স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, পিডিবিএফ-এর নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি কিংবা স্বজনপ্রীতির অভিযোগের কথা শুনিনি। স্বচ্ছ, পক্ষপাতিত্ব-স্বজনপ্রীতি মুক্ত ও মেধাভিত্তিক নিয়োগ হলে নিয়োগপ্রাপ্ত সবাই আমাদের ও দেশের সম্পদ হবে। 

শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটোরিয়ামে ‘পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) নবনিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওরিয়েন্টেশন’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

নতুন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘উৎকোচ কিংবা ঘুষ ছাড়া আপনারা নিয়োগ পেয়েছেন, কর্মক্ষেত্রে তার প্রতিফলন ঘটাবেন। জনগণ ও সেবাপ্রার্থীদের সুন্দর অভিজ্ঞতা দেবেন এ প্রত্যাশা করি।’’

জাতীয় চ্যালেঞ্জের মধ্যে অন্যতম দারিদ্র্য বিমোচন। মাঠ পর্যায়ে দারিদ্র্য বিমোচন এবং উদ্যোক্তা তৈরিতে নতুন যোগদানকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সততার সাথে দায়িত্ব পালন করার নির্দেশনা দেন তিনি।  

উপদেষ্টা বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নিয়োগ পিডিবিএফ-এর এই নিয়োগ। দীর্ঘদিন পরে পিডিবিএফে নিয়োগ হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের বেকারত্ব দূরীকরণে বদ্ধ পরিকর। প্রায় সকল মন্ত্রণালয়ে শূন্য পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’’

উল্লেখ্য, বিগত মার্চ ২০২৫ তারিখে ৩টি পদে ১,৬৬৫ জন জনবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিডিবিএফ। যার মধ্যে উপজেলা দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকর্তা পদে ১৫৫ জন, সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদে ৩৩৫ জন এবং মাঠ কর্মকর্তা পদে ১,১৭৫ জন।

ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মো.

ইসমাইল হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী এবং স্বাগত বক্তব্য দেন পিডিবিএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মাহমুদ হাসান। 

পরে উপদেষ্টা পাইকপাড়া সরকারি ডি-টাইপ কলোনিতে অবস্থিত মডেল একাডেমি, মিরপুরে ‘বীর শহীদ আহনাফ গ্রন্থাগার’ উদ্বোধন করেন। এ সময় স্কুল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘‘শহীদ আহনাফ আপনাদের বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী যা অত্যন্ত গর্বের, আপনারা নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলবেন। নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে হবে। বাংলাদেশ আর কখনো ফ্যাসিবাদের দিকে যাবে না এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’’

উল্লেখ্য, বীর শহীদ আহনাফ আহমেদ বিএএফ শাহীন কলেজ, ঢাকার একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। তিনি ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট মিরপুর-১০ এ শহীদ হন। 

ঢাকা/এএএম//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত প ড ব এফ উপদ ষ ট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে

লোহার ফটক ভাঙার শব্দে চারপাশ কেঁপে উঠল। বিক্ষুব্ধ লোকজন তখন দৌড়ে ঢুকে পড়লেন ভবনের ভেতরে। কয়েক ঘণ্টা আগেও যেসব প্রতিবন্ধক ছিল ক্ষমতার প্রতীক, মুহূর্তেই সেগুলো গুঁড়িয়ে দিল জনতার ঢল।

প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের করিডর ভরে গেল কাদামাখা পায়ে হাঁটার শব্দে। কেউ জানালার কাচ ভাঙলেন, কেউ আবার দামি চাদর আর জুতা নিয়ে গেলেন।

নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা যে বাড়ি এত দিন ছিল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে, সেদিন কয়েক ঘণ্টার জন্য তাঁরাই তা দখলে নিলেন।

এ দৃশ্য নেপালের গত সপ্তাহের। আবার এটি শ্রীলঙ্কার ২০২২ সালের কিংবা বাংলাদেশের ২০২৪ সালেরও চিত্র।

এসব আন্দোলনের আসল শক্তি হলো তরুণদের স্বপ্ন দেখা—একটা ভালো রাজনীতি আর ভালো অর্থনীতির ভবিষ্যৎ কল্পনা করার ক্ষমতা। কিন্তু সেই কল্পনার সঙ্গে বাস্তব জীবনের বড় পার্থক্য তাঁরা বুঝতে পারছেন। স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবের এ ফারাকই তাঁদের ক্ষোভ বাড়িয়ে দিয়েছে।পল স্ট্যানিল্যান্ড, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক

৩০ মিলিয়ন (৩ কোটি) মানুষের দেশ নেপাল, ভারত ও চীনের মাঝখানে অবস্থিত। সেখানকার সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ প্রথাগত নির্বাচনী গণতন্ত্রের চেনা ধারা ভেঙে দিয়েছে। আর দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশগুলোয় একের পর এক সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণ প্রজন্ম বিশ্বকে নতুন এক প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন—দক্ষিণ এশিয়াই কি জেন–জি (জেনারেশন জেড) প্রজন্মের বিপ্লবের কেন্দ্রস্থল?

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পল স্ট্যানিল্যান্ড আল–জাজিরাকে বলেন, ‘এটা সত্যিই চোখে পড়ার মতো। এখানে একধরনের নতুন অস্থির রাজনীতির জন্ম হচ্ছে।’

গত বৃহস্পতিবার প্রায় ১০ হাজার নেপালি তরুণ–তরুণী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেছেন। এ তরুণ–তরুণীদের অনেকে প্রবাসী। তবে কোনো নির্বাচনী ব্যালটে নয়, বার্তা আদান–প্রদানের মাধ্যম ডিসকর্ডে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বাছাই করেছেন। এর আগে তিন দিনের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিবিরোধী বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয় এবং সেনাসদস্য ও পুলিশের দমন–পীড়নে ৭০ জনের বেশি নিহত হন। এখন নেপাল সরকার ঘোষণা করেছে, আগামী মার্চে নতুন নির্বাচন হবে।

প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির জেন–জি প্রজন্মকে উপহাস করার কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁর পদত্যাগ দেখিয়ে দিয়েছে—দক্ষিণ এশিয়ার তরুণেরা বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আস্থাহীন হলে নিজেরাই ক্ষমতা হাতে তুলে নিচ্ছেন এবং নিজেদের নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী প্রশাসন কে হবে, তা–ও নির্ধারণ করছেন।

শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালের আন্দোলনের পেছনে প্রতিটির নিজস্ব ইতিহাস ও অনন্য প্রেক্ষাপট আছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মধ্যে মিলও আছে—নতুন প্রজন্ম আর ভাঙা প্রতিশ্রুতি মেনে নিচ্ছে না।

স্ট্যানিল্যান্ড বলেন, এটি দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নাটকীয় পরিবর্তন। এ অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক আন্দোলনের সাক্ষী, তবে সরকার পতনের ঘটনা বিরল।

‘এ ধরনের আন্দোলন বিভিন্ন দেশে সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থান থেকে আলাদা। দক্ষিণ এশিয়ার সংকট বরাবরই অন্যভাবে সমাধান হয়েছে, এবার সেটা ভিন্নপথে যাচ্ছে’, বলেন স্ট্যানিল্যান্ড।

শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালের আন্দোলনের পেছনে প্রতিটির নিজস্ব ইতিহাস ও অনন্য প্রেক্ষাপট আছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মধ্যে মিলও আছে—নতুন প্রজন্ম আর ভাঙা প্রতিশ্রুতি মেনে নিচ্ছে না।

এ ছাড়া দেশগুলোর আন্দোলন একে অন্যের কাছ থেকেও শিক্ষা নিচ্ছে।

তিন দেশের আন্দোলনের মূল কারণ এক—বৈষম্য আর দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক অভিজাত শ্রেণি। এ শ্রেণি তরুণ প্রজন্মের বাস্তব চাওয়া-পাওয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।মীনাক্ষী গাঙ্গুলি, এইচআরডব্লিউর দক্ষিণ এশিয়ার উপপরিচালক কলম্বো থেকে ঢাকা হয়ে কাঠমান্ডু: আন্দোলনের পটভূমি

নেপালে সাম্প্রতিক জেন–জি আন্দোলনের সূত্রপাত সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত থেকে। সরকার বলেছিল, প্ল্যাটফর্মগুলোর অপব্যবহার হচ্ছে এবং নিয়ম মেনে নিবন্ধন করছে না। তবে ক্ষোভের প্রকৃত কারণ অন্য—বৈষম্য, দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতি; তা–ও এমন একটি দেশে, যেখানে প্রবাসী নেপালিদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির এক–তৃতীয়াংশ অবদান রাখছে।

হাজার হাজার কিশোর–কিশোরী স্কুলের ইউনিফর্ম পরেই রাস্তায় নেমে আসে। ৭০ জনের বেশি নিহত হয়, আহত হয় শত শত।

শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে প্রেসিডেনশিয়াল সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভকারীদের যাওয়া ঠেকাতে সড়ক অবরোধ করে পুলিশের বিশেষ টাস্কফোর্স

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে