সমাজে কত রকমের মানুষ আছে। কারও সঙ্গে আমাদের মিলে, আবার কারও সঙ্গে মিলে না। তারপরও আমরা সমাজে একসঙ্গে থাকি। প্রতিবেশীর ভালো কামনা করি, তারা যেন কোনো বিপদ-আপদে না পড়ে এ দোয়া করি। এটাই নিয়ম।
আল্লাহর রসুল (সা.) বলেন, ‘যখন তুমি তোমার প্রতিবেশীদের বলতে শুনবে তুমি ভালো, তখন তুমি ভালো আর যখন তুমি তাদের বলতে শুনবে তুমি মন্দ, তখন তুমি মন্দ। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৩৮০৮)
কোরআনে হজরত সুলাইমান (আ)-এর কাহিনি আছে। আল্লাহ তাআলা তাঁকে পশুপাখির ভাষা বোঝার শক্তি দিয়েছিলেন। একদিন তিনি দলবল নিয়ে কোথাও যাচ্ছেন। পথে একটা পিঁপড়ার বাসা ছিল। পিঁপড়াদের রানি সুলাইমান (আ)-এর বাহিনী দেখে সব পিঁপড়ার উদ্দেশে বলল, ‘তোমরা তাড়াতাড়ি বাসায় ঢুকে পড়ো। হতে পারে হজরত সুলাইমান (আ) ও তাঁর দল আমাদের না দেখেই পায়ে পিষে ফেলবে।’ (সুরা নামল, আয়াত ১৮)
যখন তুমি তোমার প্রতিবেশীদের বলতে শুনবে তুমি ভালো, তখন তুমি ভালো আর যখন তুমি তাদের বলতে শুনবে তুমি মন্দ, তখন তুমি মন্দ। মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৩৮০৮আরও পড়ুননবী সুলাইমান (আ.)–এর দোয়া১৪ মার্চ ২০২৪
এই যে পিঁপড়ার রানির সবার জন্য চিন্তা করা, আল্লাহ এটা খুব পছন্দ করলেন। আল্লাহ তাদের কথা কোরআনে তো এনেছেনই, এমনকি একটি সুরার নামও হয়েছে পিঁপড়ার নামে।
আমাদের নবীজির (সা.) জীবনকাহিনির দিকে তাকালে এই গুণ খুব বেশি পাওয়া যায়। তিনি সব সময় সবার কথা ভাবতেন, সবার সুবিধা-অসুবিধা লক্ষ্য করতেন। তাঁর অভ্যাস ছিল, কোনো মুসলমানকে যদি একাধারে তিন দিন মসজিদে না দেখতেন, তাহলে তাঁর ব্যাপারে মানুষের কাছে জিজ্ঞাসা করতেন। যদি শুনতেন সেই লোক সফরে গেছেন, তাহলে তাঁর জন্য দোয়া করতেন।
আর যদি শুনতেন তিনি মদিনাতেই আছেন, কিন্তু কোনো কারণে মসজিদে আসতে পারছেন না, তাহলে নবীজি (সা.) নিজে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যেতেন। যদি শুনতেন সেই লোক অসুস্থ, তাহলে তিনি তাঁর বাড়িতে গিয়ে সেবা করতেন। (আখলাকুন নবী, হাদিস: ১৫৯)
এই যে পিঁপড়ার রানির সবার জন্য চিন্তা করা, আল্লাহ এটা খুব পছন্দ করলেন। আল্লাহ তাদের কথা কোরআনে তো এনেছেনই, এমনকি একটি সুরার নামও হয়েছে পিঁপড়ার নামে।একদিন আল্লাহর রসুল (সা.) ফজরের নামাজ পড়াচ্ছিলেন। ফজর নামাজ সাধারণত লম্বা কেরাত দিয়ে পড়া হয়। কিন্তু আল্লাহর রসুল (সা.) খুব দ্রুত নামাজ শেষ করে ফেলেন। নামাজ শেষে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আল্লাহর রাসুল, আজ এত তাড়াতাড়ি নামাজ শেষ করে ফেললেন যে?’
আরও পড়ুনহাসান ও হোসাইন নবীজির দুই নাতি০৩ জুন ২০২৫উত্তরে নবীজী (সা.) বললেন, ‘নামাজের সময় আমি এক শিশুর কান্নার আওয়াজ পেলাম। আমার মনে হলো সেই শিশুর কান্নার কারণে তার নামাজরত মা খুব পেরেশানিতে পড়বে।’ (আখলাকুন নবী, হাদিস: ১৫৭)
কী আশ্চর্য বিষয়, মাত্র একজন মুসল্লির পেরেশানির কথা চিন্তা করে তিনি সাধারণ নিয়ম ভঙ্গ করে দ্রুত নামাজ শেষ করে ফেলেন!
সাহাবি মিকদাদ বিন আমর (রা.) বলেন, কিছু লোক মদিনার মসজিদে ঘুমাতেন। আল্লাহর রসুল (সা.) তখন কাউকে সালাম দিলে এমন আস্তে সালাম দিতেন, কেবল ওই ব্যক্তিই যেন শুনে আর অন্যরা যেন জেগে না যায়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,০৫৫)
ইসলামের মূল শিক্ষাই এটাই—সব সময় মানুষের সুবিধা-অসুবিধা দেখে কাজ করা এবং কোনোভাবেই অন্যের মনে কষ্ট না দেওয়া।
মওলবি আশরাফ: আলেম, লেখক ও অনুবাদক
আরও পড়ুনসত্যবাদী রাখালের কাহিনি২০ জুলাই ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: তখন ত ম দ র বলত যখন ত ম আল ল হ করত ন
এছাড়াও পড়ুন:
শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা
বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা।
আরো পড়ুন:
শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?
পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?
বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।”
একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।”
শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি।
১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা।
দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী।
১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
ঢাকা/শান্ত