পাবনার চাটমোহরে শিক্ষকের চড়ে সোয়াদ হোসেন (৮) নামের দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আঘাতে তার নাক ফেটে যায় ও রক্তক্ষরণ হলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। গতকাল বুধবার সকালে উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের কানাইয়ের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘটনাটি ঘটে।

অভিযুক্ত হাফিজুর রহমান ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। ঘটনার পর তিনি দ্রুত বিদ্যালয় থেকে চলে যান। আহত সোয়াদ কানাইয়ের চর গ্রামের মুকুল হোসেনের ছেলে।

বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ক্লাস চলাকালে শিক্ষক হাফিজুর রহমানের অনুমতি নিয়ে বাইরে যায় সোয়াদ। ফিরতে দেরি হওয়ায় শ্রেণিকক্ষে ঢোকার সময় ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে চড় মারেন হাফিজুর রহমান। এ ঘটনায় সোয়াদের নাকে আঘাত লাগে ও রক্তক্ষরণ শুরু হয়। পরিবারের সদস্যরা তাকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখানে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

শিশুটির বাবা মুকুল হোসেন বলেন, ‘শিক্ষক লেখাপড়ার জন্য শাসন করতেই পারেন। কিন্তু এমনভাবে মারধর করে রক্তাক্ত করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি অফিসে ছিলাম না। পরে খবর পেয়ে ক্লাসে গিয়ে দেখি সোয়াদ বাড়ি চলে গেছে। পরে আমি তার বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত শিক্ষক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘শিশুটি ক্লাস চলাকালে বারবার বাইরে যাচ্ছিল। কয়েকবার ডাকার পরও সে বাইরে যাওয়া অব্যাহত রাখে। ক্লাসে ঢোকার সময় আমি চড় মারতে গেলে সেটা নাকে লাগে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।’

এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ ফ জ র রহম ন ন বল ন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

কাফকার পৃথিবী ও তার লুকানো বিদ্রুপ

ফ্রানৎস কাফকাকে নিয়ে সবচেয়ে মোক্ষম ভাস্কর্যটি আছে প্রাগের ওল্ড টাউন আর ইহুদি কোয়ার্টারের একদম মাঝামাঝি জায়গায়। মাথাবিহীন একটা দেহের কাঁধে বসে আছেন মাথাওয়ালা কাফকা। ক্লান্ত চোখ। ডান হাতের তর্জনী কিছু নির্দেশ করছে।

ইয়ারোস্লাভ রোনার এই ভাস্কর্যটির অবস্থান খেয়াল করার মতো, যা একসঙ্গে ধারণ করেছে কাফকার দ্বৈততা ও দ্বিধার মনস্তত্ত্ব; পরিবার ও সমাজের প্রতি এক রকমের দায়বদ্ধতার বিপরীতে তার বিচ্ছিন্নতার ভারী বোধ। রোনা নির্মিত ভাস্কর্যটির কাছেই এক ধারে আছে স্প্যানিশ সিনেগগ, যেমন আরেক পাশে চার্চ অব দ্য হোলি স্পিরিট। দুটি কথোপকথন নামে লেখকের একটি ছোটগল্প থেকে অনুপ্রাণিত এই ভাস্কর্য আসলে তার নায়কদের নিয়ে আমাদের প্রচল ধারণাকেই ইশারা করে: সমাজ ও সিস্টেমের ইঁদুরধরা কলে ফেঁসে যাওয়া ভঙ্গুর সব মানুষ, যাদের জগৎ ধূসর ও মাথায় ব্যাপক যন্ত্রণা দৃশ্যত মাথাকেই গায়েব করে দিয়েছে, আবার চাকুরে জীবন তাকে দিয়েছে দায়িত্ব, নিজেকে নিয়ে ভাবার জন্য মাথা না থাকুক, সমাজের আরোপিত দায়িত্ব পালনের জন্য তাই তাদের আরেকটি সত্তার অনুগত মাথা বহাল না থাকলে চলে না।

আমাদের অতি সিরিয়াস পাঠে, অতি পাঠে, অতিরিক্ত গবেষণায় কাফকা হয়তো প্রায় ছিবড়ে হয়ে গেছেন। তবু তিনি আজও প্রাসঙ্গিকতা হারাননি। বরং এই মিম কালচার ও গুজবের পৃথিবীতে আমাদের গ্লানি শুষে নেওয়ার চেষ্টা করে যেই কালো কৌতুক ও অবিরাম বিদ্রুপের স্রোত—প্রায় একশ বছর ধরে পঠিত হতে থাকা জার্মানভাষী লেখক হয়তো তার লেখায় ডেডপ্যান কমেডির আবরণে ভারিক্কি কিছু নয়, বরং লুকিয়ে রেখে গিয়েছিলেন জীবন নিয়ে আরও গভীর বিদ্রুপের ইশারা। একটু ভিন্নপাঠের চেষ্টা করলে তা ধরা যেতে পারে, যে, কাফকা হয়তো অত সিরিয়াসও নন, তার অস্বস্তিকর লেখাগুলো এক ধরনের রম্যই, জীবনের উপায়হীনতার প্রতি ছুড়ে দেওয়া বাঁকা হাসি।

মানুষ সিস্টেমের নিষ্পেষণ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে নানান উপায়ে লড়াই করে। প্রতিবাদ, সমালোচনা, গোষ্ঠীগত লড়াই। কিন্তু যখন সে উপায়ও তার থাকে না, সে করে আত্মবিদ্রুপ। যেমন, এখানে বর্ণবাদিতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে মানুষ নিজেও এক সময় বর্ণবাদিতে পরিণত হয়ে যায়। মত প্রকাশের স্বাধীনতার দীর্ঘ লড়াই সফলতার দ্বারপ্রান্তে এসে আবিষ্কার করে সে নিজেই আর ভিন্নমত সহ্য করার অবস্থায় নেই; ব্যর্থতা ঢাকতে তখন সেও আত্মবিদ্রুপের বর্ম গায়ে তোলে। উন্মুক্ত পুঁজি ও তার মেকানিজম এমন একটা নাজুক জায়গায় নিয়ে মানুষকে দাঁড় করিয়েছে, যেখানে ভালো ও মন্দের প্রভেদকে একটা অকার্যকর ধারণা মনে হয়, সকলেই যার যার জায়গা থেকে নিজেকে ভিকটিম মনে করতে পারে। জীবন নানান উপায়ে তাকে ট্র্যাজিকমেডির দিকেই ঠেলছে প্রতিনিয়ত। যেন বা কাফকায়েস্ক জগতেরই আরও একটা কানাগলিতে সে উপায়হীন ঢুকে পড়ছে।

প্রাগে কাফকার স্ট্যাচু

সম্পর্কিত নিবন্ধ