গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ব্যবসায়ী অংশীদারের কাছে আয়-ব্যয়ের হিসাব চাওয়ায় আজাদ শেখ নামে এক ব্যবসায়ীকে মারধর করে আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত আজাদকে (৪৫) খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার পাটগাতী বাসস্ট্যান্ডের টুঙ্গিপাড়া প্যাথলজি সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। 

আজাদের স্বজনদের ভাষ্য, টুঙ্গিপাড়া প্যাথলজি সেন্টারের মালিক ছিলেন আজাদ ও টুঙ্গিপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ইয়ার আলী মুন্সী। ৬ মাস আগে চিকিৎসক ইয়ার আলী তাঁর অংশ গিমাডাঙ্গা উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত আইয়ুব আলী শেখের ছেলে মারুফ শেখের কাছে বিক্রি করে দেন। তারপর থেকে আজাদ ও মারুফ প্যাথলজি সেন্টারটি পরিচালনা করে আসছিলেন। সম্প্রতি একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যেতে হয় আজাদকে। গত সপ্তাহে জামিনে মুক্তি পেয়ে মারুফের কাছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসাব চান। মারুফ হিসাব দিতে অপারগতা প্রকাশ করে অংশীদারকে মারধরের হুমকি দেন। 

গত বৃহস্পতিবার রাতে আজাদ প্যাথলজি সেন্টারের ভেতরে অবস্থান করছিলেন। এ সময় মারুফ কয়েকজন সহযোগীসহ সেখানে এসে তাঁর ওপর হামলা করেন। মারধরের একপর্যায়ে তারা আজাদকে মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় ফেলে রেখে পালিয়ে যান। স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখান থেকে রাতেই তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। 

অভিযোগ অস্বীকার করে মারুফ শেখ বলেন, যারা আজাদকে মেরেছে তিনি তাদের চেনেন না। প্যাথলজির ভেতরে মারামারি ঠেকাতে গিয়ে তিনিও মারধরের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় তাঁকে ফাঁসিয়ে দিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পুরো মালিকানা নিতে ষড়যন্ত্র করছে বলে দাবি করেন তিনি। 

থানার ওসি খোরশেদ আলম বলেন, এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন তিনি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ প লগঞ জ প য থলজ ম রধর ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

একাই মাসে শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তৈয়বুর

সুনামগঞ্জে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে যাঁদের নাম প্রথমেই মনে আসে, তাঁদের একজন তৈয়বুর রহমান (২৬)। তিনি নিজে নিয়মিত রক্ত দেন, রক্ত সংগ্রহ করে দেন এবং মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করেন। রক্তের টানে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতেই তাঁর আনন্দ।

একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রক্তদানের এই মানবিক কাজকে নিজের করে নিয়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে একাই মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করতেন। এখন তিনি ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ নামের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাজের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ। মাসে একাই শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আড়াই হাজারের বেশি রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আছে প্রায় এক হাজার রক্তদাতার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও যোগাযোগের তালিকা। সুনামগঞ্জে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠকেরাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।

তৈয়বুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি ইসলামী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, পরিবহন বা দৌড়ঝাঁপ—সবকিছুর ব্যয়ই মেটান নিজের স্বল্প বেতন থেকে।

রক্তদানের শুরুর স্মৃতি বলতে গিয়ে তৈয়বুর রহমান জানান, ২০২০ সালে তিনি তখন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। এক সহকর্মীর অনুরোধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান চাষাড়া এলাকায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় রক্ত দিতে পারেননি। পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর জন্য আবার হাসপাতালে যান এবং এবার রক্ত দিতে সক্ষম হন। প্রথমে কিছুটা ভয় ভয় ছিল তাঁর। পরে এটা কেটে যায়।

সুনামগঞ্জে বদলি হয়ে ফিরে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে থাকেন বলে জানান তৈয়বুর রহমান। নিজের এলাকায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার আয়োজন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইনও করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন। অধিকাংশই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। ঈদের দিনও রক্ত দিয়েছেন তিনি। জেলা সদর হাসপাতাল ও শহরের সব বেসরকারি ক্লিনিকেই তাঁর নম্বর আছে। কোনো রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো রোগীর জন্য উপযুক্ত রক্তদাতা খুঁজে বের করা।

তৈয়বুর রহমান বলেন, রক্তদানের পর কিছু পরিবার এখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, খবর নেয়। আবার কেউ কেউ রক্ত সংগ্রহে একটু দেরি হলে মনঃক্ষুণ্ন হন। কেউ রক্ত পেয়ে ধন্যবাদ দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না। তবু মন খারাপ করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তাহিরপুর উপজেলার এক প্রসূতি বোনকে রক্ত দিয়েছিলাম। এখনো ওই পরিবার যোগাযোগ রাখে। সময়-অসময় খোঁজ নেয়। এটা ভালো লাগে, এটা অন্য রকম রক্তের সম্পর্ক। এই কাজ করে আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। যত দিন পারি, এই কাজ করে যাব।’

এখন পর্যন্ত ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন তৈয়বুর রহমান

সম্পর্কিত নিবন্ধ