২০১৬ সালের ঘটনা। বাংলাদেশে বসেছিল অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। বাংলাদেশ সেবার হট ফেভারিট। মিরাজ, শান্ত, সাইফউদ্দিন, জাকির, জাকের মিলিয়ে দুর্বার দলটি। ঘরের মাঠে সেবার শিরোপা জেতা শেষ পর্যন্ত হয়নি। তৃতীয় হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়।
সেই দলে একজন ছিলেন, ওপেনার সাইফ হাসান। যাকে মনে করা হচ্ছিল বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে লম্বা রেসের ঘোড়া। ওপেনিং ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৩১ বলে ৬ রানের ইনিংসে সেই ছাপ পাওয়া যায়। অফস্টাম্পের বাইরের বল লাগাতার ছেড়ে দেওয়া, বলের ওপর শেষ পর্যন্ত নজর রাখা, ধৈর্য ও চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় ব্যাটিং করার মানসিকতায় সাইফ হয়ে উঠেন অনন্য।
আরো পড়ুন:
জয়ের কৃতিত্ব সবাইকে দিলেন লিটন, বৈচিত্র্য ফিরে পেয়ে খুশি তাসকিন
নেদারল্যান্ডস সিরিজে চোখ, এশিয়া কাপ আপাতত দূরে সিমন্সের ভাবনায়
ঘরোয়া ক্রিকেটে সেই প্রতিফলন দেখা যায়। জাতীয় দলে অভিষেকের আগেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট তিন ডাবল সেঞ্চুরি তার নামের পাশে। ধরেই নেওয়া হচ্ছিল, সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পরবর্তী ব্যাটন থাকবে তার কাছেই। কিন্তু বিশ্বাস ও ভাবনার সঙ্গে মাঠের ক্রিকেটে আকাশ পাতাল পার্থক্য।
টেস্ট ক্রিকেটে তার অভিষেক হলেও রাঙাতে পারেননি। নিজেকে পাল্টে আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান হিসেবেও হাজির করেন। তাতেও খুব একটা লাভ হয়নি। টি-টোয়েন্টি অভিষেক হলেও বাদ পড়তেও সময় নেননি।
হাল ছাড়েন না সাইফ। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে খুঁজে পান দিশা। চলে তার একক লড়াই। যেখানে পাশে পেয়েছিলেন অনেককেই। ঘরোয়া ক্রিকেটের সঙ্গে একাধিক ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রতিযোগিতায় নিজেকে মেলে ধরেন। কখনো সফল হয়েছেন। কখনো ব্যর্থ। তবে পরিশ্রম থামাননি। অযুত-নিযুত ঘামবিন্দু ঝরিয়ে নিজেকে ফিট করেন বড় মঞ্চের জন্য।
জানতেন একদিন সুদিন আসবে। সেই সুদিনটা গতকালই এলো সিলেটে। চার বছর পর জাতীয় দলে ডাক পেয়ে নিজেকে অন্যভাবে পরিচিত করেছেন সাইফ। বোলিংয়ে ২ উইকেট। লিটন স্টাম্পিং না করলে আরো একটি উইকেট পেতে পারতেন। এরপর ব্যাটিংয়ে ১৯ বলে ৩৬ রান। ৩ ছক্কার সঙ্গে ১ চার। অনুকূল পরিস্থিতি, চেনা কন্ডিশন, গড়পড়তা বোলিং আক্রমণ, পরিস্থিতিও স্বাভাবিক। সব কিছু তার পক্ষে গেছে। তাইতো সহজাত ক্রিকেট খেলেই নিজেকে মেলে ধরেছেন সাইফ।
২০২৪ সালের পর ধারাবাহিক রান করছেন এই ব্যাটসম্যান। বিপিএলে ৮ ম্যাচে ১৪৫ রান করেছেন ১১৩.
সবশেষ বিপিএলে ১৩ ম্যাচে ৩০৬ রান করেছেন ১১৯.৬ স্ট্রাইক রেটে। এরপর জিএসএলে ৪ ম্যাচে ১২৭.৩ স্ট্রাইক রেটে ৮৪ রান এবং সবশেষ টপ এন্ড টি-টোয়েন্টিতে ৬ ম্যাচে ১২১.১ স্ট্রাইক রেটে ১৩২ রান করেন সাইফ।
পরিসংখ্যান তার পারফরম্যান্স নিয়ে বড় উচ্ছ্বাস দেখাবে না নিশ্চিতভাবেই। বড় কিছু বা উল্লেখযোগ্য কিছু আছে তেমনও নয়। তবে নিজেকে পাল্টে অন্যদের সঙ্গে লড়াইয়ে রাখা, পরিস্থিতি বিবেচনায় পারফরম্যান্সে পরিবর্তন আনা এবং দলের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ একজন খেলোয়াড় সব সময়ই লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। সাইফের ক্ষেত্রে তেমনটিই হয়েছে।
ব্যাটিংয়ের সঙ্গে তার বোলিংও প্রাসঙ্গিক। প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু সেই কথাই বলেছিলেন, ‘‘তাকে নেওয়ার সময় আরও অনেকেই আলোচনায় এসেছে। কোচ–অধিনায়ক, নির্বাচক মণ্ডলী, আমরা অনেক আলোচনা করেছি। আমাদের ওপরের দিকে (ব্যাটসম্যানদের মধ্যে) একটা গুরুত্বপূর্ণ বোলার দরকার ছিল। এক ওভার–দুই ওভারের একটা দায়িত্ব তিনি পালন করতে পারবেন।”
“তিন-চার নম্বরে অথবা ওপরের দিকে, যদি ওপেনার দরকার হয়, সে আলোকে সাইফের দিকে চোখ ছিল। এবার তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নম্বর চারে খেলার মতো ভালো ব্যাটসম্যান, একই সঙ্গে ওপরেও যদি কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, প্রয়োজনে তিনি ওপেন করার সক্ষমতা রাখেন। আমরা এরকম ‘মাল্টিপল’ জায়গায় দায়িত্ব পালনের মতো ক্রিকেটার অনেক বেশি খুঁজছি। দলের সেটার প্রয়োজন অনেক বেশি।”
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর স থ ত র ন কর কর ছ ন য টসম
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।