‘শান্তি না থাকলে উন্নয়নও হবে না’ হিংসা কবলিত মনিপুরে দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় পর পা রেখে এভাবেই শান্তির বার্তা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শনিবার মিজোরামের আইজলে রেল প্রকল্প উদ্বোধন করার পরে মণিপুরের আইজলে পৌঁছান তিনি।

২০২৩ সালে শুরু হয়েছিল মণিপুরে সহিংসতা। তারপর থেকে বিরোধীরা একাধিক বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মণিপুরে না যাওয়া নিয়ে সুর চড়িয়েছেন। অবশেষে, দু’বছর পরে সেই মণিপুরে পা রাখলেন মোদি।

শনিবার সফরের শুরুতেই মোদি দেখা করেন দুই বছরের সহিংসতায় ঘরছাড়াদের সঙ্গে। চুড়াচাঁদপুর ছিল সহিংসতার কেন্দ্রস্থল। এখানে মৃত্যু হয় ২৬০ জনের। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ইম্ফল বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে ৬৫ কিলোমিটার ভ্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী। চুড়াচাঁদপুরে পৌঁছে মণিপুরকে ‘সাহস ও দৃঢ়তার ভূমি’ বলে প্রশংসা করেন তিনি। পরে মোদি চুড়াচাঁদপুরের ত্রাণ শিবিরে বয়স্ক এবং শিশুদের সঙ্গে দেখা করেন। 

চূড়াচাঁদপুরের জনসভায় উপস্থিত হয়ে হিংসা ভুলে শান্তির আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী। অতীত হিংসার অতীত স্মরণ না করেও এদিন মোদি বলেন, “মণিপুর- যে মাটি একসময় আশা ও স্বপ্ন বুনত, তা হিংসার কবলে পড়ে যায়৷ কোনো জায়গার উন্নতিসাধন করতে হলে, সত্য এবং বিচারের পাশাপাশি শান্তিও প্রয়োজন।” 

উত্তর-পূর্বের রাজ্যে উন্নয়ন  চালিয়ে যেতে সংঘাত থামানোর আর্জি জানিয়ে মোদি বলেন, “উন্নয়নের জন্য শান্তি জরুরি।” 

চূড়াচাঁদপুরের সভায় মোদি বলেন, “আশা ও বিশ্বাসের নয়া সকাল শুরু হয়েছে মণিপুরে। তবে উন্নয়নের জন্য শান্তি প্রয়োজন। গত ১১ বছরে একাধিক সংঘাত হয়েছে এখানে। তবে মানুষ শান্তির পথই বেছেছেন। আমি সব সংগঠনের কাছে আর্জি জানাচ্ছি, যেন তারা একসাথে শান্তিতে থাকেন, নিজেদের স্বপ্নপূরণ করেন এবং নিজেদের সন্তানের জন্য আরো ভাল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারেন।”

২০১৪ সালে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর মণিপুরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। 

তিনি বলেন, “গত ১১ বছরে মণিপুরে ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকার হাইওয়ে তৈরি হয়েছে। ৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকার হাইওয়ে তৈরির কাজ চলছে। আমাদের সরকারে মণিপুরে রেল যোগাযোগ বাড়ানো হয়েছে। শিগগিরই ইম্ফলকে জুড়ে দেওয়া হবে রেলের সঙ্গে। এর জন্য ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে সরকার। রেল-রোড বাজেট আগের চেয়ে অনেক বাড়ানো হয়েছে। শহরের পাশাপাশি রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে গ্রামেও। আজ মণিপুরের সমস্ত মানুষ বিদ্যুৎ ও নলবাহিত জলের সুবিধা পান। যেটা একটা সময়ে ভাবা যেত না। একটা সময় ছিল, যখন দিল্লিতে প্রকল্প ঘোষণা হলেও এখানে পৌঁছতে পৌঁছতে দশক পেরিয়ে যেত। তবে আমাদের সরকার সেই ধারা বদলে দিয়েছে। সরকারের দৌলতে পাহাড়ে তৈরি হয়েছে অত্যাধুনিক হাসপাতাল।”

এদিকে মণিপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে ঘিরে শনিবার ইম্ফলে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়। ২০২৩ সালের জাতিগত সংঘাতের পর এটাই মোদির প্রথম সফর হলেও কংগ্রেস তা প্রবলভাবে সমালোচনা করে এবং ইম্ফলে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখায়। ঐতিহাসিক কাঙ্গলা ফোর্টের অদূরে, মণিপুর কংগ্রেস ভবনের সামনে সকাল থেকে দলীয় কর্মীরা প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের হাতে ছিল পোস্টার—“বিজেপি শাসনে মণিপুর জ্বলছে” এবং “সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বন্ধ করো”। পুলিশ দ্রুত মোতায়েন হয়ে কংগ্রেস কর্মীদের পার্টি কার্যালয়ের ভেতরে আটকে দেয়, যাতে তারা কাঙ্গলা ফোর্টে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের দিকে মিছিল করতে না পারেন। পাশাপাশি অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মী এনে সমগ্র এলাকাজুড়ে কড়া নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এক্সে পোস্ট করে লিখেছেন, “৮৬৪ দিন ধরে হিংসা চলছে: ৩০০ জন প্রাণ হারিয়েছেন, ৬৭ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত, এক হাজার ৫০০-এর বেশি আহত। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ৪৬টি বিদেশ সফর করেছেন, কিন্তু মণিপুরে নিজের নাগরিকদের পাশে দাঁড়াতে আসেননি। শেষবার তিনি এসেছিলেন জানুয়ারি ২০২২-এ—নির্বাচনের সময়!” 

প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও কটাক্ষ করে বলেন, “ওর অনেক আগেই আসা উচিত ছিল। দুঃখজনক যে এতদিন ধরে মানুষকে কষ্ট ভোগ করতে দিলেন, এত মানুষ মারা গেলেন, এত পরিবার ধ্বংস হয়ে গেল। এরপর তিনি এলেন। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।”

উল্লেখ্য ২০২৩ সালের মে মাস থেকে সংরক্ষণ ইস্যুতে মূল উপত্যকার মেইতেই উপজাতি ও পাহাড়ি কুকি উপজাতির মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। দীর্ঘদিন ধরে চলা সেই সংঘর্ষে প্রায় ২৬০ জনের মৃত্যু হয়। নগ্ন করে প্যারেড থেকে শুরু করে ধর্ষণের শিকার হন নারীরা। গৃহহীন হন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। ক্রমবর্ধমান অশান্তির জেরে মুখ্যমন্ত্রী এন.

বিরেন সিং পদত্যাগ করেন। বর্তমানে মণিপুর রাষ্ট্রপতির শাসনের অধীনে রয়েছে, যা ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে।
 

সুচরিতা/শাহেদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য মণ প র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আট বছর পর ছাত্রদলের ‘ঢাউস’ কমিটি, পদ পেলেন ৪২০ জন

আট বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে পদ পেয়েছেন মোট ৪২০ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে শাখা ছাত্রদলের এত বড় কমিটি হয়নি। এ কারণে একে ‘ঢাউস’ কমিটি বলছেন শিক্ষার্থীরা। আবার এ কমিটির করার ক্ষেত্রে সংগঠনটির গঠনতন্ত্রও মানা হয়নি।

গতকাল বুধবার রাত সোয়া ১০টার দিকে ছাত্রদলের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে কমিটির এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন এ তালিকায় সই করেন। চাকসুতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে জয়ী আয়ুবুর রহমান এ কমিটিতেও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন।

এর আগে ২০২৩ সালের ১১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যর আংশিক কমিটি প্রকাশ হয়েছিল। তবে চাকসু নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থীর বাইরে অন্য প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ায় একজনকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্র। বাকি চার সদস্যর আংশিক কমিটিই এখন পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। সর্বশেষ সংগঠনটির শাখা কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছিল ২০১৭ সালে। তখন সদস্য ছিল ২৪৩ জন। এরপর ২০২৩ সালে এ কমিটি বিলুপ্ত হয়।

শাখা ছাত্রদলের গঠনতন্ত্র মতে কমিটির সদস্য থাকার কথা ৮১ জনের। তবে ঘোষিত কমিটির সংখ্যা গঠনতন্ত্রের পাঁচ গুণের বেশি। এতে ৫৫ জন সহসভাপতি, ৯২ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ৬৩ জন সহসাধারণ সম্পাদক, ৬৪ জন সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও ৬২ জন সদস্য পদে রয়েছেন। ৪২০ সদস্যর এ কমিটিতে ছাত্রী রয়েছেন মাত্র ১১ জন। কিন্তু সংগঠনটিতে ছাত্রী থাকার কথা ছিল অন্তত ১০ শতাংশ। সে হিসাবে ৪২০ সদস্যর অন্তত ৪২ জন ছাত্রী পদে থাকার কথা।

গঠনতন্ত্র না মেনে ‘ঢাউস’ কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির শাখা সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বহুদিন কমিটি না থাকায় সাংগঠনিকভাবে অনেককে মূল্যায়ন করতে হয়েছে, তাই সদস্যসংখ্যা এত বেশি। গত ১৫ বছর আমাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। সংগঠনের নেতাদের কারাগারে দেওয়া হতো, এ কারণে আগে কমিটি গোছানোর সুযোগ হয়ে ওঠেনি।’

ছাত্রীর সংখ্যা কম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, নারী সদস্য অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজন। তবে নারীদের রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা কম। তবু যাঁরা স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছেন, আমরা তাঁদের সবাইকে গ্রহণ করেছি।’

গঠনতন্ত্র না মেনে কমিটি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা সভাপতি মো. আলাউদ্দিন মহসিন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াসিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি।

কমিটিতে পদ পাওয়া চাকসুর এজিএস আয়ুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বহুদিন ধরে কমিটি না থাকায় আমাদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কিছুটা হতাশা ছিল। তবে চাকসুর পর নতুন কমিটি ঘোষণায় এখন সবার মধ্যে নতুন করে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে। আমাদের কমিটি বিশাল হলেও আমরা বিশ্বাস করি, একসঙ্গে বসে শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
  • আট বছর পর ছাত্রদলের ‘ঢাউস’ কমিটি, পদ পেলেন ৪২০ জন