মুহূর্তটি বাংলাদেশ নারী ফুটবলের জন্য স্মরণীয়। চোখধাঁধানো সেই মুহূর্তটি আসে ম্যাচের ৭২ মিনিটে। প্রতিপক্ষ এক ডিফেন্ডারের সামনে থেকে বাঁ পায়ে নিখুঁত শট নেন ঋতুপর্ণা চাকমা। হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে বলটি মিয়ানমার গোলরক্ষককে পরাস্ত করে চলে যায় জালে। তাঁর অনিন্দ্যসুন্দর এই গোলেই কার্যত ম্যাচের গল্পটি লেখা হয়ে যায় বাংলাদেশের নামে। লেখা হয়ে যায় নতুন ইতিহাসের।
বুধবার ইয়াঙ্গুনে এএফসি উইমেন্স এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে ঋতুপর্ণা চাকমার জোড়া গোলে স্বাগতিক মিয়ানমারকে ২-১ গোলে হারিয়ে স্বপ্নের দোরগোড়ায় চলে যায় পিটার বাটলারের দল।
কিন্তু গতকালই যে স্বপ্নটা ধরা দেবে, তা কল্পনা করেননি বাংলাদেশের মেয়েরা। বাহরাইন ও তুর্কমেনিস্তানের মধ্যকার দিনের অপর ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হওয়ায় নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের এশিয়ান কাপে খেলা। ১৯৮০ সালে প্রথমবার এশিয়ান কাপে খেলেছিল বাংলাদেশ পুরুষ দল। ৪৫ বছর পর তাদের কাতারে যোগ হলো মনিকা চাকমা-মারিয়া মান্দাদের নাম। দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা এখন এশিয়াডে। ২০২৬ সালের মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে মেয়েদের এশিয়ান কাপ।
নতুন এই ইতিহাস গড়ায় নারী ফুটবল দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.
র্যাঙ্কিংয়ে ৩৬ ধাপ এগিয়ে থাকা বাহরাইন, ৭৩ ধাপ ওপরে থাকা মিয়ানমারকে হারানোর পর ৫ জুলাই তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে ভাবনা শুরু করেন কোচ পিটার বাটলার। ম্যাচের ছক কষার আগেই তাঁর জন্য স্বস্তি হয়ে এলো এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার টিকিটপ্রাপ্তিতে। এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে গ্রুপ ‘সি’তে দুই ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে বাংলাদেশ। সমান ম্যাচে মিয়ানমারের পয়েন্ট ৩। ১ পয়েন্ট করে বাহরাইন ও তুর্কমেনিস্তানের। গ্রুপের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ যদি তুর্কমেনিস্তানের কাছে হেরে যায় আর মিয়ানমার জিতে যায় বাহরাইনের বিপক্ষে, তখন সমান ৬ পয়েন্ট হবে বাংলাদেশ আর মিয়ানমারের। তাতেও সমস্যা নেই বাংলাদেশের। হেড টু হেডে এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিশ্চিত।
বাংলাদেশের নারী ফুটবলে বইছে বসন্তের হাওয়া। এশিয়ান পর্যায়ে লাল-সবুজের দলটি। অথচ ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর অলিম্পিক বাছাইয়ে এই মিয়ানমারের কাছে ৫-০ গোলে হারে বাংলাদেশ। সাত বছরের ব্যবধানে এই বাংলাদেশ আরও পরিণত ও পরিপক্ব হয়েছে। ভারত, নেপালের মতো দলকে পেছনে ফেলে দু’বার নারী সাফের শিরোপা জিতেছে। তার পরও ম্যাচটি মিয়ানমারের মাঠে বলে ভয় ছিল বেশি। তবে মূল পর্বে এক টিকিটের দুই দাবিদার লড়াইয়ে শুরু থেকে দেখা যায় দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস। বাংলাদেশের খেলায় ফুটে ওঠে পরিকল্পনার ছাপ। রক্ষণভাগ অটুট রেখে কাউন্টার অ্যাটাকে বেশ কয়েকবারই বিপজ্জনক হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের মেয়েরা। তারই ধারাবাহিকতায় ম্যাচের ১৮ মিনিটে লিড নেয় লাল-সবুজের দলটি। বক্সের খুব কাছে শামসুন্নাহার জুনিয়রকে ফেলে দেন মিয়ানমারের ডিফেন্ডার খিন মুয়ো থান্ডার তুন।
রেফারি ফ্রি কিকের বাঁশি বাজান। ঋতুপর্ণা চাকমার সেট পিস মিয়ানমারের রক্ষণ দেয়ালে লেগে ফিরে আসে। এ ফরোয়ার্ডের নেওয়া ফিরতি শট চলে যায় স্বাগতিকদের জালে। স্তব্ধ হয়ে যায় গ্যালারি। যে গ্যালারি থেকে একটু আগেও ‘মিয়ানমার, মিয়ানমার’ বলে স্লোগান উঠছিল। ২৪ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটি প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল বাংলাদেশ। বাঁ প্রান্ত থেকে ঋতুপর্ণার ক্রসে ছোট বক্সের ভেতরে শামসুন্নাহার জুনিয়র বলে পা লাগালেও তা ক্রসবারে লেগে প্রতিহত হয়। দারুণ সুযোগ নষ্ট হওয়ায় হতাশায় মুখ লুকান শামসুন্নাহার।
বিরতির পর বাংলাদেশের রক্ষণে চাপ বাড়াতে থাকে মিয়ানমার। এই অর্ধে কৌশলী ফুটবল খেলে পিটার বাটলারের দল। রক্ষণভাগ আগলে রেখে কাউন্টার অ্যাটাকের পরিকল্পনায় খেলতে থাকেন মেয়েরা। তার ফল আসে ম্যাচের ৭২ মিনিটে। ঋতুপর্ণার সেই চোখধাঁধানো গোলে আত্মবিশ্বাসও যেন ভর করে পুরো দলে। বাহরাইনের বিপক্ষে ম্যাচেও বাঁ পায়ে চোখধাঁধানো গোল করেন ঋতুপর্ণা। ৮৯ মিনিটে এক গোল পরিশোধ করে মিয়ানমার। সান থাউয়ের ক্রসে আলতো টোকায় বল জালে জড়ান উইন উইন। জমে ওঠে লড়াই। রেফারি অতিরিক্ত চার মিনিট দিলে মিয়ানমার প্রবল চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। তবে কৌশলী বাটলার এই সময় খেলোয়াড় পরিবর্তন করে সময় ক্ষেপণ করেন। একটু পর রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই ঐতিহাসিক জয়ের আনন্দে মেতে ওঠে বাংলাদেশ শিবির।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ টবল ত র কম ন স ত ন র ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।
এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।
অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।
আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগেএ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।
সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।
এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।
আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে