অভ্যুত্থানে স্বামী হারিয়েছেন এখন সন্তান নিয়ে উদ্বিগ্ন
Published: 3rd, July 2025 GMT
‘আমার স্বামী যখন ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন, তখন আমি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বর্তমানে ছয় মাসের মেয়েই আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। বাবার নামের সঙ্গে মিল রেখে মেয়ের নাম রাখা হয়েছে সাবরিনা বিনতে সিদ্দিক। আমার স্বামী দেশের মানুষের বৈষম্য দূর করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন, আমি ও আমার সন্তান যেন বৈষম্যের শিকার না হই।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে সমকালকে কথাগুলো বলছিলেন সাদিয়া খাতুন।
গত বছরের ২০ জুলাই ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন নূরে আলম সিদ্দিক। এ ঘটনার মাত্র ছয় মাস আগে ১২ জানুয়ারি তাদের বিয়ে হয়। নিজ বাড়ি গৌরীপুর উপজেলায় হলেও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কোনাপাড়া মাদ্রাসায় চাকরি করতেন সিদ্দিক। এই এলাকায় চাকরির সুবাদে বিয়ে করেন সাদিয়া খাতুনকে। স্বামীর স্মৃতি কোনোভাবেই ভুলতে পারছেন না তিনি।
সাদিয়া বলেন, সারাদেশে আন্দোলন যখন শুরু হচ্ছে, তার প্রথম দিন থেকেই সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল নূরে আলম সিদ্দিকীর। ১৮ ও ১৯ জুলাই আন্দোলনে যাওয়ার পর ভয় ঢুকে যায় মনে। এর ঠিক পরদিন গৌরীপুরের কলতাপাড়ায় আন্দোলনে অংশ নিলে পুলিশ সদস্যরা কাছ থেকে গুলি করে মেরে ফেলে তাঁকে। ওইদিন তাঁর সঙ্গে আরও দু’জন শহীদ হন।
স্বামী নিহত হওয়ার পর শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে চলে আসেন সাদিয়া। বাবার আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। বাবা ও ভাই কোনো রকম উপার্জন করে চালিয়ে নিচ্ছেন। তাদের খোঁজখবর নেন না শ্বশুর-শাশুড়ি। সরকারি যা সহযোগিতা করা হয়েছে, তার অধিকাংশ টাকা তারা নিয়ে গেছেন বলে দাবি সাদিয়ার। তিনি বলেন, ‘সন্তান জন্মদানের জন্য আমি যখন হাসপাতালে ভর্তি, তখন জুলাই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা দেয় সরকার। আমি ভেবেছিলাম আমার শ্বশুরের কাছে সরকার সরাসরি টাকা দিলেও আমার সন্তানের জন্য কিছু টাকা দেবেন। পরে তারা আমাকে কিছুই দেননি।’
জেলা ও উপজেলা পর্যায় থেকেও আন্দোলনে নিহতদের অনেক আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ১ টাকাও পাননি বলে জানান সাদিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। আজ যদি আমার স্বামী থাকত, তাহলে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ত না।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা এসব কথা শুনতে পেয়ে সাদিয়া খাতুনের পাশে দাঁড়ান। সর্বশেষ জেলা পরিষদ থেকে অনুদানের ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয় তাঁর হাতে। সাদিয়ার দাবি, শহীদ পরিবারকে সঞ্চয়পত্রের ১০ লাখ টাকা যেন প্রকৃত ওয়ারিশ শনাক্ত করে বণ্টন করে দেওয়া হয়। এই টাকা যদি তাঁর সন্তান না পায়, তবে তাঁকে ভরণপোষণ করা কঠিন হয়ে যাবে।
সাদিয়ার ভাই মাহমুদুল হাসান শামীম বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন। নিজের সংসারের খরচ জোগানোর আগে স্বামীহারা বোনের কথা চিন্তা করেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, সরকার যেন প্রতিটি শহীদের পরিবারের দায়িত্ব নেয়। প্রশাসনের প্রতি তাঁর আহ্বান, ‘যাদের কারণে আপনারা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছেন, তাদের যেন স্মরণে রাখেন।’
বিচার দেখে যেতে চান শহীদ বিপ্লবের বাবা
গৌরীপুরের কলতাপাড়া বাজারের বাসিন্দা বাবুল মিয়া। ২০ জুলাই বাড়ির পাশে আন্দোলনে গিয়ে গুলিতে মারা যান তাঁর ছেলে বিপ্লব হাসান। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে আছেন তিনি। ছেলে হত্যার বিচার দেখে যাওয়াই তাঁর জীবনের শেষ ইচ্ছা। উপজেলা সদরে ছোট একটি চাকরি করতেন বিপ্লব হাসান। ঘটনার দিন সকালে নাশতা খাওয়ার জন্য মায়ের কাছ থেকে ৫০ টাকা নিয়ে ঘর থেকে বের হন তিনি। এরপর ফেরেন লাশ হয়ে। পরে বাবুল মিয়া ছেলে হত্যার ঘটনায় ১১ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সদস্য সচিব মোহাম্মদ আল নূর আয়াশ জানান, জুলাই আন্দোলনে ময়মনসিংহ জেলার ৪১ জন বাসিন্দা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শহীদ হয়েছেন। সরকার এখন পর্যন্ত তাদের আশানুরূপ আর্থিক সহযোগিতা করতে পারেনি। শহীদ পরিবারের প্রতিটি সদস্য যাতে সচ্ছলভাবে চলতে পারেন, সে ব্যাপারে কাজ করছেন তারা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অভ য ত থ ন আম র স সরক র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা
বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা।
আরো পড়ুন:
শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?
পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?
বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।”
একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।”
শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি।
১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা।
দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী।
১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
ঢাকা/শান্ত