দেশের জনসাধারণকে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে ‘ফাইন্যান্সিয়াল লিটেরিসি’ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে এ কার্যক্রম পরিচালনা করার পাশাপাশি এবার বিনিয়োগ শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এ উদ্যোগ ও প্রচেষ্টাকে আরো বেগবান করতে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার গণমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশনকে (বিটিভি) পচ্ছন্দের তালিকায় রাখা হয়েছে। এরই ধরাবাহিকতায় দেশব্যাপি বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিটিভিতে জনস্বার্থে পুঁজিবাজার-বিষয়ক শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে বিএসইসি।

সম্প্রতি বিএসইসির ফাইন্যান্সিয়াল লিটেরিসি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে ওই চিঠির অনুলিপি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ও পাঠানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থান, বেড়েছে লেনদেন

প্রিমিয়ার ব্যাংক পারপেচুয়াল বন্ডের অর্ধবার্ষিক কুপন রেট ঘোষণা

পুঁজিবাজারে যারা বিনিয়োগ করতে আসবেন, তারা যেন বিনা খরচে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ শিক্ষা নিয়ে বাজারে আসতে পারেন, সে জন্যই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন পরবর্তী পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বধীন কমিশন জনসাধারণের মাঝে বিনিয়োগ শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট অংশিজনদের বিনিয়োগ শিক্ষার প্রসার ও ব্যাপ্তি বাড়াতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

একইসঙ্গে দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের সহযোগিতায় দেশের সর্বত্র সব শ্রেণি-পেশার মানুষের দোরগোড়ায় বিনিয়োগ শিক্ষার প্রসার ও বিকাশে একত্রে কাজ করবে।

বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএসইসি ২০১৭ সাল থেকে দেশব্যাপী ফাইন্যান্সিয়াল লিটারিসি কার্যক্রম শুরু করেছে, যা এখন পর্যন্ত চলমান রয়েছে। পুঁজিবাজারে যারা বিনিয়োগ করতে আসবে তারা যেন প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বাজারের ধরণ সম্পর্কে বুঝে বিনিয়োগ করতে পারে। সেজন্য বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ শিক্ষা থাকা আবশ্যক, যা বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি এড়াতে সহায়ক হবে।

এ লক্ষ্যে বিএসইসি’র একাডেমিক উইং হিসাবে বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটস (বিএএসএম) বাজার মধ্যস্বতাকারীদের জন্য নতুন নতুন শিক্ষা কার্যক্রম এবং প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ নিয়মিত পরিচালনা করছে। তাছাড়া দেশের প্রায় সব জেলাতে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, এ উদ্যোগ এবং প্রচেষ্টাকে আরো বেগবান করতে গণমাধ্যম একটি অন্যতম মাধ্যম। তাই বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) যেহেতু একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। তাই বিটিভির মাধ্যমে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বিনিয়োগ শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে পারলে, তা দ্রুত বিনিয়োগকারীদের নিকট পৌঁছানো উল্লেখ্য বিটিভিতে পুঁজিবাজার-বিষয়ক শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচারের অনুরোধ জানিয়ে বিএএসএম ইতোমধ্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো.

মাহফুজ আলম বরাবর একটি পত্র প্রেরণ করেছে।

অতএব, দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিটিভিতে জনস্বার্থে বিনাখরচে পুঁজিবাজার-বিষয়ক শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান সম্প্রচারের জন্য একটি স্লট বরাদ্দের ব্যাপারে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটি নির্দেশনা জারির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র ও পরিচালক রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “দেশের জনগণকে বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে এবং সচেতনতা বাড়াতে ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসি কার্যক্রম চালু রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য এ শিক্ষা আবশ্যক। এ লক্ষ্যে বিএসইসি'র একাডেমিক উইং হিসাবে বিএএসএম কাজ করে যাচ্ছে।”

তথ্য মতে, দেশের জনগণকে বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে বিএসইসি। এরই ধরাবাহিকতায় বিএসইসির উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম)। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে বিএসইসির উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা ‘বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট (বিএএসএম)’। মূলত বিআইসিএম প্রতিষ্ঠার পর ২০১৭ সাল থেকেই দেশে বিনিয়োগ শিক্ষার প্রচার ও প্রসার শুরু হয়। বর্তমানে এ দুইটি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করার মাধ্যমে শিক্ষিত বিনিয়োগকারী ও দক্ষ জনবল গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

এদিকে বিনিয়োগ শিক্ষার বিষয়টি স্কুল কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যাগ নেয় বিগত সরকারের তৎকালীন বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। স্কুলপর্যায়ের বিনিয়োগ শিক্ষা, একজন নাগরিককে পরিণত বয়সে আয়, ব্যয়, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হবে- এমনটি ভেবেই দেশে জনগণকে বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে বিশেষ ধরনের ‘ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম’ গড়ার চিন্তা-ভাবনা করা হয়েছিল।

এরই ধারাবাহিকতায় প্রাথমিক পর্যায় থেকে সচেতনতা বাড়াতে মাধ্যমিক থেকে পাঠ্যপুস্তকে বিনিয়োগ শিক্ষা তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ে বিনিয়োগ শিক্ষার বিষয়টি সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করার চিন্তাভাবনা করা হয়। একইসঙ্গে বিনিয়োগ শিক্ষার বিষয়ে মাস্টার্স বিভাগ চালু করার চিন্তা-ভাবনা করা হয়েছিল।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের পুঁজিজারে অধিকাংশই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী, যারা যথাযথ বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত নয়। তারা তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক বিবরণী এবং অন্যান্য প্রাপ্ত তথ্যাদি সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে পারেন না। তাই তারা গুজব, ধারণা ও আবেগের ভিত্তিতে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেয়। এমনকি বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তারা বৃহৎ বিনিয়োগকারীদের অনুসরণ করে থাকে।

ফলে বাজার কারসাজির সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়। পুঁজিবাজারে ভুল বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাই বিনিয়োগ শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হলে, বিনিয়োগকারীরা সঠিক বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এতে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা বাড়বে এবং কারসাজির সম্ভাবনা কমবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএএসএম’র মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “দেশের জনগণকে বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে বিএএসএম বিভিন্ন ধরনের কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাকিতায় আমারা ইতোমধ্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বরাবর একটি পত্র প্রেরণ করেছি। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমে বিনিয়োগ শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করার জন্য প্রথমবারের মতো এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএএসএম।”

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ শিক্ষার প্রসারে কর্মকাণ্ড

গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ বিএসইসি ও বিএএসএম’র যৌথ উদ্যোগে জেলাপর্যায়ে দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রংপুর জেলাতে ‘বিনিয়োগ শিক্ষা কনফারেন্স’ আয়োজন করে। তার আগের বছরের ১৮ মার্চ বগুড়ায় বিনিয়োগ শিক্ষা কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়।

গত বছরের ২২ অক্টোবর জনসাধারণের মাঝে বিনিয়োগ শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে বিএসইসি ও দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন কাজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের সর্বত্র সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে সরাসরি ও দ্রুত যোগাযোগের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগ শিক্ষার প্রসার ও বিকাশ সাধারণ জনসাধারণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে প্রতিষ্ঠান দুইটি একসঙ্গে কাজ করবে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন পরবর্তী বিএসইসির দায়িত্ব গ্রহণের পর চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বধীন কমিশন এ উদ্যোগ গ্রহণ করে। তার আগে ৩০ সেপ্টেম্বর পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট অংশিজনদের সঙ্গে বৈঠকে বিনিয়োগ শিক্ষার প্রসার ও ব্যাপ্তি বাড়ানো এবং পেশাজীবীদের সক্ষমতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে বিএসইসি।

গত ৮ মে পাবলিক এবং প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য পুঁজিবাজার কেন্দ্রিক একাডেমিক শিক্ষা সচেতনতামূলক ধারাবাহিক কর্মশালার অংশ হিসেবে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ডিপার্টমেন্টের বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য সচেতনতামূলক কর্মশালা আয়োজন করে ডিএসই।

গত ২২ মে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির (সিএসই) চট্রগ্রামের কার্যালয় সফর করেন ইউনিভার্সিটি অফ সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলোজি চিটাগংয়ের (ইউএসটিসি) ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী এবং বিনিয়োগ শিক্ষার অংশ হিসেবে সিএসই প্রতিনিয়তই এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে যাচ্ছে।

গত ২৯ মে চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুষদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘ইনভেস্টমেন্ট ইন ক্যাপিটাল মার্কেট’ শীর্ষক বিনিয়োগ শিক্ষা প্রোগ্রাম আয়োজন করে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম)।

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ন য় গ শ ক ষ য় শ ক ষ ত কর ব ন য় গ শ ক ষ র প রস র ও ব ফ ইন য ন স য় ল ল ট র স ব এসইস র ব এএসএম দ র জন য র লক ষ য পরবর ত ক জ কর পর য য় র কর র এক ড ম গ রহণ এরই ধ ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

ঋণে জর্জরিত ৫ কোম্পানিতে বিএসইসির নজরদারি, কমিটি গঠন

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো গ্রুপেরে ৩টি কোম্পানির সার্বিক কার্যক্রম তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমে বিশেষ নজরদারির অংশ হিসেবে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এছাড়া আরো দুইটি কোম্পানির সার্বিক কার্যক্রম তদন্ত করবে বিএসইসি। এসব কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী ঋণে জর্জরিত।

এ লক্ষ্যে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তদন্তের নির্দেশ দেওয়া কোম্পানিগুলো হলো- বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো, শাইনপুকুর সিরামিকস, রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস (আরএসআরএম) ও নিউ লাইন ক্লোথিংস। এর মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো ও শাইনপুকুর সিরামিকস বেক্সিমকো শিল্পগোষ্ঠীর কোম্পানি।

আরো পড়ুন:

সূচক ডিএসইতে কমলেও সিএসইতে বেড়েছে

সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ সভা ২৪ জুন

সম্প্রতি বিএসইসির ইনসপেকশন, ইনকোয়ারি অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন থেকে এ সংক্রান্ত আদেশগুলো জারি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বিএসইসির গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- অতিরিক্ত পরিচালক মুহাম্মদ জিয়াউর রহমান, উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান রনি ও সহকারী পরিচালক মো. আবু হেনা মোস্তফা।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, তদন্তের নির্দেশ দেওয়া কোম্পানিগুলোর কারখানা, অফিস, আর্থিক হিসাব এবং ব্যবসায়িক অন্যান্য কার্যক্রম তদন্ত করা হবে। এছাড়া সঠিক নথির মাধ্যমে কমিশনের বিধান অনুসারে আয় ও ব্যয় নিশ্চিত করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি কোম্পানিগুরোর উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ারধারন, আর্থিক প্রতিবেদন, বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম), অভ্যন্তরীণ লেনদেন, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন ও এসব বিষয়ে অন্য কোন প্রাসঙ্গিক সমস্যা থাকলে তা যাচাই করবে গঠিত তদন্ত কমিটি।

বিগত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন পুঁজিবাজারের কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক কার্যক্রমে অসঙ্গতি খুঁজে বের করতে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র ও পরিচালক আবুল কালাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “বেক্সিমকো গ্রুপের ৩টি কোম্পানিসহ আরো ২টির সার্বিক কার্যক্রম তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে কোনো অসঙ্গতি পাওয়া গেলে, সে অনুযায়ী প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিশ্লেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের নজরদারি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। তবে একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সচেতনতা ও সতর্কতাও বাড়বে, যাতে তারা গুজব নয়, বাস্তব তথ্যের ভিত্তিতে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেয়।

বিএসইসির তদন্তের আদেশ
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এ মর্মে অভিমত দেয় যে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে ৫টি ইস্যুয়ার কোম্পানির সিকিউরিটিজ আইন ও বিধি-বিধানের অধীনে রেগুলেটরি কমপ্লাইয়েন্স সংক্রান্ত বিষয়াদি পরিপালন নিশ্চিত করার জন্য কমিশনের অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২১ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে চারজন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে অনুসন্ধান কার্য পরিচালনার নির্দেশ প্রদান করা হলো। অনুসন্ধান কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে অনুসন্ধান সম্পন্ন করে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

এদিকে, সর্বশেষ কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মার ৩০.১৩ শতাংশ, বেক্সিমকোর ৩৩.১৩ শতাংশ, শাইনপুকুর সিরামিকসের ৫০ শতাংশ, রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলসের ২৯.৯৩ শতাংশ ও নিউলাইন ক্লোথিংসের ৩০.৬১ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা পরিচালকের হাতে রয়েছে। এর মধ্যে রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলসের উদ্যোক্তা পরিচালকের হাতে সম্মিলিতভাবে নূন্যতম সীমা ৩০ শতাংশের কম শেয়ারধারন রয়েছে।

বেক্সিমকো ফার্মা: বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে, যার বড় অংশই এখন মন্দ ঋণে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরির বেক্সিমকো ফার্মার ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪২৬ কোটি ৭৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আর দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭৫ কোটি ৭৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ফলে কোম্পানির স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে মোট ঋণের পরিমাণ ৬০২ কোটি ৫৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

বেক্সিমকো: ‘বি’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১০৯ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৪০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। ফলে কোম্পানির স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে মোট ঋণের পরিমাণ ৬ হাজার ৪৪৯ কোটি ৬৮ লাখ ২০ হাজার টাকা।

শাইনপুকুর সিরামিকস: ‘বি’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৭ কোটি ৫৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আর দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ফলে কোম্পানির স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে মোট ঋণের পরিমাণ ৯৮ কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস: ‘জেড’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৪ কোটি ৯৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আর দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৮ কোটি ৬৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। ফলে কোম্পানির স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে মোট ঋণের পরিমাণ ১৯৩ কোটি ৬৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের পর প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক কোনো তথ্য নেই।

নিউলাইন ক্লোথিংস: ‘জেড’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত স্বল্পমেয়াদি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আর দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৯ কোটি ৯১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ফলে কোম্পানির স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে মোট ঋণের পরিমাণ ৯১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের পর প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক কোনো তথ্য নেই।

ঢাকা/এনটি/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভোটের সময় যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকবে পুলিশ: ডিএমপি কমিশনার
  • প্রিমিয়ার ব্যাংক পারপেচুয়াল বন্ডের অর্ধবার্ষিক কুপন রেট ঘোষণা
  • জনগণকে মোবাইল ফোন থেকে কেন হোয়াটসঅ্যাপ মুছে ফেলতে বলল ইরান
  • মার্জিন ঋণ-নেগেটিভ ইক্যুইটি-প্রভিশনের তথ্য চায় বিএসইসি
  • ঋণে জর্জরিত ৫ কোম্পানিতে বিএসইসির নজরদারি, কমিটি গঠন
  • শেয়ার বিক্রি করবেন এনসিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তা
  • বিএসইসি ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিজম অ্যাওয়ার্ডস-ফেলোশিপ আহ্বান
  • পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে ৬০ কোম্পানির পরিকল্পনা চেয়েছে বিএসইসি
  • শরিয়াহ অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল সদস্য মনোনয়নে বিএসইসির কমিটি