চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) লামিয়া লাবিবা তানহা নামে এক ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক কুরবান আলী।
সোমবার (২৮ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টায় চবি ল্যাবরেটরি স্কুল সংলগ্ন একটি চতুর্থ তলার ভাড়া বাসার কক্ষের জানালার সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় পাওয়া যায়।
লামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেত্রী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুল সংলগ্ন ওই বাসার চতুর্থ তলায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন তিনি।
আরো পড়ুন:
কুয়েটে অচলাবস্থার ১৬০ দিন, ক্লাস শুরু মঙ্গলবার
রাকসুর তফসিল ঘোষণা, নির্বাচন ১৫ সেপ্টেম্বর
লামিয়ার সহপাঠীরা জানান, তিনি প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় ছয়টি কোর্সে অকৃতকার্য হওয়ায় ড্রপ আউট হয়। এ নিয়ে সে হতাশায় ছিল। তবে সেটা প্রকাশ করত না। উপরে উপরে সে হাসোজ্জল আর প্রাণবন্ত থাকত। কোটা আন্দোলনসহ যেকোনো আন্দোলনে তাকে অগ্রভাগে দেখা যেত। তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন, এটা কারোরই বিশ্বাস হচ্ছে না। লামিয়ার মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন সহপাঠীরা।
জানা গেছে, সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় তার বাসার গৃহকর্মী রুম ঝাড়ু দিতে গেলে লামিয়াকে জানালার সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ঝুলন্ত দেখেন। পরে তারা বাবা-মা তার মরদেহ নিচে নামিয়ে রাখেন।
এ বিষয়ে লামিয়ার বাসার নারী গৃহকর্মী রাইজিংবিডিকে বলেন, “লামিয়া আপু জানালার সঙ্গে ঝুলে ছিলেন। তবে তার পা মাটিতে লেগে ছিল। আমি চিন্তা করতেছি, কিভাবে সে মারা গেল। ফাঁসি হলে তো ঝুলে থাকতে হয়।”
তিনি বলেন, “কক্ষের দরজা বন্ধ থাকলেও দুই পাশে লক সিস্টেম থাকায় বাহির থেকে খুলতে পেরেছি। খুলে দেখি এ অবস্থা।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক কুরবান আলী বলেন, “ওই ছাত্রীর এক সহপাঠীর ফোন পেয়ে আমরা সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার বাবা-মা মৃতদেহ তারই কক্ষ থেকে উদ্ধার করেন। এ সময় তাকে জানালার সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় দেখে তার বাবা-মা ও গৃহকর্মী।”
তিনি বলেন, “পুলিশ হাটহাজারী থানায় লাশ নিয়ে গেছেন। সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য নেওয়া হবে।”
চবি পুলিশ ফাঁড়ির আইসি আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস থেকে খবর পেয়ে আমরা ১১টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ছাত্রীর লাশ নামিয়ে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে আমরা লাশ উদ্ধার করে হাটহাজারী থানায় প্রেরণ করেছি। সেখানে কিছু প্রক্রিয়া শেষ করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ চমেক হাসপাতালে পাঠানো হবে।”
তিনি বলেন, “আপাতত প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে এটি আত্মহত্যা মনে হয়েছে। তবে ময়না তদন্তের প্রতিবেদনের আলোকে প্রকৃত কারণ জানা যাবে।”
লামিয়ার এক নারী সহপাঠী রাইজিংবিডিকে বলেন, “সে প্রথমবর্ষের পরীক্ষায় পাঁচ-ছয়টি কোর্সে অকৃতকার্য হওয়ায় ড্রপ আউট হয়। তবে সে পরীক্ষা ভালো দিয়েছিল এবং সবার প্রতি হেল্পফুল ছিল। এ নিয়ে হয়তো সে ডিপ্রেশনে ছিল। তবে উপরে উপরে সে অনেক প্রাণবন্ত থাকতো। বিভিন্ন আন্দোলনেও নিয়মিত অংশ নিত।”
লামিয়ার আরেক সহপাঠী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, “লামিয়া একজন প্রতিবাদী ও সংগ্রামী মেয়ে ছিল। সে অন্যায় অপরাধের বিরুদ্ধে সবসময় সম্মুখ সারিতে থাকত। কোটা আন্দোলনেও লামিয়ার অতুলনীয় ভূমিকা ছিল, যা আমার স্বচক্ষে দেখা। লামিয়ার সঙ্গে শেষ দেখা হয় মুরাদপুরে।”
তিনি বলেন, “লামিয়ার হঠাৎ এই মৃত্যু আমাদের মনে প্রশ্ন জাগিয়ে তুলছে। মেয়েটা মানসিকভাবে এত শক্তিশালি হওয়া সত্ত্বেও এই সিদ্ধান্ত কেমনে নিল। সবকিছুই কেমন রহস্যময় মনে হচ্ছে। সঠিক তথ্য বের করা এখন সময়ের দাবি।”
শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় ফেসবুকে বলেন, “লামিয়া আমাদেন মাঝে আর নেই, তা কোনোভাবে বিশ্বাস করতে পারছি না। সবসময় মিছিলের সামনেই থাকত মেয়েটা। পরশুদিন তার জন্মদিন গেছে, ট্রিট দেওয়ার কথা ছিল। মুখে সবসময় কথার খই ফুটতো, কথা শুরু হলে শেষ হওয়ার না। কী তেজদীপ্ত সাহস, কথায় কত জোর, এমন মেয়ে আত্মহত্যা করবে এটা বিশ্বাস করতে পারছি না, এটা নিশ্চিত খুন।”
ঢাকা/মিজান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর তদন ত অবস থ সহপ ঠ
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।
এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।
অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।
আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগেএ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।
সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।
এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।
আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে