নেপালে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের তোড়জোড়, সড়কে সেনা টহল
Published: 11th, September 2025 GMT
নেপালে জেন-জির বিক্ষোভ-সহিংসতার মুখে কে পি শর্মা অলি সরকারের পতনের পর থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দেশটির সড়কে টহল দিচ্ছে সামরিক বাহিনীর সাঁজোয়া যান। সাধারণ মানুষকে ঘরে থাকতে এবং অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সামরিক চেকপয়েন্ট বসিয়ে যানবাহনের কাগজপত্র ও পরিচয় যাচাই করছে সেনারা। খবর কাঠমান্ডু পোস্টের।
জেন-জি বিক্ষোভকারীদের দাবি, তাদের অহিংস আন্দোলনকে কিছু সুযোগসন্ধানী অনুপ্রবেশকারী সহিংসতায় রূপ দিয়েছে। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রাজারাম বাসনেটও একই কথা বলেছেন। তিনি জানান, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ৩১টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
সহিংসতা ও ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত যে কাউকে শাস্তি দেওয়া হবে বলে সতর্ক করেছে সেনাবাহিনী। আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত নেপালজুড়ে কারফিউ বহাল থাকবে।
নেপালের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুই দিনের বিক্ষোভ-সহিংসতায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক হাজারের বেশি।
গত সোমবার ‘হিমালয়কন্যা’ নেপালে বিক্ষোভকারীদের ওপর সরকারি বাহিনী গুলি চালালে নজিরবিহীন সহিংসতা শুরু হয়। এর জেরে মঙ্গলবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন। তাকে সামরিক হেলিকপ্টারে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। তিনি কোথায় আছেন, তা নিয়ে নানা গুঞ্জন আছে। প্রথম খবর রটে যে, দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে কাতারে আশ্রয় নিয়েছেন শর্মা অলি। কিন্তু পরে স্থানীয় সাংবাদিক প্রজ্জল অলি জানান, নেপালেই অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী। নেপাল স্পোর্টস জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রজ্জল অলি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশ ছাড়েননি। এই মুহূর্তে সেনাবাহিনীর নিরাপত্তায় তাকে ব্যারাকে রাখা হয়েছে। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এই মুহূর্তে অনেক মন্ত্রী, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তারা আশ্রয় নিয়েছেন।
মঙ্গলবার মারধরের শিকার হন অলি সরকারের অনেক মন্ত্রী-এমপি। আগুন দেওয়া হয় পার্লামেন্ট, রাজনীতিকদের বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনায়।
এদিকে, দেশের এই নেতৃত্বশূন্য পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নেপালে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগডেল বিক্ষোভকারী জেন-জি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ছাত্রনেতারা তাদের দাবির একটি নতুন তালিকা তৈরি করছেন বলে জানা গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে আপাতত দুজনের নাম সামনে এসেছে। তাদের মধ্যে কাঠমান্ডুর মেয়র বলেন্দ্র শাহ, অন্যজন দেশটির সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। সুশীলা ছিলেন নেপালের প্রথম নারী বিচারপতি। ইন্ডিয়া টুডে জানায়, জেন-জি আন্দোলনকারীরা সুশীলাকে তাদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে পছন্দ করেছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংকট সমাধানের আলোচনায় অংশ নিতে পারেন। তাকে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্ভাব্য প্রধান মনে করা হচ্ছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র র মন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার তীব্র সমালোচনা
‘আমার সোনার বাংলা...’ গাওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার নির্দেশ দিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। রাজ্যের এক সিনিয়র কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে এই মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ ঘটনায় তীব্র সমালোচনা করেছেন রবীন্দ্রপ্রেমীরা। রবিবার আসমের এই ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছে বিশ্বভারতীর এসএফআই ইউনিটের সদস্যরা।
গত সোমবার আসামের শ্রীভূমি জেলার ইন্দিরা ভবনে কংগ্রেস সেবা দলের বৈঠকের সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি গেয়েছিলেন বিধুভূষণ দাস নামে এক সিনিয়র কংগ্রেস কর্মী। এরপরই বিতর্ক ছড়ায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি বিভিন্ন সময় গেয়েছেন প্রখ্যাত শিল্পী সুচিত্রা মিত্র, মান্না দে, শান্তিদেব ঘোষ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, লোপামুদ্রা মিত্র, নচিকেতাসহ আরো অনেক প্রথিতযশা শিল্পীরা। কিন্তু সেই গান নিয়েই এত বিতর্ক মেনে নিতে পারছেন না শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক, শিক্ষার্থী থেকে বিদ্বজনেরা।
রাজ্যটির বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে সিনিয়র আশ্রমিকেরা বলছেন এ তো একেবারে ‘হাস্যকর’! রবি ঠাকুরের পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুরের প্রশ্ন ‘আমরাও কি তাহলে রাষ্ট্রদ্রোহী?’
১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের ‘বঙ্গভঙ্গ’ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। এর প্রতিবাদে রাখিবন্ধন করে পথে নেমেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই সময় ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি রচনা করেছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার এই গানটিকে ‘জাতীয় সঙ্গীত’ হিসাবে গ্রহণ করে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “এক্কেবারে হাস্যকর ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথের গান সবার জন্যই, সবাই গেয়ে থাকেন। আমরাও এখনো গেয়ে থাকি। এটা যদি দেশদ্রোহীতা হয়, তাহলে আমরা দেশদ্রোহী। একজন মুখ্যমন্ত্রী (হিমন্ত বিশ্ব শর্মা) যদি এধরনের কথা বলেন, তাকে তাহলে ‘মুখ্য’ বলা যাবে না, অন্য কিছু বলতে হবে।”
বিশ্বভারতীর পাঠভবনের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও সিনিয়র আশ্রমিক সুব্রত সেন মজুমদার বলেন, “ব্যাপারটা আমার কাছে অত্যন্ত হাস্যকর ও লঘু মনে হয়। রবীন্দ্রনাথ বিশ্ববন্দিত, তাই তার গান সব জায়গায় গাওয়া যায়। কিন্তু, একথা স্বীকার করি ‘আমার সোনার বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং তারা গুরুদেবের এই গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গ্রহণ করেছেন বলে আমরা সম্মান করি। এই গান কোথাও গাওয়া যাবে না এমন বিধিনিষেধ থাকা ভালো নয়। এটা অত্যন্ত ছোট মনের পরিচয়। তাই এই ধরনের ঘটনা দেখে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। তাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে তারা যেন আকাশের মত মন নিয়ে বিষয়গুলি দেখেন। মুখ্যমন্ত্রীকে সবাইকে নিয়ে রাজ্য চালাতে হয়, তাই তার অনেক উদার হওয়া উচিত।”
আরেক সিনিয়র আশ্রমিক অপর্ণা দাস মহাপাত্র বলেন, “জিনিসটা খুব হাস্যকর। রবীন্দ্র সঙ্গীত যে কোনো জায়গায়, যে কোনো পরিস্থিতিতে গাওয়া যায়। তার সঙ্গে দেশদ্রোহীতার সম্পর্ক খুঁজতে যাওয়া অত্যন্ত হাস্যকর। ‘আমার সোনার বাংলা’ এত সুন্দর একটি গান, যা যে-কোন উপযুক্ত পরিস্থিতিতেই গাওয়া যায়। আসামের মুখ্যমন্ত্রীর যদি এইটুকু জ্ঞান না থাকে বা রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা না থাকে সেটা আমাদের কাছে খুব দুঃখের।”
আশ্রমিক সুলগ্না মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমার সোনার বাংলা গানটি একটা জাতীয় সঙ্গীতের ঊর্ধ্বে গিয়ে এটা রবীন্দ্র সঙ্গীত। আর কি বলবো, কিছু বলারই নেই।”
আসামের ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছে বিশ্বভারতীর বাম ছাত্র সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া’ (এসএফআই)। তাদের সদস্যরাও পথে নেমে স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন।
আসমের এই ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার পথে নেমেছে বিশ্বভারতীর এসএফআই ইউনিটের সদস্যরা। এসএফআই ইউনিটের সম্পাদক বান্ধুলি কারার বলেন, “আমরা একটা বড় সমস্যার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। রবীন্দ্রনাথের লেখা গান গাওয়ায় আসামে একজনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। এই গানটা শুধু একটা দেশের জাতীয় সংগীত নয়। এই গানটা মাটির গান, ভালোভাসার গান, মানবতার গান, একতার গান। এই গান গাওয়ায় যারা রাষ্ট্রদ্রোহী বলছেন, আসলে তারা মানবতাবিরোধী। রবীন্দ্রনাথের গান, তার লেখা, তার মুক্ত চিন্তা এগুলো বাঙালির চেতনার একটা অংশ। রবীন্দ্রনাথকে যদি অপমান করা হয় তার অর্থ বাঙালির শিক্ষা, সংস্কৃতির অপমান করা। রবীন্দ্রনাথ কেবলমাত্র বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা নন, তিনি আমাদের বাংলার গর্ব, ভারতের গর্ব। যারা বাংলার শিক্ষা, সংস্কৃতিকে মুছে ফেলতে চাইছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ চলবে।”
সুচরিতা/শাহেদ