ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা কেন জোহরান মামদানিকে আক্রমণ করছেন
Published: 23rd, July 2025 GMT
নিউইয়র্ক নগরের মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে জোহরান মামদানির ঐতিহাসিক বিজয় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছে।
কুইন্স থেকে নির্বাচিত ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট ও নিউইয়র্ক রাজ্যের আইনসভার সদস্য জোহরান তাঁর নির্বাচনী প্রচারে নিউইয়র্ক শহরজুড়ে বাড়িভাড়া বৃদ্ধি স্থগিত করা, সরকারি অর্থায়নে শিশুসেবা প্রদান এবং সরকারি ব্যবস্থাপনায় ‘দ্রুত ও বিনা মূল্যে’ গণপরিবহন চালুর মতো প্রগতিশীল নীতিগুলোর পক্ষে কথা বলেন।
প্রাইমারি ভোটে নিউইয়র্কের বাসিন্দাদের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা ৩৩ বছর বয়সী জোহরানের পেছনে দাঁড়িয়েছেন এবং গত ২৫ জুন অভূতপূর্বভাবে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে দেন তিনি।
গত ফেব্রুয়ারিতে জনমত জরিপে মাত্র ১ শতাংশ সমর্থন পাওয়া তুলনামূলক এই অজানা প্রার্থীই নিউইয়র্কের ছয় লাখ দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীর অনেককেসহ এক বড় ভোটার গোষ্ঠীকে একত্র করতে সক্ষম হন।
জোহরানের এ অপ্রত্যাশিত জয়ের পর ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিনদের একটি অংশ তাঁকে প্রকাশ্য নিশানায় পরিণত করেছে। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তারা একজন মুসলিম প্রার্থী চায় না এবং কখনো তাঁকে ভোট দেবে না।কিন্তু জোহরানের এ অপ্রত্যাশিত জয়ের পর ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিনদের একটি অংশ তাঁকে প্রকাশ্য নিশানায় পরিণত করেছে। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তারা একজন মুসলিম প্রার্থী চায় না এবং কখনো তাঁকে ভোট দেবে না।
গত সপ্তাহে নিউইয়র্কের কুইন্সে এক জনাকীর্ণ অনুষ্ঠানে একজন হিন্দুত্ববাদী কট্টরপন্থী জোহরানকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন।
ঘৃণাভাষণ ও ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গা প্রসঙ্গওই অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা কাজল হিন্দুস্তানি নামে পরিচিত কাজল শিংগালা মেয়রপ্রার্থী জোহরানকে ‘জিহাদি জম্বি’ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, তাঁকে মেয়র নির্বাচিত করা হলে নিউইয়র্ক হয়ে উঠবে আরেকটি পাকিস্তান। ‘জম্বি’ বলতে মৃত ব্যক্তি জীবিত হওয়ার মধ্য দিয়ে সৃষ্ট এক কাল্পনিক ভয়ংকর প্রাণীকে বোঝানো হয়।
ভারতের শীর্ষ ১০ বিদ্বেষী বক্তার তালিকায় থাকা শিংগালার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট মুসলিমবিদ্বেষী কনটেন্টে (আধেয়) ভরা। তিনি মুসলিম পুরুষদের সন্ত্রাসী, ধর্ষক ও ‘লাভ জিহাদি’ বলে আখ্যা দেন। ‘লাভ জিহাদ’ হলো একটি ষড়যন্ত্রতত্ত্ব। এ তত্ত্বমতে, মুসলিম পুরুষেরা হিন্দু নারীদের ফাঁদে ফেলে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করছেন।
ঘৃণাভাষণে সাড়া দিয়ে শত শত দর্শক অনুষ্ঠানে করতালিতে ফেটে পড়েন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে গুজরাটি সমাজ এবং এতে নিউইয়র্কের বৈষ্ণবমন্দির, ব্রাহ্মণ সমাজসহ বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন সমর্থন দেয়। বক্তব্যে শিংগালা ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গা প্রসঙ্গ তোলেন। ওই দাঙ্গাকে জোহরান এক মেয়র ফোরামে ‘মুসলিম গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।
হিন্দুত্ববাদ ও জায়নিজম—উভয় মতবাদ একই জাতীয়তাবাদী চিন্তার ওপর দাঁড়িয়ে। এখানে একটি নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীকে ভূমি ও সম্পদের একচ্ছত্র মালিকানা দেওয়া হয়। রাজনৈতিকভাবে মোদি ও নেতানিয়াহু সরকার ইসলামকে শত্রু হিসেবে দেখায় এবং জাতীয় অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ তুলে ধরে। এর মাধ্যমে জাতিকে রক্ষার নামে নিজেদের সহিংসতা, আগ্রাসন, এমনকি গণহত্যাকে বৈধতা দেয়। —ডেভিড লাডেন, নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের ইমেরিটাস অধ্যাপকসেই দাঙ্গার সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জোহরান তাঁকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ বলে আখ্যায়িত করেন।
মোদিকে ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগপর্যন্ত প্রায় এক দশক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, তিনি গুজরাটে মানুষের জীবন, স্বাধীনতা, মর্যাদা ও সমতার অধিকার লঙ্ঘন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
তবে এতেও গুজরাটি সমাজ মোদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে। ২০১২ সালে নিষেধাজ্ঞা চলাকালেই সংগঠনটির তৎকালীন সহসভাপতি মানিকান্ত প্যাটেল বলেছিলেন, মোদির সঙ্গে তাঁর ‘নিয়মিত যোগাযোগ’ রয়েছে।
মিথ্যা, ষড়যন্ত্র ও মুসলিমবিদ্বেষশিংগালা আরও দাবি করেন, জোহরান নির্বাচিত হলে নিউইয়র্ক হয়ে উঠবে লন্ডনের মতো এবং হিন্দু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য তা হবে হুমকি। লন্ডনের মেয়র সাদিক খান একজন মুসলিম।
মেয়র হওয়ার পর থেকে সাদিক খান ইসলামবিদ্বেষী উগ্রপন্থীদের সমালোচনার মুখে পড়েছেন; যদিও লন্ডনে খুনের হার কমেছে, গণপরিবহনে উন্নতি হয়েছে এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বিনা মূল্যে খাবার চালু হয়েছে।
শিংগালা তাঁর বক্তৃতার বড় অংশজুড়ে মুসলিমদের ‘হুমকি’ হিসেবে উপস্থাপন করেন। তিনি অনুষ্ঠানে আসা ব্যক্তিদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ নিতে, মুসলিমদের তৈরি পণ্য বর্জন করতে, কন্যাদের ‘লাভ জিহাদ’ থেকে বাঁচাতে এবং হিন্দু স্বার্থ রক্ষায় আরও হিন্দু নেতা তৈরির আহ্বান জানান।
আরও পড়ুনমামদানির সমালোচনা করে নেতানিয়াহু বললেন, মেয়র হলে এক মেয়াদের বেশি টিকবেন না তিনি১৯ ঘণ্টা আগেমানবাধিকার সংগঠন হিন্দুজ ফর হিউম্যান রাইটসের নির্বাহী পরিচালক সুনিতা বিশ্বনাথ বলেন, শিংগালা ভারতের ঘৃণার ভাষণকে যুক্তরাষ্ট্রেও ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
‘এমন চরমপন্থী বক্তব্য যে গুজরাটি সমাজের মতো মূলধারার সাংস্কৃতিক সংগঠনে জায়গা পাচ্ছে, সেটি দুঃখজনক,’ বলেন সুনিতা বিশ্বনাথ।
সুনিতা আরও জানান, কার্নেগি ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, অধিকাংশ ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন, এমনকি হিন্দু মার্কিনরাও এমন ঘৃণার রাজনীতি সমর্থন করেন না।
‘এ কারণেই কাজল হিন্দুস্তানির মতো সুযোগসন্ধানী ঘৃণা প্রচারকারীদের গোপন বৈঠক করতে হয়। আমরা “সভেরা” (দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের অধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করা সংগঠন) ও হিন্দুজ ফর হিউম্যান রাইটস একসঙ্গে থেকে ঘৃণার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব,’ বলেন সুনিতা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন উইয়র ক র অন ষ ঠ ন র জন ত স গঠন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
রাগ নিয়ন্ত্রণে হাদিসের ৭ উপদেশ
রাগ মানুষের স্বাভাবিক একটি আবেগ, যা অনিয়ন্ত্রিত হলে মানুষের জীবনে বিধ্বংসী প্রভাব ফেলতে পারে। এটি মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি সামাজিক সম্পর্ককেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। তবে ইসলাম রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে, যা কোরআন ও হাদিসে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে।
রাগ একটি মানসিক অবস্থা, যা অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা ও প্রতিশোধের ইচ্ছা থেকে উৎপন্ন হয়। যখন এ উত্তেজনা তীব্র হয়, তখন ক্রোধের আগুনকে আরও উসকে দেয়। ফলে মানুষের মন ও বুদ্ধি নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং শিষ্টাচার ও নির্দেশনার প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ে।
ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই এই রাগ হলো শয়তানের প্রজ্বলিত একটি স্ফুলিঙ্গ, যা আদম সন্তানের হৃদয়ে জ্বলে ওঠে।’ (আল-কুলায়নী, আল-কাফি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩০৪, হাদিস: ১২)
নিশ্চয়ই এই রাগ হলো শয়তানের প্রজ্বলিত একটি স্ফুলিঙ্গ, যা আদম সন্তানের হৃদয়ে জ্বলে ওঠে।ইমাম বাকির (আ.), আল-কুলায়নী, আল-কাফিরাগকে অনেকে শক্তির প্রকাশ মনে করলেও এটি আসলে একটি দুর্বলতা। রাগের কারণে মানুষ অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যা তার জীবনে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হয়।
রাগের ক্ষতিরাগ যদি নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তবে এটি ব্যক্তি ও সমাজের জন্য ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠে। মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব হলো উদ্বেগ, বিষণ্নতা, অপরাধবোধ, হতাশা ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা। শারীরিকভাবেও এটি মাথাব্যথা, চোখের সমস্যা, পেটের গোলযোগ ও হৃদ্রোগের মতো সমস্যা সৃষ্টি করে।
সামাজিক পরিসরে রাগ সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। রাগের বশে মানুষ এমন কথা বলে বা কাজ করে, যা তার সঙ্গে অন্যদের সম্পর্ক ছিন্ন করে। কখনো কখনো এটি হত্যা বা রক্তপাতের মতো চরম পরিণতির দিকে নিয়ে যায়।
সবচেয়ে বড় কথা, রাগের কারণে মানুষ আল্লাহর অসন্তুষ্টি অর্জন করে এবং সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়। এ ক্ষতি থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত প্রার্থনা করা অপরিহার্য।
শারীরিকভাবেও এটি মাথাব্যথা, চোখের সমস্যা, পেটের গোলযোগ ও হৃদ্রোগের মতো সমস্যা সৃষ্টি করে।রাগ নিয়ন্ত্রণ আল্লাহর সন্তুষ্টির উপায়রাগ একটি শক্তিশালী আবেগ, যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তবে কোরআন এ সমস্যার সমাধানে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘যারা সচ্ছলতায় ও অভাবে আল্লাহর পথে ব্যয় করে, যারা রাগ দমন করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুহসিনদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৩-১৩৪)
এ আয়াতে রাগ দমনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের কথা বলা হয়েছে।
কোরআনে নবীদের জীবন থেকে উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। নবী ইবরাহিম (আ.)-এর পিতা তাঁকে পাথর ছুড়ে মারার হুমকি দিলে তিনি শান্তভাবে বলেছিলেন, ‘তোমার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।’ (সুরা মারয়াম, আয়াত: ৪৭)
কোরআনে আরও বলা হয়েছে, ‘তোমাদের যা দেওয়া হয়েছে, তা এই পার্থিব জীবনের ক্ষণস্থায়ী ভোগ। কিন্তু আল্লাহর কাছে যা আছে, তা উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী। এটি তাদের জন্য যারা ঈমান আনে, তাদের রবের ওপর ভরসা করে, বড় পাপ ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকে এবং রাগের সময় ক্ষমা করে।’ (সুরা শুরা, আয়াত ৩৬-৩৭)
এ আয়াতে রাগ নিয়ন্ত্রণকে সততার লক্ষণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা জান্নাতের পথ প্রশস্ত করে।
আরও পড়ুনহজরত আলী (রা.)-এর ১০টি কালজয়ী উক্তি২৮ জুন ২০২৫হাদিসে রাগ নিয়ন্ত্রণের উপদেশইসলামে রাগকে শয়তানের কুমন্ত্রণা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মহানবী (সা.) বিভিন্ন উপায় বাতলে দিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো—
যারা সচ্ছলতায় ও অভাবে আল্লাহর পথে ব্যয় করে, যারা রাগ দমন করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুহসিনদের ভালোবাসেন।সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৩-১৩৪১. শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা: সুলায়মান ইবনে সারদ বলেন, ‘আমি নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে বসেছিলাম। দুজন লোক একে অপরের বিরুদ্ধে গালমন্দ করছিল। তাদের একজনের মুখ লাল হয়ে গিয়েছিল এবং তার ঘাড়ের শিরা ফুলে উঠেছিল।
নবীজি (সা.) বললেন, ‘আমি এমন একটি কথা জানি, যদি সে তা বলে, তার এ অবস্থা দূর হয়ে যাবে। তা হলো, আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতনির রজিম (আমি শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি)’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫০২)।
২. নীরব থাকা: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ ক্রুদ্ধ হলে সে যেন নীরব থাকে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৬৯৩, ৪০২৭)
রাগের সময় কথা বললে অযৌক্তিক বা ক্ষতিকর কথা বেরিয়ে আসতে পারে, যা সম্পর্ক নষ্ট করে। তাই নীরব থাকা রাগ নিয়ন্ত্রণের একটি কার্যকর উপায়।
৩. শারীরিক অবস্থান পরিবর্তন: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ ক্রুদ্ধ হলে যদি সে দাঁড়িয়ে থাকে, তবে সে যেন বসে পড়ে। তাতে তার রাগ দূর না হলে সে যেন শুয়ে পড়ে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৭৬৪)
আবু জর (রা.) রাগের সময় এ নির্দেশ পালন করেছিলেন এবং শান্ত হয়েছিলেন।
৪. নবীর (সা.) পরামর্শ অনুসরণ: একজন সাহাবি নবীজি (সা.)-এর কাছে পরামর্শ চাইলে তিনি বারবার বলেছিলেন, ‘ক্রুদ্ধ হয়ো না।’ (সহিহ বুখারি, ফাতহুল বারী, ১০/৪৫৬)
৫. জান্নাতের প্রতিশ্রুতি স্মরণ: নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে, যখন তার রাগ প্রকাশ করার ক্ষমতা থাকে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার হৃদয়কে সন্তুষ্টিতে ভরিয়ে দেবেন।’ (তাবারানি, হাদিস: ১২/৪৫৩)।
৬. নবীর (সা.) আদর্শ অনুসরণ: মহানবী (সা.)-এর জীবনে রাগ নিয়ন্ত্রণের অসাধারণ উদাহরণ রয়েছে। একবার একজন বেদুইন তাঁর গলায় রুক্ষভাবে ধরে তাঁকে কিছু দেওয়ার দাবি করেন। নবীজি (সা.) শান্তভাবে হেসে তাঁকে কিছু দিতে আদেশ করেন। (ফাতহুল বারী, খণ্ড ১০, পৃষ্ঠা ৩৭৫)
৭. দোয়া: দোয়া মুমিনের শক্তিশালী অস্ত্র। নবীজি (সা.)-এর একটি দোয়া ছিল, ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রকাশ্যে ও গোপনে তোমার ভয় করার তৌফিক প্রার্থনা করি এবং সন্তুষ্টি ও রাগের সময় সত্য কথা বলার তৌফিক চাই।’ (সহিহ আল-জামি, হাদিস নং ৩০৩৯)
তবে রাগ যদি আল্লাহর অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে হয়, তবে তা প্রশংসনীয়। নবীজি (সা.) যখন দেখতেন যে কেউ আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করছে, তখন তিনি রাগ প্রকাশ করতেন, তবে তা ছিল নিয়ন্ত্রিত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
আরও পড়ুনরাগ নিয়ন্ত্রণ করতে যা করা যায়১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫