নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দেয় একটি মোটরসাইকেল। এ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় মোটরসাইকেলে থাকা দুই আরোহীর। দুমড়েমুচড়ে যায় মোটরসাইকেলটি। শুক্রবার সকালে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। একই দিন জয়পুরহাটের আক্কেলপুর, ভোলার লালমোহন, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও মাগুড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় আরও পাঁচজনের প্রাণহানি ঘটেছে। স্থানীয় প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর: 

শুক্রবার সকালে সাতকানিয়া উপজেলার কালিয়াইশ ইউনিয়নের মৌলভীর দোকান এলাকায় ড্রাম্প ট্রাকের পেছনে একটি মোটরসাইকেল ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেলের আরোহী দুই বন্ধু মো.

রাফি চৌধুরী (১৯) ও মো. বাপ্পি (২০) মারা যান। রাফি চৌধুরী চট্টগ্রাম নগরীর বাদামতলী বহদ্দারহাট এলাকার নাজিম উদ্দিন লিটনের ছেলে। মো. বাপ্পি একই এলাকার মো. বাবুলের ছেলে।

রাফি ও বাপ্পি কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে বান্দরবানের উদ্দেশে রওনা দেন। রাফি ও বাপ্পি একটি মোটরসাইকেলে ছিলেন। সকাল ৮টার দিকে তারা সাতকানিয়ার মৌলভীর দোকানে সামনে একটি ড্রাম্প ট্রাককে তাদের বহনকারী মোটরসাইকেলটি ধাক্কা দেয়। এতে তারা দু’জনই গুরুতর আহত হন। রাফিকে দোহাজারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত বাপ্পিকে কেরানিহাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান।

দোহাজারী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শুভরঞ্জন চাকমা বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষে দুইজনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে মাইক্রোবাস-ভটভটির সংঘর্ষে ভটভটি চালক মহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। দুপুর ২টার দিকে আক্কেলপুর-বগুড়া সড়কের গোপীনাথপুরে কড়ইতলীতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মহিদুল বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়া শাবলা গ্রামের মৃত খোরশেদ আলমের ছেলে। এ ঘটনায় মাইক্রোবাসের চালকসহ চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

আক্কেলপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বলেন, ভটভটিচালক ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। মাইক্রোবাসের চালকসহ চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভোলার লালমোহন উপজেলার চরভূতা ইউনিয়নের মাদ্রাসা বাজার এলাকায় মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গুরুতর আহত হন মো. জাবেদ হোসেন (২৫)। স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

লালমোহন থানার ওসি মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কে ভোরে ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে চালক শফিকুল ইসলাম (৪৫) গুরুতর আহত হন। তাঁকে অচেতন অবস্থায় বনপাড়া হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উদ্ধার করে গুরুদাসপুর স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে মারা যান শফিকুল। শফিকুল তাড়াশ পৌর সদরের মৃত গঞ্জের আলী ফকিরের ছেলে।

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে নছিমন উল্টে খাদে পড়ে মাছ ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। নিহত আলী আকবর (৬০) উপজেলার উচিৎপুরা ইউনিয়নের রায়পুরা এলাকার মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে।

ভোরে আলী আকবর ছেলে মাহবুবুর রহমান ও সলিমউদ্দিন সলুকে নিয়ে নছিমনে করে গাউছিয়া মাছের আড়তের উদ্দেশে রওনা হন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উচিৎপুরা রামচন্দ্রদী সড়কের গহরদী বাদশাবাড়িসংলগ্ন এলাকায় নছিমনটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে খাদে পড়ে যায়। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক আলী আকবরকে মৃত ঘোষণা করেন। 

মাগুরা-মহম্মদপুর সড়কের ধলহরা চাঁদপুর এলাকায় বিকেলে দুটি মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে লাল মোল্লা নামের এক আরোহী নিহত হয়েছেন। লাল মোল্লা মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর গ্রামের মৃত জলিল মোল্লার ছেলে। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ফুল মিয়া নামে আরেক মোটরসাইকেল আরোহী। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন ন হত এ দ র ঘটন উপজ ল র ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

একাই মাসে শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তৈয়বুর

সুনামগঞ্জে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে যাঁদের নাম প্রথমেই মনে আসে, তাঁদের একজন তৈয়বুর রহমান (২৬)। তিনি নিজে নিয়মিত রক্ত দেন, রক্ত সংগ্রহ করে দেন এবং মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করেন। রক্তের টানে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতেই তাঁর আনন্দ।

একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রক্তদানের এই মানবিক কাজকে নিজের করে নিয়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে একাই মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করতেন। এখন তিনি ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ নামের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাজের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ। মাসে একাই শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আড়াই হাজারের বেশি রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আছে প্রায় এক হাজার রক্তদাতার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও যোগাযোগের তালিকা। সুনামগঞ্জে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠকেরাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।

তৈয়বুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি ইসলামী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, পরিবহন বা দৌড়ঝাঁপ—সবকিছুর ব্যয়ই মেটান নিজের স্বল্প বেতন থেকে।

রক্তদানের শুরুর স্মৃতি বলতে গিয়ে তৈয়বুর রহমান জানান, ২০২০ সালে তিনি তখন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। এক সহকর্মীর অনুরোধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান চাষাড়া এলাকায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় রক্ত দিতে পারেননি। পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর জন্য আবার হাসপাতালে যান এবং এবার রক্ত দিতে সক্ষম হন। প্রথমে কিছুটা ভয় ভয় ছিল তাঁর। পরে এটা কেটে যায়।

সুনামগঞ্জে বদলি হয়ে ফিরে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে থাকেন বলে জানান তৈয়বুর রহমান। নিজের এলাকায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার আয়োজন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইনও করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন। অধিকাংশই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। ঈদের দিনও রক্ত দিয়েছেন তিনি। জেলা সদর হাসপাতাল ও শহরের সব বেসরকারি ক্লিনিকেই তাঁর নম্বর আছে। কোনো রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো রোগীর জন্য উপযুক্ত রক্তদাতা খুঁজে বের করা।

তৈয়বুর রহমান বলেন, রক্তদানের পর কিছু পরিবার এখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, খবর নেয়। আবার কেউ কেউ রক্ত সংগ্রহে একটু দেরি হলে মনঃক্ষুণ্ন হন। কেউ রক্ত পেয়ে ধন্যবাদ দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না। তবু মন খারাপ করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তাহিরপুর উপজেলার এক প্রসূতি বোনকে রক্ত দিয়েছিলাম। এখনো ওই পরিবার যোগাযোগ রাখে। সময়-অসময় খোঁজ নেয়। এটা ভালো লাগে, এটা অন্য রকম রক্তের সম্পর্ক। এই কাজ করে আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। যত দিন পারি, এই কাজ করে যাব।’

এখন পর্যন্ত ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন তৈয়বুর রহমান

সম্পর্কিত নিবন্ধ