হাতের ডেটাতে যখন মানবিক রাষ্ট্রের দিশা
Published: 19th, August 2025 GMT
বড় কোনো ঘটনা ঘটার আগে কিছু ছিটেফোঁটা সংকেত ধরা পড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে তার অনেকগুলোই চোখে পড়ছে। দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে—এটা শুধু বিপদের খবর নয়, ভবিষ্যতের ঝুঁকিরও ইঙ্গিত। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইন্টারনেটের ওপর অনেকটাই শিথিলতা এসেছে ঠিকই, কিন্তু সমাজে অস্থিরতার লক্ষণও স্পষ্ট হচ্ছে। অসহিষ্ণুতা বাড়ছে, রাস্তায় মব কালচার চলছে, আর যেকোনো ইস্যুতেই কাদা–ছোড়াছুড়ি সামাজিক বিভক্তিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বিশ্ব অর্থনীতিতেও অস্থিরতা চলছে। মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত, ইউক্রেন যুদ্ধ, আর যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ-পাল্টা ট্যারিফের লড়াই—সব মিলিয়ে আমদানিনির্ভর দেশের অর্থনীতিকে চাপে ফেলছে। মানুষ গরিব থেকে গরিবতর হচ্ছে অথচ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সেই পরিবর্তনের প্রতিফলন মিলছে না। শহরের রাস্তায় ভাসমান মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতিও অবনতির পথে।
এ অবস্থায় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হলেও বৈশ্বিক চাপে তারাও খরচ কমাতে বাধ্য হচ্ছে। এআই, অটোমেশন ধীরে ধীরে ঢুকছে বিজনেস হাউসগুলোতে। ছোট ছোট ব্যবসা নাই হয়ে যাচ্ছে। ফলে চাকরি, ব্যবসায়িক মূলধন হারাচ্ছে মানুষ, আর সামাজিক নিরাপত্তা তহবিলের ওপর চাপ বাড়ছে। এখন আসল চ্যালেঞ্জ, কারা প্রকৃত সুবিধাবঞ্চিত, তা নির্ধারণ করা।
প্রক্সি মিনস টেস্ট বা পিএমটি এখানে বহুল ব্যবহৃত একটা পদ্ধতি। এটি সরাসরি আয়ের হিসাব না নিয়ে বরং ঘরবাড়ি, সম্পত্তি, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা ইত্যাদি দেখে একটি স্কোর নির্ধারণ করে। যাদের স্কোর কম, তাদের সুবিধাবঞ্চিত ধরা হয়। তবে এই পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা আছে—ভুল তথ্য দেওয়া বা পুরোনো ডেটার কারণে ফলাফল ভুল হতে পারে।
কোভিড-১৯–এর সময় আমরা এর এক অভিনব বিকল্প হাতে পেয়েছিলাম। অর্থ মন্ত্রণালয় আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল, কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রকৃত সুবিধাবঞ্চিত চিহ্নিত করা যায়। পরিকল্পনাটা নিয়ে কিছু গবেষণা করেছিলাম ভেতরে-ভেতরে। জিনিসটা সহজ কিন্তু কার্যকর।
আমার ধারণা, এখন সময় এসেছে নতুন করে ভাবার। মানুষের জীবনযাত্রা যখন সংকটের প্রান্তে, তখন প্রযুক্তি ব্যবহার না করা হবে অপচয়, অদক্ষতা। আমরা যেন একটা নদীর ধারে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে পানি বাড়ছে, কিন্তু সাঁতার শিখছি না। আর সবচেয়ে বড় কথা, মানবিক রাষ্ট্র গড়ার পথে হাঁটতে হবে আমাদের, বিভক্তি ফেলে, হাতের ডেটাকে বিশ্বাস করে।মোবাইল অপারেটরের কল ডিটেইল রেকর্ড (সিডিআর) ডেটায় মানুষের দৈনন্দিন জীবনের বহু ইঙ্গিত থাকে। দিনে কতক্ষণ কথা বলে, কার সঙ্গে বেশি কথা বলে, কয়জন কল করে, কত টাকা রিচার্জ করে—সবকিছুই সেখানে ধরা থাকে। মেশিন লার্নিং এই ডেটা বিশ্লেষণ করে মানুষের আয়ের একটা নির্ভুল অনুমান দিতে পারে।
শুধু তা–ই নয়, মোবাইল টাওয়ারের বেজ স্টেশন ডেটা বলে দিতে পারে, একজন দিনে কোন এলাকায় থাকে আর রাতে কোথায় ঘুমায়। এতে বোঝা যায় সে বস্তিতে থাকে নাকি অ্যাপার্টমেন্টে। ডিভাইসের তথ্য থেকেও আয়ের ধারণা মেলে সে কি আইফোন ব্যবহারকারী, নাকি সাধারণ ফিচার ফোন ব্যবহার করছে।
সব ডেটাই থাকে অ্যানোমাইজড, মানে নাম বা নম্বর ছাড়া কেবল পরিসংখ্যান। এতে প্রাইভেসি বজায় থাকে, কিন্তু নীতি নির্ধারণে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায়। এই তথ্য ঢুকিয়ে দেওয়া যায় মেশিন লার্নিং মডেলে, যা মানুষের আয়ের সক্ষমতার একটা স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরতে পারে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, নীতিগত কিছু বাধার কারণে তখন এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়নি। আমার ধারণা, এখন সময় এসেছে নতুন করে ভাবার। মানুষের জীবনযাত্রা যখন সংকটের প্রান্তে, তখন প্রযুক্তি ব্যবহার না করা হবে অপচয়, অদক্ষতা। আমরা যেন একটা নদীর ধারে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে পানি বাড়ছে, কিন্তু সাঁতার শিখছি না। আর সবচেয়ে বড় কথা, মানবিক রাষ্ট্র গড়ার পথে হাঁটতে হবে আমাদের, বিভক্তি ফেলে, হাতের ডেটাকে বিশ্বাস করে।
রকিবুল হাসান টেলিকম, অটোমেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-বিষয়ক বইয়ের লেখক এবং লিংকথ্রি টেকনোলজিসের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।
এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।
অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।
আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগেএ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।
সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।
এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।
আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে