আল্লাহর সুন্দর নামগুলোর মধ্যে ‘মুমিন’ নামটি এমন একটি রত্ন, যা আমাদের হৃদয়ে শান্তি ও নিরাপত্তার স্পর্শ নিয়ে আসে। মুমিন অর্থ তিনি, যিনি তাঁর বান্দাদের ভয় থেকে মুক্তি দেন, তাঁদের অন্তরে ইমানের স্নিগ্ধতা প্রবাহিত করেন এবং তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণের মাধ্যমে তাঁদের আশা অটুট রাখেন।

এই নাম আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সত্যিকারের নিরাপত্তা কেবল আল্লাহর কাছেই পাওয়া যায়। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যিনি তাদের ক্ষুধা নিবারণ করেছেন এবং ভয় থেকে তাদের নিরাপত্তা দিয়েছেন।’ (সুরা কুরাইশ: ৪)

‘আল–মুমিন’ তিনি, যাঁর কাছ থেকে নিরাপত্তা ও শান্তি আসে, তিনি ভয়ের পথ বন্ধ করে নিরাপত্তার উপায় দান করেন।ইমাম গাজালি (রহ.

)মুমিন নামের মহিমা

‘আল–মুমিন’ নামটি কোরআনে সুরা হাশরের শেষে এসেছে, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি মালিক, পবিত্র, শান্তিদাতা, মুমিন।’ (সুরা হাশর: ২৩) এই নামের কয়েকটি অর্থ—

১. নিরাপত্তার উৎস: আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে নিরাপত্তা ছড়িয়ে দেন। তিনি তাদের ক্ষুধা মেটান এবং ভয় থেকে মুক্তি দেন। যেমন তিনি সুরা কুরাইশে বলেন, কুরাইশদের তিনি ক্ষুধা নিবারণ করেছেন এবং ভয় থেকে তাদের নিরাপত্তা দিয়েছেন।

এ ছাড়া তিনি ইমানদারদের ভয়কে নিরাপত্তায় রূপান্তর করার কথা বলেছেন সুরা নুরে, ‘এবং তিনি তাদের ভয়ের পরিবর্তে নিরাপত্তা দেবেন।’ (সুরা নুর: ৫৫)

আখিরাতে তিনি তাঁর বান্দাদের জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে বলবেন, ‘তোমাদের ওপর কোনো ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিত হবে না।’ (সুরা: আ’রাফ: ৪৯)

২. প্রতিশ্রুতির পূর্ণতা: আল্লাহ তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেন। তিনি বলেন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক, তুমি মানুষকে একটি দিনে একত্র করবে, যাতে কোনো সন্দেহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর ওয়াদা ভঙ্গ করেন না।’ (সুরা আল-ইমরান: ৯)

তিনি দুনিয়ায় রিজিক, ক্ষমা এবং সুস্থতা দান করেন আর আখিরাতে সৎকর্মের প্রতিদান দেন। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, ‘আমি আমার বান্দার ধারণা অনুযায়ী তার কাছে থাকি, সে যেন আমার সম্পর্কে যা ইচ্ছা ধারণ করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৭৫)

৩. একত্বের সাক্ষী: আল্লাহ মুমিন হিসেবে তাঁর একত্বের সাক্ষ্য দেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং ফেরেশতাগণ ও জ্ঞানীরাও ন্যায়ের সঙ্গে সাক্ষ্য দিয়েছেন।’ (সুরা আল-ইমরান: ১৮)

আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে নিরাপত্তা ছড়িয়ে দেন। তিনি তাদের ক্ষুধা মেটান এবং ভয় থেকে মুক্তি দেন।

তিনি রাসুল ও কিতাব প্রেরণ করে তাঁর একত্বের প্রমাণ স্থাপন করেছেন।

৪. ন্যায়বিচারক: আল্লাহ তাঁর বান্দাদের আখিরাতে কোনো অবিচার থেকে নিরাপদ রাখেন। তিনি বলেন, ‘আজ প্রত্যেকে তার কৃতকর্মের প্রতিদান পাবে, আজ কোনো অবিচার নেই।’ (সুরা গাফির: ১৭)

তিনি মজলুমকে জালিম থেকে রক্ষা করেন এবং জালিমকে সময় দেন, কিন্তু যখন শাস্তি দেন, তখন কাউকে ছাড়েন না। তিনি বলেন, ‘বলো, কার হাতে সবকিছুর সার্বভৌমত্ব? তিনি আশ্রয় দেন, কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কেউ আশ্রয় পায় না।’ (সুরা মুমিনুন: ৮৮)

আরও পড়ুনআল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নাম ‘আল্লাহ’০২ জুন ২০২৫‘আল–মুমিন’ নামের প্রভাব

‘মুমিন’ নামে ইমান আনার ফলে আমাদের জীবনে তিনটি গভীর প্রভাব পড়ে—

১. আল্লাহর একত্বে দৃঢ় বিশ্বাস: এই নাম আমাদের বোঝায়, আল্লাহই একমাত্র স্রষ্টা এবং তাঁরই ইবাদত করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের আমাদের নিদর্শন দেখাব জগতের মাঝে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে, যতক্ষণ না তাদের কাছে স্পষ্ট হয় যে এটিই সত্য।’ (সুরা ফুসসিলাত: ৫৩)

এই নাম আমাদের নিশ্চিত করে, সত্যের পথ স্পষ্ট এবং এর শেষ জান্নাত। আল্লাহ বলেন, ‘যারা ইমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, আমি তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাব, যার নিচে নদী প্রবাহিত।’ (সুরা নিসা: ১২২)

২. আল্লাহর প্রতি ভালো ধারণা: মুমিন নাম আমাদের আল্লাহর প্রতি আস্থা ও ভরসা শেখায়। হাদিসে কুদসিতে বলা হয়েছে, ‘আমি আমার বান্দার ধারণা অনুযায়ী তার কাছে থাকি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৭৫)

৩. সত্যের পথে অটল থাকা: এই নাম আমাদের নিশ্চিত করে, সত্যের পথ স্পষ্ট এবং এর শেষ জান্নাত। আল্লাহ বলেন, ‘যারা ইমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, আমি তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাব, যার নিচে নদী প্রবাহিত।’ (সুরা নিসা: ১২২)

ইবন তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহ তাঁর বাধ্য বান্দাদের প্রতিদান দেওয়ার এবং প্রার্থনায় সাড়া দেওয়ার ওয়াদা করেছেন এবং তিনি সত্যবাদী, কখনো ওয়াদা ভঙ্গ করেন না।’ (ইসলাম ওয়েব, ১৭৬০৩৯)

ইমাম গাজালি (রহ.) বলেন, ‘আল–মুমিন’ তিনি, যাঁর কাছ থেকে নিরাপত্তা ও শান্তি আসে, তিনি ভয়ের পথ বন্ধ করে নিরাপত্তার উপায় দান করেন।’ (আল-মাকসাদ আল-আসনা, পৃ. ৭০)

আল–জাজিরা ডটনেট থেকে অনুবাদ মনযূরুল হক

আরও পড়ুনআল্লাহর নামের ওপর ইমান আনতে হয় কেন১১ জুন ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ম ম ন আল ল হ ত কর ছ ন একত ব

এছাড়াও পড়ুন:

সচিবালয়ে আবারও বিক্ষোভ কর্মচারীদের

‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে ঈদের ছুটি শেষে অফিস খোলার একদিন পর আজ সোমবার আবারও সচিবালয়ের ভেতর বিক্ষোভ করছেন সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আন্দোলনকারী কর্মচারীরা। বিক্ষোভ শেষে আজ সরকারের আরও তিন উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা রয়েছে।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, কর্মচারীরা মিছিল করে সচিবালয়ের বাদামতলায় জমায়েত হন। সেখানে তারা অধ্যাদেশটি বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নতুন ভবনের নিজে জড়ো হয়ে অধ্যাদেশটি বাতিলের দাবি জানান। তাঁদের স্লোগান ছিল ' অবৈধ কালো আইন মানি না' ইত্যাদি।

‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে বেশ কিছু দিন ধরে ধরে আন্দোলন করছেন সচিবালয়ে কর্মরত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। আন্দোলন চলার মধ্যেই অধ্যাদেশটি জারি করে সরকার। এর পর থেকে বিক্ষোভ, কর্মবিরতি ও স্মারকলিপি দেওয়ার মতো কর্মসূচি পালন করছেন আন্দোলনকারী কর্মচারীরা।

ঈদের ছুটি শুরু আগে কর্মচারীরা অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ,আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, খাদ্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, খাদ্য, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন।

তারই ধারাবাহিকতায় আজ স্বরাষ্ট্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বৃহস্প‌তিবার গণসং‌যোগ, রবিবার থেকে কঠোর কর্মসূচি
  • সচিবালয়ে কর্মচারীদের বিক্ষোভ, কঠোর কর্মসূচির হুমকি
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৮ জুন ২০২৫)
  • দা‌বি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বি‌ক্ষোভ চা‌লি‌য়ে যা‌বেন কর্মচারী‌রা
  • সচিবালয়ে আজও কর্মচারীদের বিক্ষোভ
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৭ জুন ২০২৫)
  • কথিত সংস্কার কাদের জন্য, কিসের জন্য: মাহমুদুর রহমান মান্না
  • খুলনায় ‘সেরা সাঁতারুর খোঁজে বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতা শুরু
  • সচিবালয়ে আবারও বিক্ষোভ কর্মচারীদের