দুই মাসে পদ্মার পেটে ২০০ হেক্টর জমি
Published: 8th, September 2025 GMT
পদ্মা নদীর ভাঙন যেন দমে না গিয়ে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা গিলে খাচ্ছে। বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। ভাঙনের ভয়াবহতায় মানুষজন দিনের মতো রাতেও আতঙ্কে সময় পার করছেন। যেখানেই পানির চাপ বাড়ছে, সেখানেই ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও বাজার মুহূর্তেই নদীর পেটে চলে যাচ্ছে। বিজ্ঞাপন
আজিমনগর, সুতালড়ী ও লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নগুলোতে ভাঙনের মাত্রা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। চরাঞ্চলসহ কুশিয়ারচর ও মালুচি এলাকার কলা বাগান, বসতবাড়ি এবং আবাদি জমি একের পর এক বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
আরো পড়ুন:
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে নাব্য সংকটে ফেরি চলাচল ব্যাহত
বান্দরবানে ভাঙা সেতুতে ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো
উপজেলার কৃষি অফিসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে, গত দুই মাসেই প্রায় ২০০ হেক্টর আবাদি ও অনাবাদি জমি, সঙ্গে অন্তত ১৫০টি বসতভিটা পদ্মার গর্ভে হারিয়ে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে শত শত পরিবার তাদের বাড়ি নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়েছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের হরিহরদিয়া, গঙ্গাধরদি, পাটগ্রাম ও সেলিমপুর এলাকা। সেখানে ভাঙনের গতি এতটাই ভয়াবহ যে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে একাধিক বাড়ি নদীতে তলিয়ে গেছে। সেলিমপুর বাজার পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে। পাশাপাশি হরিহরদিয়া ও গঙ্গাধরদি বাজার ভাঙনের হুমকিতে থাকায় অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়েছে। হরিহরদিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পও রক্ষা পায়নি নদীর থাবা থেকে।
এই প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক ঘর ভাঙনের কবলে পড়েছে। ফলে প্রায় ১০০ পরিবার নতুন করে আশ্রয় খুঁজতে বাধ্য হয়েছে। মাত্র দুই মাসে প্রায় ৪০০ পরিবার বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।
এলাকাবাসী বলছেন, শুধু জিওব্যাগ ফেলা নয়, টেকসই বাঁধ নির্মাণ ছাড়া ভাঙন ঠেকানো সম্ভব নয়। পদ্মার ভাঙন এখন কেবল একটি মৌসুমি দুর্যোগ নয়; বরং মানুষের জীবন ও জীবিকার স্থায়ী সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবার ভাঙন নতুন করে হাজারো মানুষকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে।
হরিহরদিয়া গ্রামের রাসেল মিয়া বলেন, “জোয়ার শুরু হতেই ভাঙন শুরু হয়। দিন-রাত সমান তালে ঘরবাড়ি ও জমি নদীতে চলে যায়। আমরা অনেকেই আগেভাগেই ঘর সরিয়ে নিয়েছি। তবুও নিরাপত্তা নেই। পানি যদি আবার বাড়তে থাকে, ভাঙনও বেড়ে যাবে। একসময় হয়তো এই চরাঞ্চল পুরোপুরি নদীতে হারিয়ে যাবে।”
কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কুশিয়ারচরের কৃষক আবদুল হাকিম বলেন, “আমাদের কলার বাগান নদীতে তলিয়ে গেছে। চোখের সামনে বছরের পরিশ্রম পানিতে ভেসে গেল। এখন আর কিছু করার নেই।”
গৃহবধূ শিরিনা বেগম বলেন, “ভাঙনের ভয় এতটাই যে রাতে ঘুমাতে পারি না। প্রতিদিনই মনে হয়, আজ হয়তো ঘরটাও নদীতে চলে যাবে। অনেকেই নিরাপদ জায়গায় চলে গেছেন। আমরা এখনো টিকে আছি, কিন্তু কতদিন টিকতে পারব তা বলা কঠিন।”
স্থানীয় কৃষক ইউনুস মোল্লা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা বারবার দাবি করেছি—এলাকা রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ দেওয়া হোক। কিন্তু বর্ষা এলেই সাময়িক কিছু কাজ করা হয়, পরে আর কোনো উদ্যোগ থাকে না। এভাবে চলতে থাকলে, কয়েক বছরের মধ্যেই পুরো চরাঞ্চল নদীতে হারিয়ে যাবে।”
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, “হরিরামপুর উপজেলার পদ্মা নদীর বাম তীরে লেছড়াগঞ্জ, সুতালড়ি ও আজিমনগর ইউনিয়নের প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার মানুষের বসবাস। নদীভাঙনে তাদের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে। আমরা কারিগরি সমীক্ষা করার উদ্যোগ নেব। সমীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে টেকসই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের কুশিয়ারচর এলাকায় ১২০ মিটার জিওব্যাগ ফেলা শুরু করেছে।”
ঢাকা/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুসহ তিন দফা দাবি মেনে নিল প্রশাসন, ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও সম্পূরক বৃত্তিসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের আশ্বাসে ৩২ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বুধবার রাত দশটার দিকে প্রশাসনের পক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙানো হয়। শিক্ষার্থীদের অনশন ভঙ্গ করান করান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ও সিন্ডিকেট সদস্য বিলাল হোসাইন।
এর আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক শেখ গিয়াসউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ২৭ নভেম্বর জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই মোতাবেক নির্বাচনের রূপরেখাও ঘোষণা করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী জানুয়ারি থেকে আবাসন ভাতা পাবেন শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে বৃত্তির জন্য উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের নভেম্বরের মধ্যে যাচাই-বাছাই করার কাজ শেষ করা হবে।
অনশনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রক্টর মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ২৭ নভেম্বরের আগেই কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপন করা হবে। ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মানোন্নয়নে প্রশাসন কাজ করবে।
আরও পড়ুনতিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৪ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ১২ ঘণ্টা আগেএ সময় অনশনে বসা উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসন ভাতার জন্য প্রতিশ্রুত সময়ও দিয়েছে প্রশাসন। কেন্দ্রীয় পাঠাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র স্থাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা অনশন ভেঙে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি।
সতর্ক করে দিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যদি প্রশাসন ঘোষিত সময়ের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে হবে।
এর আগে তিন দফা দাবি আদায়ে গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন চারজন শিক্ষার্থী। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। অনশনে বসা চার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনজন বাগছাসের নেতা।
আরও পড়ুনজকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা, ভোট ২৭ নভেম্বর২ ঘণ্টা আগে