ইসলামপন্থীদের ঐক্য ও দায়িত্বশীল ভূমিকা সময়ের দাবি: রিয়াদে সমাবেশে মামুনুল হক
Published: 14th, June 2025 GMT
বাংলাদেশে যেন আর কোনো একদলীয় দুঃশাসনের ছায়া ঘনিয়ে না আসে, সে জন্য ইসলামপন্থীদের ঐক্য ও দায়িত্বশীল ভূমিকা সময়ের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক।
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে আয়োজিত এক ঈদ পুনর্মিলনী ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বৃহস্পতিবার রিয়াদের একটি মিলনায়তনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের রিয়াদ মহানগর শাখা।
সমাবেশে মামুনুল হক বলেন, রাজনীতিতে মতভিন্নতা থাকবে, কিন্তু তা যেন সংঘাতে রূপ না নেয়। ইসলামি দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি ও সংঘর্ষ দেশের স্বাধীনতা, ইমানি পরিচয় ও মানুষের ভোটাধিকারের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
মুসলিম বিশ্ব ফিলিস্তিন থেকে কাশ্মীর, আরাকান থেকে চাদ-নাইজার পর্যন্ত নির্যাতিত ও পরাধীন অবস্থায় আছে উল্লেখ করে মামুনুল হক বলেন, ‘মুসলিম রাষ্ট্রগুলো ঐক্যবদ্ধ নয়। অন্তত বাংলাদেশ যেন এই বিভাজনের অংশ না হয়। আমাদের পররাষ্ট্রনীতিকে সাহসী ও ন্যায়ের পক্ষে থাকতে হবে। যেখানে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা, মসজিদে আকসার মুক্তি এবং ইসলামি উম্মাহর স্বার্থ অগ্রাধিকার পায়।’
মামুনুল হক আরও বলেন, ‘খেলাফত মজলিস দেশীয় রাজনীতিতে ইতিবাচক ইসলামি মূল্যবোধভিত্তিক পরিবর্তন আনতে বদ্ধপরিকর। বৃহত্তর ইসলামপন্থীদের ঐক্যের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ, পরমতসহিষ্ণুতা এবং ইসলামি আদর্শসম্মত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা আমাদের লক্ষ্য।’
দলের যুগ্ম মহাসচিব আতাউল্লাহ আমীন বলেন, প্রবাসীদের হৃদয়ে খেলাফত মজলিসের জন্য ভালোবাসা, আস্থা ও দায়িত্ববোধ ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির জন্য আশার আলো হয়ে উঠবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রিয়াদ মহানগর শাখার সভাপতি হুসাইন হাবীবুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হেদায়াতুল্লাহ হাদী, ঢাকা জেলা উত্তরের সহসভাপতি নূর মোহাম্মদ এবং সৌদি আরবে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রিয়াদ শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান।
পবিত্র হজ পালনের অংশ হিসেবে সৌদি আরব সফরকালে বিভিন্ন ইসলামি দল ও সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মামুনুল হকের সাক্ষাৎ হয়। মক্কা ও মদিনায় ঈদ পুনর্মিলনী আয়োজনে অংশ নেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ সমমনা ইসলামি দলগুলোর স্থানীয় নেতারা।
এর আগে মক্কা মুকাররমায় হেফাজতে ইসলাম এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মক্কা মহানগর শাখা ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ম ন ল হক অন ষ ঠ ন ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় করোনা শনাক্তের পিসিআর ল্যাবে চুরি, খোয়া গেছে ৪০ লাখ টাকার যন্ত্রাংশ
কুষ্টিয়ায় করোনা শনাক্তের জন্য স্থাপিত পিসিআর ল্যাব ভবনে চুরির ঘটনা ঘটেছে। একটি পিসিআর যন্ত্রসহ প্রায় ৪০ লাখ টাকার যন্ত্রাংশ চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে ঘটনার এক মাস পেরিয়ে গেলেও অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু হয়নি। গতকাল শুক্রবার রাতে চুরির বিষয়টি শহরে জানাজানি হয়।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ সূত্র জানায়, করোনা শনাক্তের জন্য ২০২০ সালের ৯ মে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে একতলা একটি টিনশেড ভবন সংস্কার করে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়। তখন গণপূর্ত বিভাগ রাত দিন মাত্র চার দিন সংস্কারকাজ করে ৯ মে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ ভবনের উদ্বোধন করেন।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের তৎকালীন সহকারী অধ্যাপক নাজমীন রহমানের তত্ত্বাবধানে সেখানে করোনাভাইরাস শনাক্তের কাজ চলতে থাকে। ভবনের তিনটি কক্ষে কয়েকটি বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় দামি যন্ত্রাংশ স্থাপন করা হয়। করোনা সংক্রমণ একেবারে কমে গেলে পিসিআর ল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে ভবনে মেডিকেল কলেজের দুজন কর্মচারীকে ল্যাব দেখাশোনার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও থানায় জমা দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চুরির ঘটনায় গত ১২ মে ল্যাবে দায়িত্বরত কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট খাইরুল ইসলাম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, গত ১০ মে তিনি কাজ শেষ করে দুপুরে বাড়িতে চলে যান। ১১ মে সরকারি ছুটি থাকায় ১২ মে ল্যাবে গিয়ে দেখতে পান, ল্যাবের পেছনের জানালার গ্রিল কাটা এবং ল্যাবের একটি পিসিআর যন্ত্র, একটি মনিটর, একটি পিসিআর ডেস্কটপ, একটি এসির ইনডোর অংশ ও ছয়টির আউটডোর অংশ নেই, যার সর্বমোট মূল্য আনুমানিক দাম ৩৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
কুষ্টিয়া মেডিকেলের অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, চুরির ঘটনার পর পুলিশ প্রশাসনসহ মেডিকেল কলেজ ও জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা সেখানে যান। বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালককে জানানোর পর থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। সেদিন ল্যাব থেকে আরও তিনটি পিসিআর মেশিনসহ অন্য দুই কক্ষে থাকা যন্ত্রাংশ মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে সরিয়ে নেওয়া হয়। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে করোনা শনাক্তের জন্য যন্ত্রগুলো স্থাপন করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করেন।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হোসেন ইমাম প্রথম আলোকে বলেন, চুরির ঘটনায় তাঁকে সদস্যসচিব করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত প্রতিবেদন মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের অবহেলা আছে। তিনি বলেন, বর্তমানে করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় একটি ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ মৌসুমে এখনো কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। কোনো রোগী ভর্তিও নেই।
কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে কুষ্টিয়ায় কোভিডে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ৮৫৫ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন চার হাজারের বেশি মানুষ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে সবচেয়ে বেশি রোগী মারা যান। এই মাসে জেলাটিতে ৩৪২ জন মারা যান। আগস্টের পর থেকে এই মৃত্যুর হার কমতে থাকে। এর মধ্যে শ্বাসকষ্ট ও অক্সিজেন–সংকটে হাসপাতালেই সবচেয়ে বেশি রোগী মারা যান। তবে চলতি মৌসুমে জেলায় কোনো রোগী শনাক্ত হননি।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল। তবে ওই অভিযোগপত্রে অভিযোগকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরসহ আরও কিছু অসংগতি ছিল। সেগুলো ঠিক করে আবার অভিযোগ দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এরপর আর কেউ যোগাযোগ করেনি।