সাফকো স্পিনিংয়ের শেয়ার কারসাজি: ১২ ব্যক্তিকে ৩.৫৫ কোটি অর্থদণ্ড
Published: 8th, September 2025 GMT
পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সাফকো স্পিনিং মিলস লিমিটেডের শেয়ার কারসাজির অভিযোগে ১২ ব্যক্তিকে মোট ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
২০২১ সালের ২ মে থেকে ২০ জুন পর্যন্ত সময়ে তারা একে অপরের সঙ্গে যোগসাজশ করে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়িয়ে মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছেন। ওই সময়ে অর্থাৎ ১ মাস ১৮ দিন কোম্পানির শেয়ারের দাম ২১৫ শতাংশ বেড়ে যায়।এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে দীর্ঘদিন পর কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
সূচকের উত্থান, ১৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন
লোভনীয় অফার থেকে সতর্ক থাকুন: ডিএসই
সম্প্রতি বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুঁজিবাজারে ২০২১ সালের মে ও জুন মাসে গুঞ্জন ছিল-সাফকো স্পিনিং মিলসের শেয়ার নিয়ে কারসাজি চলছে। কোম্পানির ব্যবসা ও আর্থিক অবস্থার উন্নতির কারণে নয়, বরং কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা শেয়ার কারসাজির বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন যেকোনো ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২ মে থেকে ২০ পর্যন্ত সময়ে সাফকো স্পিনিং মিলসের শেয়ারের দাম কারসাজি করে বাড়ানোর দায়ে ১২ ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে মো.
কারসাজিতে জড়িতদের পরিচিতি
সাফকো স্পিনিং মিলসের শেয়ার কারসাজিতে মো. সজিব হোসেন, মো. সুলেমান, মো. শরিফ, তাসলিমা বেগম, মো. আব্দুল কুদ্দুস আমিন, একেএম খলিলুর রহমান, নুরুন্নেসা সাকি, মো. বেলাল হোসেন, আরিফা বেগম লাকি, তারান্নুম সাফি, মাহমুদা আক্তার ও কাজী মহিউদ্দীন আহমেদ বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এ শেয়ার কারসাজিতে নেতৃত্ব দেন শেয়ার ব্যবসায়ী মো. সজিব হোসেন ও মো. সুলেমান। আর তাদের সহযোগিতাকারীরা সবাই শেয়ার ব্যবসায়ী। তারা সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ায়।
বিএসইসির তদন্ত কার্যক্রম
২০২১ সালের ২ মে থেকে ২০ জুন পর্যন্ত সময়ে যোগসাজশ করে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে সাফকো স্পিনিং মিলসের শেয়ারের দাম বাড়ানো হয়। বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করতে আলোচ্য সময়ের মধ্যে কোম্পানির শেয়ারের দাম সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৩১.৫০ টাকায় নিয়ে যায় কারসাজি চক্র। ফলে আলোচ্য সময়ে কোম্পানির শেয়ারের দাম ২১.৫০ টাকা বা ২১৫ শতাংশ বেড়ে যায়। বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসির তদন্তে দীর্ঘদিন পর অবশেষে তা প্রমাণিত হয়েছে।
বিএসইসির সিদ্ধান্ত
অভিযুক্তরা ২০২১ সালের ২ মে থেকে ২০ জুন পর্যন্ত সময়ে সাফকো স্পিনিং মিলসের শেয়ার আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে কারসাজি করে ইচ্ছাকৃতভাবে একটি কৃত্রিম বাজার সৃষ্টি করে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। উপস্থাপিত অভিযোগসমূহ সঠিক ও ইচ্ছাকৃত এবং এই কর্মকাণ্ডের ফলে পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যা পুঁজিবাজার উন্নয়নের পরিপন্থি। তাই অভিযুক্তদের ব্যাখ্যা কমিশনের নিকট গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়নি। অভিযুক্তদের এই ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ১৭(ই)(২), ১৭(ই)(৫) এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শেয়ার অর্জন, অধিগ্রহণ ও কর্তৃত্ব গ্রহণ) বিধিমালা, ২০২৮ ভঙ্গ করেছে, যা সিকিউরিটিজ আইনের পরিপন্থি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২২ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জরিমানা ধার্য করা হলো। এই আদেশ জারির ৩০ দিনের মধ্যে ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন’ এর অনুকূলে ইস্যুকৃত ব্যাংক ড্রাফট অথবা পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা দিতে হবে, অন্যথায় সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কোম্পানির আর্থিক পরিস্থিতি
সাফকো স্পিনিং মিলস পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০০ সালে। ‘জেড’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ২৯ কোটি ৯৮ লাখ ২০ হাজার টাকা। সে হিসাবে কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ২ কোটি ৯৯ লাখ ৮১ হাজার ৭১৬টি। সর্বশেষ ২০২৫ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৩০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৭.০৮ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৬২.৯২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। এরপর থেকে কোম্পানিটি আর কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সর্বশেষ ১৬.২০ টাকায় লেনদেন হয়।
ঢাকা/এনটি/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ২০২১ স ল র ২ ম শ য় র ক রস জ র ক রস জ র ব এসইস র ম লস র শ র ব যবস ন র পর র পর প
এছাড়াও পড়ুন:
৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
আরো পড়ুন:
সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি।
এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/এনটি/বকুল