মুক্তিবাহিনীর নামে সেই মেহেদীর পোস্টার, তোলপাড়
Published: 7th, September 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের বিভিন্নস্থানে সাঁটানো হয়েছে শামীম ওসমানদের দোসর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মেহেদীর পোস্টার।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে সিদ্ধিরগঞ্জসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থানে এ পোস্টার সাঁটানো হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এক ভিডিওতে দেখা যায়, দেয়ালে পোস্টার সাঁটানোর পর নিজেরাই ভিডিও করে ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিচ্ছেন। এমন একাধীক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াতেও দেখা গেছে।
এদিকে দেয়ালে সাঁটানো পোস্টারে দেখা গেছে, শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবির পাশাপাশি শামীম ওসমানের ছবি সাথে যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন মেহেদীর ছবি। পোস্টারে বড় করে লেখা ছিলো, ‘শেখ হাসিনাতেই আস্থা’ আর প্রচারে লেখা ছিলো ‘নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর মুক্তিবাহিনী।’
সিদ্ধিরগঞ্জসহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রধান ফটকের দেয়ালসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এসব পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। এবং বেশিরভাগ পোস্টারগুলো সাঁটানো হয়েছে বিএনপির পোস্টারের উপর।
এদিকে মেহেদীর এ পোস্টারিংয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জে সহ গোটা রাজনৈতিক অঙ্গণে। রাজনৈতিক নেতারা এ পোস্টারিংয়ের বিরুদ্ধে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা ওসমানদের দোসর ও চিহ্নিত তেলচোর মেহেদীসহ পোস্টারিং করা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন গোদনাইল এলাকার মৃত আফিরউদ্দিন মাতবরের ছেলে আনোয়ার হোসেন মেহেদী। তিনি দীর্ঘদিন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আর এ পরিচয়ে তিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সাবেক সাংসদ শামীম ওসমানের খুব ঘনিষ্টজন হয়ে যান। এরপর থেকেই শামীম ওসমানের নাম ভাঙ্গিয়ে তিনি তার মালিকানাধীন মেসার্স মেহেদী এন্টারপ্রাইজের আড়ালে দীর্ঘ বহুবছর যাবত চোরাই তেলের ব্যবসা করে আসছেন।
বর্তমানে তিনি ওই এলাকার তেল চোর সিন্ডিকেটের প্রধান বলে স্থানীয়সূত্রে জানাগেছে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে জাল দলিলের মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের জায়গা জমি আত্মসাতের সাথেও মেহেদীর জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। আর এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একাধীক মামলাও রয়েছে।
পাঁচ আগস্টের পর বেশ কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন শামীম ওসমানের বিশ^স্ত সহচর এই আনোয়ার হোসেন মেহেদী। সবশেষে তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী মামলাও হয়। গত বছরের ২৪ অক্টোবর সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাফেজ মো: হোসাইন আহম্মেদ (২০) নামে এক যুবককে হত্যা চেষ্টা মামলায় তাকে আসামী করা হয়। এ মামলায় তিনি ৬৮নম্বর আসামী বলে নিশ্চিৎ হওয়া গেছে।
এদিকে বৈষম্য বিরোধী মামলার আসামী হওয়া সত্বেও কোন এক রহস্যজনক কারণে মেহেদী এলাকায় ফিরে আসতে সক্ষম হয়। এবং এলাকায় ফিরে কৌশলে তিনি আবার বাংলাদেশ ট্যাংকলরী মালিক সমিতি গোদনাইল শাখার সভাপতি হয়ে যান। বর্তমানে তিনি বীরদর্পে এলাকায় থেকে সেই দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানাগেছে।
একজন যুবলীগের সক্রিয় নেতা এবং বৈষম্য বিরোধী মামলার আসামী হয়েও কিভাবে মেহেদী এতদিন প্রকাশ্যে ছিলেন এবং বাংলাদেশ ট্যাংকলরী মালিক সমিতি গোদনাইল শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন, তা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের।
তারা বলছেন, একজন বৈষম্য বিরোধী মামলার আসামী হওয়া সত্বেও কেন এবং কি কারণে মেহেদীকে আইনের আওতায় আনা হলো না আমরা পুলিশ প্রশাসনের কাছে তা জানতে চাই। তাকে যদি আগেই আইনের আওতায় আনা যেতো, তাহলে তিনি আজ এভাবে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা আর গডফাদার শামীম ওসমানের ছবি দিয়ে পোস্টারিং করার সাহস পেতেন না।
তারা আরও বলেন, আমরা জানিনা কিভাবে কাদের ছত্রছায়ায় একজন যুবলীগের সক্রিয় নেতা এতদিন প্রকাশ্যে ছিলেন এবং ট্যাংকলরীর দায়িত্ব পালন করেছেন? তার সেল্টারদাতাদেরও খুঁজে বের করা দরকার। তারা যদি আমাদের দলেরও কেউ হয়ে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠিন ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
এক্ষেত্রে কোন ছাড় দেয়া উচিৎ হবে না। কেননা, যারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে এবং যারা ওই ষড়যন্ত্রকারিদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিবে, তারা সবাই সমান অপরাধী।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ আওয় ম ল গ স দ ধ রগঞ জ থ ন শ ম ম ওসম ন র য বল গ র র আস ম
এছাড়াও পড়ুন:
মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদন
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর করার লক্ষ্যে নতুন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অধ্যাদেশটির অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
আরো পড়ুন:
নির্বাচন বানচালের যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা হবে: প্রধান উপদেষ্টা
১৫ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
আইন উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের আগে একটা মানবাধিকার কমিশন ছিল, কিন্তু সেটি কার্যত দন্তহীন একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। নিয়োগ পদ্ধতিতে ত্রুটি, এখতিয়ারে ঘাটতি এবং নেতৃত্বের দুর্বলতায় প্রতিষ্ঠানটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। এবার সেটিকে সত্যিকারের এখতিয়ারসম্পন্ন, ক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।”
তিনি জানান, নতুন অধ্যাদেশে মানবাধিকার কমিশনের কাঠামো, এখতিয়ার ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। কমিশন একজন চেয়ারম্যান ও চারজন সার্বক্ষণিক সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও যোগ্যতা নিশ্চিত করতে আপিল বিভাগের একজন বিচারকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবেদন আহ্বান করা হবে এবং প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে বাছাই কমিটি সুপারিশ করবে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, “আমরা নিয়োগ পদ্ধতিটা এমনভাবে করেছি যাতে অভিজ্ঞ, যোগ্য ও মানবাধিকার রক্ষায় সক্রিয় মানুষরা কমিশনে জায়গা পান।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ কর্তৃক অনুসমর্থিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তি এবং প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত মানবাধিকারগুলোকেও এই কমিশনের এখতিয়ারে আনা হয়েছে। এর ফলে কমিশন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড অনুযায়ী কাজ করতে পারবে।”
অধ্যাদেশে কমিশনের এখতিয়ার বহুলাংশে বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে শৃঙ্খলা বাহিনীসহ রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাতেও কমিশন তদন্ত করতে পারবে। আইন উপদেষ্টা বলেন, “আগের কমিশনের এখতিয়ারে গুরুতর সীমাবদ্ধতা ছিল, বিশেষ করে শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগের ক্ষেত্রে। এবার সেই সীমাবদ্ধতা দূর করা হয়েছে।”
এছাড়া, গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা আইনসহ মানবাধিকার সংরক্ষণমূলক যেকোনো আইনের বাস্তবায়নের দায়িত্ব মানবাধিকার কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। আলাদা করে ‘গুম কমিশন’ গঠনের প্রয়োজন হবে না বলে তিনি জানান।
অধ্যাদেশে কমিশনের আদেশ প্রতিপালনকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা বলেন, “এখন থেকে কমিশনের সুপারিশ বা নির্দেশ উপেক্ষা করা যাবে না। এর বাধ্যবাধকতা আইনি কাঠামোয় যুক্ত করা হয়েছে।”
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন। খবর বাসসের।
ঢাকা/এসবি