সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ, অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক
Published: 24th, July 2025 GMT
সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে বিধিবহির্ভূতভাবে একটি প্লট গ্রহণ করেছেন—এমন অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং কর কমিশনারের কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়ে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র তলব করেছে সংস্থাটি।
দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, অভিযোগের যথাযথ অনুসন্ধানের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, রাজউক ও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক একটি প্লট গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সেটির প্রাথমিক যাচাই করতে রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে।
অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দুদকের উপপরিচালক মনিরুল ইসলামকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। দলের অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত, মুবাশ্বিরা আতিয়া, এস এম রাশেদুল হাসান, এ কে এম মুর্তুজা আলী সাগর, মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম এবং উপসহকারী পরিচালক মো.
দুদকের পাঠানো চিঠিতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ২১ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখের স্মারক নম্বর (রাজ-৫/২০০৫/৪৮৫) অনুযায়ী সাবেক প্রধান বিচারপতির প্লট বরাদ্দসংক্রান্ত মূল পত্র ও সংশ্লিষ্ট নথির (নোটশিটসহ) ফটোকপি চাওয়া হয়েছে। একইভাবে রাজউক বরাবর পাঠানো চিঠিতে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের সেক্টর-১, রোড-১০২, প্লট নং-৪, কোড নং-৮৫১১-এর বরাদ্দসংক্রান্ত নথিপত্রও তলব করা হয়েছে।
আরও পড়ুনসাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক ঢাকায় আটক৭ ঘণ্টা আগেএ ছাড়া উপকর কমিশনারের কার্যালয়ে পাঠানো চিঠিতে খায়রুল হকের আয়কর রিটার্ন ও সংযুক্ত দলিলপত্রের (শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত) কপি চাওয়া হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে উপরোক্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন। জরুরি ভিত্তিতে এসব রেকর্ডের ফটোকপি সরবরাহ করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে অনুরোধ জানানো হলো।’ অনুসন্ধানের সময়সীমা সীমিত হওয়ায় দ্রুত রেসপন্স দেওয়ার অনুরোধও জানানো হয়।
এর আগে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) খায়রুল হককে রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে আটক করে। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। দুর্নীতি ও রায় জালিয়াতির অভিযোগে গত ২৭ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন। এর আগে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় একই ধরনের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন স্থানীয় বিএনপি নেতা ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আবদুল বারী ভূঁইয়া।
উল্লেখ্য, এ বি এম খায়রুল হক বাংলাদেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি ছিলেন। তাঁর সময়ে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল নিয়ে দেওয়া রায় পরে বিতর্কিত হয়। সেই রায় নিয়েও মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জট কমাতে জাহাজ কমানোর উদ্যোগ
কনটেইনারভর্তি পণ্য নিয়ে একের পর এক জাহাজ আসছে। খালাস শেষে রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে বন্দর ছাড়ছে এসব জাহাজ। পণ্য পরিবহনের চাপ সামাল দিতে না পারায় বন্দরে কনটেইনার জাহাজের জট বাড়ছে। এই জট কমানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের পথে চলাচলরত কনটেইনার জাহাজের সংখ্যা কমাতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
জাহাজ যাতে কম আসে সে জন্য বন্দরের নেওয়া পদক্ষেপ হতবাক করেছে শিপিং এজেন্টদের। শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, দুর্যোগের সময় ছাড়া কোনো বন্দরে চলাচলরত জাহাজের সংখ্যা কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার নজির বিশ্বে নেই। বরং বিশ্বের নানা বন্দর বা কনটেইনার টার্মিনালগুলোতে যাতে জাহাজ ভেড়ানো হয় সে জন্য শিপিং কোম্পানিগুলোকে উৎসাহ দেওয়া হয়। এ কাজের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ বা টার্মিনাল পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর বিপণন বা বাণিজ্য দল রয়েছে। চট্টগ্রামে হচ্ছে উল্টোটা।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের পথে এখন ১১৮টি কনটেইনার জাহাজ নিয়মিত চলাচলের অনুমোদন রয়েছে। বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও চীনের বিভিন্ন বন্দরে এসব জাহাজ চলাচল করে। ২০ জুলাই বন্দরের এক সভায় বন্দরের পথে চলাচলরত ১৫টি জাহাজ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যে ১৫টি জাহাজ কমানো হবে তার তালিকা শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনকে নিজ উদ্যোগে বন্দরকে দেওয়ার জন্য বলা হয় ওই সভায়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, জাহাজজটের কারণে বহির্বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান।
এ বিষয়ে জানতে বন্দর চেয়ারম্যানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি।
তবে শিপিং এজেন্টরা এখন পর্যন্ত কোনো জাহাজের নাম বন্দরকে দেয়নি, যেগুলো প্রত্যাহার করা হবে। তালিকা না দেওয়ায় গত মঙ্গলবার বন্দরের উপসংরক্ষক ক্যাপ্টেন মো. জহিরুল ইসলাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে (বুধবারের মধ্যে) ১৫টি জাহাজের তথ্য দেওয়ার জন্য শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন, যেগুলো এই পথ থেকে প্রত্যাহার করা হবে।
শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বন্দরের এ উদ্যোগ মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মতো। যেসব কারণে বন্দরে জাহাজজট হয়েছে, তা শনাক্ত করে জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা উচিত। জাহাজের সংখ্যা কমিয়ে জট কমবে না।
স্বাভাবিক সময় বন্দরের বহির্নোঙরে পাঁচ–ছয়টি জাহাজ অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু এখন জটের কারণে ক্রেনযুক্ত একেকটি জাহাজ জেটিতে ভেড়ানোর জন্য চার থেকে ১০ দিন পর্যন্ত সাগরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
শিপিং ও বন্দর কর্মকর্তারা জানান, ঈদুল আজহার একটানা ১০ দিনের ছুটি, দুই দফায় পরিবহন ধর্মঘট, কাস্টমসের শাটডাউন কর্মসূচি ও কাস্টমসের শুল্কায়নের সফটওয়্যারের ধীরগতির কারণে বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এর জেরে কনটেইনার জাহাজের যে জট তৈরি হয়েছে, তা এখনো কমছে না। কারণ, কনটেইনারে পণ্য পরিবহন বাড়ছে।
এমন পরিস্থিতিতে বন্দরের নতুন উদ্যোগে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীঙ্কার বন্দরগুলোতে বাংলাদেশমুখী কনটেইনারের জট তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন শিপিং এজেন্টরা। একইভাবে এসব বন্দর হয়ে ইউরোপ–আমেরিকামুখী রপ্তানি পণ্যের কনটেইনারের স্তূপ বাড়তে পারে ডিপোগুলোতে।
জানতে চাইলে কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব অপারেশন মুনতাসীর রুবাইয়াত প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরের পথে জাহাজের সংখ্যা কমানো হলে আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, চাহিদা বাড়লে কনটেইনার পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যেতে পারে। এতে ভুক্তভোগী হতে পারেন ভোক্তারা।