এবার গাজায় যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা জোরদার
Published: 26th, June 2025 GMT
গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রত্যাশা বাড়ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যাটো সম্মেলনে বলেছেন, গাজায় বিরাট অগ্রগতি হচ্ছে। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসও যুদ্ধবিরতির প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে। তাছাড়া ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ট্রাম্পকে এক চিঠিতে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরে ভূমিকা রাখার জন্য অনুরোধ করেছেন।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘাতের অবসান ঘটাতে অসাধারণ অগ্রগতি হচ্ছে। ইরানে হামলার ঘটনায় গাজায়ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে তিনি মনে করেন। আলজাজিরা জানায়, ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ট্রাম্পের কাছে একটি চিঠি লেখেন। তাতে তিনি ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার জন্য ট্রাম্পের প্রশংসা করেছেন।
ফিলিস্তিনিদের জন্য স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনতে আরেকটি চুক্তিতে কাজ করার জন্য ট্রাম্পকে প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। ওই চিঠিতে মাহমুদ আব্বাস বলেন, ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান ঘটাতে একটি বিস্তৃত শান্তিচুক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য আরব দেশের সঙ্গে সহযোগিতা করতে তিনি প্রস্তুত।
হামাস জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনার প্রত্যাশা গত কয়েক ঘণ্টায় বেড়েছে। সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তাহের আল-নুনু এএফপিকে বলেন, ‘মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ থেমে যায়নি বরং গত কয়েক ঘণ্টায় তা বেড়েছে। তবে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে নতুন কোনো প্রস্তাব পায়নি হামাস।’
এদিকে গাজায় ৭ ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে সেনা বহনকারী একটি সাঁজোয়া যানে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এতে গাড়িতে থাকা সাত সেনাই নিহত হন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এটি ইসরায়েলের জন্য একটি কঠিন দিন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৮৬০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে গাজার ভেতরে যুদ্ধে প্রায় ৪০০ জনের প্রাণ গেছে। ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৫৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গতকাল বুধবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৫১ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে খাবার আনতে গিয়ে ১৪ জন গুলির মুখে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন। গাজা শহরের বাসিন্দা রামজি খালেদ রয়টার্সকে জানান, হঠাৎ পূর্বসতর্কতা ছাড়াই আল-শাওয়া স্টেশনের আশ্রয়কেন্দ্রে বোমা ফেলে ইসরায়েলি বাহিনী। ভবনে থাকা ১২ জনের সবাই ছিন্নভিন্ন হয়ে যান।
ত্রাণকেন্দ্রে খাবার সংগ্রহের জন্য মাত্র ২০ মিনিট সময় দেওয়া হচ্ছে। বেঁধে দেওয়া সময় পার হলেই গুলি চালাচ্ছে দখলদার বাহিনী।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ত্রাণবাহী জাহাজে বাধা মানবতার বিরুদ্ধে ঘৃণ্যতম অপরাধ: জামায়াত
গাজামুখী ত্রাণবাহী জাহাজ আটক করার ঘটনায় দখলদার ইসরাইলের ন্যক্কারজনক ভূমিকার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আন্তর্জাতিক পানিসীমায় ত্রাণবাহী জাহাজে বাধা দেওয়াকে মানবতার বিরুদ্ধে ঘৃণ্যতম অপরাধও বলেছে দলটি।
ত্রাণবাহী জাহাজগুলোর নিরাপত্তা বিধানের আহ্বান জানিয়ে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
ব্রাজিল ও সুইডেনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে জামায়াত আমিরের বৈঠক
নির্বাচনের প্রস্তুতিতে জামায়াত ৫ পার্সেন্ট এগিয়ে: দুদু
তিনি বলেন, “২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় প্রায় ৭০ হাজার নিরীহ মানুষ শহীদ হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, গাজায় ইতোমধ্যেই দুর্ভিক্ষ ও রোগব্যাধি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ পৌঁছাতে না পারলে হাজার হাজার নারী-শিশুর মৃত্যু অনিবার্য হয়ে পড়বে।”
“আমরা জেনেছি, ইসরাইল ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র ১৩টি ত্রাণবাহী নৌযান এবং সেখানে থাকা বহু মানবাধিকার কর্মীকে আটক করেছে। অথচ এই নৌযানগুলো গাজাবাসীর জন্য খাদ্য, পানি ও ওষুধ বহন করছিল। আমি ইসরাইলের এই অমানবিক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, “আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী মানবিক সহায়তা গন্তব্যে পৌঁছাতে কাউকে বিরত রাখা যায় না। দখলদার ইসরাইল নৌযান ও মানবাধিকার কর্মীদের আটক করে মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ করেছে। ইতোমধ্যেই এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ইসরাইলের এ কর্মকাণ্ডকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি নিরীহ মানুষের জীবনকে মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।”
তিনি বলেন, “মূলত দখলদার ইসরাইল ফিলিস্তিনে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে। আন্তর্জাতিক পানিসীমায় ত্রাণবাহী জাহাজে বাধা দিয়ে তারা চরম অপরাধ সংঘটিত করেছে। এ হামলা মানবতার বিরুদ্ধে এক ঘৃণ্যতম অপরাধ।”
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ক্ষুধার্ত গাজাবাসীর প্রাণ বাঁচাতে ত্রাণবাহী জাহাজগুলো যাতে নিরাপদে গাজায় পৌঁছতে পারে, সেজন্য ইসরাইলের ওপর অবিলম্বে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। একই সাথে আটক মানবাধিকার কর্মীদের নিরাপত্তা ও নিঃশর্ত মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি