রণক্ষেত্র বিজয়নগর এখন সুনশান, নুরসহ আহত ৫০
Published: 29th, August 2025 GMT
রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় লাঠিচার্জ করে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ ও সেনা সদস্যদের বাধার মুখে সংবাদ সম্মেলন করতে পারেনি গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।
শুক্রবার (২৯ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিজয়নগর আল রাজি কমপ্লেক্সের সামনে সংবাদ সম্মেলন করার আগ মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ধাওয়া করে নেতাকর্মীদের। এ সময় লাঠিচার্জে দলটির সভাপতি নুরুল হক নুরসহ ৫০ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
আরো পড়ুন:
বিশেষ অভিযান: ২৪ ঘণ্টায় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ১৫১৫
অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে হত্যা, শাশুড়ি ও সৎ ছেলে গ্রেপ্তার
পরে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা দলটির নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে বিজয়নগর এলাকা ছেড়ে যায় তারা। পুরো এলাকা এখন শান্ত। দলটির নেতাকর্মী কেউ নেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে, রাত পৌনে দশটার দিকে ফেসবুক পেজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় নুরুল হক নুর আহত দাবি করে তার রক্তাক্ত ছবি পোস্ট করেছে গণঅধিকার পরিষদ। এর আগে মশাল মিছিল নিয়ে রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির অফিসের বিপরীতে অবস্থান নেয় গণঅধিকার পরিষদের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী। তারা মিছিল নিয়ে জাতীয় পার্টি অফিসে যেতে চাইলে পুলিশ মাঝখানে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে।
শুক্রবার রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত গণঅধিকারের নেতাকর্মীদের অবস্থান-বিক্ষোভে যান চলাচল বন্ধ ছিল। সংঘর্ষের ঘটনায় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের দায়ী করে দলটি নিষিদ্ধ এবং জিএম কাদেরসহ অন্যান্য সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শ্লোগান দেন তারা।
সংঘর্ষের বিজয়নগরের চিত্র। ছবি: রাইজিংবিডি
অন্যদিকে, পুলিশ ও সেনা সদস্যরা জাতীয় পার্টি অফিসের সামনে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। দলীয় অফিসে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদসহ নেতারা অবস্থান করছেন।
এর আগে জাতীয় পার্টি নেতাকর্মীদের ওপর গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে অভিযোগ করে জড়িতদের বিচার দাবি করেন জাপার মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।
রাতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। তাদের হামলায় দলের বেশ কয়েকজন নেতা আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি। এ সময় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন মিলন, আলমগীর সিকদার লোটন উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একে অপরকে দায়ী করে উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করে দল দুটির নেতারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ এবং দলটির নেতাদের গ্রেপ্তারের দাবিতে পল্টন জিরো পয়েন্টে সমাবেশ ডাকে গণঅধিকার পরিষদ। এই খবর পেয়ে জাতীয় পার্টির কাকরাইল অফিসে দলের মহাসচিব ব্যারিষ্টার শামীম পাটোয়ারী, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, আলমগীর সিকদার লোটনসহ দলটির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অবস্থান নেন কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। গণঅধিকার পরিষদের সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড়ে যাওয়ার পথে শ্লোগান পাল্টা শ্লোগানে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার একপর্যায়ে সংঘর্ষ হয়।
রমনা থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আতিকুল আলম খন্দকর সাংবাদিকদের বলেন, “সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। আমরা ঘটনাস্থলে আছি। বিস্তারিত পরে বলতে পারব।”
সন্ধ্যার পর জাপা কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ছবি: রাইজিংবিডি
গণঅধিকার পরিষদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা পরিকল্পিতভাবে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করে তাৎক্ষণিক দলটির সভাপতি ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, “ছাত্রলীগ যুবলীগের ক্যাডারদের সঙ্গে ফাসিস্টের দোসর জিএম কাদেরের লোকজন বিনা উসকানিতে আমাদের মিছিলে হামলা চালিয়েছে। আমাদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানসহ প্রায় ১০ জন আহত হয়েছে।”
অন্যদিকে, এই ঘটনার জন্য গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের দায়ী করেছে জাতীয় পার্টি। দলটির নেতারা অভিযোগ করে বলেন, “গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা আগেও আমাদের ওপর হামলা করে। তারা আজকেও মিছিল নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমাদের ১০ থেকে ১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে।”
ঢাকা/রায়হান/নঈমুদ্দীন/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন র ল হক ন র ট র ন ত কর ম দল ট র ন ত ন র ল হক ন ব জয়নগর অবস থ ন আহত হ য় র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।