যুদ্ধাপরাধী শক্তিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা জুলাই অভ্যুত্থানের সাংঘর্ষিক : কমরেড রতন
Published: 1st, August 2025 GMT
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, বাংলাদেশের লড়াকু জনগণ কোনো অন্যায় জবরদস্তি, দুঃশাসন মেনে নেয় না।
কোনো স্বৈরাচারকেই ক্ষমতায় থাকতে দেয় না। বুকের রক্ত ঢেলে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, জীবন দিয়ে জীবনের মর্যাদা অংশগ্রহণ করে, তা আবারও প্রমাণ করেছে ‘২৪ সালের জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে।
‘৫২-র ভাষা আন্দোলন, ‘৬২-র শিক্ষার আন্দোলন, ‘৬৬-র ৬ দফা আন্দোলন ‘৬৯-র এর গণ অভ্যুত্থান ‘৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে অনিবার্য করে তুলেছিল। স্বাধীনতার পর থেকে বিগত ৫৩ বছর স্বাধীনতার পর থেকে বিগত ৫৩ বছর ধরে শাসকরা ধনিকশ্রেণির স্বার্থে দেশ পরিচালনার কারণে মুক্তিযুদ্ধের অপূর্ণ আকাক্সক্ষা মানুষকে বারবার আন্দোলনে পথে নামিয়েছে।
একদলীয় শাসন, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইÑমূলত, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। এদেশের মানুষ অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে নাই বলে ’৯০ ও ২০২৪ সালে অভ্যুত্থান করেছে।
কিন্তু জনগণ জীবন ও রক্তের বিনিময়ে যে স্বৈরাচারকে পরাজিত করে পরবর্তীতে শাসকেরা পরাজিতদের আশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এবং তাদের পথই অনুসরণ করে। এক দখলবাজের পরিবর্তে আর এক দখলবাজ, এক দুর্নীতিবাজের পরিবর্তে আর একজন ক্ষমতায় আসীন হয়। তাই অভ্যুত্থানের স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষা বারবার ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ১ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসাবে নারায়ণগঞ্জ জেলার উদ্যোগে আয়োজিত গণসামবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
শুক্রবার (১ আগস্ট) বিকালে ৩টায় চাষাড়া কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এ গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে শহরে গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্যসচিব আবু নাঈম খান বিপ্লবের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ১৫ নং ওর্য়াডের সাবেক কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ^াস, বাংলাদেশ জাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সোলেমান দেওয়ান, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য এস এম কাদির।
এ সময় কমরেড রতন আরও বলেন, আগামী ৫ আগস্ট জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি হবে। অভ্যুত্থানের ঠিক এক বছর যেতে না যেতেই অভ্যুত্থানের আকাঙখা পদদলিত করা শুরু হয়েছে। সারা দেশে জোরপূর্বক চাঁদাবাজি-তোলাবাজি পরিলক্ষিত হচ্ছে। সে সময় মানুষ স্লোগান তুলেছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, লুটপাট-দূর্নীতি, গুম-খুন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, কর্তৃত্ববাদ ও স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে।
মানুষ চেয়েছিল এসব থেকে মুক্ত একটা সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাজ। কিন্তু বছর না পেরোতেই মানুষের সেই আশা ক্রমশ: ফিকে হয়ে আসছে। এক বছর পার হওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বক্তব্য-বিবৃতি, নানা পদক্ষেপ; যথা বিচার, সংস্কার, নির্বাচনের কাজে মনোযোগ না দিয়ে এখতিয়ার বর্হিভূতভাবে চট্রগ্্রাম বন্দর টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেওয়া, রাখাইনে করিডোর প্রদান, তুরস্ককে অস্ত্র তৈরির কারখানা নির্মাণের অনুমতি দেওয়া ও স্টার লিংকের সাথে চুক্তি ইত্যাদি কাজ করায় জনগণের মধ্যে সন্দেহ ও অবিশ^াসের জন্ম দিচ্ছে।
অন্যদিকে সরকার এখনও পর্যন্ত আহত-নিহতদের একটা পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে পারল না, যা গোটা জাতির জন্য দুঃখজনক। আহতদের যথাযথ চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে চলছে নানা তালবাহানা।
তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনের পর থেকেই আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সুযোগ নিয়ে সারা দেশে মব সন্ত্রাস সংঘটিত হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এই মবকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করে বরং কিছু ক্ষেত্রে উসকানোর ঘটনাও দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। এই মবের কাছে সরকার জিম্মি হয়ে আছে। জুলাই আন্দোলনের অন্যতম অগ্রণী শক্তি ছিলেন এদেশের নারীরা। অথচ সেই নারীদের উপরে আক্রমণ নেমে এসেছে সবার আগে।
উগ্র ধর্মীয় ফ্যাসিস্ট শক্তি সারা দেশেই নারীদের স্বাধীন চলাফেরার উপর আক্রমণ নামিয়ে এনেছে, হামলা হয়েছে আদিবাসীদের উপর ও মাজারে, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে। এসকল পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করা এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ধ্বংস করার ঘটনা ঘটে চলেছে।
মুক্তিযুদ্ধ এই জাতির সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা। এক্যমত্যের নামে বিভিন্ন দলের মতামত উপেক্ষা করে জুলাই সনদের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সংবিধান থেকে ৪ রাষ্ট্রীয় মূলনীতি বাদ দেয়ার পরিকল্পনা করছে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী যুদ্ধাপরাধী শক্তিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হচ্ছে, জুলাই অভ্যুত্থানের আন্দোলনের চেতনার সাথে যা সাংঘর্ষিক।
এ সময় অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলেন, পূর্ববর্তী হাসিনা সরকারের মতো এই সরকারের নানা কুশীলবদের বিরুদ্ধেও শত শত কোটি টাকা লোপাট, চাঁদাবাজির অভিযোগ আসছে। ক্ষমতার অপব্যবহার, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, বিশেষ রাজনৈতিক দলকে তোষণ ইত্যাদি নানা কিছু ঘটিয়ে এরা জুলাই অভ্যুত্থানের মূল স্পিরিটের বিপরীতে হাঁটা শুরু করেছেন।
নেতৃবৃন্দ সরকারের এক বছরের কাজের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান। নেতৃবৃন্দ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা বিঘ্ন হতে পারে এমন পদক্ষেপ গ্রহন থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারের প্রতি নেতৃবৃন্দ জোর দাবি জানান।
নারায়ণগঞ্জে ডিএনডি জলাবদ্ধতা নিরসন প্রসঙ্গে নেতৃবৃন্দ বলেন- কথার ফুলঝুড়ি নয়, প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের সোয়ারেজের কাজের দীর্ঘ সূত্রিতায় মানুষ ভয়াবহ বর্ষায় ভয়াবহ জলাবন্ধতায় পড়েছে। দ্রুত কাজ শেষ করার দাবি জানান।
বিভিন্ন শিল্প কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই চলছে, অতর্কিতে কারখানা বন্ধ করা হচ্ছে, শ্রমিকদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। কারখানায় স্থিতিশীলতার জন্য এগুলো বন্ধ করার জন্য নেতৃবৃন্দ দাবি জানান।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ জ ল র স ব ধ নত সরক র র এক বছর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, ‘‘বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি তোলা উচিত, চব্বিশ এবং আগের গণহত্যা, নির্যাতন-নিপীড়ন, ভোটাধিকার হরণ—এসবের জন্য যদি আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হতে পারে। তাহলে একাত্তরে গণহত্যা, ধর্ষণ, নারকীয় হত্যাযজ্ঞের জন্য জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। তাদের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করতে হবে। একই অপরাধে দুই রকমের বিচার হতে পারে না।’’
শনিবার (১ নভেম্বর) রাজধানী ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আয়োজনে ‘স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য’ শীর্ষক মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন: দুলু
নৌকা ডুবেছে, শাপলা ভাসবে: এনসিপির তুষার
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘‘যদি আওয়ামী লীগের মতো একই ধরনের অপরাধে জামায়াতের বিচার না হয়, তাহলে সেটা হবে ইতিহাসের প্রতি অবিচার।’’
তিনি বলেন, ‘‘আজকে জামায়াত তাদের পোশাক-চেহারা, আচরণ পাল্টে নতুন রূপে হাজির হয়েছে। তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈঠক করছে। কিন্তু, মূল উদ্দেশ্য বিএনপিকে আক্রমণ করা। এই বহুরূপীদের চেহারা জনগণ চিনে ফেলেছে।’’
বিএনপির এই নেতা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে বিএনপিই একমাত্র শক্তি। অথচ এই শক্তিকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র চলছে। সরকার নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে নির্বাচনের নামে প্রক্রিয়া চালালেও জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
আলাল আরো বলেন, ‘‘বর্তমান সরকার মনে করেছে, দেশের সব অনাচারের মূলে সংবিধান। কিন্তু সমস্যার মূল সংবিধান নয়—ক্ষমতার অপব্যবহার ও জনগণের ভোটাধিকার হরণ। শেখ হাসিনার ১৬-১৭ বছরের শাসনে এই অন্যায়, নির্যাতন, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারই হয়েছে সবচেয়ে বড় বাস্তবতা।’’
ঢাকা/রায়হান/রাজীব