কক্সবাজার সৈকতের ঝাউবাগান উজাড় করে হচ্ছে অবৈধ স্থাপনা, যা বলছে বন বিভাগ
Published: 18th, June 2025 GMT
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের পশ্চিম পাশে অন্তত ৬০ কিলোমিটারজুড়ে দেখা যায় ঝাউগাছের সারি। মেরিন ড্রাইভসহ উপকূল রক্ষার স্বার্থে সরকার কোটি টাকা খরচ করে ঝাউবাগান সৃজন করলেও গাছপালা উজাড় করে সেখানে তৈরি হয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি-দোকানপাটসহ নানা অবকাঠামো।
উপকূলীয় বন বিভাগের তথ্যমতে, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পর টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের হাদুরছড়া, খুরেরমুখ, টেকনাফ সদরের মহেশখালিয়াপাড়া, লম্বরী, তুলাতলি, রাজারছড়া, বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালী, কচ্ছপিয়া, বড়ডেইল, মাথাভাঙা, শীলখালী ও শামলাপুর সৈকতের পাশে ৫২৫ হেক্টর বেলাভূমিতে অন্তত ১০ লাখ ঝাউগাছ রোপণ করা হয়েছিল। ২০০৩ সালে সৈকতের কয়েক কিলোমিটারে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আরও ৩২০ হেক্টরের ঝাউবাগান সৃজন করেছিল। বর্তমানে বনাঞ্চলের ৭০ শতাংশ গাছ উজাড় হয়ে গেছে। সাবরাং, মহেশখালিয়াপাড়া, বড়ডেইল, পুরানপাড়ার কয়েক কিলোমিটারে ঝাউগাছের চিহ্নও নেই।
অভিযোগ রয়েছে, এসব ঝাউগাছ কেটে তৈরি করা অবৈধ স্থাপনায় চলে মাদক সেবন ও বিক্রি। মানব পাচারকারীরা সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় পাচারের আগে লোকজনকে ঝাউবাগানের ভেতরের এসব স্থাপনায় জড়ো করে রাখেন। তারপর ট্রলারে তুলে দেন। ঝাউগাছ কেটে অনেকে মাছ ধরার নৌকা তৈরিসহ ঘরবাড়ির কাজে লাগাচ্ছেন। এ নিয়ে বন বিভাগের কোনো তৎপরতা চোখে পড়ে না।
পরিবেশবিষয়ক সংগঠন কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, টেকনাফের সাবরাং পয়েন্ট থেকে বাহারছড়া শাপলাপুর হয়ে উখিয়ার মনখালী সেতু পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার সৈকতে (মেরিন ড্রাইভের পশ্চিমে) কয়েক দশক আগে ১০ লাখের বেশি ঝাউগাছ সৃজন করা হয়েছিল। গত কয়েক বছরে ৭০ শতাংশ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বাগানের ভেতরের ঝাউগাছ কেটে অন্তত তিন হাজার ঘরবাড়ি তৈরি হলেও বন বিভাগ এ পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চালায়নি, একটা মামলাও করেনি।
১৭ কিলোমিটারে অন্তত ৩ হাজার ঘরবাড়ি
১৪ জুন সকাল নয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত টেকনাফ ও উখিয়ার প্রায় ৪৫ কিলোমিটার ঝাউবাগান ঘুরে দেখা যায়, অন্তত ১৫টি স্থানে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি-দোকানপাট, ব্যবসাকেন্দ্র তৈরি হয়েছে। কিছু স্থানে ঝাউগাছ কেটে বিরান ভূমিতে অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে।
বেলা ১১টায় টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের জাহাজপুরা সৈকতে নেমে দেখা গেছে, এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ঝাউবাগানের ভেতরে তৈরি হয়েছে অন্তত ৭০০টি ঝুপড়ি ঘর। স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নাগরিকেরাও সেসব ঘরে অবস্থান করছেন। বেশির ভাগ ঘর তৈরি হয়েছে ঝাউগাছের খুঁটি দিয়ে।
একটি ঘরে কথা হয় স্থানীয় বাহারছড়ার বাসিন্দা ওসমান গণির সঙ্গে। তিনি বলেন, চিংড়ির পোনা ধরার জন্য তিনি ঘরে অবস্থান করেন। রাতের বেলায় আরও কয়েকজন ঘরে আসেন চিংড়ির পোনা ধরতে। তবে আশপাশের ঘরগুলোতে দিনরাত বখাটে তরুণ ও লোকজনের আড্ডা চলে। এ সময় মাদক সেবন ও ইয়াবা বিক্রি হয়।
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের উখিয়ার মনখালী অংশের সৈকতের এই স্থানে দুই বছর আগেও ঘন ঝাউবাগান ছিল। গাছ কেটে ফেলায় বাগনটি এখন আর নেই। সম্প্রতি তোলা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ ব হ রছড় র স কত স কত র ঘরব ড়
এছাড়াও পড়ুন:
ভুলে যাবেন না, শরীরচর্চা একটি সুন্নত
খেলাধুলা ও শারীরিক ব্যায়াম আধুনিক জীবনে প্রায়ই অবহেলিত হয়, বিশেষ করে ব্যস্ততার কারণে। কিন্তু ইসলামে খেলাধুলার একটি গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে, যা নবীজি (সা.)-এর জীবন থেকে শুরু হয়েছে। তিনি নিজে বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশ নিয়েছিলেন এবং এর আধ্যাত্মিক ও সামাজিক উপকারিতার কথা উল্লেখ করেছেন।
শরীরচর্চার আধ্যাত্মিক উপকারিতাশরীরচর্চা ইসলামে একটি ভুলে যাওয়া সুন্নাহ, যা আমাদের শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ করে। এটি আমাদের মনোযোগ ও স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়, সম্প্রদায়ের বন্ধন জোরদার করে এবং হারাম থেকে দূরে রাখে। যেমন:
দুটি নিয়ামত এমন আছে, যার প্রতি অনেক মানুষ প্রতারিত হয়: স্বাস্থ্য ও অবসর সময়।সহিহ বুখারী, হাদিস: ৬,৪১২১. মনোযোগ ও অবিচলতা গড়ে তোলে
ইসলাম আমাদের নিজেকে উন্নত করতে ও পরকালে উত্তম স্থান অর্জনের জন্য সংগ্রাম করতে শেখায়। শরীরচর্চা এই প্রক্রিয়ায় সহায়ক; কারণ, এটি মনোযোগ, সংগ্রাম এবং ধৈর্যের মাধ্যমে আমাদের মন ও শরীরকে শক্তিশালী করে।
শারীরিক ব্যায়ামের সময় আমরা যখন মাত্রা অতিক্রম করে যাই, তখন তাৎক্ষণিক আরাম ত্যাগ করে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অর্জনের জন্য মানসিক শক্তি অর্জন হয়।
আরও পড়ুনউত্তম ব্যবসায়ী হওয়ার নববি কৌশল০৯ জুন ২০২৫২. সমাজের শক্তি বৃদ্ধি করে
ইসলামে সামাজিক ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবাই এক উম্মাহর অংশ। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই এই যে তোমাদের উম্মাহ, এটা তো একই উম্মাহ, আর আমি তোমাদের রব, অতএব আমার ইবাদত করো।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৯২)
জুমার নামাজ, হজের মতো ইবাদত আমাদের সম্প্রদায়ের বন্ধনকে শক্তিশালী করে।
দলগত খেলাধুলা বা ব্যায়াম অনুশলীন এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে। সাইক্লিং, দৌড় বা সাঁতারের মতো সামাজিক আয়োজনের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে এবং যোগাযোগ, দলগত কাজ ও স্থিতিস্থাপকতার দক্ষতা বৃদ্ধি করে। এটি ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৩. হারাম থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেয়
আধুনিক সমাজে হারাম ক্রিয়াকলাপ—যেমন মদ্যপান, অবৈধ সম্পর্ক, জুয়া বা অনৈতিক কনটেন্ট—সহজলভ্য। এই প্রলোভনগুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখা, বিশেষ করে তরুণদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নিয়মিত শরীরচর্চা আমাদের সময় ও শক্তিকে ইতিবাচক কাজে লাগাতে সাহায্য করে। জিমে শরীরচর্চা বা মাঠে শারীরিক প্রশিক্ষণ আমাদের মনকে হারাম থেকে দূরে রাখে এবং দ্বীনের প্রতি নিবেদিত রাখে।
সাইক্লিং, দৌড় বা সাঁতারের মতো সামাজিক আয়োজনের মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে বন্ধন তৈরি করে এবং যোগাযোগ, দলগত কাজ ও স্থিতিস্থাপকতার দক্ষতা বৃদ্ধি করে।নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘দুটি নিয়ামত এমন আছে, যার প্রতি অনেক মানুষ প্রতারিত হয়: স্বাস্থ্য ও অবসর সময়।’ (সহিহ বুখারী, হাদিস: ৬,৪১২)
শরীরচর্চা আমাদের স্বাস্থ্য ও সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করে, যা আমাদের দ্বীন ও দুনিয়া উভয়ের জন্য কল্যাণকর।
আরও পড়ুনযে ৪টি পরীক্ষা নবীজি (সা.)–এর জীবনকে দৃঢ়তা দিয়েছে২২ জুলাই ২০২৫হাদিসে উল্লিখিত খেলাধুলানবীজি (সা.)-এর জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব উল্লেখযোগ্য। তিনি নিজে বিভিন্ন শারীরিক কসরতের মতো খেলায় অংশ নিয়েছিলেন এবং এর প্রশংসা করেছেন। কিছু উল্লেখযোগ্য খেলা হলো:
দৌড়: হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, তিনি নবী (সা.)-এর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে দৌড় দিয়েছিলাম এবং তাঁকে হারিয়েছিলাম। পরে যখন আমার ওজন বেড়ে গেল, তিনি আমাকে হারিয়েছিলেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২,৫৭৮)
বোঝা যায়, শুধু পুরুষ নয়, নারীদের জন্যও এ ধরনের খেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে শরীরচর্চা করা অনুমোদিত।
তিরন্দাজি: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তিরন্দাজি অনুশীলন করো, কারণ এটি তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,৯১৭)
তিরন্দাজি শারীরিক ও মানসিক দক্ষতা বাড়ায়।
আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে দৌড় দিয়েছিলাম এবং তাঁকে হারিয়েছিলাম। পরে যখন আমার ওজন বেড়ে গেল, তিনি আমাকে হারিয়েছিলেন।হজরত আয়েশা (রা.), সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২,৫৭৮ঘোড়দৌড়: নবীজি (সা.) ঘোড়দৌড়ের প্রশংসা করেছেন এবং এতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছেন। (সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ৩,৫৮৫)
সাঁতার: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের সন্তানদের সাঁতার, তিরন্দাজি এবং ঘোড়সওয়ারি শেখাও।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৬,৫৮২)
কুস্তি: নবীজি (সা.) একবার নিজেই রুকানা নামক একজন ব্যক্তির সঙ্গে কুস্তি লড়েছিলেন এবং তাঁকে পরাজিত করেছিলেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪,০৭৮)
এই হাদিসগুলো প্রমাণ করে যে খেলাধুলা শুধু শারীরিকভাবে উপকারী নয়, বরং এটি সুন্নাহের একটি অংশ। নবীজির (সা.) জীবন আমাদের জন্য অনুকরণীয়। আধুনিক বিশ্বে যেখানে সামাজিক বিভেদ ও হারামের প্রলোভন আমাদের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে, সেখানে এই খেলাধুলা ও শরীরচর্চা আমাদের দ্বীন ও সমাজকে শক্তিশালী করতে পারে।
আরও পড়ুনসুস্থ জীবনের জন্য নবীজি (সা.)–এর কয়েকটি সুন্নাহ২৯ জুন ২০২৫