অ্যাপলের গবেষকেরা এক পরীক্ষায় দেখিয়েছেন, ক্ল্যাসিক ধাঁধা ‘টাওয়ার অব হ্যানয়’ সমাধানে ওপেনএআইয়ের ওথ্রি-মিনি মডেল জটিলতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত সমস্যার সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়েছে, যদিও কম্পিউটিং ক্ষমতা যথেষ্ট ছিল। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, এটি ছিল একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে পরিচালিত পরীক্ষা। সেখানে মানুষের পারফরম্যান্সের সঙ্গে মডেলের তুলনাও করা হয়নি। এর ফলে রিজনিং মডেলের সামগ্রিক দক্ষতা সম্পর্কে নিশ্চিত ধারণা দিতে এ গবেষণা এককভাবে যথেষ্ট নয়।

ওথ্রি-প্রো চ্যাটজিপিটির বিভিন্ন টুল ব্যবহারের সুযোগ দেয়। এর মধ্যে রয়েছে ওয়েব ঘেঁটে তথ্য আনার সুবিধা, পাইথন চালানো, নথিপত্র বিশ্লেষণ এবং আগের আলাপচারিতার ভিত্তিতে ব্যবহারকারীর জন্য ব্যক্তিকৃত উত্তর তৈরির সক্ষমতা। তবে এই মডেলে এখনো ছবি তৈরির সুবিধা বা ওপেনএআইয়ের প্রজেক্টভিত্তিক ক্যানভাস ইন্টারফেস সমর্থিত নয়। এ ছাড়া টুল ব্যবহারের কারণে ওথ্রি-প্রো দিয়ে উত্তর পেতে সময় কিছুটা বেশি লাগতে পারে বলেও জানিয়েছে ওপেনএআই।

সূত্র: ম্যাশেবল

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র

এছাড়াও পড়ুন:

চ্যাটজিপিটিকে যে কাজে ব্যবহার করলে তথ্যের গোপনীয়তা না–ও থাকতে পারে

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির ওপর মানুষের বাড়তে থাকা নির্ভরতার বিষয়ে সতর্ক করেছেন চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যাম অল্টম্যান। তাঁর মতে, চ্যাটজিপিটিকে অনেকেই মানসিক সহায়তার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করলেও, এতে ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার আইনগত কোনো নিশ্চয়তা নেই। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় পডকাস্ট ‘দিস পাস্ট উইকেন্ড’–এ এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন তিনি।

স্যাম অল্টম্যান বলেন, ‘চ্যাটজিপিটিতে মানুষ তাঁদের জীবনের অত্যন্ত ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। তরুণেরা চ্যাটজিপিটিকে থেরাপিস্ট, লাইফ কোচের মতো পরামর্শদাতা বা সম্পর্কের জটিলতা নিরসনের সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করছেন। কিন্তু বাস্তবে এই আলাপচারিতা কোনো আইনি গোপনীয়তার আওতায় পড়ে না। আপনি যদি কোনো চিকিৎসক, আইনজীবী বা থেরাপিস্টের সঙ্গে এসব বিষয় আলোচনা করেন, তাহলে তা আইনগতভাবে গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা থাকে। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এমন আলাপের ক্ষেত্রে এখনো সে রকম কোনো কাঠামো তৈরি হয়নি। আমি মনে করি, এটি একটি গুরুতর সমস্যা। একজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথোপকথনের মতোই এআইয়ের সঙ্গে আলাপের ক্ষেত্রে গোপনীয়তার অধিকার থাকা উচিত। এক বছর আগেও কেউ এসব নিয়ে ভাবেননি।’

আরও পড়ুনএআইয়ের দেওয়া সব তথ্য বিশ্বাস করা ঝুঁকিপূর্ণ, সতর্ক করলেন স্বয়ং স্যাম অল্টম্যান২৮ জুন ২০২৫

চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের চ্যাট সংরক্ষণ ও তথ্য উন্মুক্ত করার বিষয়ে ইতিমধ্যে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ওপেনএআই। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে চলমান এক মামলায় আদালত প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের বিশ্বব্যাপী ব্যবহারকারীদের চ্যাট সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে। তবে এই আদেশের আওতায় নেই ওপেনএআইয়ের এন্টারপ্রাইজ গ্রাহকেরা। প্রতিষ্ঠানটি এই আদেশকে ‘অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ’ আখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধে আপিল করেছে। ওপেনএআই জানিয়েছে, আদালতের এই নির্দেশ কার্যকর হলে ভবিষ্যতে আরও ব্যাপকভাবে তথ্য উন্মুক্ত করার দাবি উঠতে পারে, যা ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

সাক্ষাৎকারে অল্টম্যান পডকাস্ট উপস্থাপক থিও ভনের চ্যাটজিপিটি ব্যবহারের অভিজ্ঞতা জানতে চান। ভন জানান, গোপনীয়তা নিয়ে সন্দেহ থাকায় তিনি এটি খুব কম ব্যবহার করেন। জবাবে অল্টম্যান বলেন, আইনি ও গোপনীয়তার বিষয়গুলো পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত ব্যবহার না করাটা পুরোপুরি যৌক্তিক।

সূত্র: টেকক্রাঞ্চ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চ্যাটজিপিটিকে যে কাজে ব্যবহার করলে তথ্যের গোপনীয়তা না–ও থাকতে পারে
  • নতুন ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল আনছে ওপেনএআই