পরিবেশ সম্মতভাবে মাছ ধরতে আগ্রহী মৌলভীবাজারের মৎস্য দাসেরা
Published: 30th, August 2025 GMT
সুশান্ত, শ্রীচরণ আর কানু। মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার হাওর কাওয়াদিঘি পাড়ের রক্তা গ্রামের এক প্রান্তের বাসিন্দা, মধ্য বয়সী প্রান্তিক জেলে। বাপ-দাদার আমল থেকে জল আর জালের সাথে বাধা জীবন। শৈশব- কৈশোর কাটিয়েছেন হাওরের বুকে মাছ ধরে। শত বছর পার হলেও বদলায়নি তাদের বুনিয়াদি জীবনধারা।
ওরা মৎস্য দাস সম্প্রদায়ের মানুষ। একশ্রেণির ওয়াটার লর্ডদের রোষাণলে পড়ে তারা এখন সহায় সম্বলহীন। দরিদ্রতার কষাঘাতে জীবন চলে কোনোমতে।
তারা জানান, আধুনিকতার পালাবদলে আমাদের হাত থেকে চলে গেছে পরিবেশবান্ধব জাল, বাঁশের তৈরি চাই-বুচনা, ঘুনি, ডারকি সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় (উকা, ডরি, ফাড়ং) ইত্যাদি।
তার বদলে এসেছে কিরণমালাসহ জলজ জীববৈচিত্র্য ধ্বংসকারী মাছধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম। তাদের অভিযোগ, এটা দেখার কেউ নেই। মাঝে মাঝে মৎস্য বিভাগের অভিযান হলেও আবার আগের মতোই রয়ে যায়। আধুনিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার অব্যহত থাকলে একসময় হাওরের জীববৈচিত্র্যসহ দেশীয় প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব বিলীন হবে। হাওরের মিঠা জলে এর ব্যবহার ক্ষতিকর জেনেও নিরুপায় হয়েই আধুনিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার করতে হচ্ছে।
বিশাল জলরাশির হাওর কাউয়াদিঘিতে এখন কোথাও এক চিলতে শুকনো স্থান নেই। হাওরের বুকে উচুঁ রাস্তাঘাটই কেবল ভেসে আছে। সেখানে বসেই মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলেরা। সরেজমিনে গিয়ে কাউয়াদিঘি হাওরের কুশুয়া, নাইকা, উলাউলি, বরইউরি বিলের পাশে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
কথা হয় হাওর পারের প্রান্তিক জেলে কানু বিশ্বাসের (৪০) সাথে। তিনি বলেন, “যখন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ওয়াটার লর্ডদের হাতে হাওরের নিয়ন্ত্রণ চলে যায়, তখন থেকে বেশি চাওয়া-পাওয়ার টার্গেটে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা হচ্ছে না। মানুষের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। জলদস্যুরা রেনু পোনা থেকে মাছ ধরা শুরু করে। এতে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের স্থানীয় ও দেশীয় প্রজাতির নানা জাতের সুস্বাদু মাছ।”
হাওর পারের রক্তা গ্রামের জেলে নন্দলাল (৪২) বলেন, “প্লাষ্টিকের পট দিয়ে চিংড়ি মাছ ধরার ফাঁদ কিরণমালা তৈরি করা হয়। আমরা এগুলো শ্রীমঙ্গল থেকে ক্রয় করি। এর ভিতরে টোপ হিসেবে শামুকের ভিসারালভর (ভেতরের অংশ) ও ফিড ব্যবহার করি। ৪০০ থেকে ৫০০ চিংড়ি ধরার ফাঁদ কিরণমালা পট বিকেলে পানিতে ফেলে দেই সকালে উঠাই। ৪/৫ জনের গ্রুপে কাজ করি। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ কেজি ছোট দেশীয় চিংড়ি ধরি। বিক্রি করে প্রতিজনে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা হারে পেয়ে থাকি। তা দিয়েই চলে টনাটানির সংসার। এটাই আমাদের জীবন।”
রক্তা গ্রামের জুবেল বলেন, “আমি এখনও পুরনো পদ্ধতির জাল দিয়ে মাছ ধরি। কই, ভেদা, মাগুর এসব মাছ জালে ওঠে। তবে দিন দিন মাছ কমে যাচ্ছে। সারা দিনে ৪/৫শ টাকার মাছ ধরি। পরিবারের চাহিদা মেটানোর পর বেশি থাকলে বিক্রি করি।”
রাজনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ.
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. আরিফ হোসেন বলেন, “হাওর পারের মানুষ ও মৎস্যজীবীদের মধ্যে সচেতনতা না আসলে আমাদের মৎস্য ভাণ্ডার একসময় খালি হয়ে যাবে।”
তিনি আরো বলেন, “মৌলভীবাজারের হাওরগুলোতে প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর মাছ উৎপাদন হয়। জেলেরা না বুঝে রেনু পোনা আহরণ করে বিক্রি করে। তারা বোঝে না ১০ কেজি রেনু পোনা বড় হলে এক টন মাছ হতে পারে। আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। সবাই সচেতন হলে মৌলভীবাজারের মৎস্য ভাণ্ডার সমৃদ্ধশালী হবে।”
ঢাকা/আজিজ/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবহ র ক সরঞ জ ম পর ব শ আম দ র হ ওর র র হ ওর মৎস য
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত–পাকিস্তান লড়াই: একসময় আগুন জ্বলত, এখন শুধু ধোঁয়া
ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক সব সময়ই দুই দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কৌশল অনুযায়ী এগিয়েছে।
অতীতেও দ্বিপক্ষীয় সিরিজে লম্বা বিরতি দেখা গেছে। ১৯৫৪ থেকে ১৯৭৮—টানা ২৪ বছর পাকিস্তান সফরে যায়নি ভারত। আবার ১৯৬০ সালের পর পাকিস্তানও প্রথমবারের মতো ভারতে খেলতে যায় ১৯৭৯ সালে।
এরপর ১৯৮২ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান নিয়মিত মুখোমুখি হয়েছে। এই সময়ে ভারত তিনবার পাকিস্তান সফরে গিয়ে খেলে ১২ টেস্ট, পাকিস্তানও ভারতে গিয়ে খেলে ৮ টেস্ট।
দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৯৯ সালে পাকিস্তান তিন টেস্ট খেলতে ভারতে যায়। এর মধ্যে একটি ছিল কলকাতার ইডেন গার্ডেনে প্রথম এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। ভারত ফিরতি টেস্ট সিরিজ খেলতে পাকিস্তানে যায় ২০০৪ সালে, যা ছিল ১৯৮৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকারের অভিষেকের পর প্রথমবার।
২০০৪ সালের পাকিস্তান সফরে কড়া নিরাপত্তায় ব্যাটিংয়ে নামেন শচীন টেন্ডুলকার