মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টে অনুরোধ জানিয়েছেন যে, একটি নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করা হোক, যা তার ব্যাপক শুল্কগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল। খবর বিবিসির।

বুধবার রাতে দাখিল করা একটি আপিলে ট্রাম্প প্রশাসন বিচারকদের দ্রুত হস্তক্ষেপের জন্য অনুরোধ করেছে যাতে তারা রায় দেন যে, বিদেশি দেশগুলোর ওপর এই ধরনের আমদানি শুল্ক আরোপের ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের রয়েছে।

আরো পড়ুন:

ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনকে বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত মনোনয়ন দিলেন ট্রাম্প

মার্কিন হামলায় ভেনেজুয়েলার ১১ মাদক সন্ত্রাসী নিহত: ট্রাম্প

গত সপ্তাহে বিভক্ত মার্কিন আপিল কোর্ট ৭-৪ ভোটে রায় দেয় যে, জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইনের মাধ্যমে ট্রাম্প যে শুল্ক আরোপ করেছেন, তা প্রেসিডেন্টের কর্তৃত্বের মধ্যে পড়ে না। আদালত বলেছে, শুল্ক নির্ধারণ করা হলো কংগ্রেসের মূল ক্ষমতা।

এই মামলা ট্রাম্পের অর্থনৈতিক ও বৈদেশিক নীতির এজেন্ডাকে উল্টে দিতে পারে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কোটি কোটি ডলার শুল্ক ফেরত দিতে বাধ্য করতে পারে।

ট্রাম্প আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইনের অধীনে শুল্ককে ন্যায্যতা দিয়েছিলেন, যা প্রেসিডেন্টকে ‘অসাধারণ  ও প্রত্যাশিত’ হুমকির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা দেয়।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ট্রাম্প একটি অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন, যুক্তি দিয়েছিলেন যে, বাণিজ্য ঘাটতি দেশীয় উৎপাদনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

আপিল আদালত প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে রায় দিলেও, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত রেখেছে। ফলে ট্রাম্প প্রশাসন আপিল দাখিল করার জন্য সময় পেয়েছে।

বুধবার রাতে দাখিল করা ফাইলে সলিসিটর জেনারেল জন সাউয়ার বলেছেন যে, “নিম্ন আদালতের ভুল সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সংবেদনশীল, চলমান কূটনৈতিক ও বাণিজ্য আলোচনাকে ব্যাহত করেছে এবং প্রেসিডেন্টের দেশকে রক্ষা করার প্রচেষ্টায় আইনগত অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।”

এদিকে, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপকে চ্যালেঞ্জ জানানো ছোট ব্যবসার পক্ষের আইনজীবীরা বলেছেন, তারা আত্মবিশ্বাসী যে মামলাটি তারা জিতবেন। 

লিবার্টি জাস্টিস সেন্টারের জেফ্রি শোয়াব বলেছেন, “এই অবৈধ শুল্কগুলো ছোট ব্যবসার জন্য মারাত্মক ক্ষতি করছে এবং তাদের টিকে থাকার সম্ভাবনা বিপন্ন করছে। আমরা আমাদের ক্লায়েন্টদের জন্য এই মামলার দ্রুত সমাধান আশা করি।”

সুপ্রিম কোর্ট যদি ট্রাম্প প্রশাসনের আপিল গ্রহণ না করে, তাহলে নিম্ন আদালতের রায় ১৪ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে।

মে মাসে, নিউ ইয়র্ক-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত শুল্কগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল। আপিল প্রক্রিয়ার সময় সেই রায়ও স্থগিত ছিল।

এই রায় মূলত ছোট ব্যবসা এবং কিছু মার্কিন রাজ্যের একটি জোটের দায়ের করা মামলার পর এসেছে। 

এপ্রিল মাসে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য ৯০টিরও বেশি দেশের ওপর বেসলাইন ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পাশাপাশি ‘পারস্পরিক’ শুল্ক আরোপের একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন।

তবে এই শুল্কগুলো ছাড়াও, আপিল আদালতের রায় কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ওপর থেকে শুল্কও বাতিল করেছে। ট্রাম্প এই শুল্কগুলো অপরিহার্য বলে দাবি করেছেন যাতে অবৈধ ড্রাগ আমদানি রোধ করা যায়। তবে রায়টি অন্যান্য শুল্কের ওপর প্রযোজ্য নয়, যেমন ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর আরোপিত শুল্ক।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র শ ল ক আর প কর ছ ল র জন য র ওপর ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা

বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।  

অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা। 

আরো পড়ুন:

শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?

পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?

বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।  

শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।” 

একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।” 

শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি। 

১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা। 

দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী। 

১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ। 

একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা। 

অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ