বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) প্রস্তাবিত টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং ব্যবস্থার সংস্কার নীতিমালায় (খসড়া) মোবাইল অপারেটদের বিদেশি মালিকানা সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ রাখার কথা বলা হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর চিঠি দিয়েছে দেশের বেসরকারি তিন মোবাইল অপারেটরের মূল প্রতিষ্ঠান টেলিনর, আজিয়াটা ও ভিওন। তারা বলছে, এ ধরনের নীতি হলে তা বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আস্থা কমাবে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীন সংস্থা বিটিআরসি। এই বিভাগ প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের অধীন। প্রধান উপদেষ্টা বরাবর ৩ জুলাই চিঠিটি লিখেছেন গ্রামীণফোনের মূল প্রতিষ্ঠান টেলিনর এশিয়ার প্রধান ইয়োন ওমুন্ড রেভহাউগ, রবির মূল প্রতিষ্ঠান আজিয়াটার গ্রুপ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিবেক সুদ ও বাংলালিংকের মূল প্রতিষ্ঠান ভিওনের গ্রুপ সিইও কান তেরজিওগ্লো।

গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর টেলিযোগাযোগ খাত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে ২০১০ সালের আন্তর্জাতিক দূরপাল্লার টেলিযোগাযোগ সেবা (আইএলডিটিএস) নীতিমালা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং ব্যবস্থার সংস্কার নীতিমালা–২০২৫–এর প্রথম খসড়া গত এপ্রিলে প্রকাশ করা হয়। গত ৩০ জুন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এ খসড়ার একটি সংশোধিত সংস্করণ প্রস্তুত করে।

সংশোধিত খসড়ায় বলা হয়েছে, মোবাইল অপারেটরদের বিদেশি মালিকানা ৮০ শতাংশ পর্যন্ত রাখা যাবে। আর দেশি মালিকানা ২০ শতাংশ রাখতে হবে। বিষয়টি নিয়েই নিজেদের উদ্বেগের কথা চিঠিতে জানিয়েছে দেশের বেসরকারি তিন মোবাইল অপারেটরের মূল প্রতিষ্ঠানগুলো।

চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারের সংস্কার উদ্যোগকে তারা স্বাগত জানায়। বিটিআরসির উদ্যোগগুলোকে তারা ইতিবাচকভাবে দেখছে। তবে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং ব্যবস্থার সংস্কার নীতিমালার খসড়ায় কিছু নতুন প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়িত হলে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে বিদ্যমান ও ভবিষ্যতের বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি হবে।

আরও পড়ুনসংস্কারের খসড়ায় মোবাইল অপারেটরদের বিশেষ কোনো সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না: অ্যামটব০৪ জুন ২০২৫

মোবাইল অপারেটরদের জন্য বিদেশি মালিকানার ৮০ শতাংশ সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ এবং তা বর্তমান লাইসেন্সধারীদের ওপর প্রয়োগ করার প্রস্তাব গভীর উদ্বেগের কারণ বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, একই সঙ্গে অন্যান্য ডিজিটাল অবকাঠামোভিত্তিক অপারেটরদের জন্য বিদ্যমান ৫৫ শতাংশ মালিকানার সীমাও পরিবর্তনের প্রস্তাব খসড়ায় রয়েছে। এটাও উদ্বেগের কারণ।

টেলিনর, আজিয়াটা ও ভিওন চিঠিতে বলেছে, বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাত এত দিন উন্মুক্ত ও সহায়ক বিদেশি মালিকানা নীতির সুফল ভোগ করেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বজায় ছিল। তবে প্রস্তাবিত নীতিমালা বিদেশি বিনিয়োগে আস্থা কমিয়ে দেবে, যা অন্তর্বর্তী সরকারের বৈশ্বিক বিনিয়োগ আনার প্রচেষ্টার পরিপন্থী। যেকোনো স্তরে বিদেশি মালিকানায় সীমা আরোপ করা খাতের সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকর হবে। প্রস্তাবিত নতুন লাইসেন্স কাঠামোতে মোবাইল অপারেটরদের আওতা আগের চেয়ে সীমিত করা হয়েছে। ফাইবার সংযোগ ও আন্তর্জাতিক এসএমএস পাঠানোর অধিকার একতরফাভাবে তৃতীয় পক্ষকে দেওয়া হয়েছে। এটা হস্তক্ষেপমূলক ও নিয়ন্ত্রণমূলক মনোভাবের ইঙ্গিত দেয়। এ নির্দেশনা মোবাইল অপারেটরদের জন্য অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় বাড়াতে পারে। পাশাপাশি পুরো ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

আরও পড়ুনআইএলডিটিএস পলিসি বহাল রাখার দাবি আইসিএক্স অপারেটরদের২৯ মে ২০২৫

খসড়া নীতিমালা নিয়ে খাতসংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে টেলিনর, আজিয়াটা ও ভিওন। চিঠিতে তারা বলেছে, এ নীতিমালার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থাকবে। যদি ভুলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে তা শুধু বিদেশি বিনিয়োগের দিক থেকেই নয়; বরং দেশের সামগ্রিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্যও চ্যালেঞ্জিং হবে।

আরও পড়ুনকথা বলা ও ইন্টারনেট সেবায় মধ্যস্বত্বভোগী কমবে, গ্রাহকের লাভ কী২৩ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ব আজ য় ট র জন য খসড় য় সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় আলোচিত হিটলারকে নিয়ে নতুন দুই বই

এ বছরের ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় নাৎসি জার্মানির ইতিহাসভিত্তিক দুটি বই বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। গেটস আলির ‘এটা কীভাবে হতে পারে’ (ভি কোন্টে দাস গেশে-হেন?) এবং রিচার্ড জে. ইভান্সের ‘হিটলারের সহযোগী’ (হিটলার্স কম্পলিৎসেন)। দুটি বই-ই তৃতীয় রাইখের উত্থান, জার্মান সমাজের ভূমিকা ও সাধারণ নাগরিকদের নৈতিক দায়বোধের প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

হিটলার তাঁর রাজনীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মিলত না এমন সব বই ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করতেন। ঘোষণা দিয়ে সেসব বই পুড়িয়েছিলেন। ১৯৩৩ সালের ১০ মে বার্লিনে প্রাক্তন অপেরা স্কয়ার, বর্তমানে বেবল স্কয়ারে হিটলারের ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা হাজার হাজার বই পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। জার্মানির বিভিন্ন শহরের ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বা শহরের কেন্দ্রে ঘটে একই ঘটনা।

গেটস আলি তাঁর ‘এটা কীভাবে হতে পারে’ বইয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, জার্মানজুড়ে লাখ লাখ মানুষ কেন অ্যাডলফ হিটলারের পক্ষে সোল্লাসে চিৎকার করে সমর্থন দিয়েছিল? প্রতিটি নির্বাচনী প্রচারণায় যিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাঁর প্রথম অগ্রাধিকার হবে প্রজাতন্ত্রের সংবিধান ধ্বংস করা? লাখ লাখ জার্মান সৈন্য কেন শেষ অবধি লড়াই করেছিল, যদিও বিজয় অনেক আগেই হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল?

রাজধানী বর্লিনে বিভিন্ন বইয়ের দোকান, প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিগুলো থেকে জোর করে বই ছিনিয়ে আনা হতো। মার্ক্সবাদী, ইহুদি, বাম ঘরনা, শান্তিবাদী এবং অন্যান্য বিরোধী বা রাজনৈতিক মতবাদের লেখকদের বই সংগ্রহ করে ট্রাকে তোলা হয়েছিল। পরে এই বইভর্তি ট্রাকগুলো বার্লিনের বিখ্যাত ‘উন্টার দেন লিন্ডেন’ সড়কে এনে স্তূপ করে রাখা হতো। হিটলারের দলের ছাত্র ও যুব ফ্রন্ট মশাল মিছিলসহযোগে বইগুলো বহন করে বেবল স্কয়ারে এনে আগুনে নিক্ষেপ করত। নাৎসিদের এই বই বহ্নিশিখা উৎসব কয়েক মাস ধরে চলেছিল।

গেটস আলি তাঁর ‘এটা কীভাবে হতে পারে’ বইয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, জার্মানজুড়ে লাখ লাখ মানুষ কেন অ্যাডলফ হিটলারের পক্ষে সোল্লাসে চিৎকার করে সমর্থন দিয়েছিল? প্রতিটি নির্বাচনী প্রচারণায় যিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাঁর প্রথম অগ্রাধিকার হবে প্রজাতন্ত্রের সংবিধান ধ্বংস করা? সালটি ছিল ১৯৩২-১৯৩৩।

লাখ লাখ জার্মান সৈন্য কেন শেষ অবধি লড়াই করেছিল, যদিও বিজয় অনেক আগেই হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল? আর ভাবনার বিষয়, এত লোক কীভাবে অন্যান্য সংখ্যালঘু ও ইহুদি গণহত্যায় অংশগ্রহণ করেছিল?

হিটলারের নেতৃত্বে ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জার্মানির নাৎসি শাসনের একটি প্রচলিত নাম ছিল ‘থার্ড রাইখ’। এই শাসনামলে জার্মানি একটি একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হয় এবং নাৎসি পার্টির অধীনে সব সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হতো। হিটলারের সময়কালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ব্যাপক মানবতাবিরোধী দানবীয় কর্মকাণ্ড ঘটে। একটি সাংস্কৃতিক দেশ হিসাবে পরিচিত দেশে কীভাবে এসব সম্ভব হলো?

গেটস আলি তাঁর বইয়ে ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত জার্মান সমাজ কীভাবে নাৎসি শাসনের সহায়কে পরিণত হলো, তা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর অনুসন্ধান ইতিহাসের ঘটনাকে শুধু রাজনৈতিক নয়, মানসিক ও সামাজিক এক প্রক্রিয়া হিসেবে বোঝার চেষ্টা করে।

রিচার্ড জে. ইভান্সের বই ‘হিটলারের সহযোগী’তে নাৎসি শাসনের ইতিহাস সম্পর্কে সুপ্রতিষ্ঠিত দৃষ্টিভঙ্গিগুলি উপস্থাপন করেছেন। বইটি হিটলারের সহযোগীদের অর্থাৎ রাজনীতিক, আমলা, ব্যবসায়ী ও সামরিক নেতৃত্বের ভূমিকাকে নতুনভাবে আলোচনায় এনেছে। ইভান্স দেখিয়েছেন, নাৎসি অপরাধ কোনো একক ব্যক্তির উন্মাদ সিদ্ধান্ত নয়, বরং এক গোটা ব্যবস্থার সম্মিলিত কার্যকলাপের ফল।

রিচার্ড জে. ইভান্সের বই ‘হিটলারের সহযোগী’তে ব্রিটিশ এই ইতিহাসবিদ নাৎসি শাসনের ইতিহাস সম্পর্কে সুপ্রতিষ্ঠিত দৃষ্টিভঙ্গিগুলি উপস্থাপন করেছেন। বইটিতে তিনি সাহায্যকারী ও বন্দীশিবিরে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার ২৪ জনের প্রতিকৃতি একত্রিত করেছেন। বুখেনভাল্ড কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের ‘কমান্ডার’ ইলসে কোচ এবং বার্গেন-বেলসেন কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের একজন রক্ষী ইরমা গ্রেসের আচরণ কতটা অমানবিক ও নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছিল, তা বর্ণনা করেছেন ইভান্স। বইটি হিটলারের সহযোগীদের অর্থাৎ রাজনীতিক, আমলা, ব্যবসায়ী ও সামরিক নেতৃত্বের ভূমিকাকে নতুনভাবে আলোচনায় এনেছে। ইভান্স দেখিয়েছেন, নাৎসি অপরাধ কোনো একক ব্যক্তির উন্মাদ সিদ্ধান্ত নয়, বরং এক গোটা ব্যবস্থার সম্মিলিত কার্যকলাপের ফল।

এই দুটি বই সমকালীন জার্মান সমাজে নাৎসি অতীতের দায়বোধ ও আত্মসমালোচনার আলোচনাকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। পাঠক ও সমালোচকদের মতে, উভয় গ্রন্থই সাম্প্রতিক সময়ে ইতিহাসচর্চায় নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক তাগিদ ফিরিয়ে এনেছে।

এ বছরের ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা চলেছে ১৫ থেকে ১৯ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত। গেটস আলির বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২৭ আগস্ট ২০২৫, অর্থাৎ মেলা শুরু হওয়ার প্রায় দেড় মাস আগে। অন্যদিকে রিচার্ড জে. ইভান্সের ‘হিটলারের সহযোগী’ প্রকাশের তারিখ ঠিক মেলার প্রথম দিন, ১৫ অক্টোবর ২০২৫।

২০২৫ সালের ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় ইতিহাসভিত্তিক এই দুটি বই ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। সমালোচকদের মতে, নাৎসি অতীত, দায়বোধ ও ইতিহাসের সঙ্গে বর্তমান ইউরোপীয় রাজনৈতিক বাস্তবতার সম্পর্ককে নতুনভাবে দেখার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে বই দুটি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গঠন হচ্ছে শরিয়াহ উপদেষ্টা পর্ষদ
  • ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় আলোচিত হিটলারকে নিয়ে নতুন দুই বই
  • ৯ মাসে ডিবিএইচ ফাইন্যান্সের মুনাফা বেড়েছে
  • সুপারশিয়ার ভূমিকম্প কী, কীভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়
  • ঢাকা কলেজে একাদশে বিশেষ কোটায় ভর্তির সুযোগ, শিথিল হবে জিপিএ শর্ত
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (২০ অক্টোবর ২০২৫)
  • নয় মাসে ন্যাশনাল হাউজিংয়ে মুনাফা বেড়েছে ১২ শতাংশ
  • জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় বৃদ্ধি, ২০ থেকে ২৩ অক্টোবর
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৯ অক্টোবর ২০২৫)
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৮ অক্টোবর ২০২৫)