‘ভারতের ৩০২ মন্ত্রীর বিরুদ্ধেই রয়েছে ফৌজদারি অভিযোগ’
Published: 5th, September 2025 GMT
ভারতের ২৭টি রাজ্য, তিনটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদ মিলিয়ে আছে প্রায় ৬৪৩ জন মন্ত্রী। এদের মধ্যে ৩০২ জন মন্ত্রীর বিরুদ্ধেই রয়েছে খুন, অপহরণ এবং নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধের মতো গুরুতর অভিযোগের ফৌজদারি মামলা। সংখ্যা নিরিখে যা প্রায় ৪৭ শতাংশ! সম্প্রতি এমন তথ্য প্রকাশ করেছে নির্বাচনী নজরদারি সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস’ (এডিআর)।
এডিআর-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ৩০২ জন মন্ত্রীর মধ্যে ১৭৪ জনের বিরুদ্ধে গুরুতর ফৌজদারি অপরাধের মামলা রয়েছে।
রিপোর্ট অনুসারে, ৩৩৬ জন বিজেপি মন্ত্রীর মধ্যে ১৩৬ জনের (৪০ শতাংশ) বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে এবং ৮৮ জনের (২৬ শতাংশ) বিরুদ্ধে রয়েছে গুরুতর অভিযোগ।
দেশটির চারটি রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেসের ৪৫ জন মন্ত্রীর (৭৪ শতাংশ) বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে ১৮ জন (৩০ শতাংশ) গুরুতর অপরাধের মামলা রয়েছে।
তামিলনাড়ুতে ক্ষমতাসীন দ্রাবিড়া মুনেত্রা কাজাঘাম (ডিএমকে) এর ৩১ জন মন্ত্রীর মধ্যে ২৭ জনের (৮৭ শতাংশ) বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ রয়েছে, যেখানে ১৪ জন (৪৫ শতাংশ) গুরুতর মামলায় অভিযুক্ত।
তৃণমূল কংগ্রেসের ৪০ জন মন্ত্রীর মধ্যে ১৩ জনের (৩৩ শতাংশ) বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে ৮ জন (২০ শতাংশ) গুরুতর অভিযোগের মুখোমুখি।
আম আদমি পার্টির ১৬ জন মন্ত্রীর মধ্যে ১১ জনের বিরুদ্ধে (৬৯ শতাংশ) ফৌজদারি মামলা রয়েছে, যেখানে ৫ জন (৩১ শতাংশ) গুরুতর অপরাধের অভিযোগের মুখোমুখি।
এক্ষেত্রে তেলুগু দেশম পার্টির অনুপাত সবচেয়ে বেশি, তাদের ২৩ জন মন্ত্রীর মধ্যে ২২ জনের (৯৬ শতাংশ) বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে এবং ১৩ জনের বিরুদ্ধে (৫৭ শতাংশ) গুরুতর অপরাধের মামলা রয়েছে।
৭২ জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর হলফনামা অনুযায়ী ২৯ জন (৪০ শতাংশ) ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত।
রাজ্যগুলোর মধ্যে ১১টিতে- অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, বিহার, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, পাঞ্জাব, তেলেঙ্গানা, হিমাচল প্রদেশ, দিল্লি এবং পুদুচেরিতে - ৬০ শতাংশেরও বেশি মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে।
তবে, হরিয়ানা, জম্মু ও কাশ্মীর, নাগাল্যান্ড এবং উত্তরাখণ্ডের মন্ত্রীরা নিজেদের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলার কথা হলফনামায় উল্লেখ করেননি।
মন্ত্রীদের অপসারণের লক্ষ্যে সম্প্রতি নতুন বিল এনেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। প্রস্তাবিত বিধান অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীসহ যেকোনো মন্ত্রী যদি পাঁচ বছর বা তার বেশি কারাদণ্ডের শাস্তিযোগ্য অপরাধের জন্য টানা ৩০ দিন ধরে গ্রেপ্তার এবং আটক থাকেন, তাহলে তাকে পদ থেকে অপসারণ করা হবে। ওই বিল উত্থাপনের কয়েকদিন পর এডিআর-এর এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হল। এডিআর রিপোর্টে মন্ত্রীদের আর্থিক সম্পদের বিশ্লেষণও তুলে ধরা হয়েছে।
ওই রিপোর্ট মতে, ৬৪৩ জন মন্ত্রীর সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ২৩ হাজার ৯২৯ কোটি রুপি। অর্থাৎ মন্ত্রীদের গড় সম্পদের পরিমাণ ৩৭ দশমিক ২১ কোটি রুপি।
৩০টি রাজ্যের মধ্যে ১১ টিতে বিলিয়নিয়ার (নূন্যতম একশত কোটি রুপির মালিক) মন্ত্রী রয়েছেন। কর্ণাটকে সর্বোচ্চ ৮ জন বিলিয়নিয়ার মন্ত্রী রয়েছেন, এরপর অন্ধ্রপ্রদেশে ৬ জন এবং মহারাষ্ট্রে ৪ জন বিলিয়নিয়ার মন্ত্রী রয়েছেন। অরুণাচল প্রদেশ, দিল্লি, হরিয়ানা এবং তেলেঙ্গানায় ২ জন করে বিলিয়নিয়ার মন্ত্রী আছেন, যেখানে গুজরাট, হিমাচল প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং পাঞ্জাবে ১ জন করে বিলিয়নেয়ার মন্ত্রী রয়েছেন, যারা একশত কোটি রুপি বা তার বেশি অর্থের মালিক।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের ৭২ জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মধ্যে ৬ জন (৮ শতাংশ) বিলিয়নিয়ার।
দলগতভাবে, বিজেপির বিলিয়নিয়ার মন্ত্রীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, সংখ্যাটা ১৪ জন। যদিও এটি তাদের মোট মন্ত্রীর মাত্র ৪ শতাংশ। কংগ্রেস দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, তাদের ৬১ জন মন্ত্রীর মধ্যে ১১ জন (১৮ শতাংশ) বিলিয়নিয়ার। টিডিপির ২৩ জন মন্ত্রীর মধ্যে ৬ জন (২৬ শতাংশ) বিলিয়নিয়ার। এর পাশাপাশি আম আদমি পার্টি, জনসেনা পার্টি, জেডি(এস), এনসিপি এবং শিবসেনারও বিলিয়নিয়ার মন্ত্রী রয়েছে।
দেশের সবচেয়ে বিত্তবান মন্ত্রী হলেন টিডিপির ড.
অন্যদিকে, হাতেগোনা কয়েকজন মন্ত্রী হলফনামায় খুবই সামান্য সম্পদের কথা উল্লেখ করেছেন। ত্রিপুরার আদিবাসী গণফ্রন্টের শুক্লচরণ নোয়াতিয়া মাত্র ২ লাখ রুপির সম্পদ ঘোষণা করেছেন, অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদার সম্পদের পরিমাণ ৩ লাখ রুপির কিছু বেশি।
সুচরিতা/শাহেদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অপর ধ র ম র মন ত র হলফন ম গ র তর
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।
এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।
অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।
আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগেএ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।
সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।
এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।
আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে