Samakal:
2025-07-06@05:45:10 GMT

রোমাঞ্চকর জয়ে সিরিজে সমতা

Published: 5th, July 2025 GMT

রোমাঞ্চকর জয়ে সিরিজে সমতা

কুশল মেন্ডিস পাওয়ার প্লেতে ব্যাটিং-ঝড় তোলায় দম বন্ধ করা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে। ১০ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কা ৭৫ রান করে ফেলায় তাদের কোচ সনাথ জয়সুরিয়ার মুখে হাসি ফুটেছিল। এই লঙ্কান কিংবদন্তি হয়তো মেন্ডিসের মাঝে নিজের তরুণ বয়সের ব্যাটিংয়ের মিল দেখতে পাচ্ছিলেন। তিনি যেমন মারকাটারি ব্যাটিং দিয়ে শ্রীলঙ্কাকে বহু ম্যাচে জয় উপহার দিয়েছেন, কোচ হিসেবে হয়তো কুশলকে সেই আস্থার জায়গায় দেখতে পাচ্ছিলেন। যদিও বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম তাঁকে আউট করে ম্যাচের লাগাম হাতে নেন। টানটান উত্তেজনার ম্যাচে শেষ পর্যন্ত লড়ে লঙ্কান কোচের প্রত্যাশা পূরণ হতে দেয়নি বাংলাদেশ। পরে বোলিং করার সুবিধা কাজে লাগিয়ে ১৬ রানে ম্যাচ জিতে সিরিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফিরিয়ে এনেছেন মেহেদী হাসান মিরাজরা। ১-১ সমতা ফেরায় ক্যান্ডিতে সিরিজের শেষ ম্যাচে বাড়তি উত্তেজনা যোগ হবে। ফাইনালের একটি আবহ থাকবে তাতে।

কলম্বোর প্রেমাদাসায় রান তাড়া করে ম্যাচ জয়ের রেকর্ড ভালো না। এ অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে বেশ কয়েকবারই যেতে হয়েছে বাংলাদেশকে। সিরিজের প্রথম ম্যাচেই ২৪৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ব্যাটিং কলাপসে ৭৭ রানে হেরে যেতে হয়। ১০০ থেকে ১০৫ রানে ৭ উইকেট পতনে জেতা ম্যাচ হেরেছিল বাংলাদেশ। প্রেমাদাসার ট্র্যাজেডি থেকে মুক্তি পেতে মেহেদী হাসান মিরাজ যে আগে ব্যাট করার পথ খুঁজছিলেন, ক্রিকেট দেবতা তাঁর মনের কথা শুনে টসে জিতিয়ে দেন। নিজেদের পছন্দে ব্যাট করতে নেমে টপঅর্ডার ভালো শুরুও পায়। ১৪ রানে ওপেনিং জুটি ভাঙার পরও তাই পাওয়ার প্লে থেকে ৬৫ রান যোগ হয় স্কোরবোর্ডে। এই ঝোড়ো রানের কারিগর ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। দ্বিতীয় উইকেটে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে ৫৫ বলে ৬৩ রানের বেশির ভাগই ছিল তাঁর। বাঁহাতি এই ওপেনার পরের জুটিতেও অবদান রাখেন। ৬টি চার ও ৩টি ছয় মেরে ৬৯ বলে ৬৭ রান করে লেগস্পিনার হাসারাঙ্গার বলে বোল্ড হন তিনি। ইমন যেখানে শেষ করেন, তাওহীদ হৃদয়ের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের শুরু সেখান থেকে। শামীম হোসেন পাটোয়ারি ও জাকের আলীকে নিয়ে ছোট ছোট দুটি জুটি গড়েন মিডলঅর্ডার এ ব্যাটার। ৫১ রান নিয়ে তিনি আউট হলে ২০০ রানের নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা উঁকি দেয়। পেস বোলিং অলরাউন্ডার তানজিম হাসান সাকিব সেখান থেকে ইনিংস টেনে নেন ২৪৮ রানে। ২১ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। তানজিমের ব্যাটিংয়ের সৌন্দর্য ছিল অকুতোভয়। খাদের কিনারায় দাঁড়িয়েও দুটি করে চার-ছয় মেরেছেন তিনি।

প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের পিচের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী স্বাগতিক শ্রীলঙ্কান ব্যাটাররা জানেন, ২৪৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে হলে টপঅর্ডারে বিধ্বংসী ব্যাটিং করতে হবে। ৬ রানে পাথুম নিশাঙ্কাকে হারালে কুশল মেন্ডিস সেই বিধ্বংসী রূপ ধারণ করেন। বাউন্ডারির পর বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ২২ বলে হাফসেঞ্চুরি করেন তিনি। লঙ্কান এ টপঅর্ডারের রান তোলার গতি ছিল গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতোই। পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে সাড়ে ৭ রান করে তোলেন তারা। বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম কুশল মেন্ডিসকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলায় ঝড় থামে। যদিও এই মেন্ডিসকে ফেরাতে রিভিউ নিয়ে সফল হতে হয়েছে বোলারকে। ৩১ বলে ৫৬ রান করেন কুশল। কামিন্দু মেন্ডিস ধরে খেলে জুটি গড়ে তোলার চেষ্টা করলে তানভীর বিচ্ছেদ ঘটান। ৫১ বলে ৩৩ রান করেন তিনি। কামিন্দুর পূর্বে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান চারিথ আসালঙ্কাকে আউট করে পার্টটাইমার শামীম পাটোয়ারি স্বাগতিক ব্যাটিং লাইনআপের কোমর ভেঙে দেন। বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ৫ উইকেট নিলে জয়ের পথে তৈরি হয়। ম্যাচ জিততে শেষ ৫০ বলে ৭০ রান করতে হতো শ্রীলঙ্কাকে। বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ২ উইকেট। জানিথ লিয়ানাগে সেখান থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নেওয়ার মতো পরিস্থিতিতে ফেলেন বাংলাদেশকে। মুস্তাফিজুর রহমান একদিক থেকে ভালো বোলিং করলেও অন্য প্রান্তে হাসান মাহমুদ ছিলেন খরুচে। শেষ ৬ ওভারে যেখানে ৮ রান করে নেওয়ার প্রয়োজন হতো স্বাগতিকদের। ৭৮ রানে মুস্তাফিজ জেনিথকে আর সাকিব শেষ ব্যাটার চামিরাকে আউট করলে টানটান উত্তেজনার ম্যাচে স্বস্তির জয় পায় বাংলাদেশ। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ন কর উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

তাসকিনের কফি শেষ হওয়ার আগেই পাঁচ উইকেট নেই

একটি সুন্দর দিনের গল্প লেখার কথা ছিল। কারণ, বোলিং ভালো হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই উজ্জীবিত থাকার কথা ব্যাটারদের। সেটাই দেখা গেছে টপঅর্ডারে। ওপেনিং জুটি দ্রুত আউট হলেও নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে দারুণ খেলছিলেন তানজিদ হাসান তামিম। তারা সেট হওয়ায় নির্ভার ছিল ড্রেসিংরুম। দিনের সেরা বোলার তাসকিন আহমেদ এক কাপ গরম কফি উপভোগ করছিলেন চোখে-মুখে জয়ের স্বপ্ন এঁকে। ৩০ বছর বয়সী ফাস্ট বোলার বুঝতেই পারেননি কফি শেষ হওয়ার আগেই ব্যাটিং লাইনআপে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তিনি চেয়ে চেয়ে দেখলেন সব কেমন ধ্বংসের পথে। কফি ফেলে প্যাড পরে দৌড়ে গেলেন ২২ গজে। যে পথে গেলেন, শূন্য হাতে ফিরেও এলেন সেই পথে। লিটন কুমার দাস, মেহেদী হাসান মিরাজের মতো নামের পাশে শূন্য লিখে ফেরেন ড্রেসিংরুমে। ১০০ থেকে ১০৫ রানে ৭ উইকেটের পতনে পরাজয়ে শুরু সিরিজ।

অথচ শ্রীলঙ্কাকে ২৪৪ রানে বেঁধে ফেলার পর ব্যাটিংয়ের ভালো শুরু ছিল। সেটা দেখে ৬-৭ ওভার হাতে রেখে ম্যাচ জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন তাসকিন। অনিশ্চয়তার ক্রিকেট মুহূর্তে বোকা বানিয়ে দেয় তাঁকে। সংবাদ সম্মেলনে নিজের সেই হতাশার কথা বলতে বলতে আক্ষেপেও পুড়ছিলেন ব্যাটিং ব্যর্থতায় আরাধ্য জয় হাতছাড়া করে। 

বাংলাদেশ শেষ আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলেছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। মাঝে টেস্টের ব্যস্ততা দেশে-বিদেশে। সেদিক থেকে খেলার মধ্যেই ছিলেন তারা। তাই ৬ রানে ৭ উইকেট হারানোর অজুহাত দেওয়ার সুযোগ নেই। সেটা করার সাহস দেখাননি কেউ। বরং দলের সেরা পারফরমার তাসকিনকে সংবাদ সম্মেলনে পাঠিয়ে নিজেকে আড়াল করেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ।

কেন দলের এই হাল জানালেন তাসকিন, ‘আমরা বোলিং খুব ভালো করেছিলাম। ব্যাটিংয়ের শুরুটাও ভালো ছিল। ১ উইকেটে ১০০ রান হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে বাজেভাবে কলাপস করি। মিডলঅর্ডারে ধস নামে। অথচ আমাদের মনে হয়েছিল, দ্রুত ম্যাচটি জিতে যাব।’ শান্তর রানআউটে বিপর্যয়ের শুরু। ১২৫ রানে নবম উইকেট হারালে পরাজয় নিশ্চিত হয়। ব্যবধানটা কত হবে, সেটাই ছিল দেখার। জাকের আলী ও মুস্তাফিজুর রহমানের কল্যাণে ধ্বংসস্তূপ থেকে লড়াই করায় ৭৭ রানে হারতে হয় ম্যাচ। যেখানে জাকের ৬৪ বলে ৫১ রান করে দেখান সেট হলে বড় ইনিংস খেলা সম্ভব। তাসকিনের মতে, “টপঅর্ডার ভালো খেলায় আমি কফি ‘চিল’ করছিলাম ড্রেসিংরুমে। হঠাৎ দেখি ৫ উইকেট নেই। কফি ফেলেই ছুটতে হয়। জেতা গেম হেরে গেছি। ক্রিকেটে এমনটা হয়। আমি নিশ্চিত, এই হারের পর কেউ স্বস্তিতে ঘুমাতে পারবে না।”

ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফেরা তাসকিন গোড়ালির জড়তা নিয়েই সেরা বোলিং করলেন। নিজের বোলিং নিয়ে বলেন, ‘অনেক দিন পর ফেরায় একটু জড়তা ছিল। এর পরও চেষ্টা কম করিনি। পুরোপুরি ফিট থাকলে আরেকটু ভালো বোলিং করা যেত। আশা করি, দ্রুতই আগের মতো ছন্দে ফিরতে পারব।’ তাসকিন জানান, দেশের সেরা ক্রিকেটারদের নিয়েই শ্রীলঙ্কা এসেছে বাংলাদেশ। ভালো ক্রিকেট খেলতে কঠোর পরিশ্রমও করছেন তারা, ‘আমরা চেষ্টা করছি, কিন্তু হচ্ছে না। বেশ কিছুদিন ধরে ফল পাচ্ছি না। তাই বলে এভাবে চলতে পারে না। অবশ্যই ঘুরে  দাঁড়াতে  হবে। সে পথ বের করতে হবে আমাদের। আশা করি, সামনের ম্যাচে ভালো করব।’ প্রেমাদাসার কন্ডিশন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্লো এবং লো হয়ে থাকে। সেই তুলনায় গতকালের উইকেট কিছুটা ভালো ছিল বলে জানান ডানহাতি এ বোলার। তাঁর মতে, ‘এখানে বড় স্কোর কমই হয়। পরে যারা ব্যাটিং করে তাদের ভালো করার রেকর্ডও কম। যদিও এই ম্যাচের উইকেট অতটা খারাপ ছিল না। জাকের আলী হাফ সেঞ্চুরি করে প্রমাণ করেছেন, সেট হলে বড় স্কোর করা সম্ভব।’ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তাসকিনের কফি শেষ হওয়ার আগেই পাঁচ উইকেট নেই