যশোরে অধিগ্রহণ ছাড়া বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজ বন্ধ করে দিলেন জমিমালিকেরা
Published: 29th, June 2025 GMT
যশোর মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন বিল হরিনা এলাকা দিয়ে ২ লাখ ৩০ হাজার ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন জমির মালিকেরা। ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়াই লাইন স্থাপনের কাজ করায় আজ রোববার দুপুরে মানববন্ধন শেষে শ্রমিকদের ধাওয়া দিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা। এ সময় শ্রমিকদের মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের (পিজিবি) কর্মকর্তাদের।
জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই সঞ্চালন লাইনের খুঁটি স্থাপনের প্রতিবাদে আজ দুপুরে যশোর মেডিকেল কলেজসংলগ্ন বটতলায় মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। বেলেঘাটা ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন কমিটির আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে জমির শতাধিক মালিক অংশ নেন। এ সময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজ করছে। যশোর মেডিকেল কলেজসংলগ্ন হরিণার বিলের মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপনের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু যেসব জমির ওপর দিয়ে সঞ্চালন লাইনের তার ও খুঁটি স্থাপন করা হচ্ছে, সেসব ভূমির মালিকদের কোনো প্রকার অবহিত করা হয়নি।
আন্দোলনকারীরা বলেন, মেডিকেল কলেজ স্থাপনের পর বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ তাঁদের সঞ্চয় ভেঙে আশপাশে জমি কিনেছেন। বর্তমানে এসব জমির প্রতি শতকের মূল্য ৮ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুতের এ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হলে লাইনের দুই পাশের শত শত মানুষের মূল্যবান জমি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় সঞ্চালন লাইনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সব জমি বাজারমূল্যে অধিগ্রহণ ছাড়া নির্মাণকাজ বন্ধ করার আহবান জানানো হয়েছে।
কর্মসূচি থেকে ভূমির মালিকেরা ঘোষণা দেন, প্রকৃত বাজারমূল্য অনুযায়ী ভূমি অধিগ্রহণের টাকা পরিশোধ না করে সঞ্চালন লাইনের কাজ করতে দেওয়া হবে না। আগামী বুধবার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পিজিবির নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে স্মারকলিপি প্রদানের নতুন কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম, উপদেষ্টা জিল্লুর রহমান, সাবেক কাউন্সিলর জুলফিকার আলী, সাংবাদিক জুয়েল মৃধা, শুকুর আলী, বজলুর রহমান, তোতা মিয়া প্রমুখ।
পিজিবি সূত্রে জানা গেছে, ভেড়ামারা থেকে খুলনার মধ্যে ২ লাখ ৩০ হাজার ভোল্টেজের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন আগে থেকে রয়েছে। যশোর জেলা ওই লাইনের সঙ্গে যুক্ত নেই। যশোরে ১ লাখ ৩২ হাজার ভোল্টেজের সঞ্চালন লাইন রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে যশোরে বিদ্যুতের লোড বেশি হওয়ায় ওই লোড টানতে পারছে না। এর ফলে ভোল্টেজ আপডাউন (ওঠানামা) করে। এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ২ লাখ ৩০ হাজার ভোল্টেজের সঞ্চালন লাইনে যশোরকে সংযুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে পিজিবি। ওই লাইন হরিণার বিল দিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিজিবির সহকারী প্রকৌশলী জ্যোর্তিময় সরকার বলেন, ‘ওই এলাকার ভূমির মালিকদের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাঁরা সঞ্চালন লাইন স্থাপনের বিপক্ষে নন। কিন্তু তাঁরা ভূমির বাজারদর অনুযায়ী মূল্য পরিশোধ করে কাজ করতে বলছেন। কিন্তু মৌজায় ওই এলাকাকে ধানি জমি হিসেবে দেখানো আছে। মৌজা দর অনুযায়ী মূল্য দিতে চাইলে ভূমিমালিকেরা তা মানছেন না।
জ্যোর্তিময় সরকার বলেন, ‘আজ ভূমির মালিকেরা কাজের সাইটে গিয়ে শ্রমিকদের মারধর করেছেন। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ড ক ল কল জ র ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে চান অভিভাবকেরা, চান বন্ধ হোক স্কুলের কোচিং
যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার দিনে স্কুলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখানো, কোচিং সেন্টার বন্ধসহ আট দফা দাবি জানিয়েছেন রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবকেরা। তাঁরা যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনার দিনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে চেয়েছেন। সেই সঙ্গে মাইলস্টোনসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোচিং বাণিজ্য বন্ধের দাবি তুলেছেন।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে দিয়াবাড়ি গোলচত্বরে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যরা মানববন্ধন করেন। এতে নয় দফা দাবি জানানো হয়।
দাবিগুলো হলো, ১) সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ২) সারা বাংলাদেশে মাইলস্টোন স্কুলসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। ৩) সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি নিহত শিশুর জন্য ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) এবং প্রতি আহতদের জন্য এক কোটি টাকা দিতে হবে ৪) স্কুলের পক্ষ থেকে প্রত্যেক নিহত শিশুর জন্য ২ কোটি এবং প্রতি আহতদের জন্য ১ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হবে। ৫) রানওয়ে থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্থান পরিবর্তন করতে হবে (অন্যথায় রানওয়ের স্থান পরিবর্তন করতে হবে)। ৬) কোচিং ব্যবসার মূল হোতা স্কুল শাখার প্রধান শিক্ষককে (মিস খাদিজা) ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাঁর সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। ৭) স্কুলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আমাদের দেখাতে হবে। ৮) বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা জনহীন জায়গায় করতে হবে।৯) মানববন্ধন করতে চাইলে কনক নামের এক শিক্ষক এক অভিভাবকের গায়ে হাত তোলেন। তাঁকে অপসারণ করতে হবে।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী মারিয়াম উম্মে আফিয়ার মা উম্মে তামিমা আক্তার বলেন, 'আমার বাচ্চাটাকে আমি কখনো কোচিংয়ে দিতাম না। আমার বাচ্চাটাকে দেড় মাস হয়েছে কোচিংয়ে দিসি। কেন দিয়েছি জানেন? আমার বাচ্চা বাসায় যেয়ে আমাকে বলে, আম্মু আমি যদি কোচিং না করি, মিসরা আমাকে আদর করে না। আমাকে প্রতিদিন বলে, আমি যদি কোচিং না করি, মিস রা আদর করে না।'
আরও পড়ুনযুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ১২ দিন পর খুলল মাইলস্টোন কলেজ, পাঠদান শুরু বুধবার০৩ আগস্ট ২০২৫আফিয়া স্কুলের বাংলা মাধ্যমের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। কোচিংয়ে দেওয়ার পর মেয়ে খুশি ছিল জানিয়ে তামিমা আক্তার বলেন, ' যখন বাচ্চাটাকে কোচিংয়ে দিলাম, এক সপ্তাহ পরে আমার ময়না পাখি, আমারে জড়াইয়া ধইরা বলে, মা মিসরা আমাকে এখন অনেক আদর করে।'
আফিয়ার মা উম্মে তামিমা আক্তার আরও বলেন, 'এখানে যে বাচ্চাগুলো মারা গেছে, সব কোচিং এর বাচ্চা।... কোচিংয়ের বড় একটা অংশ তাদের কাছে যায়, বড় একটা অ্যামাউন্ট তারা পায়... এ স্কুলে কোচিংয়ের জন্যতটাটা প্রেশার দেওয়া হয়, আমার মনে হয় না, অন্য কোথাও এত প্রেশার দেওয়া হয়।'তিনি আরও বলেন, পরীক্ষায় খারাপ করিয়ে কোচিংয়ের জন্য চাপ দেওয়া হয়। অভিভাবকেরা কোচিং এর পক্ষে নয় বলেও জানান তিনি।
নিহত শিক্ষার্থী বোরহান উদ্দীন বাপ্পীর বাবা মোহাম্মদ আবু শাহীন বলেন, ‘শিক্ষকেরা বলে আপনার বাচ্চা ক্লাসে পড়া পারে না। আপনার ছেলের পড়াশোনা ভালো না। বিভিন্নভাবে মানসিক টর্চার করে, এভাবেই কোচিং করাতে বাধ্য করে।’
বাপ্পী স্কুলের বাংলা মিডিয়ামের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। বোরহান উদ্দীন বলেন, তাঁর আরেক ছেলে বেলাল উদ্দীন স্কুলের প্লেতে পড়ে। তাকেও কোচিংয়ে ভর্তি করাতে স্কুল কর্তৃপক্ষ চাপ দিচ্ছে।
আরও পড়ুনমাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা নিয়ে ‘ভিউ ব্যবসায়ীরা’ গল্প ফাঁদছেন ৩১ জুলাই ২০২৫নামপ্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিভাবক বলেন, ‘স্কুল শাখার প্রধান খাদিজা মিস। তিনি কোচিং ব্যবসার মূল হোতা। নিহত মাহরীন চৌধুরী মিস বারবার নিষেধ করেছেন। কিন্তু খাদিজা মিস শোনেননি। মাহরীন মিসের সঙ্গে এ নিয়ে দ্বন্দ্বও ছিল তাঁর। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোচিং ব্যবসার মূল হোতা খাদিজা মিসকে অপসারণ করতে হবে।’
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া অভিভাবকেরা বলেন, ‘আজকে আমরা মারামারি করতে আসিনি। এসেছিলাম মানববন্ধন করতে। স্কুল কর্তৃপক্ষ, একজন শিক্ষকও তো আমাদের কাছে আসেননি। আমরা তো সন্তানহারা অভিভাবক। কেউ তো এসে বললেন না, আসেন আপনাদের সঙ্গে কথা বলি।’ উল্টো মানববন্ধনে আসা শিক্ষার্থীদের স্কুলে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ অভিভাবকদের।
অভিভাবকদের অভিযোগ, আজ মানববন্ধন করতে গেলে মাইলস্টোনের একজন শিক্ষকের সঙ্গে তাঁদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ওই শিক্ষক একজন অভিভাবকের গায়ে হাত তোলেন। এ জন্য লিখিত আট দফার সঙ্গে তাঁরা আরও এক দফা যুক্ত করে অভিযুক্ত শিক্ষকের অপসারণ দাবি করছেন।
আরও পড়ুনমাইলস্টোন কলেজে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ভেতরে দুই উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা চলছে২২ জুলাই ২০২৫মানববন্ধনে অংশ নেওয়া অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের হাতে নিহতদের ছবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। এ সময় তাঁরা ‘কোচিংয়ের নামে ব্যবসা, বন্ধ কর, বন্ধ কর’, ‘ফুল-পাখি সব পুড়ল কেন, জবাব চাই, দিতে হবে’, ‘কী এসেছে কী এসেছে, বিমান এসেছে, বিমান এসেছে, কী করেছে কী করেছে, মায়ের বুক খালি করেছে’, ‘শিক্ষা না ব্যবসা, শিক্ষা-শিক্ষা’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
আরও পড়ুনবার্ন ইনস্টিটিউট থেকে বাসায় ফিরেছে মাইলস্টোনের আরও এক শিক্ষার্থী০২ আগস্ট ২০২৫