পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে করোনা মহামারির পর পর্যটক ও দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। সম্প্রতি সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। এতে রবীন্দ্রভক্তরা খুশি। এবার তাঁদের জন্যই আরও একটি নতুন উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ—শুরু হচ্ছে ‘হেরিটেজ ওয়াক’।

বিশ্বভারতীর উপাচার্য প্রবীর কুমার ঘোষ গত বুধবার বলেন, গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত এ স্থান যাতে পর্যটকেরা ভালোভাবে ঘুরে দেখতে পারেন, সে জন্যই এ ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য প্রশিক্ষিত গাইডের ব্যবস্থাও থাকছে।

কোনো ঐতিহাসিক বা সাংস্কৃতিক স্থানে পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখানোর আয়োজনকে ‘হেরিটেজ ওয়াক’ বলা হয়। এতে গাইড থাকেন, যিনি ঘুরতে আসা ব্যক্তিদের ঐতিহাসিক স্থান, স্থাপত্য, সাংস্কৃতিক ও ব্যক্তিত্ব সম্পর্কিত তথ্য জানান।

প্রবীর কুমার ঘোষ জানান, বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দি—এই তিন ভাষায় বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর বিবরণসহ প্রচারপত্র থাকবে।

প্রতি রোববার হেরিটেজ ওয়াকের এই বিশেষ পরিষেবা দেওয়া হবে। এই পরিকল্পনার নানা দিক খতিয়ে দেখেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।

বুধবার উপাচার্য অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে গোটা প্রস্তুতি ঘুরে দেখেন। প্রস্তুতি দেখা শেষে উপাচার্য বলেন, ইউনেসকোর নির্দেশিকা মেনে সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

হেরিটেজ ওয়াকের জন্য মৃণালিনী আনন্দ পাঠশালা থেকে শুরু হয়ে চৈত্যবাড়ি হয়ে ছাতিমতলা পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে আলাদা রাস্তা। মোরামের (লালচে বা বাদামি রঙের মাটির) ওপর সিমেন্টের স্ল্যাব বসিয়ে এই রাস্তা তৈরি হচ্ছে।

কিন্তু কবে এই হেরিটেজ ওয়াক সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হবে এবং কত রুপির টিকিট কিনতে হবে, তা নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

লুসাই কারা, সাজেকের লুসাই সাংস্কৃতিক পার্কে কী আছে

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকের রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে ঢুকতেই ছোট একচিলতে জায়গায় গড়ে উঠেছে লুসাই সাংস্কৃতিক পার্ক। সেখানে ৩০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ঢুকলে দর্শনার্থীরা যেন একটা আদি অকৃত্রিম লুসাই গ্রাম খুঁজে পান। লুসাই জনজাতি কেমন ছিল এক সময়, তাদের সংস্কৃতি, পোশাকপরিচ্ছদ, থাকার ঘর, ব্যবহৃত হাতিয়ার, বাদ্যযন্ত্র—সবই দেখার সুযোগ মিলবে পর্যটকদের। কেবল তা–ই নয়, লুসাইদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে তোলা যাবে ছবিও।

সম্প্রতি সাজেকে গিয়ে ‘লুসাই ভাংখুয়া পার্ক’, অর্থাৎ লুসাই সাংস্কৃতিক পার্কে পর্যটকদের বেশ ভিড় লক্ষ করা গেল। ‘মেঘের ওপরের দেশ’ সাজেক একসময় লুসাই–অধ্যুষিত ছিল। এখন বহু পরিবার ভারতের মিজোরামে অভিবাসন করেছে। আগের তুলনায় কমে গেলেও সাজেকের ছোট-বড় সব পাড়ায় লুসাইদের সাংস্কৃতিক প্রভাব এখনো অটুট। রুইলুই মৌজার হেডম্যানও একজন লুসাই। নাম লালথাঙ্গা লুসাই। মূলত তিনি ও তাঁর পরিবারের উদ্যোগেই এই পার্ক গড়ে উঠেছে। উদ্দেশ্য সাজেকের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য তুলে ধরা।

সাংস্কৃতিক পার্কের ব্যবস্থাপনায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে লুসাইদের জীবনযাপন সম্পর্কে অনেক কিছু জানা গেল। তার আগে জেনে নেওয়া ভালো, এ প্রসঙ্গে গবেষকেরা কী বলছেন। মিয়ানমারের রেঙ্গুন ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের অধ্যাপক ভুমসন তাঁর ‘জো হিস্ট্রি’ বইয়ে লুসাইদের বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, লুসাইরা ‘জো জাতির’ অন্তর্ভুক্ত ছয়টি জনজাতির একটি। জো জাতির বাকি পাঁচটি জনজাতি হলো বম, পাঙ্খোয়া, খুমি, ম্রো ও খিয়াং। মিয়ানমারের আরাকান থেকে শুরু করে ভারতের মণিপুর ও বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু অংশজুড়ে লুসাইদের বসবাস। ভারতের মিজোরামে লুসাইরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।

প্রাচীন যোদ্ধা জাতি

পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাচীন যোদ্ধা জাতি হিসেবে লুসাইদের পরিচিতি রয়েছে। স্বাধীনচেতা এই জাতি কখনো কারও বশে আসেনি। এ কারণে ১৮৭১ সালে আসাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে জেনারেল ব্রাউনলো ও বোর্চিয়ারের নেতৃত্বে লুসাই দমন অভিযান পরিচালিত হয়। দীর্ঘ অভিযানের পর লুসাইরা সন্ধি করতে বাধ্য হয়। তবে এরপরও পুরোপুরি বাগে আনা যায়নি তাদের। লুসাইদের মধ্যে বীরের কদর আছে। গ্রামের বীরযোদ্ধাকে সবাই সম্মান করে। বলা হয়ে থাকে, লুসাই বীরেরা কখনো পেছনে ফিরে তাকান না। যুদ্ধকৌশলে পারদর্শী লুসাই গ্রামগুলোয় শত্রুর গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য থাকত উঁচু টংঘর। এ ছাড়া ‘জলবুক’ নামের বিশেষ একটি ঘরে থাকতেন লুসাই পুরুষেরা। এই ঘরে অস্ত্র সঙ্গে রাখা ছিল বাধ্যতামূলক। যেকোনো সময়ে যাতে পুরুষেরা লড়াইয়ে যোগ দিতে পারেন, সে জন্য এমন ব্যবস্থা। সাজেকের লুসাই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে গিয়ে ‘জলবুক’ ঘরের দেখা পাবেন পর্যটকেরা।    

পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাচীন যোদ্ধা জাতি হিসেবে লুসাইদের পরিচিতি রয়েছে। স্বাধীনচেতা এই জাতি কখনো কারও বশে আসেনি। এ কারণে ১৮৭১ সালে আসাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে জেনারেল ব্রাউনলো এবং বোর্চিয়ারের নেতৃত্বে লুসাই দমন অভিযান পরিচালিত হয়। দীর্ঘ অভিযানের পর লুসাইরা সন্ধি করতে বাধ্য হয়। তবে এরপরও পুরোপুরি বাগে আনা যায়নি তাদের। লুসাইদের মধ্যে বীরের কদর আছে। গ্রামের বীরযোদ্ধাকে সবাই সম্মান করে। বলা হয়ে থাকে, লুসাই বীরেরা কখনো পেছনে ফিরে তাকান না। যুদ্ধকৌশলে পারদর্শী লুসাই গ্রামগুলোয় শত্রুর গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য থাকত উঁচু টংঘর। এ ছাড়া ‘জলবুক’ নামের বিশেষ একটি ঘরে থাকতেন লুসাই পুরুষেরা।

কী আছে পার্কে

লুসাই সাংস্কৃতিক পার্কে তাঁতে বোনা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। জানা গেল, লুসাই নারীরা কোমরতাঁতে ‘পুয়ানফেল’ (থামি), ‘করচুং’ (ব্লাউজ), ‘করচুর’ (পুরুষের শার্ট) ও পুয়ানবি (লুঙ্গি) বোনেন। পরেন নানা নকশার পাথরের ও ধাতুর ভারী গয়না। সাদা, কালো ও লাল রঙের নকশায় সাজানো পোশাক দৃষ্টিনন্দন। ১০০ টাকার বিনিময়ে পার্কে এসব পোশাক পরে ছবি তুলতে পারেন পর্যটকেরা। এ ছাড়া ঐতিহ্যবাহী লুসাই মাচাংঘর দেখারও সুযোগ মিলবে সেখানে। লুসাই মাচাংঘরে ঢুকতেই অভ্যর্থনাকক্ষ। লম্বাটে সেই ঘরে লুসাইরা শিকার করা বিভিন্ন প্রাণীর মাথার ট্রফি ঝুলিয়ে রাখে। এ ছাড়া পার্কে ঢুকে দোকানি ছাড়া দোকানের দেখাও মিলবে। সেখান থেকে পর্যটকেরা চাইলে লুসাইদের বিভিন্ন স্মারকও কিনতে পারবেন।  

রাঙামাটির সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে লুসাইদের যুদ্ধঘর জলবুকের একটি প্রতিকৃতি। সম্প্রতি সাজেকের রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লুসাই কারা, সাজেকের লুসাই সাংস্কৃতিক পার্কে কী আছে