ক্ষুধায় গাজার শিশুর মৃত্যু আর ইসরায়েলি টিভির রান্নার অনুষ্ঠান
Published: 2nd, August 2025 GMT
গাজায় জাতিগত নিধন অভিযান চালানোর ইসরায়েলি পরিকল্পনা দ্রুতগতিতেই এগোচ্ছে, হয়তো প্রত্যাশার চেয়ে বেশি দ্রুত। পদ্ধতিগতভাবে পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞের পাশাপাশি চলছে গাজার মানুষকে সুচিন্তিতভাবে অনাহারে রাখা।
এই অনাহারে রাখার নীতির ফল দ্রুতই কার্যকর, কারণ ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে মৃত্যুর সংখ্যাটা বোমাবর্ষণে নিহত মানুষের সংখ্যার চেয়ে তেমন পিছিয়ে পড়ছে না। খাবারের অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় যেসব মানুষ মারা পড়েননি, তাঁদের তো অনাহারে প্রাণ ত্যাগ করার আশঙ্কা অনেক বেশি।
বলতেই হয় যে ইচ্ছা করে অনাহারে রাখার হাতিয়ারটা বেশ কাজ করছে। গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) তো একটা ট্র্যাজিক বা বিয়োগান্ত সাফল্যে রূপ নিয়েছে। শুধু জিএইচএফ বিতরণকৃত খাবারের থলে সংগ্রহের জন্য অপেক্ষারত শত শত গাজাবাসীই গুলিতে নিহত হননি, বরং যাঁরা খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে যেতে পারেননি, তাঁরাও অনাহারে মারা যাচ্ছেন। আর তাঁদের বেশির ভাগেই নবজাতক ও শিশু।
আরও পড়ুনক্ষুধা আর ভয়ের মধ্যে যেভাবে বর্ণমালা শিখছে গাজার শিশুরা০৭ জুলাই ২০২৫স্থানীয় গণমাধ্যম গাজার চিত্র ইসরায়েলি জনগণের কাছ থেকে আড়াল করে যে অপরাধ করেছে, তা কখনোই ভোলা হবে না বা ক্ষমা পাবে না। অথচ সারা দুনিয়া গাজার ছবিগুলো দেখছে। আর এসব ছবি মনে করিয়ে দিচ্ছে হলোকাস্টের ছবিগুলোর কথা। এগুলো লুকানোর মানেই হলো যা ঘটছে, তা অস্বীকার করা।
নবজাতক ও শিশুদের কঙ্কালসার দেহগুলোর কিছু জীবিত আর কিছু মৃত। এসব কঙ্কালসার দেহের হাড্ডিগুলো বেরিয়ে পড়েছে চিমসে যাওয়া মাংসপেশি ঠেলে, এ তো মরণেরই প্রতিচ্ছবি। এই দেহগুলো হাসপাতালের মেঝেতে বা খোলা বিছানায় পড়ে আছে বা গাধায় টানা গাড়িতে করে টেনে নেওয়া হচ্ছে। অথচ ইসরায়েলে বহু মানুষ এগুলো অস্বীকার করছে, সন্দেহ পোষণ করছে এসব ছবির সত্যতা নিয়ে। অনেকে আবার গর্বে উল্লসিত হচ্ছে।
গাজাবাসীকে সুচিন্তিতভাবে অনাহারে রাখার কাজটি ইসরায়েলিদের কাছে একটি বৈধ ও গ্রহণযোগ্য হাতিয়ার বানিয়ে তোলা হচ্ছে হয় প্রকাশ্য সমর্থন, নয় শীতল নীরবতার মাধ্যমে। আর এটাই তো গাজায় চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের এযাবৎকালের সবচেয়ে দানবীয় পর্যায়। পাশাপাশি এটাই হলো একমাত্র বিষয়, যার জন্য কেউ কোনো যৌক্তিকতা, অজুহাত বা ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারেনি। ইসরায়েলের প্রচার-প্রচারণা যন্ত্রের সীমাহীন প্রয়াস সত্ত্বেও তা সম্ভব হয়নি।
কয়েক দিন আগে উসুফ আল-সাফাদি নামের এক নবজাতক মারা গেল তার মা-বাবা দুধের বিকল্প একটু কিছু জোগাড় করতে না পারায়। আর এ জায়গা থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টার গাড়ি চালানো দূরত্বে ইসরায়েলি চ্যানেল টুয়েলভ একটি রান্নার অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছিল। বলতেই হয়, অনুষ্ঠানটি চমৎকার রেটিং পেয়েছে!পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, অনাহার এখন সর্বত্র বিরাজমান, সবাই এতে আক্রান্ত। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাবাহিনীর (আইডিএফ) হামলায় এখনো গাজার যেসব সাংবাদিক মারা যাননি, তাঁরা জানাচ্ছেন যে দু–তিন দিন ধরে তাঁরা কিছু খেতে পাননি। নাসের হাসপাতালে একজন কানাডীয় চিকিৎসক বলেন, বিগত দুই দিনে তিনি কেবল এক বাটি ডাল খেয়েছেন। এ রকম অবস্থায় তাঁর পক্ষে আহত ও অসুস্থ মানুষদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া আর সম্ভব হবে না।
আল-জাজিরার একটি দল এক তরুণকে অনুসরণ করে। তরুণটি তার বাচ্চাদের জন্য খাবারের খোঁজ করছিল। অনেক খোঁজাখুঁজির পর একটা দোকানে দুই ব্যাগ ইসরায়েলি আটা ও এক বোতল তেলও পেয়েছিল।
আরও পড়ুনগাজার এক শিশুর শেষ ইচ্ছা০৯ নভেম্বর ২০২৪কিন্তু প্রতি ব্যাগের দাম কয়েক হাজার টাকা। বেচারা খালি হাতে ফিরে আসে তার অনাহারী বাচ্চাদের কাছে। এক টিভি স্টুডিও থেকে অনাহারে মৃত্যুর তিনটি ধাপের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো যে এই লোকের বাচ্চাগুলো দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে; মানে পরের ধাপে গেলে মৃত্যু অনিবার্য।
কোনো সন্দেহ নেই, এভাবে চাপিয়ে দেওয়া অনাহার চলমান যুদ্ধকে ইসরায়েলের সবচেয়ে ভয়ংকর যুদ্ধে পরিণত করেছে এবং অবশ্যই সবচেয়ে বড় অপরাধীতেও। আরও যে খারাপ কাজটি ইসরায়েল করছে, এই ভয়াবহ কাজকে চরম নির্লিপ্ততার সঙ্গে গ্রহণ করা।
কয়েক দিন আগে উসুফ আল-সাফাদি নামের এক নবজাতক মারা গেল তার মা-বাবা দুধের বিকল্প একটু কিছু জোগাড় করতে না পারায়। আর এ জায়গা থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টার গাড়ি চালানো দূরত্বে ইসরায়েলি চ্যানেল টুয়েলভ একটি রান্নার অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছিল। বলতেই হয়, অনুষ্ঠানটি চমৎকার রেটিং পেয়েছে!
● গিডিয়ন লেভি ইসরায়েলি সাংবাদিক। হারেৎজ থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন ইসর য় ল অন হ র
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।
এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।
অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।
আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগেএ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।
সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।
এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।
আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে