প্রান্তিক মানুষের অন্তর্ভুক্তি গণতন্ত্রের বড় চ্যালেঞ্জ: হোসেন জিল্লুর রহমান
Published: 26th, November 2025 GMT
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, গণতন্ত্রকে সংকীর্ণভাবে কেবল রাজনৈতিক বিষয় হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। সমাজের প্রান্তিক মানুষেরা সমাজে তাঁদের নিজস্বতা নিয়ে কতটা দাঁড়াতে পারছেন, সেটা গণতন্ত্র সফল হওয়ার অন্যতম শর্ত। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রান্তিক মানুষেরা শুধু ভুক্তভোগী হবেন না, তাঁরাও এতে অন্তর্ভুক্ত হবেন, এটাই বিবেচ্য বিষয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো, প্রান্তিক মানুষেরা সমাজে কতটা সম্মান পাচ্ছেন, তা–ও বিবেচনায় নিতে হবে।
প্রান্তিক মানুষ ও পরিবেশ নিয়ে কর্মশালা, প্রকাশনা উৎসব ও প্রামাণ্যচিত্রের প্রথম প্রদর্শনী উৎসবে এ কথা বলেন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আজ বুধবার এ অনুষ্ঠান হয়।
অনুষ্ঠানে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ের প্রতিটি জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বরের উপস্থিতি এবং তাদের সম্মান সমানভাবে নিশ্চিত করা একটি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণের অংশ। তথ্যের মতো শক্তিশালী হাতিয়ার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বাড়াতে এবং তাদের সম্পর্কে জানান দেওয়ার অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে।
এ অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (সেড), পিপিআরসি ও ব্রাত্যজন রিসোর্স সেন্টার (বিআরসি)। অনুষ্ঠানে কায়পুত্র ও ঋষি সম্প্রদায়ের ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র ‘জাতপাতের বলি’র প্রদর্শনী হয় এবং সেডের সর্বশেষ প্রকাশনা ‘রিপোর্ট অ্যান্ড অ্যানালাইসিস: মার্জিনালাইজড অ্যান্ড এক্সক্লুডেড কমিউনিটিস অব বাংলাদেশ’–এর মোড়ক উন্মোচনও হয়।
তিন দশকের বেশি সময় ধরে পরিবেশ, বাংলাদেশের বন ও বনবাসী মানুষ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে কাজ করছে সেড। সেই ধারাবাহিক কাজের প্রসঙ্গে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পরিচিতি, অন্তর্ভুক্তি ও সম্মান—এই ত্রিমাত্রিক উদ্দেশ্য সামনে রেখে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কাজ করে যাচ্ছে সেড। তাঁর মতে, এই কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে পাঁচটি অপরিহার্য ‘হাতিয়ার’ রয়েছে। এগুলো হলো সম্প্রদায়ের নিজস্ব সংগঠন, তথ্য ও তথ্যভিত্তিক জ্ঞান, সম্প্রদায়ের সদস্যদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সম্প্রদায়ের উপস্থিতি এবং বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তথ্যের প্রচার-প্রসার। তিনি সেডের পরিচালক ফিলিপ গাইনকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দৃশ্যমান করে তোলার ক্ষেত্রে ‘নীরব বিপ্লবী’ হিসেবে আখ্যা দেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেডের পরিচালক ফিলিপ গাইন। তিনি তিন দশকের বেশি সময় ধরে বন, পরিবেশ ও প্রান্তিক মানুষ নিয়ে সেডের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মধুপুরে প্রাকৃতিক শালবন ধ্বংস করে বিদেশি প্রজাতির বাণিজ্যিক চাষের ক্ষতিকর দিক নিয়ে সেড একদম শুরু থেকে গবেষণা, সংবাদ প্রতিবেদন তৈরি, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও গ্রন্থ প্রকাশ করে আসছে। এসব প্রতিবেদন, প্রামাণ্যচিত্র আন্তর্জাতিক সংস্থার ক্ষতিকর বিভিন্ন প্রকল্প বন্ধে অবদান রেখেছে বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন তিনি।
দি হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক প্রশান্ত ত্রিপুরা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে এই কায়পুত্র সম্প্রদায় সম্পর্কে এত দিন জানতাম না।’ তাঁর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক তানিম নূর বলেন, ‘ঋষি ও কায়পুত্রদের নিয়ে এর আগে কেউ এমনভাবে ভাবেনি, এমন প্রামাণ্যচিত্রও নির্মিত হয়নি। এই সম্প্রদায়ের মানুষের সমস্যা ও দাবিদাওয়া নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পৌঁছানো খুব জরুরি।’
ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের অধ্যাপক, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও গবেষক জাকির হোসেন (রাজু) বলেন.
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি শিশির মোড়ল বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ নানাভাবে হামলার শিকার হয়। অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমান সময়ে এসব জনগোষ্ঠীর মানুষ বেশি ঝুঁকিতে আছে বলে তিনি মনে করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক (উপসচিব) অশোক কুমার বিশ্বাস এবং কারিতাস বাংলাদেশের প্রতিনিধি কমল গান্ধাই।
অনুষ্ঠানে আদিবাসী, চা–শ্রমিক, কায়পুত্র, হিজড়া ও যৌনকর্মী, জলদাস, বিহারি, হরিজন, বেদে ও ঋষি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি ও অতিথিদের উন্মুক্ত আলোচনার মধ্য দিয়ে প্রকাশনা ও আলোচনা সভার সমাপ্তি ঘটে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ স ন জ ল ল র রহম ন প র ন ত ক জনগ ষ ঠ র অন ষ ঠ ন প রক শ
এছাড়াও পড়ুন:
‘ফিরে চল মাটির টানে’ স্লোগানে প্রথমবার ব্রজমোহন কলেজে নবান্ন উৎসব অনুষ্ঠিত
বরিশালে সরকারি ব্রজমোহন কলেজে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো নবান্ন উৎসব-১৪৩২। আজ বুধবার দিনভর এই উৎসবের আয়োজন করে কলেজের সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন। এবারের এই উৎসবের মূল স্লোগান ‘ফিরে চল মাটির টানে’। বাংলা কৃষিভিত্তিক সমাজ, লোকজ জীবন ও গ্রামীণ সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে দিনব্যাপী এই বর্ণিল আয়োজন সাজানো হয়।
কলেজের কবি জীবনানন্দ মঞ্চে (মুক্তমঞ্চ) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে নবান্ন উদ্যাপনের নানা পর্ব। এর মধ্যে ছিল শোভাযাত্রা, লোকগীতি ও ঐতিহ্যবাহী আচার, লোকজ খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে পুরো ক্যাম্পাসে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ।
সকালে সাড়ে ৯টায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় উৎসব। উদ্বোধনী পর্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সরকারি ব্রজমোহন কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জাবের আহমেদ। এ সময় বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘লোকসংস্কৃতি নানা চাপের মুখে টিকে আছে, এই চাপ ও ভয়ের পরিবেশ আমাদের সংস্কৃতির জন্য একটি বড় হুমকি। শিক্ষার্থীদের শিকড়ের দিকে ফিরে তাকানোর এই উদ্যোগ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, প্রশংসনীয়।’
নবান্ন উৎসবে এসে ছবি তুলে আনন্দে মেতেছে শিক্ষার্থীরা