পুরনো সিস্টেম ও দখলদারিত্ব ফিরে আসার চেষ্টা চলছে : নাহিদ
Published: 3rd, July 2025 GMT
২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পরও জনগণের সব আশা পূরণ হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম, এই অভ্যুত্থানের পর আমাদের স্বপ্নের বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। কিন্তু এখনো সেই পুরনো সিস্টেম ও দখলদারিত্ব ফিরে আসার চেষ্টা চলছে।”
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুপুরে নীলফামারী শহরে শহীদ রুবেল ও সাজ্জাদের কবর জিয়ারত শেষে ও সৈয়দপুরে উর্দুভাষী ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে এক পথসভায় তিনি এ সব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, “যদি সব দাবি পূরণ হতো, তাহলে আমাদের নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে মাঠে নামার দরকার হতো না। এখনো কোনো দাবি পূরণ হয়নি। শুধু ‘নির্বাচন’ ‘নির্বাচন’ বলে জনগণকে ধোঁকা দেয়া হচ্ছে। আমরা অবশ্যই নির্বাচন চাই, তবে শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচারের আগে কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।”
আরো পড়ুন:
সেই ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা রয়ে গেছে: নাহিদ
বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার ডাক দিয়েছি, সেই দেশ গড়ে ঘরে ফিরব: নাহিদ
তিনি শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে বলেন, “যারা শহীদ রুবেল, সাজ্জাদসহ অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছেন, তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের মন থেকে আগুন নিভবে না।”
সংবিধান সংস্কারের দাবি জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, “বর্তমান সংবিধান আসলে আওয়ামী লীগ ও মুজিববাদের দলীয় দলিল। এটি জনগণের অধিকার রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। নতুন একটি জনগণের সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে।”
পথসভায় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “অভ্যুত্থান শুধু সরকার পরিবর্তনের জন্য নয়। ফ্যাসিবাদী উৎপাদনের পথ বন্ধ করতে হবে। নতুন সংবিধান ও প্রশাসনিক সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।”
সভায় বক্তারা শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘‘তাদের রক্তের বিনিময়ে একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।’’ এ সময় আগামী জুলাইয়ের পদযাত্রায় অংশ নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তারা।
পথসভায় সভাপতিত্ব করেন এনসিপি জেলা আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা সারজিস আলম, আবু সাইদ লিওনসহ অন্যান্য আঞ্চলিক নেতারা।
নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, “আমাদের ওপর বারবার হামলা চালানো হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সঠিক পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। হামলা করে নতুন রাজনীতিকে দমন করা যাবে না।”
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, “যদি অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের সঙ্গেই এমন হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কে দেবে?”
এনসিপির নেতারা জানান, পদযাত্রার মধ্য দিয়ে দেশজুড়ে রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি ও গণমানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন জোরদার করা হবে।
ঢাকা/সিথুন/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন হ দ ইসল ম গণঅভ য ত থ ন ন হ দ ইসল ম আম দ র দ শ গড় এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে: ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমরা যে বিশ্বাসযোগ্যতা আশা করেছিলাম, তারা তা রাখেনি। তাই, বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের দায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের।”
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
ঐক্যের মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই: ফখরুল
জনগণ আর সেই পুরোনো রাজনীতির ফাঁদে পা দেবে না: ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব বলেন, “নির্বাচনের আগে গণভোটের কোনো সুযোগ এখন আর নেই। নির্বাচনের দিনই গণভোট হবে। দুটি ব্যালট থাকবে— একটি গণভোটের জন্য, আরেকটি জাতীয় সংসদের জন্য। এই বিষয়ে কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়।”
তিনি বলেন, “যেদিন ঐকমত্যের নথি জমা দেওয়া হলো, মনে আছে, সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল, ১৭ তারিখ। তার আগে আবার সবকিছু এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। আমরা আবার ঠিকঠাক করে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়ে বৃষ্টির মধ্যে ছাতা ধরে সেখানে স্বাক্ষর করলাম। কিন্তু, যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে সেটা উপস্থাপন করা হলো, তখন দেখা গেল অনেক পার্থক্য। বিশেষ করে, আমরা যে নোট অব ডিসেন্টগুলো দিয়েছিলাম, সেগুলো উল্লেখ করা হয়নি। আমরা বলছি, ইটস অ্যা ব্রিজ অব ট্রাস্ট। অথচ, তারা সেই আস্থার সেতু ভেঙে দিয়েছে। জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “আপনারা যে কমিশন তৈরি করেছেন, সেই কমিশন প্রায় এক বছর আট-নয় মাস ধরে ঐকমত্যের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। সংস্কার ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা অনেক ক্ষেত্রে একমত হয়েছিলাম। কয়েকটি বিষয়ে মতভেদ থাকায় আমরা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছিলাম। অর্থাৎ, আমাদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও মূল বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছিলাম, এটাই নিয়ম। যখন আমরা নির্বাচনে যাব, তখন ম্যানিফেস্টোতে এই বিষয়গুলো থাকবে। জনগণ যদি আমাদের ভোট দেয়, তাহলে আমরা সেসব বিষয় সামনে আনব, পার্লামেন্টে পাস করে দেশের পরিবর্তন ঘটাব। আর যদি ভোট না দেয়, তাহলে সেটি বাদ পড়বে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা একটা কথা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, বিএনপি সংস্কারের দল। বিএনপির জন্মই হয়েছে সংস্কারের মধ্য দিয়ে। ১৯৭৯ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। তখন সব পত্রিকা বন্ধ ছিল, তিনি সেগুলো খুলে দিয়েছিলেন। মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।”
নির্বাচন ও গণভোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা নির্বাচন করব, নির্বাচন করতে চাই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার সঙ্গে আমরা একমত। কিন্তু, আজকে সেই নির্বাচন বানচাল করার জন্য একটি মহল উঠে-পড়ে লেগেছে, তারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।”
জামায়াতে ইসলামীর উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “যারা এই নিয়ে রাস্তায় নেমে গোলমাল করছেন, তাদের অনুরোধ করব, জনগণকে আর বিভ্রান্ত করবেন না। একসময় আপনারা পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন। আজকে জনগণ যে নির্বাচন চায়, তার বিরোধিতা করবেন না। এই দেশের মানুষ দেশ বিক্রির রাজনীতি ক্ষমা করে না।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা আমাদের মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করতে চাই। যাদের সঙ্গে আমরা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে লড়েছি, একসঙ্গে কাজ করেছি, তাদের নিয়েই আমরা জাতীয় সরকার গঠন করতে চাই। এক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য খুবই স্পষ্ট—আসুন, সবাই মিলে নির্বাচনের সুযোগকে কাজে লাগাই। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করে জনগণের পার্লামেন্ট, জনগণের সরকার গঠন করি।”
জেএসডি সিনিয়র সহ-সভাপতি তানিয়া রবের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন— সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম স্বপন, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।
ঢাকা/রায়হান/রফিক