গত বছরের ৪ আগস্ট শেরপুরের রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল তিন তরুণের রক্তে। সবুজ মিয়া (১৮) নামের একজন গুলিতে এবং মাহবুবুর রহমান (২১) ও শারদুল আশিষ (২১) গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হন। গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেলেও সেই ক্ষত আজও দগদগে। তবে এক বছরেও এসব ঘটনার বিচার হয়নি। জড়িতদের শাস্তি ও নিরপরাধ আসামিদের মুক্তির বিনিময়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিয়েছে নিহত তরুণদের পরিবারগুলো।

সেদিন নিহত তিনজনই ছাত্র ও পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। সবুজ মিয়া শ্রীবরদী উপজেলার বাসিন্দা ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী; মাহবুবুর রহমান শেরপুর সদর উপজেলার চৈতনখিলা এলাকার বাসিন্দা ও শেরপুর সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী এবং শারদুল আশিষ ঝিনাইগাতী উপজেলার বাসিন্দা ও সেকান্দর আলী ডিগ্রি কলেজের সম্মান প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

ঘটনার দিন দুপুরের পর থেকেই শেরপুর শহর উত্তাল হতে শুরু করে। খড়মপুর সড়কে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা জড়ো হতে থাকেন। তাঁদেরই একজন শ্রীবরদীর বাসিন্দা সবুজ মিয়া। এইচএসসি পরীক্ষার্থী সবুজ সেদিন বন্ধুদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিতেই শহরে গিয়েছিলেন।

শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া কয়েকজন জানান, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আওয়ামী লীগের একটি মিছিল থেকে গুলি ছোড়া হয়েছিল। এর মধ্যে একটি বুলেট সবুজের মাথার ডান পাশে লাগলে মুহূর্তেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। দ্রুত তাঁকে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। বাবার অসুস্থতার কারণে লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি ওষুধের দোকানে কাজ করে সংসারের হাল ধরেছিলেন সবুজ।

সেদিনের ঘটনার কথা স্মরণ করে সবুজের মা সমেলা বেগম আর্তনাদ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারী লোকজন আমার ছেলেকে গুলি করে মেরেছে। এখন আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই, দ্রুত বিচার চাই।’

সবুজের মৃত্যুর আধঘণ্টা পর বিকেল সোয়া ৫টার দিকে খড়মপুর সড়কে আবার মিছিল বের করেন ছাত্র-জনতা। মিছিলের পেছন দিক থেকে অতর্কিতে ছুটে আসে ম্যাজিস্ট্রেটের ব্যবহৃত একটি গাড়ি। মুহূর্তেই সেটি পিষে দেয় কয়েকজন আন্দোলনকারীকে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মাহবুবুর ও শারদুল। তাঁদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি কাউকে।

মাহবুব পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন। অসুস্থ বাবার পাশে দাঁড়াতে ফ্রিল্যান্সিং করে পরিবারের হাল ধরেছিলেন। তাঁর মা মাহফুজা খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলের হত্যাকারীরা শাস্তি পাক, তবে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন সাজা না পায়। আমি ন্যায়বিচার চাই।’

মাহবুবের মতোই ফ্রিল্যান্সিং করতেন শারদুল। গ্রামের বাড়িতে ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে শহরের মেসে থাকতেন। তাঁর বাবা সোহরাব হোসেন ঘটনার বিচার চেয়ে বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো দল করত না। মিছিলে দাঁড়িয়েছিল মাত্র। পেছন থেকে আসা গাড়িটা তাঁকে পিষে দিল। এখন শুধু বিচার চাই।’

এসব হত্যার ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা করা হয়েছিল। সবুজের বড় ভাই সাদ্দাম মিয়া ঘটনার দিনই একটি মামলা করেন। আর ১২ আগস্ট শারদুলের বাবা সোহরাব হোসেন ও মাহবুবের মা মাহফুজা খাতুন পৃথক দুটি মামলা করেন। চলতি বছরের ৩০ জুন পুলিশ এই তিন মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয়, যা জুলাই গণ-অভ্যুত্থান–সংশ্লিষ্ট হত্যা মামলাগুলোর মধ্যে প্রথম অভিযোগপত্র। তবে সবুজের হত্যায় অনেক অপরাধীর নাম না থাকা এবং নিরপরাধ ব্যক্তির নাম থাকার অভিযোগ তুলে চলতি বছরের ১৬ জুলাই মাহবুবের মা আদালতের কাছে সময় চেয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (বর্তমানে কার্যক্রম স্থগিত) শেরপুর জেলার আহ্বায়ক মামুনর রহমান ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, ‘ঘটনাস্থলে আওয়ামী লীগের লোকজন ছিল। মূলত তাঁদের মিছিল থেকেই ওই দিন গুলিতে সবুজের প্রাণ গেছে। আর বাকি দুজন সরকারি গাড়ির চাপায় প্রাণ হারিয়েছেন। আমরা জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই। এ ছাড়া কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন এ মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটাও চাই।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম হব ব র ন রপর ধ সব জ র ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

বরিশালের কোচ হচ্ছেন আশরাফুল

ক্রিকেটে দীর্ঘ দুই দশকের ক্যারিয়ার শেষে কোচিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। গত বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে কোচিং করিয়েছেন আশরাফুল। কিছুদিন আগে গ্লোবাল সুপার লিগে রংপুর রাইডার্সের কোচ হয়েছিলেন। এরই মধ্যে আইসিসির লেভেল-৩ কোচ শিক্ষা কোর্স শেষে সার্টিফিকেট পেয়েছেন।

এবার বড় ধৈর্ঘ্যর ক্রিকেটেও তাকে দেখা যাবে। অক্টোবরে জাতীয় ক্রিকেট লিগে বরিশাল বিভাগের কোচিংয়ের দায়িত্ব পেতে আগ্রহ দেখিয়েছেন আশরাফুল। বিসিবিরও ইচ্ছা আশরাফুল দলটির দায়িত্ব নিক। বিসিবির পরিচালক ও টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান বলেছেন, ‘‘বরিশাল দলকে নিয়ে আমরা খুব সিরিয়াসলি চিন্তা করছি। সে (আশরাফুল) আগ্রহ দেখিয়েছে। সেই বলেছে কোচ হতে চায়। যেহেতু দুই বছর খেলেছে বরিশালে। আমরা তাকে সেখানে কোচ হিসেবে রাখার পরিকল্পনা করেছি।’’

তবে বরিশাল বিভাগের দল নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি আকরাম খানরা। গত বছর লিগ চলাকালীন নিয়মিত অধিনায়ক ফজলে মাহমুদ দল ছেড়ে চলে যান। পরবর্তীতে অধিনায়কত্ব না করার শর্তে খেলেন। পক্ষপাতমূলক অধিনায়কত্ব করার অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে।

আরো পড়ুন:

কোচিংয়ে আগ্রহ বাড়ছে ক্রিকেটারদের

ভারত সফরে ধোনি-কোহলিদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলবেন মেসি

সোহাগ গাজী যুক্ত হলেও পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়। কোচ আশিকুর রহমানও দায়িত্ব ছেড়ে চলে যান। ড্রেসংরুমের অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়। যা বিসিবির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন কোচ, অধিনায়ক, ম্যানেজার। এ বছরের দল গঠন নিয়েই চরম বিপাকে।

ফজলে রাব্বী ও সোহাগ গাজীর আলাদা গ্রুপ তৈরি হওয়াতে বিসিবি পড়েছে জটিলতায়। তবে পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে বলে জানিয়েছেন আকরাম খান,

‘‘বরিশালকে নিয়েও আমরা আলাপ–আলোচনা করেছি। চিন্তাভাবনা করছি— যেহেতু অনেক...এরা ম্যানেজার নিয়ে খুশি না, কোচ নিয়ে খুশি না, অধিনায়ক নিয়ে খুশি না। খেলোয়াড়–খেলোয়াড় দ্বন্দ্ব আছে। এটা তো হওয়া আসলে উচিত না। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এটা সিরিয়াসলি মনিটর করব— যদি দেখি কেউ ডিপ্রাইভ হচ্ছে।, খেলা নষ্ট হচ্ছে, বা মান সম্মান খারাপ হচ্ছে। তাহলে আমরা অ্যাকশন নেবো।’’

ঢাকা/ইয়াসিন 

সম্পর্কিত নিবন্ধ