গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রত্যাশা বাড়ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যাটো সম্মেলনে বলেছেন, গাজায় বিরাট অগ্রগতি হচ্ছে। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসও যুদ্ধবিরতির প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে। তাছাড়া ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ট্রাম্পকে এক চিঠিতে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরে ভূমিকা রাখার জন্য অনুরোধ করেছেন। 

ট্রাম্প বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘাতের অবসান ঘটাতে অসাধারণ অগ্রগতি হচ্ছে। ইরানে হামলার ঘটনায় গাজায়ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে তিনি মনে করেন। আলজাজিরা জানায়, ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ট্রাম্পের কাছে একটি চিঠি লেখেন। তাতে তিনি ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার জন্য ট্রাম্পের প্রশংসা করেছেন।

ফিলিস্তিনিদের জন্য স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনতে আরেকটি চুক্তিতে কাজ করার জন্য ট্রাম্পকে প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। ওই চিঠিতে মাহমুদ আব্বাস বলেন, ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অবসান ঘটাতে একটি বিস্তৃত শান্তিচুক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য আরব দেশের সঙ্গে সহযোগিতা করতে তিনি প্রস্তুত। 

হামাস জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনার প্রত্যাশা গত কয়েক ঘণ্টায় বেড়েছে। সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তাহের আল-নুনু এএফপিকে বলেন, ‘মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ থেমে যায়নি বরং গত কয়েক ঘণ্টায় তা বেড়েছে। তবে যুদ্ধের অবসান ঘটাতে নতুন কোনো প্রস্তাব পায়নি হামাস।’ 

এদিকে গাজায় ৭ ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে সেনা বহনকারী একটি সাঁজোয়া যানে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এতে গাড়িতে থাকা সাত সেনাই নিহত হন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এটি ইসরায়েলের জন্য একটি কঠিন দিন। 

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৮৬০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে গাজার ভেতরে যুদ্ধে প্রায় ৪০০ জনের প্রাণ গেছে। ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৫৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। 

গতকাল বুধবার গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৫১ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে খাবার আনতে গিয়ে ১৪ জন গুলির মুখে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন। গাজা শহরের বাসিন্দা রামজি খালেদ রয়টার্সকে জানান, হঠাৎ পূর্বসতর্কতা ছাড়াই আল-শাওয়া স্টেশনের আশ্রয়কেন্দ্রে বোমা ফেলে ইসরায়েলি বাহিনী। ভবনে থাকা ১২ জনের সবাই ছিন্নভিন্ন হয়ে যান।  

ত্রাণকেন্দ্রে খাবার সংগ্রহের জন্য মাত্র ২০ মিনিট সময় দেওয়া হচ্ছে। বেঁধে দেওয়া সময় পার হলেই গুলি চালাচ্ছে দখলদার বাহিনী। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

গাজা দখলের পাঁচ দফা পরিকল্পনা নেতানিয়াহুর

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, তার সরকার গাজা উপত্যকার পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় এবং এর জন্য একটি পাঁচ দফা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলমান যুদ্ধের পর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।

নেতানিয়াহু বুধবার (৭ আগস্ট) রাতে এক টেলিভিশন ভাষণে বলেন, "গাজা যেন আর কখনও আমাদের নাগরিকদের জন্য হুমকি না হয়, তা নিশ্চিত করতেই আমাদের এ পরিকল্পনা। আমরা চূড়ান্ত বিজয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছি।”

নেতানিয়াহুর পাঁচ দফা পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে-

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ‘ফিলিস্তিনের পেলে’ নিহত

গাজা পুরোপুরি দখল করা হবে কি না, সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের: ট্রাম্প

গাজার সামরিক ক্ষমতা সম্পূর্ণ ধ্বংস
হামাস ও অন্যান্য প্রতিরোধ গোষ্ঠীর অস্ত্রাগার, টানেল নেটওয়ার্ক ও রকেট উৎক্ষেপণ ব্যবস্থাপনা ধ্বংস করে দেওয়া হবে।

গাজা সীমান্তে স্থায়ী নিরাপত্তা করিডোর
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার আশপাশে দীর্ঘমেয়াদি সামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করবে, যাতে সীমান্ত অতিক্রম করে কোনো হামলা না হয়।

নতুন প্রশাসনিক কাঠামো গঠন
গাজায় হামাসের পরিবর্তে ইসরায়েলের সমর্থিত প্রশাসনিক গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করা হবে, যারা ‘শান্তিপূর্ণ শাসন’ নিশ্চিত করবে।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সহায়তা চাওয়া
এই পরিকল্পনায় আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন আদায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো হবে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব মিত্রদের সঙ্গে।

ফিলিস্তিনি নাগরিকদের জন্য মানবিক সহায়তা
গাজার সাধারণ জনগণের ‘মানবিক দুর্দশা লাঘবে’ খাদ্য, ওষুধ ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

নেতানিয়াহুর ঘোষণায় উদ্বেগ
নেতানিয়াহুর এ পরিকল্পনার কঠোর সমালোচনা করেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। তারা একে সরাসরি দখলদারিত্ব ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ফাতাহ্‌ মুখপাত্র নাবিল আবু রুদাইনা বলেন, “এটি নতুন এক ধরনের দখলদারিত্ব, যা শুধু সংঘাত আরও বাড়াবে।”

জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও নেতানিয়াহুর ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো গাজায় বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরায়েলের এই কৌশল মূলত আঞ্চলিক নিরাপত্তার অজুহাতে পুরো গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার এক প্রচ্ছন্ন চেষ্টা। তবে এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সহজ হবে না, কারণ এতে বহু আন্তর্জাতিক বাধা, স্থানীয় প্রতিরোধ এবং মানবিক সংকট সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজা দখলের পরিকল্পনা অবিলম্বে বাদ দিন: জাতিসংঘের মানবাধিকারপ্রধান
  • গাজা দখলের পাঁচ দফা পরিকল্পনা নেতানিয়াহুর