আপনারা জানেন, চাকরিতে উন্নতি করার নিয়ম কী? রুল হলো দুটি। রুল নম্বর ১. দ্য বস ইজ অলওয়েজ রাইট। রুল নম্বর ২. ইফ দ্য বস ইজ রং, সি রুল নম্বর ওয়ান।

আপনার বস সব সময়ই ঠিক। তিনি যা বলবেন, তা-ই ঠিক। এক অফিসে বস প্রতিদিন সকালবেলা কর্মীদের ডেকে কৌতুক শোনান। সবাই একযোগে হেসে ওঠে। যে বেশি জোরে হাসে, তার প্রমোশন, ইনক্রিমেন্ট, বোনাস ইত্যাদি বেশি হওয়ার চান্স থাকে।

কৌতুকগুলো হয় ব্রিটিশ আমলের। যেমন একদিন বস বললেন, শোনেন, একটা কৌতুক বলি। রাজা বললেন, তোমরা যারা বউকে ভয় পাও, সবাই তোমাদের ডান দিকে যাও। সবাই গেল। শুধু একজন গেল বাঁ দিকে।

রাজা বললেন, কী ব্যাপার। তুমি বউকে ভয় পাও না?

হুজুর, আমার বউ বলেছেন, যেদিকে ভিড়, সেদিকে কোনো দিনও যাবে না। তা-ই ডান দিকে যাইনি। বাম দিকে গেছি।

এই কৌতুকের চেয়ে বিরক্তিকর কৌতুক আর হয় না। নারীবিদ্বেষী, সুতরাং পলিটিক্যালি ইনকারেক্ট। আর এই কৌতুক শোনেনি, বাংলাদেশে একজনও চাকরিজীবী নাই।

সবাই হাসতে লাগল, শুধু আদনান মুকিত ছাড়া। অফিসের সহকর্মীরা বলতে লাগল, কী ব্যাপার, আদনান, তুমি যে হাসলে না।

আদনান বলল, ভাই, আমি সকালেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে এসেছি। আজকেই আমার অফিসের শেষ দিন।

তো এই দোর্দণ্ড প্রতাপ বসের নাম বাদল চৌধুরী। লোকে বলে, তার নাম ছিল বাদল মিয়া। তিনি নিজে নিজে চৌধুরী লাগিয়ে নিয়েছেন।

এটা একটা বিজ্ঞাপনী সংস্থা। এটার মালিক খান অ্যান্ড খান কোম্পানি লিমিটেড। খান সাহেবরা বসেন গুলশানে। ১১ তলা করপোরেট ভবনে। আর এই বিজ্ঞাপনী সংস্থা, যার নাম লাউড অ্যান্ড ক্লিয়ার অ্যাডভারটাইজিং লিমিটেড, এর অফিস বনানী ১১ নম্বর সড়কে।

 খান সাহেবরা সিইও হিসেবে এই বাদল চৌধুরীকে কোত্থেকে যে এনে বসিয়ে দিয়েছেন, তা কেবল আল্লাহ তাআলা জানেন।

এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান কাজ ঢাকা শহরের বিলবোর্ডগুলো ভাড়া দেওয়া। সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে জায়গা ইজারা নেওয়া হয়। তারপর সেখানে বিলবোর্ড বসিয়ে তা ভাড়া দেওয়া হয়। অন্য বিজ্ঞাপনী সংস্থা জায়গাগুলো কেনে। তারা নিজেদের পণ্যের বিজ্ঞাপন নিজেরাই তৈরি করে।

আর এরা সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনী এজেন্ট। সংবাদপত্রের পাতা বুকিং দিয়ে রাখে। বিভিন্ন সংস্থার বিজ্ঞাপন সেখানে ছাপা হয়।

 তো এই অফিসের বস বাদল চৌধুরী তার অধীন আবুল বাশার আর দীপ্তি সিনহাকে ডেকে বললেন, আমরা কি কেবল অন্যের বানানো ক্রিয়েটিভ ছাপাব? আমরা নিজেরা কেন বিজ্ঞাপন বানাই না?

স্যার, সেটাতে অনেক ঝামেলা। আবুল বাশার বলল, আমাদের অনেক বড় টিম লাগবে। একদল লাগবে আইডিয়াবাজ। তারা সিগারেট খাবে, হাফপ্যান্ট পরে অফিসে আসবে, তিন দিন আবার আসবে না, তারা আইডিয়া জেনারেট করবে। একদল লাগবে কপি রাইটার। তারপর লাগবে ক্রিয়েটিভ টিম। আইডিয়ার ওপরে ক্রিয়েটিভ বানাবে। ক্যামেরাম্যান লাগবে। টিভিসি বানাতে হলে তো আরেক প্যারা। এডিটিং প্যানেল লাগবে। আর্টিস্ট লাগবে। আজকাল এই প্যারা কেউ নেয় না। সবাই আউটসোর্সিং করে।

বাদল চৌধুরীর হাতে তখন একটা বিলবোর্ডের ডিজাইন। একটা গুঁড়ো সাবানের অ্যাড। সুপার মডেল আনুশকা ভেজা কাপড় পরে সাদা কাপড় ওড়াচ্ছে। বাদল চৌধুরী এই দৃশ্য দেখে পাথর হয়ে গেছেন।

তিনি বললেন, দীপ্তি, আপনি যান। আবুল বাশার আপনি থাকেন।

বাদল চৌধুরীর মাথাভরা টাক। সামনের দাঁত ফাঁকা এবং উঁচু। গায়ের রং সফেদা ফলের মতো। বয়স ৬২। গলার স্বর মেয়েদের মতো। তিনি বললেন, এই মডেলের নাম আপনি জানেন?

জি। আনুশকা চৌধুরী।

চৌধুরী? আমিও তো চৌধুরী।

জি।

আপনি জানেন, আপনার ভাবি আমেরিকা গেছে। বড় ছেলের বউ প্রেগন্যান্ট। তাকে দেখতে গেছে। এরপর আবার আমার মেয়েটারও খবর হয়েছে। আগামী দুই বছর আপনার ভাবি দেশে আসছে না।

জি।

আমি একা একা থাকি। এই রকম মডেল–টডেলরা আমাদের অফিসে আসবে। চা–কফি খাবে। কেউ যদি রেড ওয়াইন খেতে চায়, তা–ও খেতে পারে। কী বলেন!

নিশ্চয়ই।

তাহলে আমাদের কি উচিত নয়, নিজেদের বিলবোর্ডের ডিজাইন নিজেরাই করা!

অবশ্যই স্যার।

সামনে একটা ট্যালকম পাউডারের বিজ্ঞাপন আসার কথা। আমরা সরাসরি কোম্পানিকে বলি। আমাদের ডিজাইন করতে দিক। আমরা হাফ প্রাইসে করে দেব।

সেটা কি স্যার ঠিক হবে? এই এজেন্সি অন্য ক্লায়েন্টের কাছে চলে যাবে। আমরা ব্যবসা হারাব। আবুল বাশার অভিজ্ঞ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে মাস্টার্স। তিনি আপত্তি করেন।

আবুল বাশার, আপনার তিন দিন ছুটি। আপনি  দীপ্তিকে পাঠিয়ে দেন।

জি, আচ্ছা।

আবুল বাশার মন খারাপ করে ছুটিতে চলে যান।

দীপ্তি সিনহা!

ইয়েস স্যার।

আপনাকে আমি জেনারেল ম্যানেজার করে দিচ্ছি।

ইয়েস স্যার।

আমরা নিজেরা ফটোশুট করব। ভালো মডেল কে কে আছে?

দীপ্তি ফেসবুক খুলে বাদল চৌধুরীকে মডেল দেখান।

এর নাম কী?

কাকলী বেগম।

ভালো না?

জি, স্যার।

বয়স কম তো? নাকি?

জি স্যার। আইএ পড়ে।

১৮ বছর হয়েছে তো?

জি স্যার।

আচ্ছা। ওকে ডাকেন দেখি। প্রাথমিক আলাপ সারি। কত টাকা চায়, শুধু তো বিলবোর্ডে ছবি যাবে। আর পেপার অ্যাডে।

আচ্ছা, স্যার।

দীপ্তি খুব চেষ্টা করতে লাগলেন কাকলী বেগমের সঙ্গে কন্ট্যাক্ট করার। পারছিলেন না। আবুল বাশারের ছুটি শেষ হলো। তিনি এলেন।

বস বললেন, আবুল বাশার, আপনার চাকরি তো নড়বড়ে। আপনি দেখেন, কাকলীকে পান কি না।

আবুল বাশারের পারঙ্গমতা বেশি। তিনি কাকলীকে রাজি করালেন অফিসে আসতে। তখন ঠিক করা হবে কাকলী কী কী করবেন। কত টাকা অগ্রিম নেবেন।

কাকলী আসবেন বৃহস্পতিবার।

বুধবার বাদল চৌধুরী ডাকলেন আবুল বাশারকে। আবুল বাশার, কালকে আমি অফিসে কী পরে আসব বলেন তো!

স্যার, আপনি স্যুট পরে আসেন। লাল রঙের টাই।

এই গরমের মধ্যে?

সব বড়লোক গরমের মধ্যেও টাই পরেন স্যার।

রাইট।

ফেশিয়াল করব নাকি আজকে?

অবশ্যই স্যার।

পরের দিন, বৃহস্পতিবার সকাল সকাল, গ্রীষ্মের গরমে ঘামতে ঘামতে স্যুট–টাই পরা বাদল চৌধুরী অফিসে এসে হাজির।

তিনি আয়নার সামনে দাঁড়ালেন নিজের বাথরুমে। ভালোই দেখা যাচ্ছে। তিনি হেসে ফেললেন।

অমনি তাঁর দাঁত বেরিয়ে গেল। দাঁত কালো কুচকুচে। পান খাওয়া দাঁত।

তিনি ডাকলেন আবুল বাশারকে। আবুল বাশার, দেখুন তো আমার দাঁত কি ঠিক আছে?

আপনি বলুন স্যার।

ঠিক নাই।

জি স্যার, ঠিক নাই।

এটা ঠিক করতে হবে।

অবশ্যই।

কীভাবে এখনই ঠিক করা যায়?

ডেন্টিস্টের কাছে যান স্যার।

সময় কই। খানিকক্ষণ পরেই তো কাকলী চলে আসবেন।

জি স্যার।

এই সময় তাঁর সামনে হারপিকের ডিজাইন নিয়ে এল মাকসুদ। বলল, স্যার, এইটা ১০ ফিট বাই ৬ ফিট প্রিন্ট দিচ্ছি। যাত্রাবাড়ীতে লাগবে।

বাদল চৌধুরী বললেন, দ্য আইডিয়া।

আবুল বাশার আর মাকসুদ বললেন, দ্য আইডিয়া।

পেয়ে গেছি।

দুজনে বললেন, স্যার পেয়ে গেছেন।

কী পেয়েছি?

স্যার, বললেই বুঝব স্যার।

হারপিক। হারপিক বাথরুমের পুরোনো কালো দাগও দূর করে। মাত্র ১০ মিনিটে। করে কি না বলেন?

করে স্যার।

আমি হারপিক দিয়ে দাঁত মাজব। দুই মিনিট। ব্যস। সব দাগ চলে যাবে। যাবে কি না বলেন?

আপনি যখন বলছেন, অবশ্যই যাবে স্যার।

মাকসুদ আপত্তি করছিল। আবুল বাশার তাকে মোবাইলের ফেসবুকে লেখা আপন স্ট্যাটাসটা পাঠিয়ে দিলেন ইনবক্সে। তাতে লেখা—রুল নম্বর ১.

দ্য বস ইজ অলওয়েজ রাইট। রুল নম্বর ২. ইফ দ্য বস ইজ রং, সি রুল নম্বর ওয়ান। সেটা দেখে মাকসুদও বলে ফেলল, ইয়েস স্যার।

বস বাদল চৌধুরী ড্রয়ার থেকে ব্রাশ বের করে টয়লেটে ঢুকলেন। হারপিক ওখানেই রাখা। দাঁত মাজলেন আরাম করে। সত্যি দাঁত পরিষ্কার ঝকঝকে হয়ে গেল।

তিনি হাসতে হাসতে নিজের টেবিলে ফিরলেন।

বললেন, একটু একটু জ্বালা করছে। তবে কষ্ট ছাড়া কি কেষ্ট মেলে?

মিনিট দশেকও যায়নি। বাদল চৌধুরীর মুখ, জিব, গাল সব ফুলে উঠতে লাগল। তার মুখ ইনক্রেডিবল হাকের মতো ফুলে যাচ্ছে। তাঁর শ্বাসনালি বন্ধ হয়ে আসছে।

এই সময় এলেন কাকলী। এই চেহারার একজন মানুষকে দেখে তিনি বললেন, হু ইজ দিস ম্যানিমাল?

আবুল বাশার বললেন, ম্যানিমাল?

মানুষের দেহ, অ্যানিমালের মুখ। হি ইজ আ ডেমন।

কাকলী চলে গেলেন। বাদল চৌধুরীকে হাসপাতালে নেওয়া হলো। বার্ন ইউনিটে। সেখানে তিনি থাকলেন ১৮ দিন।

১৮ দিন পর তিনি অফিসে আসতে লাগলেন। এক মাস পর অফিস ছুটি দিয়ে তিনি অফিসে দাওয়াত করলেন পেশাদার একজন এস্কর্টকে। অ্যাডাল্টসাইটে ছবি দেখে তিনি একে পছন্দ করেছেন। এক সন্ধ্যা দুজনে রেড ওয়াইন খাবেন। মহিলা নেবেন ১১ হাজার টাকা। ক্যাশ। অগ্রিম।

কিন্তু বাদল চৌধুরী মদ পাবেন কোথায়? এর আগে তিনি এসবের মধ্যে কখনো যাননি।

আবুল বাশার, ভালো রেড ওয়াইন কোথায় পাওয়া যায় জানেন?

না স্যার। দেশে তো এখন অলমোস্ট আয়রন রুল। সব লিকার উধাও হয়ে গেছে। এখন মদ খাবেন না স্যার। আপনার কোনো বন্ধু যদি বিদেশ থেকে ডিউটি ফ্রি ব্যাগে করে হাতে নিয়ে মদ আনে, কেবল সেইটা খেতে পারেন। বাকি সব স্পিরিট। খেলেই মারা পড়বেন। ওই যে স্যার হাইকোর্টের উকিল তরফদার, উনি তো ঢাকার দামি ক্লাবে বসে মদ খেয়ে সাত দিন অজ্ঞান ছিলেন। পরে ওনার একপাশ অবশ হয়ে গেছে।

আপনি কিচ্ছু জানেন না?

জি স্যার।

জি স্যার কী?

কিচ্ছু জানি না।

ওই মেয়েকে যদি ৫ হাজার বাড়িয়ে দিই, সে নিজে রেড ওয়াইন আনতে পারবে না?

আপনি যা বলেন স্যার।

অবশ্যই পারবে।

তাহলে তো পারবেই স্যার।

ঠিক আছে। আমিই ওকে বলে দিচ্ছি। আপনারা সবাই অফিস খালি করে ৫টার মধ্যে চলে যাবেন।

অবশ্যই স্যার।

তাই হলো। অফিস ফাঁকা। ওই মহিলা এলেন। সঙ্গে পানীয়।

তারপরের কাহিনি কহতব্য নয়।

বাদল চৌধুরী জ্ঞান হারালেন। ভদ্রমহিলা তাঁকে জন্মদিনের পোশাকে সাজালেন। তাঁর ছবি তুললেন। তারপর অফিসের মূল্যবান ছোটখাটো জিনিসপাতি, বাদল চৌধুরীর ওয়ালেট, ক্রেডিট কার্ড এবং দুই দুইটা মোবাইল ফোন নিয়ে কেটে পড়লেন।

নাইটগার্ড রাত ১১টায় মুমূর্ষু বাদল চৌধুরীকে একটা চাদরে ঢেকে হাসপাতালে নিয়ে গেল।

তিন দিন পর তাঁর জ্ঞান হলো।

একদিন আবুল বাশারের মোবাইলে ছবি এল হোয়াটসঅ্যাপে। বাদল চৌধুরীর কাপড়ছাড়া ছবি। লেখা, স্যার আমার ফোন ধরছেন না। তাঁকে বলবেন, কিছু টাকা পাঠাতে।

আবুল বাশার গেল তার স্যারের কাছে। স্যার, এই মেয়ে তো ডেঞ্জারাস। একে পুলিশে দিতে হবে। দেখেন কী ছবি পাঠিয়েছে?

সর্বনাশ।

স্যার। আমার প্রমোশনটা ডিউ হয়ে আছে। আপনি কালপরশু একটু দেখেন। আপনি না দেখলে গরিব মানুষ স্যার মারা পড়ব। তবে আমার বন্ধু আছে সাইবার সিকিউরিটিতে। এই মেয়ে এই ছবি তো ডিলিট করবেই, এর পাখা আমি কেটে দেব। জানেনই তো পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে।

পারবেন আপনি?

আপনি শুধু বলে দেখেন স্যার পারি কি না। বস ইজ অলওয়েজ রাইট স্যার। আপনার জীবনে কোনো ভুল নাই। থাকতে পারে না।

বলছ?

জি স্যার।

আমি রাইট?

ইয়েস স্যার।

আবুল বাশার সত্যি সত্যি কেঁচো খুঁড়ে অজগর সাপ ধরার ব্যবস্থা করলেন। ওই এস্কর্টের পেছনে ছিল দুর্ধর্ষ গ্যাং। তাঁরা সবাই ধরা পড়ল।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব দল চ ধ র ক ব দল চ ধ র র স য র আম র ড জ ইন অফ স র র অফ স ন ক কল আম দ র বলল ন আইড য় ত রপর আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

লাইলীকে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চান আনোয়ার

বরগুনার বিষখালী নদীর পাড়ে বেড়ে উঠেছেন লাইলী বেগম। বাবার মৃত্যুর পর ভাইয়েরা অসুস্থ মায়ের দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান, তখন কন্যা হয়েও লাইলী সেই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। অভাব, ক্ষুধা আর সমাজের অবহেলা তার নিত্যসঙ্গী হয়। তারপরও থেমে যাননি লাইলী।  

জীবনের চাকা ঘুরাতে, মাছ ধরা থেকে বর্গাচাষ—সবই করেছেন লাইলী। গত ২১ বছর ধরে নদী ও সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বরগুনা জেলার সরকারিভাবে নিবন্ধিত একমাত্র নারী জেলে তিনি। এই লাইলীকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র ‘উত্তরের বৈঠা’। এটি নির্মাণ করেছেন আনোয়ার হোসেন।

পরিচালক আনোয়ার হোসেন

আরো পড়ুন:

জসীমের কবরে রাতুলকে সমাহিত করে দুই ভাইয়ের আবেগঘন পোস্ট

নীনার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবরে কী বলেছিলেন ক্রিকেটার ভিভ?

এ নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেন পরিচালক আনোয়ার হোসেন। তরুণ এই নির্মাতা বলেন, “এই চলচ্চিত্র শুধু একজন নারী জেলের গল্প নয়, এটি একজন মানুষের বেঁচে থাকার অদম্য চেষ্টা, একাকিত্বে গড়ে ওঠা সাহসিকতার প্রতিচ্ছবি। লাইলী বেগম যখন নদীতে জাল ছুঁড়ে দেন, সেই মুহূর্তে তিনি শুধু মাছ খোঁজেন না—তিনি খুঁজে ফেরেন নিজের অবস্থান, নিজের সম্মান, আর অস্তিত্বের উত্তর।” 

লাইলীর চোখ দিয়ে বাস্তবতা দেখাতে চেয়েছেন নির্মাতা। তার ভাষায়, “এই ফিল্মে আমি কোনো কৃত্রিম কণ্ঠ বা নাটকীয় ভাষা ব্যবহার করিনি। কারণ আমি চেয়েছি দর্শক যেন লাইলীর চোখ দিয়েই এই বাস্তবতা দেখেন। তার নীরবতা, তার কথাবার্তা, তার দৃষ্টি—সবই যেন একেকটি দৃশ্যপট হয়ে ওঠে। একজন নির্মাতা হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিল শুধু একটি ফ্রেম তৈরি করে দেওয়া, বাকিটা বলে গেছেন লাইলী নিজেই—তার জীবনযাত্রা, নদী এবং অব্যক্ত যন্ত্রণা দিয়ে।” 

‘লাইলী’-কে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চান পরিচালক। তা জানিয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, “এই ফিল্মটি তাদের জন্য, যারা নিঃশব্দে লড়াই করেন এবং যারা কখনো আলোয় আসেন না। এখানে আমি সংক্ষিপ্ত আকারে প্রামাণ্য চিত্রটি তৈরি করেছি, পূর্ণদৈর্ঘ্য আকারে তৈরি করার প্রস্তুতি চলছে। আপনাদের সহযোগিতা ও আগ্রহ আমাকে অনুপ্রাণিত করবে। এই জীবন সংগ্রামের কথা বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চাই।” 

সমাজের বাঁকা চোখ উপেক্ষা করে লাইলী প্রমাণ করেছেন, নারীর স্থান কেবল ঘরে নয়, সাহস আর সংগ্রামেও। লাইলী কেবল একজন নারী জেলে নন, এক অনুপ্রেরণার নাম। নারী চাইলে সব পারে—লাইলী তা নিঃশব্দে প্রমাণ করেছেন বলেও মনে করেন নির্মাতা।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘নতুন একটি দলের কয়েকজন মহারথী’ বলার পর বক্তব্য বদলালেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে একজনের মৃত্যু
  • ভাসানীরা না থাকলে শেখ মুজিব কখনো তৈরি হতেন না: নাহিদ
  • কাভার্ড ভ্যানের পেছনে ধাক্কা দিয়ে দুমড়েমুচড়ে গেল যাত্রীবাহী বাস
  • নিউ ইয়র্কে নিহত বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা সম্পর্কে যা জানা গেলো
  • পাঁচ দ্বীপে বাড়ি কিনলেই পাবেন পাসপোর্ট, দেড় শতাধিক দেশে ভিসামুক্ত প্রবেশ সুবিধা
  • মানুষকে জড়িয়ে ধরল হস্তীশাবক
  • ‘একজন শিল্পীকে ভীষণভাবে অসম্মানিত করা হচ্ছে’
  • ‘শফিউল বারী বাবু ছিলেন আন্দোলনের প্রেরণা’ 
  • লাইলীকে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চান আনোয়ার