দেশে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটাতে হলে আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত—এই তিন ধরনের সংস্কারই করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেছেন, ‘নাগরিকদের সুপ্রিমেসি প্রতিষ্ঠা করতে হলে নির্বাচনী অঙ্গনকে দুর্বৃত্তমুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনে টাকার খেলা বন্ধ করতে হবে, নাগরিক সমাজকে সক্রিয় করতে হবে। একই সঙ্গে জবাবদিহির প্রতিষ্ঠানগুলোতে নাগরিকদের প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে।’

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে বদিউল আলম মজুমদার এসব কথা বলেন। ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যেভাবে হতে পারে’ শিরোনামে এই বৈঠকের আয়োজন করে যৌথভাবে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ও প্রথম আলো।

বৈঠকে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা যখন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে আলোচনা করছিলাম, তখন তৃণমূল থেকে কিছু কিছু লোক আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে সংসদ ভবনে এসেছিল। তারা কোনো দিন সংসদ ভবনের ধারেকাছেও আসেনি। তারা সংসদ ভবনটা দেখে অভিভূত হয়েছে যে এটা একটা সুন্দর বিল্ডিং (ভবন)। মানে তাদের চোখ ছানাবড়া হয়ে গিয়েছে। তারা তখন নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছিল, আমি শুনতে পেয়েছি তারা বলছিল “এই সুন্দর এত সুন্দর বিল্ডিংটা, কিন্তু এত কুৎসিত লোক এখানে বাসা বেঁধেছে।”.

..ওই মন্তব্য থেকে আমরা একটা দিকনির্দেশনা পেয়েছিলাম। আমাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়েছে যে এক দিনের নির্বাচনী গণতন্ত্র শুধু গোষ্ঠীতন্ত্রই নয়, দুর্বৃত্তায়িত একটা সমাজ গড়ে তুলেছে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থাটা চরমভাবে দুর্বৃত্তদের কবলে পড়েছে। আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গন চরমভাবে দুর্বৃত্তায়িত। এ ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রেখেছে টাকার খেলা। এমনকি এক দিনের গণতন্ত্র যদি আমাদের পরিণত করতে হয়, তাহলে আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে দুর্বৃত্তমুক্ত করতে হবে। এ জন্য কতগুলো সুদূরপ্রসারী সংস্কার করতে হবে।...আমাদের বড় বড় যেসব দুর্নীতি হয়, বড় বড় যেসব অপকর্ম হয়, সেগুলো একধরনের রাজনীতিবিদ, একধরনের ব্যবসায়ী ও একধরনের আমলাদের যোগসাজশে হয়। আমাদের এর থেকে উত্তরণের পথ অবশ্যই খুঁজতে হবে।

ভোটভিত্তিক গণতন্ত্রকে পরিশোধিত করার জন্য নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের বিভিন্ন প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘নাগরিক সমাজকে কার্যকর করার মাধ্যমে এখন আমাদের আরও পথ খুঁজতে হবে, যাতে সত্যিকার অর্থে ডেলিভারেটিভ ডেমোক্রেসি আমরা করতে পারি। রাজনীতিকে দুর্বৃত্তমুক্ত অবশ্যই করতে হবে।'

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ আম দ র র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে: তারেক রহমান

সংবাদপত্রের কালো দিবস ছিল আজ। সোমবার এ উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক বাণীতে বলেছেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বহুদলীয় গণতন্ত্রের মৌলিক উপাদান। গণতন্ত্রের নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব দিতে হলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

রোববার মধ্যরাতে পাঠানো এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৬ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো দিবস। এদিন তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী সব দল বাতিল করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করে। তাদের অনুগত চারটি সংবাদপত্র রেখে জাতিকে নির্বাক করে দিয়েছিল। বিভিন্ন সংবাদপত্রে কর্মরত অসংখ্য সংবাদকর্মী বেকার হয়ে পড়েন। তাদের রুজি-রোজগার ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘একাত্তরের যুদ্ধের মূল চেতনা ছিল বাংলাদেশের ভৌগোলিক স্বাধীনতা অর্জন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। গণতন্ত্রে মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত হয় এবং এর মূল শর্ত হলো বাক, চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা। সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ থাকায় রাষ্ট্র ও সমাজ জবাবদিহির আওতায় আসে এবং দেশের সরকার গঠনে নাগরিকের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথচলাকে স্তব্ধ করে দিয়ে একদলীয় বাকশাল কায়েম করে। পরে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এ দেশের কাঙ্ক্ষিত বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করেন। বাকশাল সরকারের সব ধরনের অগণতান্ত্রিক কালাকানুন বাতিল করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন।’

তারেক রহমান উল্লেখ করেন, ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ মূলত চিন্তা ও বিবেককে বন্দি রাখা। শেখ মুজিবুর রহমানের মতো তার মেয়ে শেখ হাসিনাও একই পথ ধরে তাদের প্রকৃত দর্শন একদলীয় ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন করেছিল নতুন আঙ্গিকে। নানা কালাকানুন প্রণয়ন করে সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের ওপর অব্যাহত জুলুম চালিয়েছে তারা।’

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের সই করা বাণীতে বলা হয়, বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল। সত্য উচ্চারণ করলেই নেমে আসত নির্যাতনের খড়্গ। বাংলাদেশের গণমাধ্যম কর্মীসহ সব পর্যায়ের মানুষকে সার্বক্ষণিক শঙ্কিত থাকতে হয়েছে।

তারেক রহমান আরও বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো একের পর এক ড্রাকোনিয়ান (কঠোর) আইন প্রণয়ন করে সংবাদপত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ভয়াল দুর্গে বন্দি করা হয়েছিল। বিগত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর গণমাধ্যম কিছুটা স্বাধীনতা ভোগ করলেও এখনও ফ্যাসিবাদী শক্তির হাত থেকে পুরোপুরি মুক্ত নয়।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তরে যেতে হবে
  • রাজনীতির নতুন সমীকরণে উপেক্ষিত প্রসঙ্গ
  • গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে একটি রাজনৈতিক শক্তির উত্থান চান আলী রীয়াজ
  • সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে: তারেক রহমান
  • দেশবাসী দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়: আমীর খসরু
  • রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে জনগণের হিস্যা কোথায়
  • চীনা পুতুল লাবুবু সারা বিশ্বে এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কেন