‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার
Published: 29th, July 2025 GMT
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের (রিভিউ) ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। আজ মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ পরবর্তী ওই দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ১৮ মে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ শুনানির জন্য ১ জুলাই দিন ধার্য করেছিলেন। ধার্য তারিখে বিষয়টি শুনানির জন্য রিভিউ আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ১৫ জুলাই পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। আজ বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। পাশাপাশি জেলা জজদের পদক্রম আট ধাপ উন্নীত করে সচিবদের সমান করা হয়।
আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।
ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ২০১৭ সালে পৃথক আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রের ৯০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পক্ষভুক্ত হন। পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের ওপর গত ২৭ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়।
আজ আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। রিট আবেদনকারী পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম শুনানিতে অংশ নেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়।
সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে—এমন উল্লেখ করে এর বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো.
রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালে করা আবেদনের ওপর শুনানি চলছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আপ ল ব ভ গ র শ ন ন র জন য আইনজ ব
এছাড়াও পড়ুন:
শিল্পের আয়নায় অতীতের ছবি
বিগত শতকের ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৫, এই দুই দশক ছিল দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসের খুবই তাৎপর্যময় ঘটনাবহুল সময়। একই সঙ্গে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলেও এই কালপর্বে সমাজতন্ত্রের পতনসহ এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যা মানুষের বিশ্বাস, আদর্শ, চিন্তা, অভিব্যক্তি ও জীবনাচরণে নানাভাবে প্রভাব রেখেছে। শিল্পীদের ভাবনায় সমকাল কেমনভাবে তার সৃজনকলায় উদ্ভাসিত হয়েছিল, তার একঝলক দেখে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হলো কলাকেন্দ্রে।
গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন বিকেলে লালমাটিয়ার ডি ব্লকের ৯/৪ নম্বর বাড়ির কলাকেন্দ্রে শুরু হলো ‘ফিরে দেখা’ নামে ১৪ শিল্পীর যৌথ শিল্পকর্ম প্রদর্শনী।
এই প্রদর্শনীতে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ পর্বে যাঁরা চারুকলার শিক্ষার্থী ছিলেন, তাঁরা পরবর্তীকালে ‘ঢাকা পেইন্টার্স’, ‘সময় গ্রুপ’সহ বেশ কিছু গোষ্ঠী গড়ে তুলেছিলেন। তাঁদের মধ্য থেকেই কাজী রাকিব, দীপা হক, ঢালী আল মামুন, দিলারা বেগম জলি, নিসার হোসেন, শিশির ভট্টাচার্য, সাইদুল হক জুইস, ফারেহা জেবা, রতন মজুমদার, হাবিবুর রহমান, রুহুল আমিন কাজল, লালা রুখ সেলিম, তৌফিকুর রহমান ও ওয়াকিলুর রহমানের প্রায় ৬০টি শিল্পকর্ম নিয়ে এই ‘ফিরে দেখা’ প্রদর্শনী।
শিল্পীরা মূলত আশি ও নব্বই দশকে যেসব কাজ করেছিলেন, তার কিছু কিছু নমুনা রয়েছে এখানে। অধিকাংশ কাজই শিল্পীদের ব্যক্তিগত সংগ্রহের। ছাপচিত্র, জলরং, ড্রয়িং, মিশ্রমাধ্যম, অ্যাক্রিলিকসহ বিভিন্ন মাধ্যমের চিত্রকলা ও ভাস্কর্য রয়েছে প্রদর্শনীতে। প্রদর্শনী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত সবার জন্য খোলা থাকবে।
কলাকেন্দ্রের প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রচলিত অর্থে কোনো প্রধান বা বিশেষ অতিথি থাকেন না। প্রদর্শনীর কাজ নিয়ে এক বা একাধিক আলোচক আলোচনা করেন। সূচনা বক্তব্যে কলাকেন্দ্রের পরিচালক শিল্পী ওয়াকিলুর রহমান বলেন, স্বাধীনতা–পরবর্তীকালে দুই দশকজুড়ে সমাজ ও সমকালীন ভাবনা ও মনোভাব শিল্পীদের কাজে যেভাবে প্রকাশ পেয়েছিল, তার একটি খণ্ডচিত্র এই প্রদর্শনীতে পাওয়া যাবে।
‘ফিরে দেখা’ প্রদর্শনীটির মূল আলোচক ছিলেন অধ্যাপক আবুল মনসুর। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বিগত সময়ের শিল্পীদের কাজ দেখা ও পর্যালোচনার সুযোগ কম। সরকারিভাবেও তেমন উদ্যোগ নেই। ফলে নতুন প্রজন্ম বিগত শিল্পীদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পর্কে জানতেই পারে না। দেশের ইতিহাসে ১৯৭০ থেকে ১৯৯০ এক বিশেষ অধ্যায়। এ সময় রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তরের প্রভাব শিল্পকলায় প্রতিফলিত হয়েছিল। সে সময়ের তরুণ শিল্পীরা বৈশ্বিক ও স্থানীয় পরিবর্তন, ইতিহাস ঐতিহ্য, আপন সংস্কৃতিকে তাঁদের নিজেদের মতো করে ধারণ করেছিলেন। তাঁরা যে শিল্পভাষা, ভাবনা, উপকরণ, উপস্থাপনা নিয়ে কাজ করেছিলেন, পরবর্তীকালে তা আমাদের চিত্রকলায় এক নতুন গতিমুখ তৈরি করেছে। সেই তরুণদের অনেকেই তাঁদের কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন। নিজের কাজে অনেক পরিণত হয়েছেন। খ্যাতি অর্জন করে বর্তমানে দেশের অন্যতম শিল্পী হয়ে উঠেছেন। পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পীদের নানাভাবে পথ দেখিয়েছেন।’
শিল্পের আয়নায় অতীতকে দেখার সুযোগ পাবেন দর্শকেরা এই প্রদর্শনীতে এলে।