তারাকান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চকচকে ভবনে সেবা চলে খুঁড়িয়ে
Published: 27th, July 2025 GMT
চারতলার চকচকে নতুন একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সামনে ফুলের বাগান, পাকা সড়ক। চমৎকার এক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হলেও এখানে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না মানুষ। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে আংশিক সেবা চালু হলেও প্রয়োজনীয় জনবলকাঠামোই অনুমোদন হয়নি। এর মধ্যেই চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। এটি ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিত্র।
সরেজমিনে এক দিন
২০২২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তারাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স উদ্বোধন করা হয়। জরুরি ও বর্হিবিভাগ চালু হলেও এখনো আন্তবিভাগের সেবা চালু হয়নি। ২১ জুলাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে গেলে সেবা নিতে আসা কাজিউল ইসলাম নামের একজন বলেন, এখানে চিকিৎসাব্যবস্থা আরও উন্নত হওয়া দরকার। জটিল সমস্যা হলে ময়মনসিংহে যেতে হয়, এখানে যেন সেসব ব্যবস্থা করা হয়।
আরেক রোগী মুকুল খান বলেন, ‘সকাল ৯টায় আসলেও ১ ঘণ্টা বইয়া আছিলাম। পরে ডাক্তার আইলে দেইখ্যা ওষুধ দিছে।’ ১০টা ১১ মিনিটে চিকিৎসক দেখিয়ে বের হচ্ছিলেন বানিহালা গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে ছোটখাটো ওষুখের সেবা পাই। বড় ধরনের অসুখের সেবা নেই। ডাক্তার নেই। রোগী ভর্তি চলে না। কোনো সিট নেই। আমরা যদি পূর্ণ সেবা না পাই, তাহলে হাসপাতাল করা না–করা তো একই কথা।’
রোগীরা কিছু সাধারণ সেবা পেলেও ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ভর্তির জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেলে যেতে হয়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স
এছাড়াও পড়ুন:
বেপরোয়া গতির যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন
ময়মনসিংহের সড়ক-মহাসড়কে সাড়ে তিন বছরে ৭৭২ জনের মৃত্যু—এই ভয়াবহ পরিসংখ্যান কেবল সংখ্যা নয়, বরং প্রতিদিনের রূঢ় বাস্তবতা। প্রতিটি প্রাণহানি একটি পরিবারকে শোকে নিমজ্জিত করেছে, অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিয়েছে। একই সময়ে গুরুতর আহত ও অঙ্গহানির শিকার হয়েছেন প্রায় এক হাজার মানুষ। এই পরিস্থিতি আমাদের সড়কব্যবস্থার নৈরাজ্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ দুরবস্থা তুলে ধরে।
বিআরটিএর তথ্য বলছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাট আঞ্চলিক সড়ক দুর্ঘটনার ‘হটস্পট’। বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিং, আঁকাবাঁকা সড়ক এবং থ্রি-হুইলারের অবাধ চলাচল—সব মিলিয়ে এই সড়কগুলোকে মৃত্যুকূপে পরিণত করেছে। চার লেনের মহাসড়ক হলেও উল্টো পথে গাড়ি চলা, গতিসীমা অমান্য করা এবং হাইওয়েতে ধীরগতির থ্রি-হুইলার চলাচল পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক করছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে সতর্কবার্তা ও গতিসীমা নির্ধারণ করেছে, কিন্তু চালকদের অনিয়ম ও বেপরোয়া গতির কারণে তা কোনো কাজে আসছে না। অনেক চালক মনে করেন, ভালো রাস্তা মানেই বেশি গতি। এই মানসিকতা ভাঙতে কঠোর নজরদারি ও শাস্তির বিকল্প নেই।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই মৃত্যুর মিছিল থামাতে প্রশাসনের ভূমিকা কোথায়? সড়কে নিয়ম ভাঙা, বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিং রোধে কেন কঠোর নজরদারি ও শাস্তি নেই? জাতীয় মহাসড়কে থ্রি–হুইলার নিষিদ্ধ থাকলেও বিকল্প পরিবহন না থাকায় এবং দুর্বল নজরদারির কারণে সেগুলো নির্বিঘ্নে চলছে।
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রশাসন দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজে সক্রিয় হলেও প্রতিরোধমূলক উদ্যোগের ঘাটতি প্রকট। শুধু দুর্ঘটনার পর উদ্ধার নয়, দুর্ঘটনা প্রতিরোধই হতে হবে মূল লক্ষ্য। এ জন্য বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে হাইওয়ে পুলিশের উপস্থিতি ও নজরদারি বাড়ানো এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্পিড ক্যামেরা বসানো জরুরি।
এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উপেক্ষিত হচ্ছে—জনসচেতনতা ও চালকের প্রশিক্ষণ। অধিকাংশ দুর্ঘটনা চালকদের অসতর্কতা, অভ্যাসগত আইন ভাঙা এবং প্রতিযোগিতামূলক গতির কারণে ঘটছে। যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে, যাতে তাঁরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে চালকদের বাধ্য না করেন। পাশাপাশি থ্রি-হুইলারের বিকল্প হিসেবে নির্ভরযোগ্য লোকাল পরিবহনব্যবস্থা চালু না করলে এসব দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনাগুলোকে নিছক দুর্ঘটনা বলা যায় না; এগুলো একধরনের ‘কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড’। দায়িত্বশীলদের গাফিলতি ও অবহেলার কারণে আর কোনো প্রাণ যেন সড়কে না ঝরে—এখনই সেই দাবি তুলতে হবে এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করতে হবে। ময়মনসিংহের সড়কগুলোতে বেপরোয়া গতির যানবাহনের বিরুদ্ধে পুলিশকে অবশ্যই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।