কমপ্লায়েন্সের অভাবে ধুঁকছে চামড়া খাতের রপ্তানি
Published: 13th, June 2025 GMT
চামড়া ও চামড়াজাতপণ্য দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত। পণ্য উৎপাদনের প্রধান কাঁচামালের শতভাগ জোগান থাকা সত্ত্বেও রপ্তানিতে এ খাতে তেমন অগ্রগতি নেই। এ খাতে কমপ্লায়েন্স বা যথাযথ মান প্রতিপালনের অভাবে ধরা যাচ্ছে না বৈশ্বিক বাজার। বাধ্য হয়ে পানির দরে চীনে রপ্তানি করতে হচ্ছে। এ কারণে কোরবানির পশুর কাঁচাচামড়ার দামও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞ ও খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ না থাকায় বিদেশি ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ থেকে চামড়া নিতে নিরুৎসাহিত হন। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিশোধন ব্যবস্থায় ঘাটতি থাকার কারণে এই সনদ পাচ্ছে না ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে ব্যাপক সুযোগ এবং সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববাজারে জায়গা করে নিতে পারছে না বাংলাদেশের চামড়াশিল্প। এতে একদিকে যেমন দাম না পাওয়ায় প্রতিবছর কোরবানির পশুর চামড়া নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে চামড়াপণ্য রপ্তানির জন্য বছরে অন্তত এক বিলিয়ন ডলারের চামড়া আমদানি করতে হচ্ছে। তারা বলছেন, সরকার কিছু অর্থ ব্যয় করে সাভারের ট্যানারিপল্লিকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে তা বিশ্বে মডেল হিসেবে দাঁড়াবে। এতে বাংলাদেশ যেমন ব্র্যান্ডিং হবে তেমনি রপ্তানিও বাড়বে। একই সঙ্গে বাড়বে পণ্যের দাম। তা ছাড়া পরিবেশবান্ধব ট্যানারি গড়ে তুলতে না পারায় বিদেশি বিনিয়োগ টানতেও বাংলাদেশ ব্যর্থ হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।
রপ্তানির চিত্র
একসময় পাট, চা ও চামড়া ছিল অন্যতম রপ্তানি খাত। রপ্তানিতে পাট ও চা অনেক আগেই সেই জৌলুস হারিয়েছে। এখন চামড়া খাতও অনেকটা সেই পথে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের দিকে চামড়া ও চামজাড়াত পণ্য থেকে ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু রপ্তানির চিত্র বলছে, সেই পথ এখনও বহু দূর। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করে ১২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমছে রপ্তানি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১০৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০১ কোটি ৯৮ লাখ ডলারের রপ্তানি হয়েছে। তবে করোনা অতিমারির কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানিতে বড় ধস নামে। ওই বছর মাত্র ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এরপর কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায় রপ্তানি। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯৪ কোটি ১৭ লাখ ডলারের রপ্তানি হলেও পরের ২০২১-২২ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় ১২৪ কোটি ৫১ লাখ ডলারের। তবে ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ফের কমে যায়। এই দুই বছরে এ খাত থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে যথাক্রমে ১১৭ কোটি ৫৫ লাখ ডলার ও ১০৩ কোটি ৯১ লাখ ডলার। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১১ মাসে রপ্তানি আয় এসেছে ১০৫ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। একসময় ইউরোপের দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে চামড়া নিত। প্রতি বর্গফুট চামড়ার দর ছিল অন্তত এক ডলার। কমপ্লায়েন্সের অভাব থাকায় এখন ইউরোপের ক্রেতারা নিচ্ছে না। ফলে এক রকম বাধ্য হয়ে চীনে রপ্তানি করতে হচ্ছে পানির দরে। রপ্তানিকারকরা জানান, দাম কমতে কমতে এখন ৫০ থেকে ৬০ সেন্টে নেমেছে। মূলত আন্তর্জাতিক মান সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ না থাকায় রপ্তানি বাজার ধুঁকছে।
কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কেমন
দেশে ২০১৩ সালের কোরবানির গরুর চামড়ার দাম ছিল বর্গফুটপ্রতি ৮৫-৯০ টাকা। এরপর থেকে দাম কমতে থাকে। বড় ধস নামে ২০১৯ সালে। তখন ন্যূনতম দাম না পেয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চামড়া নদী-নালায় ও সড়কে ফেলে ও মাটিতে পুঁতে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ফলে নষ্ট হয় শত শত কোটি টাকার চামড়া। এরপর আরও কমছে দাম। এ বছর ঢাকায় কোরবানির গরুর কাঁচাচামড়া ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকায় চামড়া বিক্রি হলেও ঢাকার বাইরে ছিল হতাশার ছাপ। গ্রামগঞ্জে প্রতিটি চামড়া বেচাকেনা হয়েছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। ছাগলের চামড়ার ক্রেতা খুঁজেও পাওয়া যায়নি।
পরিবেশবান্ধব হতে ট্যানারিপল্লি কতটা প্রস্তুত
পরিবেশদূষণ রোধে ২০০৩ সালে সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়াশিল্প নগর স্থাপনের কাজ শুরু হয়। যেখানে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১১শ কোটি টাকা। প্রায় ২২ বছর অতিবাহিত হলেও এটি এখনও পুরোপুরি কার্যকরী শিল্পনগরী হয়ে ওঠেনি। কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০১২ সালে। সেটি নির্মাণের পর পুরোপুরি চালু না করেই ২০১৭ সালে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তর করা হয় হেমায়েতপুরে। এখনও কাঁচাচামড়া প্রক্রিয়াজাত করার ফলে সৃষ্ট তরল ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, লবণ বিশুদ্ধকরণ ব্যবস্থা এবং সাধারণ ক্রোমিয়াম পুনরুদ্ধার ইউনিট স্থাপনে তেমন অগ্রগতি হয়নি সেখানে। সাভারে স্থানান্তরিত ট্যানারি মালিকরা জানান, সিইটিপির তরল বর্জ্য পরিশোধনের সক্ষমতা দৈনিক ২৫ থেকে ৩০ হাজার ঘনমিটার। কোরবানির পর ট্যানারিগুলো পুরোদমে চামড়া প্রক্রিয়াজাত শুরু করলে তখন ৪০ থেকে ৪৫ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য উৎপাদন হয়, যা সিইটিপির সক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি।
এলডব্লিউজি সনদ পেতে বাধা কোথায়
বিসিক ও বিডার এক গবেষণায় দেখা গেছে, এলডব্লিউজি পেতে হলে চামড়াশিল্পের পরিবেশগত মান যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ১৭টি বিষয়ে ১ হাজার ৭১০ নম্বর পেতে হয়। যার মধ্যে ৩০০ নম্বর রয়েছে সিইটিপিসংক্রান্ত। বাকি ১ হাজার ৪১০ নম্বর রয়েছে জ্বালানি খরচ, পানির ব্যবহার, রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, চামড়ার উৎস শনাক্তকরণ, দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার মান ইত্যাদি বিষয়। এসব মানদণ্ড পূরণের দায়িত্ব ট্যানারি মালিকদের।
জানা গেছে, বর্তমানে ১৫ থেকে ২০টি ট্যানারির এলডব্লিউজি সনদের শর্ত পূরণ করার সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু তারা অন্যান্য মানদণ্ডে ভালো নম্বর পেলেও সিইটিপিসংক্রান্ত নম্বরে পিছিয়ে রয়েছে, ফলে সনদও মিলছে না। কারণ তরল বর্জ্য, রাসায়নিক ঠিকমতো পরিশোধন হচ্ছে না, যা দূষিত করছে আশপাশের নদী ও পরিবেশ।
এখন পর্যন্ত এলডব্লিউজি সনদ পেয়েছে মাত্র সাতটি প্রতিষ্ঠান। সেগুলো হচ্ছে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, রিফ লেদার, এবিসি লেদার, সুপারেক্স লেদার, সাফ লেদার, সিমোনা ট্যানিং এবং অস্টান লিমিটেড। এগুলোর মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান ফিনিশড লেদার উৎপাদন করে। তবে সাভারের ট্যানারি পল্লিতে এই সনদ পেয়েছে একমাত্র সিমোনা ট্যানিং। প্রতিষ্ঠানটি ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদার উৎপাদন করে।
কী বলছেন ট্যানারি মালিক ও রপ্তানিকারকরা
বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সহসভাপতি ও ভুলুয়া ট্যানারির চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল সমকালকে বলেন, একসময় চীনে রপ্তানির আগ্রহ ছিল না রপ্তানিকারকদের। এখন বাধ্য হয়ে চীনকে দিতে হচ্ছে। প্রতি বর্গফুট চামড়া রপ্তানি করতে হচ্ছে এক ডলারে। ইউরোপের ক্রেতা না থাকায় কখনও কখনও ৪০ সেন্টেও রপ্তানি করতে হয়। এর মূল কারণ এলডব্লিউজি সনদ না থাকা।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে ট্যানারিগুলোকে সরকার বাধ্য করেছিল সাভারের ট্যানারি পল্লিতে যেতে। সেখানে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল পরিবেশবান্ধব ট্যানারি গড়ে তোলা। পরিপূর্ণ কমপ্লায়েন্স হওয়া। যাতে চামড়ার ভালো দাম পাওয়া যায়। সেই আশা বিফলে গেছে। সাভারে সরকার পরিপূর্ণ সিইটিপি গড়ে তুলতে পারেনি।
জুতা উৎপাদনকারীরা জানান, জুতা তৈরি করার জন্য মাসে ১২ থেকে ১৫ লাখ বর্গফুটের মতো চামড়া আমদানি করতে হয় বাংলাদেশকে। ফলে চামড়া ও চামড়াজাতপণ্য রপ্তানি করে যে পরিমাণ আয় হয়, তা চলে যায় আমদানিতে। বেঙ্গল লেদার কমপ্লেক্সের মালিক ও বিএফএলএলএফইএর উপদেষ্টা টিপু সুলতান বলেন, চামড়ার রপ্তানি মূল্যের চেয়ে আমদানি মূল্য কয়েক গুণ বেশি। একসময় প্রতি বর্গফুট চামড়া রপ্তানি হতো কমপক্ষে এক ডলারে। এখন ৫০ থেকে ৬০ সেন্টের বেশি পাওয়া যায় না। কিন্তু প্রতি বর্গফুট চামড়া আমদানি করতে হয় দুই থেকে আড়াই ডলারে। তবে আমদানি করা চামড়া উন্নত মানের। সালমা ট্যানারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সিনিয়র সহসভাপতি সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও ট্যানারিপল্লিকে কমপ্লায়েন্স করতে পারেনি সরকার। এ কারণে এলডব্লিউজি সনদ মিলছে না। রপ্তানির সম্ভাবনাকেও কাজে লাগানো যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞ মত
এলডব্লিউজি সনদ না থাকায় চামড়ার রপ্তানি মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না বলে মনে করেন ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যাপক ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কমপ ল য় ন স ক রব ন র ব ধ য হয় বর জ য স ইট প পর ব শ আমদ ন সনদ প সনদ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।
‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।
পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।
দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।
শিল্পে নতুন সংযোগে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।
সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।
জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে
তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।
সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে
পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।
গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা
পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।