গাজায় জাতিগত নিধন অভিযান চালানোর ইসরায়েলি পরিকল্পনা দ্রুতগতিতেই এগোচ্ছে, হয়তো প্রত্যাশার চেয়ে বেশি দ্রুত। পদ্ধতিগতভাবে পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞের পাশাপাশি চলছে গাজার মানুষকে সুচিন্তিতভাবে অনাহারে রাখা। 

এই অনাহারে রাখার নীতির ফল দ্রুতই কার্যকর, কারণ ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে মৃত্যুর সংখ্যাটা বোমাবর্ষণে নিহত মানুষের সংখ্যার চেয়ে তেমন পিছিয়ে পড়ছে না। খাবারের অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় যেসব মানুষ মারা পড়েননি, তাঁদের তো অনাহারে প্রাণ ত্যাগ করার আশঙ্কা অনেক বেশি।

বলতেই হয় যে ইচ্ছা করে অনাহারে রাখার হাতিয়ারটা বেশ কাজ করছে। গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) তো একটা ট্র্যাজিক বা বিয়োগান্ত সাফল্যে রূপ নিয়েছে। শুধু জিএইচএফ বিতরণকৃত খাবারের থলে সংগ্রহের জন্য অপেক্ষারত শত শত গাজাবাসীই গুলিতে নিহত হননি, বরং যাঁরা খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে যেতে পারেননি, তাঁরাও অনাহারে মারা যাচ্ছেন। আর তাঁদের বেশির ভাগেই নবজাতক ও শিশু।

আরও পড়ুনক্ষুধা আর ভয়ের মধ্যে যেভাবে বর্ণমালা শিখছে গাজার শিশুরা০৭ জুলাই ২০২৫

স্থানীয় গণমাধ্যম গাজার চিত্র ইসরায়েলি জনগণের কাছ থেকে আড়াল করে যে অপরাধ করেছে, তা কখনোই ভোলা হবে না বা ক্ষমা পাবে না। অথচ সারা দুনিয়া গাজার ছবিগুলো দেখছে। আর এসব ছবি মনে করিয়ে দিচ্ছে হলোকাস্টের ছবিগুলোর কথা। এগুলো লুকানোর মানেই হলো যা ঘটছে, তা অস্বীকার করা।

নবজাতক ও শিশুদের কঙ্কালসার দেহগুলোর কিছু জীবিত আর কিছু মৃত। এসব কঙ্কালসার দেহের হাড্ডিগুলো বেরিয়ে পড়েছে চিমসে যাওয়া মাংসপেশি ঠেলে, এ তো মরণেরই প্রতিচ্ছবি। এই দেহগুলো হাসপাতালের মেঝেতে বা খোলা বিছানায় পড়ে আছে বা গাধায় টানা গাড়িতে করে টেনে নেওয়া হচ্ছে। অথচ ইসরায়েলে বহু মানুষ এগুলো অস্বীকার করছে, সন্দেহ পোষণ করছে এসব ছবির সত্যতা নিয়ে। অনেকে আবার গর্বে উল্লসিত হচ্ছে। 

গাজাবাসীকে সুচিন্তিতভাবে অনাহারে রাখার কাজটি ইসরায়েলিদের কাছে একটি বৈধ ও গ্রহণযোগ্য হাতিয়ার বানিয়ে তোলা হচ্ছে হয় প্রকাশ্য সমর্থন, নয় শীতল নীরবতার মাধ্যমে। আর এটাই তো গাজায় চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের এযাবৎকালের সবচেয়ে দানবীয় পর্যায়। পাশাপাশি এটাই হলো একমাত্র বিষয়, যার জন্য কেউ কোনো যৌক্তিকতা, অজুহাত বা ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারেনি। ইসরায়েলের প্রচার-প্রচারণা যন্ত্রের সীমাহীন প্রয়াস সত্ত্বেও তা সম্ভব হয়নি। 

কয়েক দিন আগে উসুফ আল-সাফাদি নামের এক নবজাতক মারা গেল তার মা-বাবা দুধের বিকল্প একটু কিছু জোগাড় করতে না পারায়। আর এ জায়গা থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টার গাড়ি চালানো দূরত্বে ইসরায়েলি চ্যানেল টুয়েলভ একটি রান্নার অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছিল। বলতেই হয়, অনুষ্ঠানটি চমৎকার রেটিং পেয়েছে!

পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, অনাহার এখন সর্বত্র বিরাজমান, সবাই এতে আক্রান্ত। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাবাহিনীর (আইডিএফ) হামলায় এখনো গাজার যেসব সাংবাদিক মারা যাননি, তাঁরা জানাচ্ছেন যে দু–তিন দিন ধরে তাঁরা কিছু খেতে পাননি। নাসের হাসপাতালে একজন কানাডীয় চিকিৎসক বলেন, বিগত দুই দিনে তিনি কেবল এক বাটি ডাল খেয়েছেন। এ রকম অবস্থায় তাঁর পক্ষে আহত ও অসুস্থ মানুষদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া আর সম্ভব হবে না। 

আল-জাজিরার একটি দল এক তরুণকে অনুসরণ করে। তরুণটি তার বাচ্চাদের জন্য খাবারের খোঁজ করছিল। অনেক খোঁজাখুঁজির পর একটা দোকানে দুই ব্যাগ ইসরায়েলি আটা ও এক বোতল তেলও পেয়েছিল। 

আরও পড়ুনগাজার এক শিশুর শেষ ইচ্ছা০৯ নভেম্বর ২০২৪

কিন্তু প্রতি ব্যাগের দাম কয়েক হাজার টাকা। বেচারা খালি হাতে ফিরে আসে তার অনাহারী বাচ্চাদের কাছে। এক টিভি স্টুডিও থেকে অনাহারে মৃত্যুর তিনটি ধাপের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো যে এই লোকের বাচ্চাগুলো দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে; মানে পরের ধাপে গেলে মৃত্যু অনিবার্য।

কোনো সন্দেহ নেই, এভাবে চাপিয়ে দেওয়া অনাহার চলমান যুদ্ধকে ইসরায়েলের সবচেয়ে ভয়ংকর যুদ্ধে পরিণত করেছে এবং অবশ্যই সবচেয়ে বড় অপরাধীতেও। আরও যে খারাপ কাজটি ইসরায়েল করছে, এই ভয়াবহ কাজকে চরম নির্লিপ্ততার সঙ্গে গ্রহণ করা। 

কয়েক দিন আগে উসুফ আল-সাফাদি নামের এক নবজাতক মারা গেল তার মা-বাবা দুধের বিকল্প একটু কিছু জোগাড় করতে না পারায়। আর এ জায়গা থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টার গাড়ি চালানো দূরত্বে ইসরায়েলি চ্যানেল টুয়েলভ একটি রান্নার অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছিল। বলতেই হয়, অনুষ্ঠানটি চমৎকার রেটিং পেয়েছে!

গিডিয়ন লেভি ইসরায়েলি সাংবাদিক। হারেৎজ থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন ইসর য় ল অন হ র

এছাড়াও পড়ুন:

ইরান পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আরো শক্তিশালী করে পুনর্নির্মাণ করবে

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জানিয়েছেন, তেহরান তার পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে ‘আরো শক্তিশালী করে’ পুনর্নির্মাণ করবে। রবিবার সরকারি সংবাদমাধ্যমকে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।

ইরানের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, তার দেশ পারমাণবিক অস্ত্রের সন্ধান করছে না।

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, জুন মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে স্থাপনাগুলোতে বোমা হামলা চালিয়েছিল সেগুলো পুনরায় চালু করার চেষ্টা করলে তেহরান ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে নতুন করে হামলার নির্দেশ দেবেন।

ইরানের প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে বলেন, “ভবন ও কারখানা ধ্বংস আমাদের জন্য কোনো সমস্যা তৈরি করবে না, আমরা আরো শক্তির সাথে পুনর্নির্মাণ করব।”

জুনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়েছিল। ওই সময় ওয়াশিংটন বলেছিল, স্থাপনাগুলো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির লক্ষ্যেএকটি কর্মসূচির অংশ ছিল। তবে তেহরান জানিয়েছিল, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে বেসামরিক উদ্দেশ্যে।

ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমের প্রসঙ্গে পেজেশকিয়ান বলেছেন, “এগুলো জনগণের সমস্যা সমাধানের জন্য, রোগের জন্য, জনগণের স্বাস্থ্যের জন্য।”

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ