সোনারগাঁয়ে যুবদলের দুই নেতার চাঁদাবাজির টার্গেট মাসে কোটি টাকা
Published: 28th, July 2025 GMT
সোনারগাঁয়ে যুবদলের দুই নেতার চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ব্যবসায়ী ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। উপজেলা যুবদলের আহবায়ক শহিদুর রহমান স্বপণ ও যুগ্ম আহবায়ক আশরাফ প্রধান দুই শিল্প প্রতিষ্ঠান দখল করে এ চাঁদাবাজিতে মেতে উঠেছেন।
পাশাপাশি মহাসড়কে চলাচলরত বিভিন্ন পরিবহনেও চাঁদাবাজি করে থাকেন। এ ঘটনায় যুবদলের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে দাবি করেছেন নেতাকর্মীরা।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক শহিদুর রহমান স্বপন কাঁচপুর শিল্পাঞ্চল ও আশরাফ প্রধান মেঘনা শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানা, মহাসড়কে চাঁদাবাজি ও অপকর্মের মূল কারিগর।
তারা দুজন মাসিক কোটি টাকার চাঁদার টার্গেট নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে প্রতিদিন কাঁচপুরের ফুটপাত ও মেঘনা নিউটাউনসহ মহাসড়কের আশপাশের স্থাপনায় হানা দিয়ে চাঁদা আদায় করছে। ভূক্তভোগীরা তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
স্থানীয়দের তথ্যমতে ও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, সোনারগাঁ উপজেলার যুবদলের আহবায়ক পদে থেকেও শহিদুর রহমান স্বপন তার বড় ভাই আওয়ামীলীগের নেতা রতনের ছত্রছায়ায় বিগত ১৭ বছর একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন। সরকার পতনের পর সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক মো.
কাঁচপুর স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসীদের নিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানিসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। তবে সম্প্রতি রেজাউল করিমকে টপকিয়ে জেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতার দিকে ঝুঁকেছেন এ দুই নেতা।
কাঁচপুর শিল্পাঞ্চলের ভুক্তভোগী রোমান মিয়া জানান, আমার জানামতে ১০ থেকে ১২ টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান-সহ ফুটপাতে গড়ে উঠা শতাধিক দোকান থেকে স্বপনের নেতৃত্বে ডন বজলু ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক টাকা চাঁদা উত্তোলন করে থাকে। পাশাপাশি কোম্পানির কর্মকর্তাদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে অবৈধ ভাবে চাঁদা নিয়ে থাকে তার বাহিনী।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক বিএনপি নেতা জানিয়েছেন, শহিদুর রহমান স্বপন সুবিধাবাদী নেতা। স্বৈরাচারী সরকারের আমলে তার বড় ভাই ছিল আওয়ামীলীগ নেতা। তখন তার শেল্টারে স্বপন সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজি করেছে। বর্তমানে কাঁচপুরের লিটন হত্যা মামলার প্রধান আসামী ডন বজলুর ছত্রছায়ার অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্বপনের নেতৃত্বে কাঁচপুর শিল্প এলাকার অলিম্পিক ব্যাটারি কারখানা, কিউট কোম্পানি, অনন্ত গার্মেন্টস, এসএফ গার্মেন্টস, বেঙ্গল ফুড, ইপিলিয়ন গার্মেন্টসসহ প্রায় ২৫ টি শিল্প প্রতিষ্ঠান দখল করে প্রতি মাসে ২৭ লক্ষ টাকা চাঁদা নেন।
এছাড়াও কাঁচপুর সেনপাড়ায় একাধিক ড্রেজার থেকেও সে চাঁদাবাজি করে একই কায়দায় মহাসড়কে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা ও দোকানপাট থেকে তার লোকজন প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা চাঁদা উত্তোলন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে একই কায়দায় মেঘনা শিল্পাঞ্চল এলাকায় আরেক যুবদল নেতা আশরাফ প্রধানও চাঁদাবাজির নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। তার আপন ভাই শাহাবুদ্দিন প্রধান আওয়ামীলীগ নেতা ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র হত্যার অন্যতম আসামী।
৫ আগষ্টের আগে তার ভাই ও আওয়ামীলীগ নেতা শামসুজ্জামান সামসু'র সাথে আঁতাত করে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান, নদীতে চাঁদাবাজি ও দখলবাজি করতেন। বর্তমানে আশরাফ প্রধানের ছত্রছায়ায় অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, যুবদল নেতা আশরাফ প্রধান মেঘনা শিল্পাঞ্চলে তার আপন ভাই আওয়ামীলীগ নেতা শাহাবুদ্দিনকে শেল্টার দিয়ে হাসেম প্রধান, ইউসুফ, অনিক, মামুন, শিয়ান উদ্দিন ও আকাশসহ ৩০-৪০ জনের একটি সন্ত্রাসী চক্রের মাধ্যমে মেঘনা শিল্পাঞ্চলের মাগুরা পেপার মিলস, স্যামসাং পাওয়ার প্লান্ট, আল মোস্তফা, আনন্দ শিপইয়ার্ড, বাংলা ডগইয়ার্ড, ফ্রেশ ট্রান্সপোর্ট, লাকি শিপইয়ার্ডসহ প্রায় ২০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান দখল করে চাঁদাবাজি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এমনকি তার সহযোগী হাসেম প্রধানের নেতৃত্বে মহাসড়কে ডাকাতচক্র ও আওয়ামীলীগ কর্মী নজরুল ইসলাম, মামুন ও বাবু গ্যাস চুরি করে ৩টি চুনা কারখানা চালাচ্ছেন। পাশাপাশি মেঘনা নদীতে জাহাজ থেকে অবৈধভাবে চোরাই তেলের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
মেঘনা শিল্পাঞ্চলের দোকান মালিক মিন্টু মিয়া ও দোকানদার ফয়সাল মিয়া জানান, আমাদের দোকানসহ অন্যান্য দোকানদারদের থেকে আশরাফ প্রধানের নেতৃত্বে একাধিক ব্যক্তি ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৪০০ টাকা করে চাঁদা নিয়ে থাকেন।
চাঁদা দিতে রাজি না হলে দোকান উচ্ছেদ ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এছাড়াও তারা নিউটাউন মসজিদ মার্কেটের টাকা উঠিয়ে মসজিদের উন্নয়নের কাজে না দিয়ে নিজেরা ভাগবাটোয়ারা করে খেয়ে ফেলেন।
মেঘনা নিউটাউন মসজিদ মার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, ৫ আগষ্টের পর থেকে তারা ভয়ে রয়েছেন। চাঁদা না দিলে উচ্ছেদের হুমকি দেওয়া হয়। আশরাফ প্রধানের লোকজন প্রতিদিন ২শ থেকে ৪০০ টাকা চাঁদা নিয়ে যায়।
যোগাযোগ করা হলে সোনারগাঁ উপজেলা যুবদলের আহবায়ক শহিদুর রহমান স্বপন চাঁদাবাজির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, মানুষ ঈর্ষান্বিত হয়ে অপ প্রচার করছেন। চাঁদাবাজির সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
সোনারগাঁ যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক আশরাফ প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি। তবে পরে কথা বলবেন বলে ফোন রেখে দেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের আহবায়ক সাদেকুর রহমান সাদেক বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। তবে অভিযোগ সত্য হলে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স ন রগ ও য বদল ন র য়ণগঞ জ আওয় ম ল গ ন ত এক ধ ক স ন রগ উপজ ল ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট সময়কালে ফ্যাসিবাদী শক্তি নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে, এসবির প্রতিবেদন
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কর্মসূচি পালনকালে ফ্যাসিবাদী শক্তি অনলাইন-অফলাইনে প্রচারণা চালিয়ে সারা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)।
গতকাল সোমবার এসবির এক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনটি পুলিশের সব বিভাগকে পাঠিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে এসবি। এসবির একটি সূত্র প্রথম আলোকে এই প্রতিবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সামাজিক সংগঠনগুলো ১ জুলাই থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এই ধারাবাহিকতায় ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত কর্মসূচি পালনের সময়কাল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে বিতাড়িত ফ্যাসিবাদী শক্তি অনলাইন-অফলাইনে প্রচারণা চালিয়ে দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টি, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির কর্মসূচিতে বাধা প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা চালাতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ও জানমাল রক্ষায় পুলিশের বিভিন্ন বিভাগকে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে এসবি।
নির্দেশনাগুলো হলো ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা। ৮ আগস্ট পর্যন্ত নিয়মিত সন্দেহজনক ব্যক্তিসহ মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও অন্যান্য যানবাহন তল্লাশি করা। বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশন ও বিমানবন্দরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল অভিযান পরিচালনা করা। মোবাইল প্যাট্রোল জোরদার করা। গুজব রোধে সাইবার পেট্রোলিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা।
এ ছাড়া কোনো অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকলে তা তাৎক্ষণিকভাবে এসবিকে অবহিত করার কথাও বলা হয়েছে।