সিলেটে অবৈধ পাথরের ব্যবসা ঠেকাতে ‘পাথরের সাম্রাজ্য’ হিসেবে পরিচিত কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলায় ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অভিযান চালিয়েছে টাস্কফোর্স। আজ বুধবার চালানো অভিযানে তিন উপজেলায় ৮৭টি যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ নিয়ে গত তিন দিনে জেলার চার উপজেলায় ১৫৫টি যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলো।

এদিকে আজ বেলা দেড়টায় সিলেট নগরের বারুতখানা এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছে সিলেটের পাথরসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। সংগঠনটির পক্ষ থেকে সিলেটের সব পাথর কোয়ারির ওপর থেকে ইজারার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়। দাবি আদায়ে আগামী রোববার মানববন্ধন কর্মসূচি পালনেরও ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।

এর আগে গত শনিবার সকালে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) জাফলং পরিদর্শনে যান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। পরে দুই উপদেষ্টা গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে জাফলংসহ সিলেটের কোনো পাথর কোয়ারি ভবিষ্যতে ইজারা দেওয়া হবে না বলে জানান। অন্যদিকে অবৈধ পাথরের ব্যবসা ঠেকাতে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান দ্রুততার সঙ্গে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে থাকা ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দুই উপদেষ্টার নির্দেশনা পাওয়ার পরপরই জেলায় কী পরিমাণ বৈধ ও অবৈধ ক্রাশার মেশিন আছে, তার তালিকা তৈরির কাজ শুরু করে প্রশাসন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার এ তালিকা তৈরির কাজ শেষ হওয়ার কথা আছে। পরে তালিকা ধরে ধরে সব ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। যদিও সোমবার থেকেই ক্রাশার মেশিনে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কাজ শুরু করা হয়।

স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, আজ দুপুর ১২টা থেকে বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত গোয়াইনঘাটের জাফলং এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিদ্যুৎ বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, পুলিশ, বিজিবি ও বন বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স অভিযান চালায়। অভিযানে ৬৭টি ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মিটার জব্দ করা হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী প্রথম আলোকে বলেন, পরিবেশবিধ্বংসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। আজ ৬৭টি ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি মিটার জব্দ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার এ রকম সব যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।

এদিকে কোম্পানীগঞ্জের পারুয়া এলাকায় বেলা ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত টাস্কফোর্সের অভিযান পরিচালিত হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহারের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে ১৭টি যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ ছাড়া কানাইঘাট উপজেলায় টাস্কফোর্সের অভিযান চালিয়ে তিনটি যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন নিশ্চিত করেছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধ ও অবৈধ পাথরের ব্যবসা ঠেকাতে জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। পাথর কোয়ারিগুলোয় অভিযানের পাশাপাশি ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধেও অভিযান চলছে। এটা অব্যাহত থাকবে।

এর আগে সোমবার সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুলে ৩০টি ও জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৫টি এবং গতকাল মঙ্গলবার সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুলে ৩৩টি ক্রাশার মেশিনের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোয়ারি থেকে পাথর ও বালু উত্তোলন বন্ধে নির্দেশনা দেয় সরকার। এর পর থেকে রাতের আঁধারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার পৃষ্ঠপোষকতায় অবৈধভাবে পাথর ও বালু উত্তোলন চলত। গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর কোয়ারির নিয়ন্ত্রণ নেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতায় হাজারো শ্রমিক পাথর উত্তোলন শুরু করেন। এসব পাথর বারকি ও স্টিল নৌকায় করে ক্রাশার মেশিনমালিকদের কাছে বিক্রি করা হয়। পরে সেসব পাথর মেশিনে ভেঙে ছোট করে ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করা হয়। ব্যবসায়ীরা ট্রাক ও পিকআপে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাথর পাঠান।

পাথর কোয়ারি চালুর দাবি ব্যবসায়ীদের

জেলা পাথর ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ আজ দুপুরে নগরের বারুতখানা এলাকার একটি রেস্তোরাঁ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে। এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সমন্বয়ক শাব্বীর আহমদ ফয়েজ।

সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলোর ইজারা পুনরায় চালুর দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে সিলেটের পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। বুধবার দুপুরে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক র শ র ম শ ন র ব দ য ৎ স য গ ব চ ছ ন ন কর উপজ ল য় ব যবস য় উপদ ষ ট উপজ ল র র উপজ ল র ব যবস পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ গঠনে কার্যকর পদক্ষেপসহ ৫ সুপারিশ

‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫’ দ্রুত জারি করে ‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ গঠনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণসহ ৫ দফা সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। একই সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব প্রদানের আহ্বান জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সুপারিশ তুলে ধরেন সংগঠনটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ মনির হোসেন।

আরো পড়ুন:

ফেব্রুয়ারিতেই মহোৎসবে জাতীয় নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা

বেড়ায় রবিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল, সড়ক ও নৌপথ অবরোধের ঘোষণা

অ্যাসোসিয়েশনের সুপারিশগুলো হলো
১. নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী দ্রুততম সময়ে ‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয় (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫’ জারি করে ‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ গঠন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনা।
২. প্রস্তাবিত অর্গানোগ্রাম অনুমোদন, নতুন পদসৃজন, আপগ্রেডেশন এবং প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সরবরাহ নিশ্চিতকরণ।
৩. জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০২৩ বাতিল করে জাতীয় পরিচয়পত্র কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের কাছে হস্তান্তর।
৪. আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর নির্বাচন ভবনে সব কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে ‘নির্বাচন কর্মকর্তা সম্মেলন-২০২৫’ আয়োজন।
৫. নির্বাচন কর্মকর্তা সম্মেলন-২০২৫ আয়োজনে প্রস্তুতিমূলক বিভিন্ন কমিটি গঠন।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশন আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছাত্রদলের আবেদনের পর মনোনয়নপত্র নেওয়ার সময় বাড়ল
  • গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন হাসিবুল, জানালেন ফেসবুক পোস্টে
  • ‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ গঠনে কার্যকর পদক্ষেপসহ ৫ সুপারিশ
  • নানা আয়োজনে পিপিডিএসের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন
  • ‘ডিসকর্ড’ অ্যাপে আন্দোলনের সূচনা, অন্তর্বর্তী সরকারের নেতাদেরও বাছাই করছেন সেই তরুণেরা