ধূমপান কমাতে বাংলাদেশে ধীরগতি, নিউজিল্যান্ডে সাফল্য
Published: 3rd, September 2025 GMT
ধূমপানমুক্ত হওয়ার খুব কাছাকাছি পর্যায়ে চলে এসেছে নিউজিল্যান্ড। ২০১৫ সালে দেশটিতে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ধূমপায়ীর হার ছিল ১৩.৩ শতাংশ, যা বর্তমানে কমে হয়েছে ৬.৯ শতাংশ। অন্যদিকে, বাংলাদেশে এই হার ২৩ শতাংশ থেকে কমে মাত্র ১৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
‘টেল অব টু নেশনস: বাংলাদেশ ভার্সেস নিউজিল্যান্ড’ শিরোনামের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ‘স্মোক ফ্রি সুইডেন’ সম্প্রতি একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গবেষণা প্রতিবেদনটির কথা তুলে ধরেছে। বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের ধূমপানবিরোধী নীতির তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে এতে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউজিল্যান্ডের এই সাফল্যের মূল কারণ হলো তাদের বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি ও তামাক নিয়ন্ত্রণে ক্ষতি হ্রাস কৌশলের অন্তর্ভুক্তি। দেশটি ভেপিংয়ের মতো বিকল্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দিয়ে ধূমপায়ীদের ধূমপান ছাড়ার জন্য কার্যকর নীতি প্রণয়ন করেছে।
অন্যদিকে, বৈজ্ঞানিক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে ক্ষতি হ্রাসকেন্দ্রিক কৌশলের চর্চা নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে ভেপিংয়ের মতো সম্ভাব্য নিরাপদ বিকল্প পণ্যে কঠোর নিয়ম-কানুন আরোপ করে পরিস্থিতি আরো জটিল করা হচ্ছে। এর ফলে অনেকে ধূমপান চালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন অথবা ঝুঁকিপূর্ণ তামাক পণ্য ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
নিউজিল্যান্ডের উদাহরণ দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮৩ সালে প্রতি তিনজন কিউইর মধ্যে একজন ধূমপায়ী ছিলেন। দেশটির সরকার পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধসহ নানা নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নিলেও প্রত্যাশিত হারে ধূমপান কমেনি। তবে, ২০০৯ সালে ভেপিং বাজারে আসার পর দেশটির জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এটিকে ধূমপানের বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করে এবং নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করে। এর ফলে ধূমপান কমাতে তারা সফলতা পায়।
বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের মধ্যে ধূমপায়ীর হার ৩৪.
বাংলাদেশ হার্ম রিডাকশন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ড. মো. শরিফুল ইসলাম দুলু বলেছেন, “ভেপ এবং পাউচের মতো নিরাপদ বিকল্পের প্রতি বাংলাদেশের সীমাবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগজনক। ধোঁয়ামুক্ত বিকল্পের উপকারিতা নিয়ে আমাদের কাছে স্পষ্ট বৈশ্বিক প্রমাণ রয়েছে। তবু, সক্রিয় কর্মী ও নীতিনির্ধারকরা জীবন রক্ষাকারী এই বিকল্পগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টা করছেন। এতে তামাকজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা আরো প্রকট হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। কারণ, অনেকেই ধূমপান চালিয়ে যেতে অথবা বিপজ্জনক ধোঁয়াহীন তামাকপণ্য ব্যবহারে বাধ্য হতে পারেন।”
ওয়ার্ল্ড মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল ও স্মোক ফ্রি সুইডেনের নেতৃত্বে থাকা ড. ডেলন হিউম্যান বলেছেন, “নিউজিল্যান্ডের বাস্তববাদী ও বৈজ্ঞানিকভাবে সমর্থিত নীতি তামাক নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে। ভেপিংয়ের মতো বিকল্পকে অনুমোদন দিয়ে তারা ধূমপায়ীকে তামাক ছাড়ার বাস্তব পথ দেখিয়েছে। এর ফলে দেশটিতে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে ধূমপানের হার প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিগারেটের নিরাপদ বিকল্পের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপ করলে বাংলাদেশের তামাকজনিত সংকট আরো ভয়াবহ হবে। কেননা, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সঙ্গে নিরাপদ বিকল্প যুক্ত করাসহ ধূমপানের ক্ষতি হ্রাস কৌশলকে একীভূত করা গেলে ২০৬০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে প্রায় ৯ লাখ ২০ হাজার মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব।
ঢাকা/রফিক
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পর ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বেরোবি
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ব্রাকসু) নিয়ে অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলেছে শিক্ষার্থীদের। গত ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গেজেট প্রকাশ হয়ছে গঠনতন্ত্র।
এরই মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পর হতে যাচ্ছে কাঙিক্ষত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ তথা ব্যাকসু নির্বাচন। তবে এর জন্য আমরণ অনশন থেকে শুরু করে সব ধরনের কর্মসুচিই পালন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আরো পড়ুন:
‘আমরা একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করতে চাই’
বেরোবিতে শহীদ আবু সাঈদ স্মৃতিস্তম্ভের মডেল প্রদর্শন
জুলাই অভ্যুত্থান পর গণরুম ও গেস্ট রুমের যে সাংস্কৃতি ছিল, তা এখন বন্ধ হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের কমকাণ্ডে সামিল হওয়াও বাধ্যতামুলক নয়।
তাই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ ছাত্র সংসদ। যাতে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষিত হবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বেরোবির বিধিমালা অনুযায়ী, ১৩টি পদে সরাসরি নির্বাচন ও হল সংসদে নয়টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সব ধরনের কথা তুলে ধরতে পারবেন।
পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী শেখর রায় বলেন, “সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও লেজুরবিত্তিক রাজনীতি ব্যতীত একটি নির্বাচন হোক। যোগ্য, আদর্শ, উত্তম চরিত্র ও মনের প্রার্থী বিজয়ী হোক। নির্বাচিত হয়ে তারা হয়ে উঠুক বেরোবির একেকজন যোগ্য প্রতিনিধি। তারা ন্যায়ের পক্ষে থাকুক । তাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাক বেরোবি।”
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জাওয়াদ সাজিদ বলেন, “ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের দাবি, অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার প্রধান মঞ্চ। এটি প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে, যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কণ্ঠ পৌঁছে যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে। কিন্তু এজন্য সংসদকে দলীয় প্রভাবমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। প্রকৃত অর্থে ছাত্র সংসদ তখনই সফল, যখন তা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে তাদের সমস্যার সমাধান ও কল্যাণে কাজ করে।”
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, “আমরা এমন ছাত্র সংসদ চাই, যেখানে যোগ্য নেতৃত্ব আসবে এবং সব শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার হয়ে কাজ করবে। সবমিলিয়ে সবার বিশ্বস্ত জায়গা হবে এই ছাত্র সংসদ।”
ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী